শেখ মুজিব তুমি কার? আমেরিকা,ইসরাঈল নাকি ভারতের?
লিখেছেন লিখেছেন শাহমুন নাকীব ফারাবী ০৭ জুন, ২০১৬, ১১:২৭:১০ সকাল
আজ ৬ দফা দিবস। বরাবরের মত আজকের এই দিনটিকেও আওয়ামীলীগ তাদের পিতার অসাধারণ কর্ম বলে দাবি করবে। সেই দাবিনুসারে দিনভর বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে। আমি বলি, কার দফা আর কে মালিক বনে গেল(!) ৬ দফার প্রণেতা প্রকৃত অর্থে কে এবং কি উদ্দেশ্যে এটি বাস্তবায়নের চেষ্ঠা করা হয়েছে?
১৯৬৬ সালের ৫ ও ৬ ফেব্রয়ারী লাহোরে একটি জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে নুরুল আমীনের ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট, কাউন্সিল মুসলিম লীগ, জামায়াতে ইসলামী নেজামে ইসলাম ও আওয়ামীলীগ অংশগ্রহণ করেন। আওয়ামীগের পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক কমিটির প্রতিনিধির পক্ষ থেকে নেতৃত্ব দেন শেখ মুজিবুর রহমান। ঐ প্রতিনিধি দলের অন্যান্য সদস্যরা হলেন, জহির উদ্দিন, নুরুল ইসলাম চৌধুরী,হাফেজ হাবিবুর রহমান,তাজউদ্দিন আহমদ, আব্দুল মালেক উকিল,মিজানুর রহমান চৌধুরী, ইউসুফ আলী, এএইচএম কামরুজ্জামান ও এবিএম নুরুল ইসলাম। এই মিটিংই শেখ মুজিবুর রহমান ৬ দফা উত্থাপন করেন।
কিন্তু মজার বিষয় হচ্ছে, শেখ মুজিব যে ৬ দফা দাবি উত্থাপন করবেন এই ব্যাপারে তার প্রতিনিধি দলের সদস্যরা কিছুই জানতেন না। পরবর্তিতে এক সাক্ষাৎকারে উক্ত প্রতিনিধি দলের সদস্য মিজানুর রহমান চৌধুরী বলেন,“ লাহোর যাত্রার প্রাক্কালে ঢাকাতে এমনকি লাহোরে গিয়েও এ প্রসঙ্গে তিনি আমাদের সঙ্গে কোন আলাপ আলোচনা করেন নি। আমরা জানতামই না শেখ মুজিব এ ধরনের একটি প্রস্তাব উত্থাপন করবেন”।
এদিকে জনাব শেখ মুজিবুর রহমানও ঢাকা ত্যাগের পূর্বে এক বিবৃতিতে বলেন,“একমাত্র ১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে পূর্ব পাকিস্তানের জন্য পূর্ণ স্বায়ত্বশাসন প্রবর্তনের শাসনতান্ত্রিক ব্যবস্থা দ্বারা এবং অর্থনৈতিক রাজনৈতিক ও দেশ রক্ষার দিক হতে পূর্ব পাকিস্তানের স্বয়ংসম্পূর্ণতা বিধানের দ্বারাই দেশের ঐক্য ও সংহতি বজায় রাখা যেতে পারে”। [সূত্রঃ দৈনিক আজাদ,৫ ফেব্রয়ারী ১৯৬৬]
কিন্তু প্রকৃত অর্থে এই ৬ দফার মালিক কে?
১৯৬৫ সালের পাক ভারত যুদ্ধের পর প্রেসিডেন্ট আইউব খান পূর্ব পাকিস্তান তথা বাংলাদেশে আসেন এবং রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে এক বৈঠকে মিলিত হন। সেই পাক ভারত যুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানে রাজধানী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল। আর পূর্ব পাকিস্তান রক্ষার দায়িত্বে ছিল গণপ্রজাতন্ত্রী চীন। এর ফলে পূর্ব পাকিস্তানের ব্যবসায়ী বুদ্ধিজীবি মধ্যবিত্ত শ্রেনীকে বিশেষভাবে আলোড়িত করে তুলে। ১৯৪৭ সালের পর থেকে পূর্ব পাকিস্তানকে বিভিন্নভাবে তাদের প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। তারই সম্মেলিত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটে, আইউব খান আহূত সেই বৈঠকে। পূর্ব পাকিস্তানের পক্ষ থেকে জনাব খায়রুল কবীর পূর্ব পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নুরুল আমীনের হাতে ৭ দফা দাবি পেশ করেন। উল্লেখ্য যে, খায়রুল কবীরের পেশকৃত ৭ দফা দাবির ৭ নং দাবিটি বাদ দিয়ে যা অবশিষ্ঠ থাকে সেটাই ৬ দফা দাবি। পরবর্তিকালে শেখ মুজিব নিজেকে ৬ দফার প্রবক্তা বলে দাবি করেন। এই হলো, আমাদের জাতির পিতার কৃতিত্ব চুরির ফমূলা!
পরবর্তিতে খায়রুল কবীরের কাছ থেকে জানা যায়, দেশের ৫০ জন বুদ্ধিজীবি সম্মেলিত ভাবে এই ৭ দফা তথা ৬ দফা রচনা করেন। এবং পরবর্তিতে এটাও পরিষ্কার হয়ে যায় যে, এই ৭ দফা ও ৬ দফা দাবির পিছনে ছিল সিআইএ, মোসাদ এবং ‘র’।
১৯৬৫ সালের ৬ সেপ্টেম্বর পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে যুদ্ধ লাগিয়ে সামরিক চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে আইউব উৎখাতে ব্যর্থ হয়ে মার্কিন প্রশাসন ছয় দফার মাধ্যমে আইউবকে রাজনৈতিক চাপে ফেলার চেষ্ঠা করেন। প্রকৃত অর্থে ছয় দফা এমন একটি ফর্মূলা যাতে পূর্ব পাকিস্তানের উপর পশ্চিম পাকিস্তানের আধিপত্য অবসান ও স্বায়ত্শাসনের কথা বলা হয় চমকপ্রদ ভাবে। পূর্ব পাকিস্তানকে পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন করে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার কথা এখানে বলা হয় না। কিন্তু আজ দেখি এই ৬ দফা দাবিকে স্বাধীনতার অংশ হিসেবে দাবি করা হয়। ৬ দফার মাধ্যমেই নাকি স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়ন হয়েছে। হায়রে বাঙ্গালী! আরও কতোদিন যে তাদেরকে ভুল ইতিহাস দিয়ে ভুলিয়ে রাখবে! আর সেই ভুল ইতিহাসের আদতে আজও ভুল দিবসগুলো স্বাধীন বাংলাদেশে ঘটা করে পালন করা হচ্ছে! শেখ মুজিব তুমি কার? আমেরিকা ইসরাঈল নাকি ভারতের?
[তথ্য সূত্রঃ জাতীয় রাজনীতি ১৯৪৫ থেকে ৭৫, লেখক অলি আহাদ।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ‘র’ এবং ‘সিআইএ’, লেখক মাসুদুল হক]
বিষয়: বিবিধ
২০৮৪ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এসব কাহিনী এনে কি উনার মত পাহাড়সম পার্সোনালিটিকে ডাউন করানো যাবে?
কোনো ঘটনার সাথে যদি একটি দেশের সংশ্লিষ্টতা থাককে তবে ঐ দেশে পড়ানো হয় সে ঘটনার একচোখা ইতিহাস।যেমন বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর যে রশীদ মিনহাজের সাথে লড়াই করেছিলেন সেই রশীদ মিনহাজ পাকিস্তান বিমান বাহিনীর সর্বোচ্চ খেতাবধারী বীর। আমরা রশীদের নাম পর্যন্ত জানি না। আবার পাকিস্তানিরাও মতিউরের নাম পর্যন্ত জানে না।
মন্তব্য করতে লগইন করুন