মাননীয় অর্থমন্ত্রী টাকা চুরি হল কেন, এই প্রশ্ন আমরা আপনাকে করছি! আতিউর রহমান কে নয়।
লিখেছেন লিখেছেন শাহমুন নাকীব ফারাবী ১৫ মার্চ, ২০১৬, ০৭:০৬:১৮ সন্ধ্যা
অনেকদিন আগে অদ্ভূদ এক গ্রামের গল্প পড়েছিলাম। সে গ্রামে এক দুর্দান্ত সাহসী চকিদার ছিল। তার সাহসের কথা মুখে মুখে শোনা যেত। গ্রামের মানুষরা তাকে নিয়ে গর্ব করত। কিন্তু একদিন রাতে সে গ্রামে ডাকাত পড়ল। ডাকাতরা প্রথমেই সেই চকিদারকে বেঁধে ফেলল তারপর তারা তাদের কার্য সম্পাদন করল। গ্রামের মানুষরা এক পর্যায়ে ডাকাতের আগমন বুঝতে পারলেও কোন প্রতিরোধ করল না। তারা বলল, এই কাজ চকিদারের! আমরা কেন ডাকাত ধরতে যাবো? এরকম হাজারো স্বার্থবাদী চিন্তার কারণে ডাকাতরা নির্বিগ্নে ডাকাতি করে পালিয়ে গেল। ডাকাতরা যখন চলে গেল,তার পরের দিন গ্রামের মোড়ল চকিদারের বিচার বসালেন। ডাকাত গ্রামে ডাকাতি করেছে কিন্তু চকিদার প্রতিরোধ করতে পারেনি বলে সব দোষ চকিদারের ঘাড়ে গিয়ে পড়ল। অসহায় চকিদার মুখ বুঝে সব সহ্য করে নিল। শেষ ফলাফল দেখা গেল, ডাকাতদের ডাকাতির কারণে চকিদারকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হলো্। আর এই ঘটনার মধ্য দিয়ে চকিদারের অতীতের সমস্ত বীরত্বের কথা গ্রামবাসী ভুলে গেল।
গল্পের সেই চকিদারের মত অসহায় অবস্থা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের সদ্য পদত্যাগকৃত গভর্নর আতিউর রহমানের। আর আতিউর রহমানর ছিলেন একজন রাখাল বালক। সেই রাখাল বালক যখন নিজের স্ব প্রচেষ্ঠায় প্রতিষ্ঠিত হলেন তখন দেশের মানুষ তাকে নিয়ে গর্ব করতে শুরু করল। তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হওয়ার পর,ব্যাংকের রেমিটেন্সের রিজার্ভের পরিমাণ যখন বাড়তে লাগল তখন দিকবেদিক আতিউর রহমানের প্রশংসা ছড়িয়ে পড়ল। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের লকারের নিরাপত্তার দায়িত্ব ভারতের হাতে রেখে যখনই বাংলাদেশ ব্যাংকের টাকা হ্যাকিং এর মাধ্যমে চুরি হয়ে গেল তখন সব দ্বায়ভার গিযে পড়ল সেই রাখাল বালক আতিউর রহমানের উপর।
গল্পের গ্রামের সেই অকৃতজ্ঞ মোড়লের ন্যায় নিজের ব্যার্থতাকে ঢাকতেই আতিউর রহমানকে পদত্যাগ করতে বললেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। মাল সাহেব! টাকা চুরি হল কেন? এই প্রশ্ন আমরা, অর্থমন্ত্রী আপনাকে করছি আতিউর রহমানকে নয়(!)
সকালে নিজ বাসায় সাংবাদিকদের আতিউর রহমান বলেন, তিনি পদত্যাগপত্র লিখে প্রধানমন্ত্রীর অপেক্ষায় বসে আছেন। তিনি বলেন, ‘আমি অপেক্ষা করছি প্রধানমন্ত্রী কী বলেন। আমি পদত্যাগ করলে যদি বাংলাদেশ ব্যাংকের ভালো হয়, তাহলে পদত্যাগ করতে আমার দ্বিধা নাই। পদত্যাগপত্র লিখে বসে আছি।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ চুরির ঘটনায় সমালোচিত আতিউর রহমান বলেন, গতকাল সোমবার বিকেলে তিনি ভারত থেকে দেশে ফিরেছেন। রাতে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর বাসায় গিয়ে দেখা করেছেন। অর্থমন্ত্রী তাঁকে বলেছেন, তিনি চলে গেলে বাংলাদেশ ব্যাংক ভালো চলবে। তিনি আরও বলেন, ‘আমি আমার বিবেক দ্বারা চালিত হই। মনে করি, প্রধানমন্ত্রী আমাকে নিয়োগ দিয়েছেন। তিনি না বললে আমার পদত্যাগ করা উচিত হবে না। সাত বছর দায়িত্ব পালন করেছি, বাংলাদেশ ব্যাংককে সন্তানের মতো মনে করেছি। রিজার্ভ থেকে চুরি হোক, এটা আমি কখনো চাইনি।’
এরপর বেলা সোয়া ১১টার দিকে আতিউর রহমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করার জন্য কাছে তাঁর কার্যালয়ে যান। তিনি তাঁর পদত্যাগপত্র প্রধানমন্ত্রীর কাছে জমা দেন।
মাননীয় মন্ত্রী! অর্থচুরির মূল হোতাকে যদি প্রকৃত অর্থেই ধরতে চান তাহলে সেই ভারতীয় কর্মকর্তাকে আপনারা পালিয়ে যেতে দিলেন কেন?
এদিকে, প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ ছয় সচিব ও সমমর্যাদার পদে নতুন নিয়োগ ও বদলি হয়েছে। এর মধ্যে অনিয়ম ও অদক্ষতার জন্য অভিযুক্ত দুজন কর্মকর্তা ভারপ্রাপ্ত সচিব হয়েছেন। এঁরা হলেন পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব প্রশান্ত কুমার রায় ও ভারপ্রাপ্ত সচিব পদমর্যাদায় বেসরকারীকরণ কমিশনের সদস্য জিল্লার রহমান।
সরকারের ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়ম ও অদক্ষতার জন্য অভিযুক্ত হন প্রকল্প পরিচালক প্রশান্ত কুমার রায়। বিভিন্ন গণমাধ্যমে তাঁর অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে বেশ কিছু প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। তাঁর বিরুদ্ধে বেশ কিছু অভিযোগের তদন্তও শুরু করে মন্ত্রণালয়। এসব তদন্তের কোনো সুরাহাও হয়নি। অথচ ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্পেরই নিয়ন্ত্রণকারী মন্ত্রণালয় পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব করা হয়েছে তাঁকে।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন ওই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিয়ে ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্পের কাজকর্মে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন। তিনি মন্ত্রণালয়ের একাধিক সভায় প্রশান্ত কুমারকে ভর্ৎসনা করেন। খন্দকার মোশাররফের মন্ত্রণালয়ের একটি বিভাগের সচিবের দায়িত্ব পেলেন ওই কর্মকর্তা।
প্রকল্প পরিচালক প্রশান্ত কুমারের বিরুদ্ধে কোনোরকম ব্যবস্থা নেননি পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের সচিব এম এ কাদের সরকার। মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে প্রকল্প পরিচালকের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় কাদের সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনা ছিল। স্থানীয় সরকারমন্ত্রীর সঙ্গেও কাদেরের বনিবনা হচ্ছিল না বলে মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র জানিয়েছে। গতকাল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একই আদেশে কাদের সরকারের পদেই প্রশান্ত কুমারকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
গতকালের আরেক আদেশে ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার মো. জিল্লার রহমানকে ভারপ্রাপ্ত সচিব পদমর্যাদায় বেসরকারীকরণ কমিশনের সদস্য করা হয়েছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক তিন প্রশাসকের সময় প্রায় ৩০০ কোটি টাকার আর্থিক অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটি। মন্ত্রণালয় এই তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলে ওই কমিটি। এঁদের একজন হলেন জিল্লার রহমান। অর্থের সংস্থান ছাড়া উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ, দরপত্র আহ্বান ও কার্যাদেশ দেওয়ার ক্ষেত্রে অনিয়মের অভিযোগ ছিল তাঁদের বিরুদ্ধে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিবের কাছে লেখা চিঠিতে তাঁদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছিল।
এইভাবে যদি দুর্নীতিগ্রস্থদের রাষ্ট্রিয়ভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করা হয়, তাহলে তো একদিন পুরো দেশটাই চুরি হয়ে যাবে। বঙ্গবন্ধুৃ ঠিক কথাই বলেছিলেন, মানুষ পায় সোনার খনি আর আমরা পেয়েছি চোরের খনি।
বিষয়: বিবিধ
১৩৪৫ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন