প্রিয় মিডিয়া! হাফিজদের শিবির নয়,মানুষ হিসেবে পরিচয় দিন! তাদেরকে মানুষের অধিকার ফিরিয়ে দিন।
লিখেছেন লিখেছেন শাহমুন নাকীব ফারাবী ২১ মে, ২০১৬, ০৩:২৭:৩৭ রাত
স্যার! আমাকে গ্রেফতার করবেন না! আমি থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত! আমাকে প্রতি সপ্তাহে ডাক্তারের কাছে যেতে হয়। মাসে দু’বার রক্ত দিতে হয়! দয়া করে আমাকে ছেড়ে দিন,স্যার!
এরকম কাঁকুতি মিনতি করেও কোন লাভ হয় নি! বাংলাদেশের পুলিশ বলে কথা! বিশ্বের রোল মডেল! তারা হাতের কাছে শিবিরের একজনকে পেয়েছে! পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ানক সংগঠনের কর্মী! অতএব সে নিজেও ভয়ংকর! সে যতোই থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হোক না কেন,তাকে তো গ্রেফতার করতেই হবে! শুধু গ্রেফতার করলেই চলবে নাকি! সেই রিমান্ডেরও আবেদন করতে হবে! আর পিপিকে বলে দিতে হবে, অবশ্যই যেন রিমান্ড পাওয়া যায়! আর রিমান্ড পাওয়া গেলেই দুনিয়ার সবচেয়ে ভয়ানক সংগঠনের একজন ভয়ানক সদস্যকে শাস্তিও দেয়া যাবে আবার পরিবারের কাছ থেকে কিছু টাকাও মারা যাবে! এ সুযোগ কি আর বাংলাদেশের পুলিশ ছাড়তে পারে! বিশ্বের রোল মডেল বলে কথা! আর সেই থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত শিবির নেতাকে ৭ দিন রিমান্ডে নিয়ে আরও অসুস্থ করে ফেলা হলো! প্রাণ বায়ু যখন যায় যায় ঠিক তখনই হাসপাতালে নেয়া হলো! হাসপাতালে নিয়েই বা কি লাভ! যারা করার তারা তো রিমান্ডেই করে ফেলেছে! তাকে যে স্বীকারক্তি দিতে হবে! রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হত্যার সঙে শিবির সরাসরি জড়িত!
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি শামসুল আলম গোলাপ কে যখন গ্রেফতার করেই, র্যাব হেফাজতে আপ্যায়নের ব্যবস্থা করে স্বীকারক্তির ব্যবস্থা করলো! র্যাব গোলাপ ভাইকে নির্যাতন করে স্বীকারক্তি দিতে বলল, রাবির ফারুক হত্যার হুকুম নিজামী মুজাহিদ সাঈদী সাহেবরা দিয়েছে! তেমনি রাবির মেধাবী শিক্ষার্থী হাফিজ ভাইকেও রিমান্ডে নিয়ে স্বীকারক্তির আশা করেছিল! কিন্তু হাফিজ ভাইকে আর ধরে রাখতে পারল না! হাফিজ ভাই এখন তাদের জেল এবং রিমান্ড থেকে অনেক দূরে!
সারাবিশ্বের রোল মডেল বাংলাদেশ পুলিশের এমন দুঃসাহসি কর্মকে উৎসাহি করতে, রাজশাহী পুলিশের প্রশংসা করে ফেসবুকে পোষ্ট দিলেন মন্ত্রী শাহরিয়ার!
হায়রে দেশ! সেই দেশের মন্ত্রীরও যা অবস্থা! সেই দেশের পুলিশ নাকি আবার বিশ্বের রোল মডেল! বিরোধী দলকে নির্মূল এবং শিবিরের মেধাবী ছাত্রদের একের পর এক ক্রসফায়ারের নাটক সাজিয়ে যে পুলিশ অবৈধ সরকারকে টিকিয়ে রাখতে পারে, তারাই তো বিশ্বের রোল মডেল!
এক তনুর জন্য গোটা বাংলা কাঁদলেও হাফিজ সোহানদের জন্য বাংলা কাঁদে না! বাংলার মিডিয়ারা কাঁদেনা! শাহবাগে অবস্থান ধর্মঘট হয় না! কারণ,তারা শিবির! ভয়ংকর শিবিরের সদস্য! অতএব তাদের মানবাধিকার থাকতে নেই। তাদের বেঁচে থাকবারও কোন অধিকার নেই! যেমনটা সাবেক পাট মন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী বলেছিলেন! শিবিরের ছেলেদের খুঁজে খুঁজে বুকে গুলি করা উচিৎ! স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের এই হাল দেখে কবি গুরু হয়তো পুনরায় বলতেন, “১৬ কোটি বাঙ্গালীর হে মুগ্ধ জননী! রেখেছো বাঙ্গালী করে মানুষ করোনি”।
প্রিয় মিডিয়াওয়ালারা! একজন অসহায় ব্যক্তির প্রথম পরিচয় সে মানুষ! আর সেই মানুষের দাবি নিয়ে তারাও আপনাদের সংবাদে স্থান পাবার অধিকার রাখে! সোহান হাফিজদের শিবির মনে না করে মানুষ ভাবতে শিখুন! রক্তে মাংসে গড়া মানুষ ভাবুন! তাদের শরীরটাও আপনাদের শরীরের মত নরম! শিবিরের ছেলেরাও আপনাদেরই মত কোন না কোন বাবার সন্তান! কোন না কোন মায়ের বুকের ধন! কোন না কোন বোনের, আস্থার জায়গা! কোন না কোন ভাই এর ভরসার জায়গা! তাদেরও বেঁচে থাকবার অধিকার আছে। তাদেরও মানবধিকার আছে। সেই মানবাধিকারের জোরে আপনাদের সংবাদে তাদের নির্যাতনের বর্ণনা আসা উচিত! আপনাদের সংবাদে তাদের দুর্দশার কথা আসা উচিত! এটা মানুষ হিসেবে আর মানুষের কাছে দাবি! আপনাদের সাংবাদিক পরিচয়টার আগে কিন্তু আপনি একজন মানুষ! একজন বিবেকবান মানুষ! রক্তে মাংসে গড়া মানুষ! যদি বিবেকবানই হয়ে থাকবেন, তাহলে সোহান হাফিজদের রক্ত আপনাদেরকে ভাবায় না কেন? তাদের রক্তের কথা সারা দেশের মানুষ জানতে পারে না কেন? তবে কি আপনাদের বিবেক নেই! যদি নাই থাকে তবে জাতির জাগ্রত বিবেকের আসন সাংবাদিকের চেয়ারটি ছেড়ে দিয়ে, সরাসরি রাজনীতি করুন! আশা করি সফল হবেন।
বিষয়: বিবিধ
২৫৭৯ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন