নারীকে উলঙ করাই কি নারী দিবসের মূল লক্ষ্য....???

লিখেছেন লিখেছেন শাহমুন নাকীব ফারাবী ০৮ মার্চ, ২০১৬, ০৯:৫২:৩০ রাত

প্রতি বছর ৮ মার্চ তারিখে পালিত হয়। সারা বিশ্বব্যাপী নারীরা একটি প্রধান উপলক্ষ্য হিসেবে এই দিবস উদযাপন করে থাকেন। বিশ্বের এক এক প্রান্তে নারীদিবস উদযাপনের প্রধান লক্ষ্য এক এক প্রকার হয়। কোথাও নারীর প্রতি সাধারণ সম্মান ও শ্রদ্ধা উদযাপনের মুখ্য বিষয় হয়, আবার কোথাও মহিলাদের আর্থিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রতিষ্ঠাটি বেশি গুরুত্ব পায়।

এই দিবসটি উদযাপনের পেছনে রয়েছে নারী শ্রমিকের অধিকার আদায়ের সংগ্রামের ইতিহাস। ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে মজুরিবৈষম্য, কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করা, কাজের অমানবিক পরিবেশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের রাস্তায় নেমেছিলেন সুতা কারখানার নারী শ্রমিকেরা। সেই মিছিলে চলে সরকার লেঠেল বাহিনীর দমন-পীড়ন। ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দে নিউইয়র্কের সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট নারী সংগঠনের পক্ষ থেকে আয়োজিত নারী সমাবেশে জার্মান সমাজতান্ত্রিক নেত্রী ক্লারা জেটকিনের নেতৃত্বে সর্বপ্রথম আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন হলো। ক্লারা ছিলেন জার্মান রাজনীতিবিদ; জার্মান কমিউনিস্ট পার্টির স্থপতিদের একজন। এরপর ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক নারী সম্মেলন। ১৭টি দেশ থেকে ১০০ জন নারী প্রতিনিধি এতে যোগ দিয়েছিলেন। এ সম্মেলনে ক্লারা প্রতি বৎসর ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালন করার প্রস্তাব দেন। সিদ্ধান্ত হয়ঃ ১৯১১ খ্রিস্টাব্দ থেকে নারীদের সম-অধিকার দিবস হিসেবে দিনটি পালিত হবে। দিবসটি পালনে এগিয়ে আসে বিভিন্ন দেশের সমাজতন্ত্রীরা। ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দ থেকে বেশ কয়েকটি দেশে ৮ মার্চ পালিত হতে লাগল। বাংলাদেশেও ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে স্বাধীনতার লাভের পূর্ব থেকেই এই দিবসটি পালিত হতে শুরু করে। অতঃপর ১৯৭৫ সালে খ্রিস্টাব্দে ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রদান করা হয়। দিবসটি পালনের জন্য বিভিন্ন রাষ্ট্রকে আহ্বান জানায় জাতিসংঘ। এরপর থেকে সারা পৃথিবী জুড়েই পালিত হচ্ছে দিনটি নারীর সমঅধিকার আদায়ের প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করার অভীপ্সা নিয়ে। সূত্রঃ উইকিপিডিয়া।

কিন্তু নারী সমঅধিকার কিংবা নারী স্বাধীনতার কথাটা কতোটুকু যুক্তি সংঙত? এরা কি আসলেই নারীর স্বাধীনতা চায় নাকি তারা নারীদেরকে ঘর থেকে বের করে আনতে চায়! নারীদেরকে পন্য বানাতে চায়। এ বিষয়ে জানতে গিয়ে অনেক পুরোনো একটি বই আমার হাতে আসে। যেটি রচিত হয়েছিল, ১৯০৬ সালে মিশরের কায়রোতে, ১৯১০ সালে ইংল্যান্ডের এডিনবার্গে এবং ১৯১১ সালে ভারতের লক্ষনৌতে অনুষ্ঠিত খৃষ্ঠান মিশনারী সম্মেলন কে কেন্দ্র। এই তিনটি সম্মেলনের বক্তব্য গুলোকে একত্রিত করে রচিত হয় La conquete du monde muslumun ( ইসলামী বিশ্ব জয়) বইটি। বইটির সম্পাদনা করেন এ.লি.সাটিলিযার। উক্ত বই এর ৪৮ তম পেজে পাদ্রী যুয়াইমের নারী বিষয়ে বলেন, “ মিশনারীদের প্রচেষ্ঠার ফল এই হওয়া উচিত যে,মুসলিম যুবক যুবতীরা খৃষ্টান হয়ে যাবে। মুসলমানদের মধ্যে নিজেদের কর্মতৎপরতার দুর্বল প্রভাব দেখে মিশনারীদের নিরাশ হওয়া উচিত হবে না। কেননা মুসলমানদের মধ্যে পাশ্চাত্য চিন্তার প্রভাব এবং নারীদের স্বাধনিতার ঝোঁক উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে।”

এই বক্তব্য থেকে প্রতিয়মান হয়,নারী স্বাধীনতা এই বুলিটি নিছকই মেয়েদেরকে ঘর থেকে বের করে আনা। তাদেরকে মানুষের সামনে উন্মোক্ত করে ফেলা। যাতে করে মানুষ তাদের যৌনক্ষুধা অনায়াসে মিটাতে পারে। খুক খেয়াল করে দেখবেন, যারা নারীর স্বাধীনতা কথা বলছেন তারা মূলত নারীদের অবাধ স্বাধীন জীবনেরই স্বাধীনতা চাচ্ছেন। আর এটি করতে পারলেই নারীদেরকে পন্যে রূপান্তর করাটাও সহজ হয়ে যাবে।

পাশ্চাত্যকে আমরা আমাদের অদৃশ্য প্রভূতে রূপান্তর করে ফেলেছি। পাশ্চাত্যেবিদরা যাই করে আমরা সেটা নির্দিধায় অনুসরন করি। হোক তা সঠিক বুঝসহ কিংবা না বুঝেই। কিন্তু আপনি জানেন কি, পাশ্চাত্যের আজকের এরূপ উন্নতি শুধূমাত্র ইসলামের কারণেই সম্ভব হয়েছে। আর সেটি ইতিহাস বিদরা নির্দিধায় স্বীকার করে গেছেন।

ব্রেফোল্ট তাঁর Making of Humanity গ্রন্থে বলেছেন, “আরব সভ্যতা নতুন পৃথিবীকে (ইউরোপ) যা কিছু দান করেছে তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে জ্ঞান বিজ্ঞান। কেবল বিজ্ঞানই একমাত্র জিনিস নয়-যে জন্য ইউরোপ নতুন জীবন লাভ করে,ইসলামী সভ্যতার আরও অনেক জিনিষ ছিল যার আলোকরশ্মি গোটা ইউরোপে ছড়িয়ে পড়েছে। মূলত ইউরোপের উন্নতির এমন কোন দিকও নেই যা ইসলামী সংস্কৃতির ফল নয়। যে শক্তি বর্তশান দুনিয়াকে স্বতন্ত্র ও বলিষ্ঠ শক্তি দান করেছে এবং যা তার উত্থানের আসল উৎস-অর্থাৎ চিকিৎসা বিজ্ঞান এবং বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার ও অনুসন্ধান-তার লালন পালন ও পরবৃদ্ধির মূলে রয়েছে ইসলামী জ্ঞান বিজ্ঞান।

প্রফেসর Gibb তাঁর Modern trends in islam গ্রন্থে বলেছেন, “ আমার বিশ্বাস-একথা সর্বজন স্বীকৃত যে,মুসলমানদের গভীর ও ব্যাপক অধ্যায়ন জ্ঞান-বিজ্ঞানের উন্নতিতে ব্যাপক ভাবে সাহায্য করেছে। মুসলমানদের এই অধ্যায়নের বদৌলতে মধ্যযুগের অনুসন্ধান,পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়নের নীতিমালা ইউরোপ পর্যন্ত পৌছে গিয়েছিল।

ইউরোপীয়রা যদি মুসলমানদের সবই গ্রহণ করতে পারে তবে ইসলাম কতৃক নারীদের যে অধিকার দেয়া হয়েছে তার বিরোধীতা করে কেন? পাশ্চাত্যবিদরা নারীদেরকে বিশ্বাস করাতে সক্ষম হয়েছে যে, তাদের মাঝে যে রূপ এবং যৌবন রয়েছে সেটাই একমাত্র সম্পদ। আর সে কারণে পাশ্চাত্যের নারীরা নিজেদেরকে উন্মুক্তভাবে প্রকাশ করে থাকে। তাদের এমন উগ্র পোষাকে যখন পুরুষরা আকৃষ্ট হয়ে তাকিয়ে থাকে তখন নারীরা সেটাকেই তাদের প্রাপ্য সম্মান বলে বিবেচনা করে। সে বিশ্বাস করে এর বেশি তার আর কিচ্ছু করার নেই।

নারীদিবসের প্রতিপাদ্য যাইহোক,তার অন্তনিহিত ফলাফল নারীকে পন্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা যেন না হয়। নারীকে ঘর থেকে বের করার উদ্দেশ্য যেন,তাহলে উলঙ রূপে প্রতিষ্ঠিত করা না হয়। নারী দিবসের প্রতিপাদ্য হোক,নারীকে তার প্রাপ্য সম্মান ফিরিয়ে দাও। যেমনটা রাসূল (সঃ) দিয়েছিলন। এক সাহাবী রাসূল (সঃ) এর নিকট এসে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমার উপরে কার হক সবচেয়ে বেশি! রাসূল (সঃ) বললেন,তোমার মায়ের। সাহাবী (রাঃ) বললেন,তারপর? রাসূল (সঃ) আবারো বললেন,তোমার মায়ের। সাহাবী(রাঃ) আবারও জিজ্ঞেস করলেন তারপর কার? রাসূল (সঃ) আবারও বললেন তোমার মায়ের। সাহাবী জিজ্ঞেস করলেন তারপর কার? রাসূল (সঃ) বললেন, তোমার বাবার।

বিষয়: বিবিধ

১২৮১ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

361862
০৮ মার্চ ২০১৬ রাত ১০:০২
গাজী সালাউদ্দিন লিখেছেন : এর উদ্দেশ্য অবশ্যই তাদের সবকটা কাচায়ে ঘর থেকে বের করে আনা। আজকের অনলাইন পত্রিকাগুলোতে চোখ বুলালেই বুঝতে পারবেন। শুধু পরিসংখ্যান আর পরিসংখ্যান। কোন সেক্টরে কতজন নারী যোগ দিয়েছে, কোনটাতে কম ইত্যাদি ইত্যাদি।
361870
০৮ মার্চ ২০১৬ রাত ১১:৩৭
দুষ্টু পোলা লিখেছেন : ভালো লাগলো ধন্যবাদ
361872
০৮ মার্চ ২০১৬ রাত ১১:৩৯
তোমার হৃদয় জুড়ে আমি লিখেছেন : অশিক্ষিত নারীদের দিয়ে যা করাচ্ছে তাই করছে। নিজেরা বুঝেও না তারা কি করছে। আসলে অসহায় আর অবলা হলে যা হয়।
361875
০৮ মার্চ ২০১৬ রাত ১১:৪২
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ। শুধু নারী দের ঘর থেকে বের করা নয় নারিদের তথাকথিত ফর্সা করার ক্রিম বিক্রিও উদ্দেশ্য।
361909
০৯ মার্চ ২০১৬ সকাল ০৫:৫৭
শেখের পোলা লিখেছেন : পশ্চিমা দেশগুলোতে অলরেডি নারীরা পণ্য হয়েই গেছে৷ আমাদের দোষ হল তাদের সবকিছুকেই লুফে নিতে চাই৷ তাই আমরাও এ দিবসটি পলন করি৷ অথচ নারীকে সরবোচ্চ সম্মান ও স্বাধীনতা ইসলামই দিয়েছে৷ বলতে লজ্জ্বা নেই অনেকে তা দিতে নারাজ৷ সমস্যা এখানেই৷ ধন্যবাদ৷
361924
০৯ মার্চ ২০১৬ সকাল ১০:১৭
হতভাগা লিখেছেন : নারীর কর্মসংস্থান শুধু তার নিজের উপকার করতে পারে , সংসার তথা সমাজের না । সেটা সমাজের ধ্বংসই ডেকে আনে ।

একজন নারীর চাকরি মানে ৫ জনের জীবন যাপনের উপর লাথি মারা ।

একজন পুরুষ তার কামাই তার সংসারের জন্য ব্যয় করে , একজন নারীর সেটা করতে হয় না ।

শুধু আধুনিকতার নামে আমাদের এমন কিছু করা উচিত নয় যেটা একটা পরিবার তথা সমাজ ব্যবস্থাকেই ধ্বংস করে দেয় । খুব বেশী আবশ্যকতা না থাকলে একজন নারীর তার স্বামীর সংসারই দেখভাল করা উচিত।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File