বালাকোটের সেই মুনাফিকরা আজও সমাজে বিদ্যমান! ইতিহাস জানুন এবং মুনাফিককে চিনে নিন............

লিখেছেন লিখেছেন শাহমুন নাকীব ফারাবী ০৬ মে, ২০১৬, ০২:০৯:৪৪ দুপুর

বেশ কিছুদিন আগে, আমাদের কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান ডিপার্টমেন্ট প্রধানের সঙে কথা হচ্ছিল! তিনি আবার তাবলীগের মুুরব্বী! আমার সঙে ব্যক্তিগত সম্পর্ক থাকার কারণে তিনি প্রায়শ আমার সঙে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলতেন! আমিও অনুগত শ্রোতার মত তাঁরকথাগুলো শুনতাম! তিনি একদিন বললেন, আমাদের মুসলিমদের ইতিহাসটা বড় কলঙ্কজনক! ইতিহাস খুললেই শুধু গাদ্দারী আর মুনাফিকির কথা উঠে আসে! পৃথিবীতে মুসলিমরাই একমাত্র জাতি, যারা আপন জাতির সঙে সবচেয়ে বেশি গাদ্দারী করেছে! যারা টাকার কাছে নিজেদের ঈমানকে বিক্রি করে দিয়েছে! সেরকমই একটি ইতিহাসের সাক্ষি হয়ে আছে বালাকোটের প্রান্তর! যেখানে শাহ সৈয়দ আহমদ ব্রেরলভি (র.) এর সঙে শিখ এবং ইংরেজদেরা মধ্যে একটি অসম যুদ্ধ সংগঠিত হয়! সেই অসম যুদ্ধে একদল মুসলিম নামধারী মুনাফিকের জন্য শাহ সৈয়দ আহমদ ব্রেরলভি (র.) কে মৃত্যুবরণ এবং পরাজয় বরন করতে হয়!

স্যার এটুকু বলেই থামলেন! তাঁর দু’চোখ পানিতে টলমল করতেছিল! আমিও স্যারকে আর কিছু জিজ্ঞেস করিনি! এরপর বাসায় ফিরে ইতিহাসের নানা বই এবং গুগল মামাকে নিয়ে বসলাম! সেই ইতিহাস জানার পর আমিও বেশ মর্মাহত হয়ে পড়েছিলাম! বালাকোটের সেই ইতিহাসটি হল, মুহাম্মদ ইবনে কাসিমের সফল সিন্ধু অভিযানের মধ্য দিয়ে ভারত উপমহাদেশে মুসলমানগণের আনুষ্ঠানিক আগমন ঘটে। মুহাম্মদ বিন কাসিমের আগমনের পূর্বে খোলাফায়ে রাশেদীনের আমলে পারস্য ও মধ্য এশিয়ার উজবেকিস্তান, খোরাসান, তাজাকিস্তানসহ আফগানিস্তানে মুসলিম অধিকার বিস্তৃত হয়ে তৌহিদী ঝাণ্ডা চীনের প্রাচীরের দিকে ধাবিত হয়। মুহাম্মদ বিন কাসিমের সিন্ধু বিজয়ের পর আফগান শাসক সুলতান মাহমুদ বারংবার ভারত আক্রমণ করে উপমহাদেশে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠার পথ উন্মুক্ত করেন। এভাবেই ভারতে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠা হয়। আর সেই মুসলিম শাসনের চূড়ান্ত পতন ঘটে নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয়ের মাধ্যমে!

আর এই পতনের মাধ্যমে মুসলিমদের ভাগ্যে নেমে আসে চরম নির্যাতন এবং দুর্দশা! আর এই চরম সময়ে মুসলিমদের নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখান, শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলবী (র.)। তিনি তাঁর লেখনী এবং জ্বালাময়ী বক্তৃতার মাধ্যমে মুসলিমদের ঐক্যবদ্ধ ও জাগ্রত করবার চেষ্ঠা করেন! আর এর ফলে মুসলিমদের মাঝে জাগরনের সুবাতাস বইতে শুরু করল!

শাহ ওয়ালী উল্লাহ দেহলবী (র.)-এর ইন্তেকালের পর তার চারজন সুযোগ্যপুত্র ও বহু সংখ্যক শাগরেদ এ আন্দোলনের নেতৃত্ব দিতে থাকেন শাহ ওয়ালী উল্লাহ দেহলবী (র.)-এর জ্যেষ্ঠপুত্র শাহ আব্দুল আযীয (র.) ছিলেন পিতার যোগ্য উত্তরসূরী। তার বহুসংখ্যক শিষ্য পবিত্র কুরআন, হাদীস, ফিকাহ শাস্ত্রসহ ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ে উচ্চ শিক্ষা লাভ করে পরাধীনতার করালগ্রাস থেকে মুসলিম জাতিকে মুক্ত করে শরীয়তের মূলভিত্তির ওপর দেশ পরিচালনার প্রেরণায় উজ্জীবিত হন।

এসব মনীষীদের মধ্যে শাহ সৈয়দ আহমদ ব্রেরলভি ও শাহ মুহাম্মদ ইসমাঈল (র.) ছিলেন অন্যতম। শাহ সৈয়দ আহমদ ব্রেরলভি (র.) ভারতকে ইসলামী হুকুমতের নিয়ন্ত্রণে আনায়নের লক্ষ্যে ইসলামবিরোধী ও ইউরোপীয় সম্রাজ্যবাদীদের কবল থেকে উদ্ধারের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করছিলেন। তার সুযোগ্য নেতৃত্বে সমগ্র ভারতব্যাপী প্রচারণা চলতে থাকে।

শাহ সৈয়দ আহমদ ব্রেরলভির (র.) জ্বালাময়ী বক্তৃতায় মুসলমানদের মনে স্বাধীনতার আকাঙ্খা জাগ্রত হতে থাকে। তার সংগ্রামী প্রচারণার কঠিন কষাঘাতে মুসলিম জাতি অলসতার শয্যা ত্যাগ করে উঠে দাঁড়াতে থাকে।

ঐ সময়ই বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণের সংগ্রামী নেতা হাজী নিসার আলী ওরফে তিতুমীরের সাথে শাহ সৈয়দ (র.)-এর পরিচয় ঘটে। তখন তারা দু’জনে একটি ইসলামী রাষ্ট্র গঠনের প্রয়োজনীয়তা উপলবদ্ধি করেন! আর এই প্রয়োজনীয়তা থেকেই শাহ সৈয়দ আহমদ ব্রেরলভির (র.) মুসলিম তরুনদের নিয়ে একটি মুজাহিদ বাহিনী গঠন করেন! এই মুজাহিদ বাহিনীর সঙে ইংরেজ এবং শিখদের বেশ কয়েকবার যুদ্ধ সংগঠিত হয়! শাহ সৈয়দ আহমদ ব্রেরলভির (র.) এর মুজাহিদ বাহিনী পেশোয়ার দখল করে সেখানেই ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন। কিন্তু এই রাষ্ট্রটিকে বানচাল করে দেবার জন্য শিখ এবং ইংরেজরা ষড়যন্ত্র করতে থাকে! মুসলিমদের মাঝে মুনাফিকদের অভাব কোন কালেই ছিল না! যার কারণে ইংরেজরা টাকার বিনিময়ে অনেক মুনাফিককে কিনে ফেলল! তারা শাহ সৈয়দ আহমদ ব্রেরলভির (র.) এর মুজাহিদ বাহিনী সম্পর্কে নিয়মিত তথ্য প্রদান করত! আর এইসব তথ্যের ভিত্তিতে ইংরেজ এবং শিখরা চোরাগোপ্তা হামলা চালিয়ে মুসলিমদের দুর্বল করে দিতে থাকে!

শাহ সৈয়দ আহমদ ব্রেরলভির (র.) নিজের অবস্থা বুঝতে পেরে পেশোয়ার ত্যাগ করার মনোবাসনা করেন! কিন্তু এই সংবাদও ইংরেজরা পেয়ে যায়! শাহ সৈয়দ আহমদ ব্রেরলভির (র.) এবং মুজাহিদ বাহিনী পেশোয়ার ত্যাগ করে বালাকোট প্রান্তরে এসে পৌছায় তখনই ইংরেজরা মুসলিমদের উপর আক্রমন চালায়!



[চিত্রে ঐতিহাসিক সেই বালাকোট প্রান্তর]

ইংরেজ এবং শিখরা যৌথ আক্রমন চালিয়ে উপমহাদেশের প্রথম স্বাধীকারের আন্দোলনকে ধুলিস্যাৎ করে দেয়! আর এর পিছনে কাজ করে মুসলিম নামধারী কিছু মুনাফিক! শোনা যায়, শাহ সৈয়দ আহমদ ব্রেরলভির (র.) কে হত্যা করে তাঁর খন্ডিত মস্তকটি নদীতে ফেলে দেয়া হয়! আর সেখান থেকে মাথাটি সংগ্রহ করে শাহ সৈয়দ আহমদ ব্রেরলভির (র.) কে সমাধিস্থ করা হয়!



[চিত্রে শাহ সৈয়দ আহমদ ব্রেরলভির (র.) এর কবর]

আর এভাবেই শুধুমাত্র গুটি কয়েক মুসলিনাম ধারী মুনাফিকদের কারণে একটি ইসলামী রাষ্ট্র এবং একটি আন্দোলনের পতন ঘটল! আর সেইসব মুনাফিক আজও আমাদের সমাজে বিদ্যমান! যারা আলেম হত্যার জন্য উস্কানি দিয়ে থাকে! যারা ইমামতি ধরে রাখার জন্য নাস্তিকদের গুনগান গেয়ে থাকে! সেই সব মুনাফিকদের থেকে সাবধান হবার এখনই সময়!

বিষয়: বিবিধ

১৫৫১ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

368171
০৬ মে ২০১৬ বিকাল ০৪:২৮
কুয়েত থেকে লিখেছেন : মুসলিমদের মাঝে মুনাফিকদের অভাব কোন কালেই ছিল না! ভালো লাগলো ধন্যবাদ
368218
০৬ মে ২০১৬ রাত ১০:৪৯
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : চমৎকার শিক্ষনিয় পোষ্টটির জন্য অনেক ধন্যবাদ। এই মুনফিকদের না চিনতে পারাই আমাদের খারাপ অবস্থার কারন।
368266
০৭ মে ২০১৬ সকাল ০৮:১২
শেখের পোলা লিখেছেন : আর তেমনই মুনাফেকদের কারণেই একটা মুসলীম দেশ হিন্দু দেশ হতে চলেছে।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File