সত্যিই সেলুকস! কি বিচিত্র এই দেশের নির্বাচন কমিশনার!
লিখেছেন লিখেছেন শাহমুন নাকীব ফারাবী ০৮ মে, ২০১৬, ১১:৫৭:১৪ সকাল
পারস্য সাম্রাজ্য বিজয়ের পর গ্রীক বীর আলেকজান্ডার ভারতবর্ষের দিকে দৃষ্টি দিলেন। তিনি প্রথমেই ভারতবর্ষের পাঞ্জাবে এর দিকে এগিয়ে যেতে লাগলেন। পাঞ্জাবের প্রথমেই পড়ে গান্ধার রাজ্য ( বর্তমান রাওয়ালপিন্ডি ও আশেপাশের জায়গা নিয়ে গঠিত হয়েছিল গান্ধার রাজ্য)। তক্ষশিলা তখন ছিল এর রাজধানী। গান্ধার রাজ্যের রাজা অম্ভি আলেকজান্ডারকে অভ্যর্থনা জানিয়ে সাদরে গ্রহণ করলেন। আলেকজান্ডারকে সাধুবাদ জানানোর কারণ ছিল স্পষ্ট, রাজা অম্ভির সঙ্গে অসুস্থ প্রতিযোগিতা ও রাজনৈতিক বিবাদ চলছিল ঝিলাম ও চেনার নদীর পাশের প্রতিবেশী রাজ্যের রাজা পুরুর সঙ্গে। রাজা পুরুকে পরাজিত করার জন্য রাজা অন্তির আলেকজান্ডারকে সব রকমের সহায়তাও করলেন। বন্দী অবস্থায় পুরুকে সামনে হাজির করা হলে আলেকজান্ডার তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে তিনি কেমন ব্যবহার আশা করেন। তার প্রশ্নের উত্তরে পুরু সগর্বে বলেছিলেন, একজন রাজা আর একজন রাজার কাছে যেরূপ ব্যবহার আশা করে, আমিও সেইরূপ ব্যবহারই আশা করি। এতে আলেকাজন্ডার খুশি হয়েছিলেন এবং তাকে তার রাজ্য ফিরিয়ে দিয়েছিলেন।
এরপর আলেকজান্ডার ভারতবর্ষের পূর্ব অঞ্চল মগধে ( বিহার ও এর আশেপাশের অঞ্চল) অভিযান চালানোর পরিকল্পনা করলেন। সেখানে তখন বিখ্যাত নন্দ বংশের রাজত্ব চলছিল। আলেকজান্ডার এই রাজ্য জয় করার জন্য বিপাশা নদীর পাশে তাঁবু ফেললেন। পাঞ্জাব অভিযানের সময় চন্দ্রগুপ্ত নামে এক যুবক গ্রীক বীরের সংস্পর্শে এসেছিলেন। ধারনা করা হয়, চন্দ্রগুপ্তই আলেকজান্ডারকে মগধ আক্রমনের জন্য প্ররোচিত করেছিলেন। চন্দ্রগুপ্ত আলেকজান্ডারের কাছ থেকে গ্রীক রণকৌশল এবং যুদ্ধবিদ্যা রপ্ত করেছিলেন। কিন্তু আমাদের এই উপমহাদেশের লোকদের একটি বদঅভ্যাস- আমরা যে পাত্রে খাই আবার সেই পাত্রেরই তলা ফুটো করে দিতে কার্পন্য বোধ করিনা। চন্দ্রগুপ্ত আলেকজান্ডারের সঙ্গে ভয়ানক বেয়াদবি এবং অভদ্রতা করলেন। এতে গ্রীকবীর চন্দ্রগুপ্তের উপর ভয়ানক রাগান্বিত হলেন। আলেকজান্ডার তার সেনাপতি সেলুকসকে নির্দেশ দিলেন চন্দ্রগুপ্তকে বন্দী করতে। কিন্তু চন্দ্রগুপ্ত শেষ পর্যন্ত পালিয়ে গিয়ে নিজের জীবন বাঁচালেন। আর চন্দ্রগুপ্তের এমন আচরনের জন্য আলেকজান্ডার তার সেনাপতি সেলুকস কে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন,- সত্যিই সেলুকস! কি বিচিত্র এই দেশ।
চতুর্থ ধাপের নির্বাচনে প্রাণ গেল আরও ৫ জনের। বেসরকারি সংস্থা সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর দেয়া তথ্যমতে, দেশের নবম ই্উনিয়ন পরিষদ নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর থেকে প্রথম থেকে তৃতীয় ধাপ পর্যন্ত নির্বাচন কেন্দ্রিক বিরোধ, নির্বাচনপূর্ব, নির্বাচনকালীন ও নির্বাচন পরবর্তী সংঘর্ষে ৭১ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। আহত হয়েছে ছয় সহস্রাধিক। কিন্তু তারপরও আমাদের প্রধান নির্বাচন কমিশনার সাপ বলেছেন, এ ধাপেও কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ও দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছে। তবে ভোটে অনিয়ম হওয়ায় তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ব্যবস্থার কারণে সহিংসতা ও গোলযোগের ঘটনা কিছুটা কমেছে। আশা করি, আগামী ধাপে অনিয়ম ছাড়াই শান্তিপূর্ণ ভোট হবে।’ এটাকে শতাব্দির সবচেয়ে ব্ড় জোকস বললেও ভুল হবে বলে মনে হয় না! যেখানে তৃতীয় পর্যায় পর্যন্ত ৬৬ জন প্রাণ দেবার পরও নির্বাচন কমিশন কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করল না, সেখানে আগামীতে কোন সহিংসতা হবে না তার নিশ্চয়তা তিনি কিভাবে দিচ্ছেন? আলাদীনের দৈত্য কি তার কানে এসে বলে গেছে?
চলতি নির্বাচনে যেসব স্থানে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে, তার একটি সংক্ষিপ্ত চিত্র আপনাদের সামনে তুলে ধরছি!
কুমিল্লা: সকাল ৮টার পরে কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ায় মাধবপুর ইউনিয়নের চানলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রের সামনে সন্ত্রাসীরা এলোপাতাড়ি কুপিয়ে তাপসচন্দ্র দাস নামের এক যুবককে হত্যা করে। এ সময় আহত হয় আওয়ামী লীগের প্রার্থীসহ আরো ১০ জন।
নরসিংদী: বিকেল তিনটার দিকে নরসিংদী সদরের পাড়াতলী ইউনিয়নে মধ্যনগর প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকরা সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। কেন্দ্র দখলকে কেন্দ্র এ সংঘর্ষে হোসেন মিয়া (৫০) নামে এক ব্যক্তি নিহত হন। আহত হন আরো কয়েকজন। নিহত হোসেন মিয়া মধ্যনগর গ্রামের মৃত আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে। তিনি আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর সমর্থক।
ভোটগ্রহণ চলাকালীন নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর সমর্থকরা কেন্দ্র দখলের চেষ্টা করলে বাধা দেয় বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকরা। এ ঘটনায় দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। এসময় প্রতিপক্ষের হামলায় নৌকা প্রতীকের সমর্থক হোসেন মিয়া নিহত হন।
ঠাকুরগাঁও: জেলার বালিয়াডাঙ্গিতে নির্বাচনী সহিংসতায় একজন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে আরো কয়েকজন। শনিবার ভোটগ্রহণ চলাকালে নিহতের এ ঘটনা ঘটে। স্থানীয়রা জানায়, বালিয়াডাঙ্গি উপজেলার পাড়িয়া ইউনিয়নের মাছফুরিয়া দাখিল মাদরাসা কেন্দ্রে দুপুরে ভোট চলাকালীন দুই মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকরা সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এতে মাহবুবুর রহমান পল্টু (১৭) নামে এক কিশোর নিহত হয়। পল্টু মাছফুরিয়া গ্রামের আব্দুল জব্বারের ছেলে।
রাজশাহী: শনিবার বিকেল ৪টায় বাগমারার আউচপাড়া ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় দুজন নিহত হয়েছে। আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে এ সংঘর্ষে আহত হয় উভয় পক্ষের অন্তত ২০ জন নেতাকর্মী। নিহতরা হলেন- বাগমারা উপজেলার আউচপাড়া ইউনিয়নের স্বারদী এলাকার জাহেদুল ইসলাম বুলু (৩৫) ও গাংগোপাড়া এলাকার সিদ্দিকুর রহমান (২৮)। এরা দুজনেই নৌকার সমর্থক।
এদিকে সাদুল্যাপুরে আওয়ামিলীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর হামলায় আহত হয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা! মাননীয় নির্বাচন কমিশনার! তবুও কি আপনি এইসব ঘটনাকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে উড়িয়ে দিবেন? আরও কত মানুষের জীবন গেলে আপনি আর ‘বিচ্ছিন্ন’ শব্দটি ব্যবহার না করে ‘সহিংসতা’ শব্দটি ব্যবহার করবেন? আরও কত মানুষ হতাহত হলে আপনি সেনাবাহিনী মোতায়েন করবেন? আরও কত মানুষ পঙ্গত্ব বরন করলে আপনি এইসব ঘটনাকে বন্ধ করবার জন্য আশু পদক্ষেপ গ্রহন করবেন? আপনি কোন ধরনের পদক্ষেপ না নিয়েই বলছেন, আগামীতে আর কোন সহিংসতার ঘটনা ঘটবে না! তাই তো গ্রীক বীর আলেকজান্ডারের সুরে সুর মিলিয়ে বলতে হয়, সত্যিই সেলুকস! কি বিচিত্র এই দেশের নির্বাচন কমিশনার!
বিষয়: বিবিধ
১৩৪৮ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন