কুরআন কেন মানুষের লেখা হতে পারে না?
লিখেছেন লিখেছেন শাহমুন নাকীব ফারাবী ২৫ মে, ২০১৬, ০৮:২২:১৪ রাত
এক,
স্যার, যেহেতু আপনি কুরআন, আল্লাহ এবং কেয়ামতকে বিশ্বাস করেন না। সেহেতু আপনি একটি বই লিখুন! যেখানে থাকবে কুরআনের ভুল এবং অসংগতি গুলোর পূর্ণ ব্যখ্যা! এর আগে কুরআনের ভুল নিয়ে অনেক বই লেখা হয়েছে। কিন্তু আপনার লেখা বইটি হবে সবচেয়ে আলাদা! কারণ, আপনি একজন জন্মগত আরব এবং মুসলিম! এর আগে কোন আরব কুরআনের অসংঙ্গতি নিয়ে বই লিখেনি।
University of Baghdad এর আরবীয় বিষয়ের এই স্যারও ভাবলেন, ঠিক তাই তো! তখন তিনি The prophethood of Muhammad (saws): my journey from doubt to conviction ( মুহাম্মাদ (সাঃ) এর নবুয়ত: সন্দেহ থেকে দৃঢ় বিশ্বাসের পথে যাত্রা) এই শিরোনামে তিনি বই লিখতে শুরু করেন)। বাগদাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের এই স্যারটি জন্মগতভাবে মুসলিম হলেও মনে প্রাণে তিনি ইসলামকে বিশ্বাস করতেন না। তিনি কুরআনকে স্বীকৃতি দিতেন না এবং যার কারণে জীবনের এই দির্ষ সময়েও কোনদিন কুরআন পড়ে দেখেন নি। তিনি বলতেন, কুরআন পড়া মানেই নানা রকমের বাধ্য বাধকতায় পড়া!কল্পিত জাহান্নামের ভয় দেখিয়ে,জীবনটাকে সংকীর্ণ করে ফেলাই হচ্ছে কুরআনের কাজ! অর্থাৎ আপনি আপনার ইচ্ছেমত নিজের জীবনটাকে উপভোগ করতে পারবেন না। আর এই বিষয়ে রাসূল (সাঃ) এর একটি হাদীস আছে, দুনিয়া মু’মিনের জন্য কারাগার স্বরূপ! আর সেই প্রফেসর নিজেকে কারাগারের আভ্যন্তরিন করে রাখতে চান না।
University of Baghdad এর এই প্রফেসরটি প্রচন্ড রকমের জাতীয়তাবাদী ছিলেন। তিনি নিজেকে একজন আরব হিসেবে পরিচয় দিতেই সবচেয়ে বেশি পছন্দ করতেন। তিনি যেহেতু আরবী বিষয়ের প্রফেসর, তাই তিনি আরবের অতীত ইতিহাস নিয়ে পড়াশুনা শুরু করলেন। তিনি আরব ইতিহাসের অনেক বই পড়লেন! কিন্তু আরবীতেই রচিত আল কুরআনকে পড়তে অস্বীকৃতি জানালেন। আর এভাবেই তিনি তার মুক্ত জীবনের সময়গুলো অতিবাহিত করলেন।
কিন্তু কুরআনের ভুল নিয়ে লিখতে হলে তো, সর্ব প্রথম কুরআনকেই পড়তে হবে! তখন সেই প্রফেসর কুরআন পড়া শুরু করলেন! কুরআনের ৩০ পারা পড়া শেষ করার পর ঘোষনা দিলেন, এটা মানুষের লেখা কোন কিতাব হতে পারে না! আর এরপর তিনি কুরআনের মহত্ব এবং সৌন্দর্য নিয়ে একাধারে ১৮ টি বই লিখেছেন। University of Baghdad আরবীয় বিষয়ের এই শিক্ষকটির নাম হচ্ছে বিখ্যাত Dr.Fadel Saleh Sameree । Dr.Fadel Saleh Sameree এখন আরবের বিখ্যাত ইসলামী ব্যক্তিত্ব এবং টিভি আলোচক।
দুই,
ধরুন, একজন ব্যক্তি ২৩ বছর ধরে নিয়মিত বিরতিতে বক্তৃতা প্রদান করে যাচ্ছে। ঠিক ২৩ বছর পরেই সেই বক্তৃতা শেষ হল। আপনি কি বলতে পারবেন, এই ২৩ বছরে কোন কোন শব্দ কতবার ব্যবহৃত হয়েছে? আর এটা কি মুখে মুখে গুনে রাখা আদৌও সম্ভব? আধুনিক প্রযুক্তির কল্যাণে এখন হয়তো গুনে রাখতে পারবেন। কিন্তু মুখে মুখে হিসাব করতে পারবেন না। কুরআন আল্লাহপাকের বক্তব্য কিংবা পথনির্দেশিকা। যা সুদির্ঘ ২৩ বছর ধরে শুধু কথ্য আকারেই নাযিল হয়েছে। কিন্তু তারপরেও সেখানে শব্দের প্রয়োগের ক্ষেত্রে কিছু অসাধারণ বিষয় পাওয়া গেছে।
পবিত্র আল কুরআনে, ‘দুনিয়া’ শব্দটি এসেছে ১১৫ বার। তার বিপরীতে ‘আখেরাত’ শব্দটি এসেছে ১১৫ বার।
‘ফেরেশতা’ শব্দটি এসেছে ৮৮ বার এবং তার বিপরীতে ‘শয়তান’ শব্দটি এসেছে ৮৮ বার।
‘জীবন’ শব্দটি এসেছে ১৪৫ বার এবং তার বিপরীতে ‘মরণ’ শব্দটি এসেছে ১৪৫ বার।
‘ভালো কাজ’ এর কথা এসেছে ১৬৭ বার এবং ‘মন্দ কাজ’ এর কথাও এসেছে ১৬৭ বার।
‘অবিশ্বাস’ এসেছে ১৭ বার এবং ‘বিশ্বাস’ শব্দটিও এসেছে ১৭ বার।
‘ইবলিস’ নাম এসেছে ১১ বার এবং ইবলিস থেকে ‘আশ্রয় চাওয়া’ এসেছে ১১ বার।
‘তারা বলে’ এসেছে ৩৩২ বার এবং ‘বল’ এসেছে ৩৩২ বার।
‘মাস’ শব্দটি এসেছে ১২ বার।
‘দিন’ শব্দটি এসেছে ৩৬৫ বার।
‘নামায’ শব্দটি এসেছে ৫ বার।
১৪০০ বছর আগের প্রযুক্তির কথা একবার ভেবে দেখুন তো! সেই প্রযুক্তির সহায়তায় কি এভাবে শব্দ বিন্যাস সম্ভব? আজকের আধুনিক বিজ্ঞানের আবিষ্কার কম্পিউটারে যখন কুরআনের শব্দবিন্যাস নিয়ে গবেষণা করা হয়, তখন কম্পিউটারেই বলে দেয় এটা কোন মানুষের লেখা বই নয়। আরও সাধারণভাবে ভেবে দেখুন তো, কুরআনে ৬ হাজারেরও বেশি আয়াত আছে। এই ৬ হাজার আয়াতে এতো নিখুঁত শব্দ বিন্যাস কি আদৌও কোন মানুষের পক্ষে সম্ভব?
তারপরও যদি কারও কোন সন্দেহ থেকে থাকে, তাহলে তারা আল্লাহপাকের দেয়া চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করলেই পারে। আল্লাহপাক এই বিষয়ে সেই ১৪০০ বছর আগেই চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে রেখেছন। “আমি আমার বান্দার প্রতি যা অবতির্ণ করেছি তাতে তোমরা যদি সন্দিহান হও,তবে উহার সমতুল্য সূরা তৈরী করে নিয়ে এসো এবং আল্লাহ ব্যতিত তোমাদের সাহায্যকারীদের ডেকে নাও, যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাকো।”।[সূরা বাকারা-২৩]
(তথ্যগুলো উস্তাদ নুমান আলী খানের লেকচার থেকে সংগৃহিত)
বিষয়: বিবিধ
২১৪২ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আপনার সংগ্রহ অনেক ভালো লাগলো।
"নামায" মানে সালাত শব্দটি এসেছে ৮৩ বার, ৫ বার নয়।
অনেক অনেক ধন্যবাদ
মন্তব্য করতে লগইন করুন