আমাদের নির্বাচন কমিশন নামক গোলাপী আজ বোবা কালা হয়ে গেছে।

লিখেছেন লিখেছেন শাহমুন নাকীব ফারাবী ০১ এপ্রিল, ২০১৬, ১০:০৬:৫১ রাত

ভৌগলিক দিক থেকে আমাদের দেশটি সৌভাগ্যবান হলেও রাজনৈতিক দিক থেকে আমরা বড়ই দুর্ভাগা। বাংলাদেশের রাজনীতি মানেই হানাহানি মারামারি কাটাকাটি, রক্ত, খুন, জখম। এগুলোকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিকে কল্পনা করাই মুশকিল। আর এসব দেখে আমাদের আগামী প্রজন্মও মারমুখী হয়ে উঠেছে। ছোটদের ভোট নামে পরিচিত মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসার স্টুডেন্ট কাউন্সিলের ভোটে ব্যালট পেপার ও বাক্স লুট এবং ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

বৃহস্পতিবার জেলার সদর উপজেলার কাগাশুরা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভোট গ্রহণের সময় এ ঘটনা ঘটে। ভোটগ্রহণের শেষের দিকে দুই শিক্ষককে লাঞ্ছিত করে বহিরাগতদের সহায়তায় ব্যালট পেপার ও বাক্স লুট করে নেওয়া হয়। ব্যালট পেপার ও বাক্স লুটকে কেন্দ্র করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় পণ্ড হয়ে যায় ভোটগ্রহণ। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

বিদ্যালয় সূত্র জানায়, কাউন্সিলের ৮ সদস্য নির্বাচনের জন্য ২৭ শিক্ষার্থী প্রতিদ্বন্ধিতা করেছে। সকাল ৯ টা থেকে ভোট শুরু হয়। দুপুর দেড়টার দিকে শেষ মুহূর্তে বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্র রাব্বি চাপরাশি, রাফি ও হাসানের নেতৃত্বে ২০-৩০ জন বহিরাগত লাঠি-সোটা নিয়ে ভোটকেন্দ্রে হামলা করে। তারা বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ ও দশম শ্রেণীর ভোট কক্ষে প্রবেশ করে ওই দুই কক্ষের দুই শিক্ষককে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। পরে তারা ব্যালট পেপার ও বাক্স লুট করেছে। তবে অষ্টম শ্রেণীর কক্ষে হানা দিয়ে ব্যালট পেপার ও বক্স ছিনিয়ে নিতে ব্যর্থ হয়।

ব্যালট বাক্স ছিনিয়ে নেয়ার সময় স্কুলের সাধারণ শিক্ষার্থীরা ধাওয়া করে। তখন তাদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় বিদ্যালয়জুড়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পরে পুলিশের সহায়তায় পরিস্থিতি শান্ত করা হয়। ঘটনার পরপরই ভোট গ্রহণ বন্ধ হয়ে যায়। সংঘাতময় রাজনীতির চর্চা থেকে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে নেই।

আর এসব হবেই বা না কেন, পত্রিকার পাতা উল্টালেই তো এসব খবর পাওয়া যায়। আজও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। মাদারীপুরে নির্বাচন পরবর্তী সংঘাতে গুলিব্দ্ধি ৭ জন। জেলা সদরের কুনিয়া ইউনিয়নে ভোটের পরদিন সাবেক চেয়ারম্যানের সমর্থকদের সঙ্গে পরাজিত এক স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষে সাতজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।শুক্রবার সকালে কুনিয়া ইউনিয়নের আদিত্যপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

গুলিবিদ্ধরা হলেন, হাসান (৩০), রাকিব হাওলাদার (১৮),আলতাজ (২৬), রুবেল হাওলাদার (২৩), নাঈম হাওলাদার (১৭), কামাল (৩৫) ও আবুল কালাম। তাদের ফরিদপুর ও ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে। সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিয়াউল মোর্শেদ এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন। জানা যায়, বৃহস্পতিবারের নির্বাচনে কুনিয়া ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ে পরাজিত হন সাহেব আলী। তার সমর্থকদের অভিযোগ, সাবেক চেয়ারম্যান ইসমাইল মাস্টার সমর্থন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও তা না করায় তাদের এই পরাজয়। স্থানীয়দের বরাত দিয়ে ওসি জিয়াউল বলেন, সাহেব আলীর ক্ষুব্ধ সমর্থকরা শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ইসমাইলের বাড়িতে হামলা করে। এরপর দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ও গোলাগুলি ‍শুরু হলে সাতজন গুলিবিদ্ধ হন।

সিরাজদিখানে নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় আহত ৫ জন। মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় একজন টেঁটাবিদ্ধসহ ৫ জন আহত হয়েছেন। শুক্রবার দুপুরে উপজেলার কেয়াইন ইউনিয়নের তিন নম্বর ওয়ার্ডের ইসলামপুর গ্রামে বিজয়ী ও পরাজিত মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে এ ঘটনা ঘটে। এলাকাবাসী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ইসলামপুর কবরস্থান মসজিদে জুমার নামাজ শেষে গ্রামের বিজয়ী মেম্বার মফিজুল হক কফি ও পরাজিত ২ মেম্বার প্রার্থী এমদাদ হোসেন ও হামিদ ভুইয়া সমর্থকদের মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় বাবু শেখ (৪৫) টেঁটাবিদ্ধ হয়ে ৫জন আহত হন।

নবীনগরে নির্বাচন পরবর্তী সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ৩৫ জন। লালপুরে নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় আহত ১০ জন।

এতোকিছুর পরও আমাদের নির্বাচন কমিশনার হয়তো বলবেন, দুই একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া সির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। এতে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মরা চুরি ছাড়া আর কি শিখবে?

এদিকে,সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত বলেছেন এ কেমন কমিশন নড়েও না চড়েও না।ইউপি নির্বাচনে ব্যাপক সহিংসতা ও হতাহতের ঘটনায় নির্বাচন কমিশনের কঠোর সমালোচনা করেছেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিধর নির্বাচন কমিশন। কমিশন ইচ্ছা করলে নির্বাচন বাতিলও করতে পারে, গ্রহণও করতে পারেন। যে কারো চাকরি খেতে পারে তারা। কিন্তু এ কেমন কমিশন, নড়েও না, চড়েও না। আগায় না পিছায়ও না। একটা কিছু ক গোলাপি একটা কিছু ক। আপনাদের তো কিছু বলতে হবে।

কিন্তু তারপরও আমাদের নির্বাচন কমিশন নামক গোলাপী কিছুই বলছে না। আমাদের নির্বাচন কমিশন নামক গোলাপী আজ বোবা কালা হয়ে গেছে।

বিষয়: বিবিধ

১১৩০ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

364372
০২ এপ্রিল ২০১৬ রাত ০৪:৪৩
শেখের পোলা লিখেছেন : লঙ্কায় গেলেই রাবণ হয়ে যায়৷৷ নির্বাচন কমিশনে যেই যাক তাকে জি হুজুরের তালিম নিয়েই যেতে হয়৷ নইলে চাকরী যাবে৷ বৌ পোলাপান না খেয়ে মরবে৷
364389
০২ এপ্রিল ২০১৬ দুপুর ০১:৪৫
কুয়েত থেকে লিখেছেন : ভোটের ব্যালট পেপার ও ভোটের বাক্স লুট এবং ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে তো ঘটবেই। কারন অবৈধ সরকারের বৈধ নির্বাচন কমিশন বলে কথা। ধন্যবাদ
364493
০৩ এপ্রিল ২০১৬ রাত ১২:৪৩
গাজী সালাউদ্দিন লিখেছেন : যে ঘুমের ভান করে থাকে তাকে জাগানো কঠিন.

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File