একজন ‘এক্সেপশনাল’ মন্ত্রী এবং................
লিখেছেন লিখেছেন শাহমুন নাকীব ফারাবী ১০ মে, ২০১৬, ১১:০৬:৩১ সকাল
আমি তখন ক্লাস সিক্সে পড়ি! একদিন সন্ধ্যায় আব্বা বললেন, অফিসে শিল্প মন্ত্রী আসতেছেন। দেখতে যাবা? আমিতো খুশিতে আত্নহারা! এতো কাছ থেকে একজন মন্ত্রীকে দেখার সুযোগ পাবো, ভাবতেই আমার শরীর ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছিল। বড় হয়েছি মফস্বল এলাকায়! তাই আমার কাছে মন্ত্রী মানে বিশাল কিছু!
মাগরিবের নামায পড়ে স্থানীয় ছাত্রনেতাদের সাথে আমিও অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে আছি! এমন সময় পুলিশের পোঁয়াও পোঁয়াও সাইরেন বাজিয়ে মন্ত্রী সাহেব চলে আসলেন! উনি গাড়ি থেকে নামা মাত্রই পুলিশ চারদিক থেকে ওনাকে ঘিরে ফেললেন! কোন মানুষ আর তার কাছাকাছি আসতে পারছিল না! তখন তিনি পুলিশদের বললেন, আপনারা বিশ্রাম করুন! এখানে আমার কোন নিরাপত্তার প্রয়োজন নেই! এনারা সকলেই আমার ভাই! তারপরও দুই জন পুলিশ তার পিছন পিছন আসতে লাগল! তখন তিনি বললেন, কাউকে আমার কাছে আসতে বাধা দিবেন না! উনি যখন আমার সামনে আসলেন, তখন আমি তার দিকে এক হাত বাড়িয়ে দিলাম মোসাফা করার জন্য! কিন্তু উনি তাঁর দুই হাত দিয়ে আমার হাতটি জড়িয়ে ধরলেন! উনি আমার কানের কাছে মুখ এনে বললেন, তুমি ছোট মানুষটাও আমাকে দেখতে এসেছো! আমি হেসে বললাম, আগে কখনো মন্ত্রী দেখিনি তো! তাই লোভ সামলাতে পারলাম না! উনি আমার মাথায় হাত রাখলেন! আমি বললাম, হুজুর আমার জন্য দোয়া করবেন! উনি আমার দিকে পূর্ণ দৃষ্টি নিয়ে বললনে, ফি আমানিল্লাহ! আমার জন্যও দোয়া করো। কেমন?
একজন মন্ত্রীর এতো সরল ব্যবহার আমি আশা করিনি! মন্ত্রীরা হবে অহংকারী,দাম্ভিকতাপূর্ণ! সাধারণ মানুষকে নিজের আশে পাশে ঘেষতেই দিবেন না! কিন্তু উনি পুরো বিপরীত! আমার সেই কিশোর মন তখনই বলেছিল, তিনি আজকের তথাকথিত অহংকারী মন্ত্রীদের মধ্যে খুব সাধারণ কিন্তু ‘এক্সেপশনাল’ মন্ত্রী!
অফিসের ভিতরে তাঁর জন্য নাস্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে! তিনি খাওয়ার আগে বললেন, আমার সফরসঙ্গী পুলিশ ভাইদের আগে নাস্তার ব্যবস্থা করুন! ওনারা আমার জন্য যা করছেন, তার কৃতজ্ঞতা বলে শেষ করতে পারবো না! তিনি তারঁ সফরসঙ্গি পুলিশদের খাইয়ে তারপর নিজে খাবার খেলেন! এরকম দায়িত্বশীল ব্যবহার বাংলাদেশের আর কোন মন্ত্রী কখনো করেছো কি না আমার জানা নেই! যে মানুষ অন্যকে না খাইয়ে নিজে খায় না, তিনি কি করে মানুষকে হত্যা করতে পারেন? তিনি কি করে মানুষ মারার নেতৃত্ব দিতে পারেন?
বাংলাদেশের সংসদীয় ইতিহাসটিকে চোরের ইতিহাস বললেও, খুব একটা ভুল হবে বলে মনে হয় না! বাংলাদেশই অন্যতম দেশ, যেখানে মন্ত্রী এমপিরা দায়িত্ব পাবার পর তাদের সম্পত্তি কয়েকগুন বেড়ে যায়! আর সেই বেড়ে যাওয়াকে সরকার ইতিবাচক দৃষ্টিতে গ্রহণ করেন! কিন্তু বাংলাদেশের সংসদীয় ইতিহাসে ১ টাকাও দুর্নীতি না করে নজির সৃষ্টি করেছেন, সাবেক সফল কৃষি ও শিল্পমন্ত্রী! তত্ববধায়ক সরকারের আমলে যখন সকল দলের এমপি মন্ত্রীদের দুর্নীতির দায়ে জেলে ভরা হচ্ছিল! এমনকি দেশের দু’টি বৃহত্তম দলের প্রধানকেও দুর্নীতির দায়ে জেলে ভরা হয়েছিল, তখন সাবেক এই সফল মন্ত্রীর বিরুদ্ধে শক্তিশালী অনুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে খুঁজেও এক টাকার দুর্নীতি পাওয়া যায় নি! সেই লোকটি কি করে ৪৫ বছর আগে লুটতরাজ করতে পারে? লুটতরাজ করবার এতোটা সুযোগ পেয়েও যিনি এক টাকা চুরি করলেন না, তিনি কিনা ৪৫ বছর আগে দলবল নিয়ে মানুষের বাড়িতে হামলা করে লুটপাট করলেন? এ যেন শতাব্দির শ্রেষ্ঠ ‘জোকস’!
২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর! পল্টন ময়দান তখন রনক্ষেত্র! চারদিক থেকে বোমা আর গুলির শব্দ ভেসে আসতেছিল! কতক ভাই আহত হয়ে অসাড় হয়ে পড়ে আছেন! ঠিক এই অবস্থায় একটি দলের প্রধান হয়ে সকলকে শান্ত থাকতে বললেন! সবাইকে নিজের জায়গায় স্থীর হয়ে দাড়িয়ে থাকতে বললেন! সেই দিনের সেই দৃঢ় ভূমিকার কথা গোটা বিশ্ব আজও স্বপ্রশংসা ভরে স্মরণ করে! সেই লোকটি কি করে ৪৫ আগে মানুষ মারার নেতৃত্ব দিতে পারেন? যে লোক নিজের কর্মীকে আহত হতে দেখেও বিপরীত দলের উপর চড়াও হওয়া থেকে বিরত থাকতে বলেন, তিনি কি করে ৪৫ বছর আগে সাধারণ মানুষের উপর অস্ত্র তুলতে পারেন?
একজন মানুষের চরিত্র কি রাতারাতি বদলে গেল? তিনি মাত্র ৪৫ বছরে কি নিজেকে সম্পূর্ণ বদলে ফেললেন? যেমনটা প্লাষ্টিক সার্জারির সাহায্যে মানুষ নিজের চেহারা সম্পূর্ণ বদলে ফেলে! আধুনিক চিকিৎসার কল্যানে নিজের চেহারাটা সম্পূর্ণ বদলানো গেলেও নিজের চরিত্রকে বদলানো যায় না! অতএব বাংলাদেশের ইতিহাসের একজন ‘এক্সেপশনাল’ মানুষকে যে পরিকল্পিত ভাবে খুন করা হচ্ছে তা চোখ বন্ধ করেই বলে দেয়া যায়!
হে বাঙ্গাল জাতি, শুনে রাখো! গুনি জনের কদর করিতে না জানিলে, গুনি জনেরা কখনো জন্মগ্রহণ করে না! অতএব নিজেদের দুর্দশার কথা চিন্তা করে হলেও এই গাদ্দারির নীতি থেকে বেরিয়ে আসুন!
বিষয়: বিবিধ
১৬৩৫ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
গুণী হবে দোষী।
সত্য যাবে নির্বাসন,
মিথ্যা হবে বেশী।
লজ্জা উড়বে আকাশেতে,
শরম খাবে ধান।
জাতে উঠবে অজাতেরা,
থাকবেনা আর মান।
জ্ঞানীরা চুপসে যাবে,
জ্ঞানহীনদের কাছে।
কথাগুলো বিদ্যানেরা,
সত্যি বলে গেছে।
(নূর উল ইসলাম)
কি ভাবে সঠিক ইসলামী দলকে চিনবেন?
• যে কোন যুগে তুমি যদি সঠিক ইসলাম পন্থী দলটি খুজে না পাও তাহলে চিহ্নিত ইসলাম বিদ্বেশ্বী এবং পরীক্ষিত ইসলামের শত্রুদের দিকে তাকাও।তারা কোন দলটির প্রতি সবচেয়ে বেশি ক্ষিপ্ত।কারন সঠিক ইসলামি দলকে চিনতে মসুলমানেরা ভুল করলেও ইসলামের শত্রুরা ভুল করে না।(শেখ ইবনে তাইমিয়া রাঃ)
মন্তব্য করতে লগইন করুন