যৌনতার দেশ, বাংলা দেশ।
লিখেছেন লিখেছেন শাহমুন নাকীব ফারাবী ০১ জুন, ২০১৬, ১০:৫০:৫৪ সকাল
সংসদ ভবন এলাকা! দেশের অন্যতম সংরক্ষিত এলাকা। সংসদ ভবনের সুরক্ষাতে সম্প্রতি, ভবনকে গ্রীলের মাঝে আবদ্ধ করা হয়েছে! না! আমি সংসদ ভবনের খেরোপাতা নিয়ে বসিনি। একজন তরুন হিসেবে বর্তমান তারুন্যের ভয়াবহতাকে জনসম্মুখে প্রকাশের আশা নিয়ে বসেছি। জানি, একটা ব্লগ কখনো সমাজ বদলে দিবে না। কিন্তু অন্ত্যত একজন মানুষতো বদলাবে। আর সেই একজন মানুষও সমাজেরই অংশ। সমাজের একজন মানুষকেও যদি এই লেখার মাধ্যমে সচেতন করতে পারি তাহলে আমার লেখা এবং পরিশ্রম দু’টিই সার্থক! এবার আসি মূল বিষয়ে।
কেস ষ্টাডি নং১ঃ আপনারা অনেকেই সংসদ ভবনে ঘুরতে কিংবা দেখতে গিয়েছেন। কেউবা সেখানে আড্ডাও দিয়েছেন। সন্ধ্যার পর সংসদ ভবনে তিন ধরনের আড্ডা বসে। প্রথম আড্ডাটা হচ্ছে, কিছু তরুন গিটার এবং পানির বোতলকে ঢোল বানিয়ে গানের আসর বসায়। সেই আড্ডাটা সত্যিই উপভোগ্য। দ্বিতীয় আড্ডা, সংসদ ৩ নাম্বার গেট সংলগ্ন অংশে আড্ডা জমায় তথাকথিত প্রেমিক প্রেমিকারা। আগেকার দিনে যেখানে বৈধ স্বামীই জনসম্মুখে তার স্ত্রীর হাত ধরতে লজ্জা পেত এখন সেখানে কথিত প্রেমিক প্রেমিকারা জনসম্মুখে কিস করতে লজ্জা পায় না। আমার বন্ধুগোছের একজন প্রেমিককে জিজ্ঞেস করেছিলাম, সবার সামনে তোদের এইসব করতে লজ্জ করে না? সে জবাবে কি বলেছিল জানেন, তোদের দেখতে লজ্জা করলে দেখিস না! চোখ বন্ধ করে রাস্তায় হাটিস! কয়েকদিন আগে সেখানে আড্ডা দিচ্ছি! আচমকা বৃষ্টি শুরু হল। আমি বা আমাদের আবার রোমান্টিকতা মাঝে মাঝে মাথা চাড়া দিয়ে উঠে! সেই ভর সন্ধ্যায় আমরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বৃষ্টিতে ভিজলাম। বৃষ্টির সময় কপোত কপোতিরা গাছের নিচে আশ্রয় নিল। কিন্তু সেই গাছের নিচেই তারা আদিম খেলায় মেতে উঠল! এ যেন প্রাচীণ সভ্যতাকেও হার মানায়। ভাববেন না, এরা কোন নিঁচু কোয়ালিটির তরুন তরুনী! এরা প্রায় প্রত্যেকেই দেশের কোন না কোন প্রাইভেট অথবা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ষ্টুডেন্ট। তাদের ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ডও অনেক ভালো! কিন্তু মন মানে না কোন বাধা! মন চায় সব উজাড় করে দিতে!
সংসদ ভবনের ১ নাম্বার গেট সংলগ্ন এলাকাটা কিছুটা অন্ধকার! আর এই অন্ধকারে গোদ্দেরের আশায় দাঁড়িয়ে থাকে অন্ধকার যুগের নারীরা। যারা নিজের দেহ বিক্রি করে ক্ষুধার জ্বালা মেটায়। একটু খেয়াল করে দেখুন তো, আপনি কাকে নিকৃষ্ট বলবেন? যে ছেলে বা মেয়েটি বাবার টাকায় প্রাইভেট ভার্সিটিতে পড়ছে আবার মনের চাহিদার জন্য পার্কে এসে আদিম খেলা খেলছে নাকি যে মেয়েটা পেটের ক্ষুধা সহ্য করতে না পেরে নিজের দেহটাকে বিক্রি করছে! যে কোন বিশ্ববিদ্যালয়েও পড়ে না! তার মনের কি চাহিদা সেই খোঁজও হয়তো কেউ কোন দিন করেনি! আপনি কাকে নিকৃষ্ট বলবেন? একজন ভার্সিটি পড়ুয়া শিক্ষিতাকে নাকি পেটের দায়ে রাস্তায় দাঁড়ানো পতিতাকে?
কেস ষ্টাডি নংঃ২
এতোদিন লিটনের ফ্ল্যাট বলে একটা কথা ছিল! সাম্প্রতিক সময়ে লিটনের বাস বলেও একটি নতুন নাম প্রনোয়ন করতে হবে মনে হচ্ছে! গত কয়েকদিন আগে, বাসে করে উত্তরবঙ্গ যাচ্ছি। আমার বাম পাশের দু’টি মিটে এক দম্পত্তি বসেছে। বাস কিছুদূর যাওয়ার পর তারা একে অপরকে জড়িয়ে ধরে আরও কাছাকাছি হয়ে বসল! সুযোগ মত একে অপরকে কিস করতে লাগল! বাকিটুকু আরও কি হতে পারে আন্দাজ করে নিন! আর লেখা সম্ভব নয়। দিনে দুপুরে বাসের মধ্যে এহেন নির্লজ্জ কর্ম এর আগে কখনো দেখিনি! এই আধুনিক ‘সভ্যতার যুগ’ নামটি পাল্টিয়ে এটা ‘যৌন সভ্যতার যুগ’ বলে নামকরন করাকেই যুক্তিসঙ্গত মনে করি।
কেস ষ্টাডি নংঃ৩
শহরের অদূরে অবস্থিত দৃষ্টিনন্দন পার্কগুলোর মধ্যে তামান্না পার্ক অন্যতম। খেয়াল করলে দেখবেন তামান্না পার্কের পাশেই পানির উপরে কিছু হোটেল বা রেস্তোরা তৈরী হয়ে হয়েছে। সেখানে পানির উপরে চাটাই দিয়ে ঢেকে কেবিন তৈরী করা হয়েছে। সেখানে পা বিছিয়ে বসলে, বাহির থেকে আর কাউকে দেখা যায় না। আর সেইসব কেবিন শুধুমাত্র কপোত কপোতির জন্য। তাহলে বুঝুন সেখানে কোন মহৎ কর্মটি সম্পাদন হয়ে থাকে! একজন পরিচিতজনের কাছ থেকে জানতে পারলাম,এখানে যারা আসে তারা অধিকাংশরাই ভার্সিটি পড়ুয়া! হায়রে আমার শিক্ষাব্যবস্থা! যে শিক্ষা আমাদের নৈতিকতাকে বানের জ্বলে ভাসিয়ে দিচ্ছে সেই শিক্ষা দিয়ে আমরা একটি সভ্য জাতি কিভাবে আশা করতে পারি।
উপরের যে ঘটনাগুলো লিখলাম, তা যতসামান্যমাত্র! এরকম ভরি ভরি উদাহারণ আপনাদের কাছেও আছে। বর্তমান প্রজন্মের কাছে প্রেম মানেই যেন যৌনতা। এর বাহিরে আর কিচ্ছু নেই। অথচ আজ থেকে দশ বছর আগেও বিবাহবহির্ভূত দৈহিক সম্পর্ক কল্পনাও করা যেত না। তবে কি আমরা আধুনিকতার নামে নির্লজ্জ এবং ব্যাহেয়া হয়ে যাচ্ছি! আধুনিক শিক্ষার নামে অমানুষ হয়ে যাচ্ছি। বাংলাদেশকে আর সোনার বাংলাদেশ বলার সুযোগ নেই। এখন বলতে হয়, যৌনতার দেশ, বাংলা দেশ।
বিষয়: বিবিধ
১৯৬৫ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন