হাসিনার পুলিশ ইসরাঈলীদেরকেও হার মানিয়েছে।

লিখেছেন লিখেছেন শাহমুন নাকীব ফারাবী ২৮ মে, ২০১৬, ০১:২০:০৩ দুপুর

শেখ আবু যায়েদ! হামাসের সামরিক শাখা আল কাসসাম ব্রিগেডের একজ কমান্ডার! বয়সে তরুন হলেও দক্ষতায় সে অনন্য! তাইতো এতো কম বয়সেই সে কমান্ডার হতে পেরেছে। তার বড় ভাই শেখ আবু নাসের হামাসের রাজনৈতিক দলের একজন নেতা ছিলেন। প্রায় ১০ বছর আগে দখলদার ইসরাঈলী বাহিনী তাকে গ্রেফতার করে ইসরাঈলে নিয়ে যায়। সেখানেই তিনি বন্দি আছেন। শেখ আবু যায়েদের আড়িতে আর আছেন বৃদ্ধা মা,ভাবি এবং একমাত্র ভাতিজা।

বড় ভাইকে গ্রেফতার করার পরপরই শেখ আবু যায়েদ সামরিক শাখায় যোগদান করে। সামরিক শাখায় যোগদান করার পর শেখ আবু যায়েদ এর চলাফেরার সীমা অনেকটাই কমে আসল। তখন সে আর প্রকাশ্যে চলাফেরা করতে পারতো না। যখন তখন বাড়িতে মাকে দেখতেও যেতে পারতো না। রাতের আধারে বাড়িতে গিয়ে ঢুকতে হতো আবার রাতের মাঝেই বাড়ি ছাড়তে হতো।

শেখ আবু যায়েদ এর বয়োবৃদ্ধ হবার কারণে দিন দিন অসুস্থ হয়ে পড়ছিলেন। এরকম এক রাতে আবু যায়েদ এর মা অসুস্থ হয়ে পড়ে! তাকে তৎক্ষনাত হাসপাতালে নেয়া হলেও তিনি মহান আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে পরপারে চলে গেছেন। যাওয়ার আগে তিনি বলেছিলেন, আবু যায়েদ যেন আমার জানাযা পড়ায়! আবু যায়েদ এর মা মারা গেছে, এই সংবাদ সোর্সের মাধ্যমে খুব দ্রুতই জানতে পারে ইসরাঈলী বাহিনী। আর সংবাদ পাওয়া মাত্রই তারা দ্রুত সিভিলে কয়েক প্লাটুন কমান্ডো সৈন্য পাঠিয়ে দেয়। সেই কমান্ডো বাহিনী আবু যায়েদের বাড়ির আশে পাশেই অবস্থান নিয়ে থাকে।

এদিকে আল কাসসাম ব্রিগেডের নেতা পর্যায়ের কমান্ডাররা আগে থেকেই ধারনা করেছেন, এই সুযোগ ইসরাঈলী বাহিনী সহজেই হাতছাড়া করবে না। তাই আল কাসসাম ব্রিগেডও পুরো অবস্থা জানার জন্য গোয়েন্দা পাঠায়। আর ওদিকে ইসরাঈলের কারাগারে বন্দি আবু নাসেরের প্যারোলে মুক্তির জন্য আবেদন করা হয়। কিন্তু ইসলাঈলী সরকার সেই আবেদনে সাড়া দেয় নি। আবু নাসের তার মাকে শেষ বারের জন্য দেখারও সুযোগ পেল না।

আল কাসসাম ব্রিগেডের গোয়েন্দা রিপোর্ট পেশ করল! দেখা গেল আবু যায়েদের বাড়ির আশে পাশে প্রায় অর্ধশত ইসরাঈলী কমান্ডো সৈন্য অবস্থান নিয়েছে। তখন নেতারা আবু যায়েদকে বললেন, যায়েদ তুমি কি করতে চাও? আবু যায়েদ বললেন, আপনারা আমার নেতা! আপনাদের সিদ্ধান্তই আমার সিদ্ধান্ত। তখন নেতারা বললেন, তোমার আম্মা সারাজীবন আজাদী ফিলিস্তিনের স্বপ্ন দেখে গেছেন। বায়তুল মোকাদ্দাস ইহুদীর কবল থেকে মুসলিমদের হাতে পুনরায় ফিরে আসবে তার স্বপ্ন দেখবেন। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের তুমি একজন অগ্রগামী সৈনিক। আমরা দোয়া করছি, আল্লাহপাক যেন তোমাকে এবং তোমার আম্মাকে জান্নাতে এক সঙে মিলিত হবার তৌফিক দান করেন।

উপরের এই গল্পটা আমি অনেক ছোট বেলায় পড়েছিলাম! তখন গল্পটি পড়ে চোখের কোনা দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়েছিল! ভাবতাম, আমার ফিলিস্তিনের ভাইদের কি দুর্বিসহ জীবন! কিন্তু ফিলিস্তিনের সেই ভাইদের মত বাংলাদেশের মুসলিমদেরও দুর্বিসহ জীবন যাপন করতে হচ্ছে। আজ তাদের সামান্যতমও মানবাধিকার নেই। পিতার মৃত্যুতেও প্যারোলে মুক্তি পাবার সুযোগ পান না বাংলাদেশের জামায়াত শিবিরের কর্মীরা!

রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার নবনির্বাচিত ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল বাসেত মারজানের পিতা মাওলানা আব্দুল বারী গত ২৬ মে ইন্তেকাল করেন। ইনি সেই মারজান, যাকে গ্রেফতার করে ৭ মাস গুম করে রাখা হয়েছিল। ৭ মাস গুম রাখার পর গ্রেফতার দেখানো হয়। সেই থেকে তিনি রংপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি আছে। রংপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে মরহুম আব্দুল বারী সাহেবের সবচেয়ে ছোট ছেলেও প্রায় দেড় বছর থেকে বন্দি আছেন। পিতার মৃত্যুর পরে তাদের দু’জনের প্যরোলে জামিনের আবেদন করা হলে বলা হয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের নিষেধ আছে। তাদেরকে প্যারোলে মুক্তি দেয়া যাবে না। হায় সভ্যত! হায় মানবতা! তারপরও কি আমরা বলব, আমরা সভ্যতার স্বর্ণশিখরে অবস্থান করছি?

আব্দুল বাসেত মারজান এর অনুরোধে তাঁর পিতার লাশ রংপুর জেল গেটে নেয়া হয়। সেখানেই মাওলানা আব্দুল বারী সাহেবের দুই সন্তানের সঙে আখেরী বিদায় ঘটে। আর সে সময় একটি হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারনা ঘটে। এরকম নির্মম দৃশ্য বাংলার জমিনে কখনো ঘটবে বলে কেউ আশা করেনি।





মাওলানা আব্দুল বারী ছিলেন উত্তরবঙ্গের ইসলামী আন্দোলনের অন্যতম কান্ডারী। তিনি লালমনিরহাট জেলা জামায়াতের প্রথম আমীর ছিলেন। পরবর্তিতে তিনি বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামী রংপুর জেলা শাখার সম্মানীত আমীরের দায়িত্ব একাধারে ২৩ বছর পালন করেছেন। সেই সাথে তিনি তাঁর গোটা পরিবারকে ইসলামী আন্দোলনে সামিল করেছেন। আর হয়তো এই অপরাধেই তাঁর মৃত্যুর সংবাদ পাওয়া মাত্রই তাঁর বাড়িতে পুলিশ অস্থায়ী থানা স্থাপন করে। তাদের ভাবনায় ছিল, পিতা মারা গেছে অতএব শেষবারের মত হলেও তো তাঁর সন্তান এবং নাতিরা দেখতে আসবে! আর আসলেই ধরে ফেলব! হায় বিশ্বের রোল মডেল বাংলাদেশের পুলিশ! তোমাদের এহেন কাজগুলোকে কোন সভ্যতার আলোকে মূল্যায়ন করব তা আমার জানা নেই। কিন্তু তোমরা যে ইসরাঈলী বর্বর বাহিনীকেও হার মানিয়েছো সে কথা জোর দিয়ে বলতে পারি! তোমরা বর্বর! তোমরা হিংস্র! তোমরা মানুষ নামের কলঙ্ক! তোমার অমানুষ!

বিষয়: বিবিধ

১৬৫৬ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

370307
২৮ মে ২০১৬ দুপুর ০৩:১৪
হতভাগা লিখেছেন : জামায়াতীদের ৭১ এর হিসাব বুঝিয়ে দিচ্ছেন হাসুবু
370317
২৮ মে ২০১৬ দুপুর ০৩:৫৬
কুয়েত থেকে লিখেছেন : ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করেনি এটাই ইতিহাস বাংলার জমিন ইসলামের জন্য উৎর্স্বগ এই জমিনে ইসলাম বিজয় হবেই হবে। এটাই তার প্রমান ধন্যবাদ আপনাকে লেখাটির জন্য
370331
২৮ মে ২০১৬ সন্ধ্যা ০৭:৩৭
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
অত্যাচারির সভাব সব দেশেই এক।
370344
২৮ মে ২০১৬ রাত ০৮:২৫
শেখের পোলা লিখেছেন : চেতনার জালে আটকা পড়েছি। সহ্য করতেই হবে।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File