শহিদী কাফেলার আজ ৩৯ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে সবাইকে জানাই শুভেচ্ছা

লিখেছেন লিখেছেন শাহমুন নাকীব ফারাবী ০৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ০৪:২৩:২৫ বিকাল

১৯৭৭ সালের আজকের এইদিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ থেকে জন্ম হয়েছিল একটি কাফেলার। সেই কাফেলার জন্মে অগ্রবর্তি ভূমিকা পালন করেছিলেন মাত্র ৬ জন। কোন প্রেক্ষাপট ছাড়া যেমন কোন ঐতিহাসিক ঘটনা জন্ম নেয় না, তেমনি কোন প্রয়োজন ছাড়া সংগঠনেরও জন্ম হয় না। এই কাফেলা প্রতিষ্ঠা ছিল তৎকালীন সময়ের এক অনিবার্য দাবি। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক, ধর্মীয়, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সামগ্রিক প্রেক্ষাপট এ ধরনের একটি সংগঠনের আত্মপ্রকাশকে অনিবার্য করে তোলে। সেই কাফেলা প্রতিষ্ঠার একমাত্র লক্ষ্য , “ আল্লাহর এই জমিনে সকল প্রকার জুলুম ও নির্যাতনের মূলোচ্ছেদ করে আল কুরআন ও আল হাদীসের আলোকে ভ্রাতৃত্ব ও ন্যায়ের সৌধের উপর এক আদর্শ ইসলামী সমাজ গড়ে তোলার মহান লক্ষ্যকে সামনে রেখেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এই কাফেলা। চমক লাগানো সাময়িক কোন লক্ষ্য হাসিল এর উদ্দেশ্য নয়।”

আজ ৬ই ফেব্রয়ারী। এই কাফেলার প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষ্যে কর্মসূচি ঘোষনা করা হয়েছে। ৩৯ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে গত ৪ ফেব্রুয়ারি থেকে সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচি পালন করেছে এই কাফেলাটি। আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তাদের এ কর্মসূচি চলবে।

কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, সারা দেশে শাখা, থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ে বর্ণাঢ্য র‌্যালী; আলোচনা সভা, দোয়া অনুষ্ঠান, স্মৃতিচারণ এবং সাংষ্কৃতিক অনুষ্ঠান; রচনা, কুইজ ও বিতর্ক প্রতিযোগিতা; মেধাবী ও গরীব অসহায় ছাত্রদের মাঝে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ; শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ; মেধাবী ছাত্রদের মাঝে পুরষ্কার বিতরণ; ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযান।

৩৯ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষ্যে কাফেলাটির কেন্দ্রীয় সভাপতি তার বক্তব্যে বলেন, “ইসলামের সুমহান আদর্শের চর্চার লক্ষেই এই দেশে কাফেলার আবির্ভাব। এই কাফেলাটি তার প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকেই আদর্শকে যথাযথভাবে লালন করে পথ চলার চেষ্টা করছে। ছাত্র সমাজের মেধা-মননের বিকাশের লক্ষ্যে সবসময় যুগোপযোগী কর্মসূচি নিয়ে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। ছাত্রদের যে কোন সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে সামনে থেকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। অতীতের গৌরবোজ্জল অবদান রাখা এ দেশের ছাত্র রাজনীতিতে কলুষতা প্রবেশ করলেও এই কাফেলাটি কলুষমুক্ত থেকে রাজনীতি পরিচালনা করছে। তিনিিআরও বলেন, এই কাফেলাই একমাত্র ছাত্র সংগঠন হিসেবে আদর্শের ধারক হিসেবেই কাজ করে চলবে। যে নৈতিক দৃঢ়তা নিয়ে আমরা পথ চলি সে পথ চলা অব্যাহত থাকবে। আমরা অন্যায়ের কাছে মাথা নত করতে শিখিনি। অন্যায়-অপকর্ম প্রতিরোধ করে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই আমাদের লক্ষ্য। সেই লক্ষ্যেই শিবিরের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।”

রাতের শেষে যেমন সূর্য হাসে তেমনি হতাশার চাদর ভেদ করে হেসে ওঠে আলোর সুবহে সাদিক। জন্ম নেয় মুক্তিকামী মানুষের প্রতীক্ষিত এ্ক কাফেলা । কষ্টের সমুদ্র পেরিয়ে ধৈর্যের যে তরী উত্তাল তরঙ্গ মাড়িয়ে তীরে এসে ভীড়ে তাকেই ঘিরেই স্বপ্নীল মানুষেরা গড়ে তোলে মুক্তির ঠিকানা। মুক্তির ঠিকানা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এই কাফেলার প্রতিষ্ঠা হলেও অতি দ্রুত গোটা দেশে কাফেলাটি ছড়িয়ে পড়ে। তারই অংশ হিসেবে এই কাফেলাটি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েও প্রতিষ্ঠা লাভ করে।

সংগঠন আত্ম প্রকাশের পরপরই দেশময় ছড়িয়ে পড়ে এর আলোক বিচ্ছুরণ। একদল সাহসী প্রাণ মর্দে মুজাহিদের নেতৃত্বে। ফুলের কুঁড়ির মত ক্রমশ বিকশিত হতে থাকে এর মানোমুগ্ধকর পাপড়িগুলো। ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, খুলনা, সিলেট সহ সারাদেশ সুবাসিত হল এর সুমিষ্ট ঘ্রাণে।

৬ ফেব্রুয়ারী ১৯৭৮ সাল এই কাফেলার ইতিহাসের এক স্মরণীয় দিন। এই দিনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলা চত্বরে কাফেলার প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী সভায় সমবেত হয় বুদ্ধিদীপ্ত একঝাঁক বিপ্লবী তরুণ। সভা শেষে স্মরণকালের এক দীর্ঘতম মিছিল হয়, মিছিল শেষে কাফেলার কর্মীরা যখন নিজ নিজ হলে ফিরছিলেন তখন ছাত্র ইউনিয়নের নেতৃত্বে ছাত্রমৈত্রী, ছাত্রলীগ (না-স), ছাত্রলীগ(আ-অ) সহ সকল বাম ছাত্র সংগঠনের সন্ত্রাসীরা যৌথভাবে অতর্কিত হামলা চালায়। রক্তাক্ত হয় মতিহারের সবুজ চত্বর। এ বর্বরোচিত হামলার স্বীকার হন কাফেলার নেতা শাহজাহান চৌধুরী, আব্দুল মোনায়েম, আব্দুল ওয়াহেদ,. মাহবুবুর রহমান বাদশাহ সহ অর্ধশতাধিক কাফেলার নেতা-কর্মী। প্রিয় ক্যাম্পাসে ‘আমর বিল মারুফ ওয়া নাহীআনিল মুনকার’ দায়িত্ব পালন করতে চিরাচরিত জুলুম নির্যাতনের প্রথম শিকার হন এসব কাফেলার নেতা-কর্মী। এভাবেই ইসলামী আন্দোলনের গতিধারায় ‘কন্টকাকীর্ণ পথ পাড়ি দেয়ার ঐতিহ্যে শামিল হয় উত্তরবঙ্গের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

প্রাথমিক বাধাই কাফেলার কর্মীদের যেন উত্তাল করে তোলে। সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণায় আরো নতুন করে উজ্জীবিত হয়ে ওঠে। ১৯৭৯ সালের শেষের দিকে বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলো ঐক্যবদ্ধ হামলা চালায়। কাফেলার শান্তিপূর্ণ মিছিলে। মারাত্মকভাবে আহত করে কাফেলার নেতা রেজাউল, নাজিমুদ্দিন সরকার, রফিকুল ইসলাম সহ বেশ ক’জন কাফেলার কর্মীকে। ষড়যন্ত্রের জাল বুনতে থাকে কাফেলার অগ্রযাত্রাকে রোধ করার জন্য। সত্য সুন্দরের প্রতি সাধারণ ছাত্রদের তীব্র আকর্ষণ ঠেকাতে তারা বেছে নেয় নানা ধরণের অপকৌশল। বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি রফিকুল ইসলামকে হত্যা ও সাধারণ কর্মীদের ক্যাম্পাস ছাড়ার হুমকি দেয় তারা। অব্যাহত হুমকির মুখেও আল্লাহতে বিশ্বাসী মুমিনরা এসব পরোয়া করেনি। আল্লাহর বাণী ‘লা ইয়া খাফুনা লাওমাতান লা য়েমেন’ অর্থাৎ তারা পৃথিবীর কোন উৎপীড়নকে ভয় পায়না। প্রতিটি বাধায় পায় নতুন প্রেরণা, ঈমানী চেতনায় হয় আরো উজ্জীবিত। কাফেলার সংগ্রাম চলতেই থাকে সম্মুখপানে।

এই কাফেলার কাজ করতে গিয়ে অনেক ভাইকে যে বাতিল শক্তির হাতে জীবন দিতে হল, অনেক ভাইকে পঙ্গুত্ব বরন করতে হল। অনেক ভাইকে তার অতি মূল্যবান যৌবনটাকেও বিসর্জন দিতে হয়েছে বাতিল শক্তির অত্যাচারের কারণে। তাদের এই ব্যথায় কাতর হয়ে কবির গানের সুরে সুর মিলিয়ে বলতে হয়, - “কত ভাই যে হারিয়ে গেল, কত বন্ধু প্রাণ হারাল, সকল কিছুর বদলাতে খোদা দাও কুরআনের রাজ”। শত অত্যাচারের মাঝেও আজও টিকে আছে প্রিয় শহিদী কাফেলা। হাটি হাটি পা পা করে সেই কাফেলা আজ ৩৯ তম বছরে পদার্পন করল। বেঁচে থাকুক এই কাফেলা। এগিয়ে যাক তার আপন গন্তব্যে।

বিষয়: বিবিধ

১৫৫২ বার পঠিত, ৭ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

358721
০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ বিকাল ০৪:৪৪
জেদ্দাবাসী লিখেছেন : আমরা জানি,
আমাদের ভয় দেখিয়ে শয়তান নিজেই অন্ধকারে পালিয়ে যায়।
আমাদের মুখায়ববে আগামী ঊষার উদয়কালের নরম আলোর ঝলকানি।
আমাদের মিছিল ভয় ও ধ্বংসের মধ্যে বিশ্রাম নেয় নি, নেবে না।
আমাদের পতাকায় কালেমা তাইয়্যেবা,
আমাদের এই বাণী কাউকে কোনদিন থামতে দেয়নি
আমরাও থামবো না।

আমাদের মিছিল - কবি আল-মাহমুদ
BANGLADESH ISLAMI CHHATRASHIBIR এর পেইজ থেকে

জাযাকাল্লাহ খায়ের
358725
০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ বিকাল ০৫:২৫
দুষ্টু পোলা লিখেছেন : ছি ; বীর
358730
০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ বিকাল ০৫:৫৫
কুয়েত থেকে লিখেছেন : ধন্যবাদ ভালো লাগলো লেখাটি শাইখুল ইসলাম ঈমাম ইবণে তাইমিয়া রাহিমাহুল্লাহ বলে ছিলেন ইসলামের সঠিক দলটি চিন্তে চাও..? তাহলে বাতিলের তিরের দিখে লক্ষ রাখ ঐতীর কোথায় আঘাত হানে!আল্লাহ এই কাফেলাকে দিয়ে ইসলাম তথা আল্ কুরআনকে প্রতিষ্ঠার জন্য কবুল করুন বাংলার এই জমিলে।
358737
০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ সন্ধ্যা ০৭:৫১
সামছুল লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ ভালো লাগলো!"
358746
০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ রাত ০৯:০৫
শেখের পোলা লিখেছেন : এই কাফেলা আপন মহিমায় আল্লাহর ইচ্ছায় দশ ও দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ুক ও অভিষ্ট লক্ষ্যে অতি শিঘ্র পৌঁছে যাক৷
358757
০৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ রাত ১১:৪০
স্বপন২ লিখেছেন : ছাত্র শিবির: ৮২ সালের একটি কালো অধ্যায়
358810
০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ দুপুর ০২:২৪
গাজী সালাউদ্দিন লিখেছেন : টিকে আছে, টিকে থাকুক সবসময় এই কামনা।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File