মাইকেল ব্রেনারের ইসলাম নিয়ে ভাবনা এবং কিছু বিষ্ময়কর ঘটনার বর্ণনা.......
লিখেছেন লিখেছেন শাহমুন নাকীব ফারাবী ২৭ জানুয়ারি, ২০১৬, ০৬:০৭:১৬ সন্ধ্যা
সম্প্রতি পিটসবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিষয়ক অধ্যাপক মাইকেল ব্রেনার ইসলামের উপর লিখতে গিয়ে বলেছেন, “ পশ্চিমারা এখন মৃগীরোগগ্রস্থ। একের পর এক ইসলামকে অপঘাত দিয়ে মুসলিমদের মুসলিমদের মানসিক ভারসাম্য ও চিন্তানুভূতির বিকাশকে স্থবির করে দেয়া হয়েছে। মিথ্যা অপবাদ ও কুৎসা রটিয়ে ইসলামকে একটি ভয়ানক নির্যাতনের বাহন হিসেবে চিত্রায়িত করে বিশ্বের সব সমস্যা, যুদ্ধবিগ্রহ, অন্যায়-অবিচারের জন্য দায়ী করা হচ্ছে। এখানে আসলে মূল খেলোয়াড় হলো রাজনীতি ও ক্ষমতা।”
তার এই কথাযে অমূলক কিছু নয় তা বিবেকবানরা সহজেই উপলবদ্ধি করতে পারেন। তারপরও পৃথিবীতে মাঝে মাঝে এমন কিছু ঘটনা ঘটেছে যা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে উপরোক্ত কথাগুলোকে প্রমাণিত করেছে। তেমনি কয়েকটি বিষ্ময়কর ঘটনার বিবরন নিচে তুলে ধরছি।
ঘটনা নংঃ১
কুরআনের ভূল খুঁজতে গিয়ে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন, খ্রীষ্টান ধর্মপ্রচারক ড.গ্যারি মিলার। গ্যারি মিলার ছিলেন কানাডিয়ান ধর্মপ্রচারক। একবার তিনি প্রখ্যাত ইসলামিক স্কলার আহমদ দিদাতের সঙে প্রটেষ্ট্যান্ট খ্রীষ্টানের পক্ষ নিয়ে বিতর্কও করেছিলেন।
নাস্তিক লেখক সালমান রুশদির “স্যাটানিক ভার্সেস” বইটি পড়ার পর,মিলার চিন্তা করলেন তিনি কুরআনের ভুল খঁজে বের করে ইসলামের বিরুদ্ধে প্রচারনা শুরু করবেন। স্যাটানিক ভার্সেস বইটিতে দাবি করা হয়েছে, ইসলাম নারীকে অসম্মান করেছে! স্বয়ং নবী (সাঃ) তাঁর স্ত্রীদেরকে অসম্মান করেছেন।(না্উযুবিল্লাহ)
ড. মিলার বলেছেন,“ড. মিলার বলেছেন,“ আমি ভেবেছিলাম পবিত্র কুরআনে অনেক ভূল খুঁজে পাবো। কারণ কিতাবটি নাযিল হয়েছিল আরব মরুচারীদের মধ্যে! আমার ধারণা ছিল কিতাবে মরুচারীদের সম্পর্কে সূরা পাবো! আর কিতাবটি যেহেতু ১৪০০ বছর আগের পুরনো তাই অহরহ ভূল থাকাটাই স্বাভাবিক। আর এই ভূল গুলো আমি বিশ্বব্যাপি প্রচার করব।
কিন্তু মাত্র কয়েক ঘন্টা পড়ার পর আমি আমার ভূল বুঝতে পারলাম। বিশেষ করে সূরা নিসার ৮২ নাম্বার আয়াতটি আমাকে গভীর ভাবনায় নিমজ্জিত করে। “তারা কি কুরআন সম্পর্কে চিন্তা ভাবনা করে না? যদি এটি আল্লাহ ছাড়া আর কারো পক্ষ থেকে হতো,তাহলে তারা এর মধ্যে বহু বর্ণনাগত অসংগতি খুঁজে পেতো।”[সূরা নিসাঃ৮২]
ড. মিলার আরও বলেন, “আমি খুব বিষ্মিত হয়েছি যখন দেখেছি পবিত্র কুরআনে হযরত মরিয়ম (আঃ) সম্পর্কে একটি বড় পরিপূর্ণ সূরা রয়েছে। আর এ সূরায় তাঁর এতো ব্যাপক প্রশংসা এবং সম্মান করা হয়েছে যা বাইবেলেও করা হয় নি।”
তিনি বলেন,“ইসলামে নারীদের যে সম্মান দেয়া হয়েছে তা অনেক মুসলিম নারীরা বুঝতে পারে না। তাই তারা পশ্চিমা সংস্কৃতি নিয়ে ব্যস্ত। আপনার আমার সকলের উচিৎ কুরআন পড়া এবং এর অর্থ বুঝতে যথাসাথ্য চেষ্ঠা করা।”
ঘটনা নংঃ ২
১৯৮৬ সালে মিশরের কায়রোতে একটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। আর সম্মেলনটি ছিল “ চিকিৎসা বিজ্ঞানে ইসলামের অবদান” শীর্ষক। আর সেই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রীত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর অধ্যাপক আর্থার এলিসন।
সেই সময়ে আর্থার এলিসন ছিলেন লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেক্ট্রিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান ও বৃটিশ সোসাইটি ফর সাইকোলজিক্যাল এন্ড স্পিরিচূয়াল ষ্টাডীজ এর সভাপতি। সেই সম্মেলনে পবিত্র কুরআন থেকে দু’টি আয়াত নিয়ে আলোচনা করা হয়। আর সেই আয়াত দু’টি হল,
“আল্লাহ তায়ালা কবয বা দেহচ্যুত করে নেন ঐসব আত্নাকে তাদের মৃত্যুকালে এবং ঐসব আত্নাকেও যাদের মৃত্যু ঘটেনি নিদ্রাকালে। অতপর ঐসব আত্নাকে আটকে রেখে দেন যাদের সম্পর্কে মৃত্যুর সম্পর্ক করা হয়েছে এবং অবশিষ্ঠ আত্না গুলোকে একটি নির্দিষ্ঠ কাল পর্যন্ত ফেরত পাঠিয়ে দেন। এতে চিন্তাশীল লোকদের জন্য বহু নিদর্শন রয়েছে।”[সূরা আয যুমারঃ৪২]
তিনি রাত্রিবেলা তোমাদের রূহ কবয করেন আর দিনের বেলা তোমরা যা কিছু কর তা তিনি জানেন।(রূহ কবয করার পর তিনি দ্বিতীয় দিনে) আবার তিনি তোমোদের সেই কর্মজগতে ফিরে পাঠান; যেন জীবনের নির্দিষ্ট মেয়াদ পূর্ন হতে পারে। কেন না শেষ পর্যন্ত তাঁর নিকটেই ফিরে যেতে হবে। তোমরা কি কাজ কর? তখন তিনি তা তোমাদের বলে দিবেন।”[ সূরা আল আনআমঃ৬০]
এরপর অধ্যাপক আর্থার আয়াত দু’টো এবং ইসলাম নিয়ে পড়াশুনা শুরু করে দেন। পড়াশুনা করার পর তিনি এই সিদ্ধান্তে পৌছেন যে, মৃত্যু ও ঘুম একই বস্তু যেখানে আত্না দেহয্যুত হয়। তবে ঘুমের বেলায় আত্না দেহে ফিরে আসে এবং মৃত্যুর বেলায় ফিরে আসে না। para Psychologic অধ্যায়নে বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে। আর যা পবিত্র কুরআনে ১৪০০ বছর আগেই বলা হয়েছে।(আল্লাহু আকবার) এরপর অধ্যাপক আর্থার এলিসন ইসলাম গ্রহণ করেন। আর তাঁর মুসলিম নাম দেয়া হয় আব্দুল্লাহ এলিসন।
ঘটনা নংঃ ৩
পৃথিবীতে আর একটি আলোচিত না ইউভন রিডলি। যিনি ২০০১ এ আফগানিস্তান-আমেরিকা যুদ্ধের সময় খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে তালেবানদের হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন। সেখানে ১০ দিন বন্দি থাকার পর বিশেষ শর্তে মুক্তি লাভ করেন। আর সেই বিশেষ শর্তটি ছিল তাকে কুরআন পড়তে হবে। তার মুক্তির দুই বছর তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। ইসলাম গ্রহণ করার পর তাঁর অভিমত এবং বক্তব্য নিয়ে ২২শে অক্টোবর ২০০৬ সালে দ্য ওয়াশিংটন আর্টিকেল প্রকাশিত হয়েছিল। আর সেই আর্টিকেলে তিনি বলেছিলেন, “তালিবানদের হাতে ধরা পড়বার আগ পর্যন্ত আমার কাছে পর্দানশীল নারীদের সাধাসিধে, পুরুষদের দ্বারা নিপীড়িত ‘প্রাণী’ মনে হত। ২০০১ সালের সেপ্টেম্বরে, যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী হামলার মাত্র ১৫ দিন পরেই আমি আফগানিস্তানে গোপনে ঢুকে পড়ি পুরুষ শাসিত এই সমাজে নারীর অবস্থান এবং জীবনযাত্রা আবিষ্কার করতে। আফগানিস্তানে আমি আপাদমস্তক একটি কালো বোরখা পরে থাকতাম, তবুও তালেবানরা কিভাবে যেন আমার আসল পরিচয় বুঝতে পেরে আমাকে ধরে নিয়ে দশদিন আটকে রাখল। আটক থাকা অবস্থায় তাদের আমি যথেষ্ট পরিমানে গালাগালি করেছি এবং বাক- বিতন্ডায় জড়িয়েছি। শেষ- মেশ তারা আমাকে একটা ‘খারাপ’ মহিলা হিসাবে অভিহিত করলেও আমাকে মুক্ত করে দেয়। শর্ত ছিল একটাই- কুরআন পড়তে হবে এবং ইসলাম সম্পর্কে জানার চেষ্টা করতে হবে। (সত্যি বলতে আমি নিশ্চিত না যে আমার মুক্তিতে কারা বেশি খুশি—ওরা নাকি আমি!)
লন্ডনে ফিরে আসার পরে আমি আমার কথা রাখলাম- কুরআন পড়া শুরু করে দিলাম। কুরআন পড়ে আমি যা আবিস্কার করলাম তাতে করে বিস্মিত হওয়া ছাড়া আর কোন উপায় আমার ছিলনা। আমি ধারণা করতাম যে কুরআনের অধ্যায়গুলোতে নারীদের নির্যাতন এবং কন্যা সন্তানদের উপর নিপীড়ন করার নির্দেশনা দেয়া থাকবে। এর কিছুইতো ছিলনা, বরং আমি আবিস্কার করলাম যে এই গ্রন্থে নারীদের মুক্তির উপর বেশি জোর দেওয়া হয়েছে। তালেবানদের হাতে ধরা পড়ার দুই বছর পরে আমি ধর্মান্তরিত হয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করি। এতে করে আমার বন্ধু এবং আত্মীয়দের মধ্যে বিস্ময় এবং হতাশার একটা মিশ্রণ দেখতে পেলাম। কেউ কেউ অবশ্য সাহসও যুগিয়েছিল।
এর পরে ব্রিটেনের পূর্ববর্তী ফরেইন সেক্রেটারি যখন নিকাবকে ‘এক টুকরা কাপড় যা পড়লে শুধু চোখ দেখা যায় এবং বিভিন্ন জাতির একসাথে থাকার ক্ষেত্রে একটা প্রতিবন্ধকতা’ হিসাবে বিশ্লেষণ করলের তখন লোকটার প্রতি বেশ অশ্রদ্ধা জন্মেছিল। তবে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ব্যাপার ছিল যে, প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার, লেখক সালমান রুশদি এবং ইতালির প্রধানমন্ত্রী রোমানো প্রদিও এই বক্তব্যকে সমর্থন করেছিলেন।
হিজাবের ভিতরে ও বাইরে দুই দিক থেকেই পৃথিবীকে দেখার সৌভাগ্য এবং অভিজ্ঞতা আমার হয়েছে। সেই অভিজ্ঞতা থেকে আমি যতটুকু বলতে পারি তা হল, যেসব পশ্চিমা রাজনীতিবিদরা পুরুষ শাসিত ইসলামিক সমাজ নিয়ে মন্তব্য করেন তাদের ইসলাম সম্পর্কে বিন্দুমাত্র ধারনা নেই। তারা পর্দা, বাল্য বিবাহ, নারীদের খৎনা, পরিবারের মান- সন্মান রক্ষার্থে নারী হত্যা, জোরপূর্বক বিয়ের ব্যাপারে ভুলভাবে ইসলামকে দোষারোপ করেন। আমার মনে হয় জ্ঞানহীনতার কারনেই তাদের দাম্ভিকতা এতদূর গিয়েছে। এগুলো শুধুই সাংস্কৃতিক প্রথা এবং এর সাথে ইসলামের কোন সম্পর্কই নেই। কুরআন খুব যত্ন সহকারে পড়লে দেখা যাবে যে পশ্চিমা নারীবাদীরা ১৭০০ সালে যেসকল অধিকারের জন্য আন্দোলন করেছিল, মুসলিম নারীদের সেসব অধিকার ১৪০০ বছর আগেই দিয়ে দেওয়া হয়েছে। ইসলামে আধ্যাত্মিকতা, শিক্ষা-দীক্ষা, গুরুত্ব এবং যোগ্যতার দিক দিয়ে নারী আর পুরুষকে সমান পাল্লায় রাখা হয়েছে। সন্তান জন্ম দেওয়া এবং বড় করে তোলাকে ইসলামে নারীর একটি সন্দেহাতীত গুণ হিসাবে তুলে ধরা হয়েছে।
ইসলাম যখন একটা নারীকে এতকিছু দেয় তখন শুধু শুধু কেন পশ্চিমা পুরুষরা ইসলামে নারীদের পোশাক নিয়ে কথা তোলে? নিকাবকে অবজ্ঞা করে বক্তব্য শুধু সরকারের মুখপাত্রদের কাছ থেকেই আসেনি, এসেছে অন্যান্য মন্ত্রীদের কাছ থেকেও। গরডন ব্রাউন (পরবর্তীতে যিনি ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন) এবং জন রেইডও নিকাব নিয়ে বাজে মন্তব্য করেছেন এবং তাদের বক্তব্যকে স্কটল্যান্ডের মুখপাত্ররা, যেই দেশে পুরুষরা অন্তর্বাস বিহীন স্কার্ট (quilt) পরেন, প্রীতিসম্ভাষণও জানিয়েছেন।
ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত হওয়া এবং মাথায় স্কার্ফ পরার ফলাফল আমার জন্য ছিল সাংঘাতিক! আমি শুধু আমার চুলগুলোই ঢেকেছিলাম- এই চুল ঢাকার ফলে সাথে সাথেই আমি ব্রিটেনের দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক হয়ে গেলাম। আমি জানতাম যে ইসলাম বিরোধীদের কাছ থেকে দুয়েকটা কটু কথা আমার শুনতে হবে কিন্তু রাস্তা ঘাটে অপরিচিত লোকদের কাছ থেকে যে ধরনের বিরোধিতা আমি পেয়েছি তা আমার জন্মভুমিতে আমার জন্য ছিল নিতান্তই দুঃখজনক। চাকরী শেষে বাড়ি ফিরতে দেরি হয়ে গেলে হাত নেড়ে অনেক ক্যাব ডেকেছি কিন্তু কেউই থামেনি। অথচ তাদের “For Hire” লাইটটি জ্বলজ্বল করত। একদিন এক ক্যাব ড্রাইভার আমার সামনেই একজন যাত্রীকে নামিয়ে দিল, আমি তার জানালায় নক করলাম কথা বলার জন্য। সে আমার দিকে একটি তীক্ষ দৃষ্টি দিয়ে চলে গেল, আমার সাথে কথা বলারও প্রয়োজন বোধ করলনা। ভদ্রতার শীর্ষে থাকা ব্রিটিশ জাতির কাছ থেকে এ ধরনের ব্যাবহার কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য না। আরেকদিন আরেকজনতো বলেই বসলো যে “আমার গাড়িতে দয়া করে কোন বোমা রেখে যাবেন না”, সেই ড্রাইভার আমাকে এটাও জিজ্ঞস করেছিল “তো ওসামা কোথায় লুকিয়ে আছে?”
শালীনভাবে পোশাক পরা একজন মুসলিমার দায়িত্ব বটে। তবে আমার চেনা জানা বেশীরভাগ মুসলিমা হিজাব পরতে ‘পছন্দ’ করে, যা মুখমণ্ডলকে অনাবৃত অবস্থায় রেখে দেয়। কিছুসংখ্যক আবার নিকাব পরতেই পছন্দ করে। একটি ব্যাক্তিগত উক্তি আমি পড়েছিলাম, তা হলঃ “আমার পোশাক যদি নির্দেশ করে যে আমি একজন মুসলিম তাহলে আপনার উচিৎ আমাকে আমার প্রাপ্য সন্মান দেওয়া। ওয়াল স্ট্রীটের একজন ব্যংকারের পোশাক যেমন বলে দেয় যে পোশাক পরিহিত ব্যাক্তি একজন গুরুত্বপূর্ণ লোক তেমনি আমিও মনে করি মানুষ হিসাবে সন্মান প্রাপ্তির অধিকার সেই ব্যাংকারের চেয়ে আমার কোন অংশে কম না।” আমার মতন যারা সদ্য ধর্মান্তরিত, তাদের কাছে অন্যদের আড়চোখের দৃষ্টি কেমন লাগে সেটা শুধু তারাই জানে।
আমি বেশ অনেকবছর ধরেই পশ্চিমা একজন নারীবাদি হিসাবে কাজ করেছি কিন্তু পরবর্তীতে আমি আবিষ্কার করি যে মুসলিম নারীবাদীরা ধর্মনিরপেক্ষ নারীবাদীদের থেকে অনেক অনেক বেশি যৌক্তিক এবং মৌলিক। আমরা, মুসলিমারা, খুব বেশি পরিমানে পাশ্চাত্য নগ্নতার ‘প্রোমোটার’ বিউটি কন্টেস্টগুলোকে ঘৃণা করি। আমরা বেশ কয়েকজন মুসলিমা খুব কষ্ট করে হাসি থামাতে পেরেছিলাম যখন দেখলাম যে মিস আর্থ (Miss Earth) ২০০৩ এর বিচারকরা বিকিনি পরিহিতা মিস আফগানিস্তান, ভিদা সামাদযাইকে সাধুবাদ জানালেন। তারা আবার সামাদযাইকে একটা বিশেষ পুরস্কারও দিয়েছিলেন ‘নারী অধিকার বাস্তবায়নের প্রতীক’ হবার জন্য।
কিছু মুসলিম নারীবাদী তাদের হিজাব এবং নিকাব এক ধরনের রাজনৈতিক প্রতীক হিসাবে ব্যবহার ছাড়াও পশ্চিমা মদ্যপান উৎসব, নৈমিত্তিক যৌনসহবাস এবং মাদক ব্যাবহার প্রত্যাখ্যানের প্রতীক হিসাবেও ব্যবহার করে থাকেন। আচ্ছা, কোনটা প্রকৃত অর্থে মুক্তিদান করে - যখন আপনাকে আপনার স্কার্ট কত ছোট, আপনার সার্জারি করে নকল উপায়ে বড় করা বক্ষদয় দ্বারা আপনাকে যখন বিচার করা হবে তখন নাকি যখন আপনাকে আপনার চরিত্র এবং বুদ্ধিমত্তা দিয়ে বিচার করা হবে? ইসলামে কে কার চেয়ে ভালো সেটা নির্ধারণ করা হয় কর্তব্যনিষ্ঠটা, সুকৃতি এবং ধার্মিকতা দিয়ে—বাহ্যিক সৌন্দর্য, অর্থ, ক্ষমতা, সামাজিক পদমর্যাদা অথবা আপনি কোন লিঙ্গের মানুষ সেটা দিয়ে না।
ইতালির প্রধানমন্ত্রী গত সপ্তাহে যখন টেলিভিশন বিতর্কে বললেন যে হিজাব না পরাটা একটা ‘কমন সেন্স’ কারন এটা সামাজিক সম্পর্ককে কঠিন করে তোলে, তখন চিৎকার দেব নাকি হাসব সেটা বুঝতে পারছিলাম না। ছাইপাঁশ কোথাকার। মুখ না দেখা যাবার কারনে যদি সামাজিক সম্পর্কে ব্যাঘাত ঘটে তাহলে আমরা প্রতিদিন ইমেইল, মোবাইল ফোন, টেক্সট ম্যাসেজ, ফ্যাক্স কি কারনে ব্যবহার করি? কই কেউতো RJ’র মুখ দেখা না যাবার দোহাই দিয়ে কখনো রেডিও বন্ধ করেনা!
ইসলাম আমার সন্মান নিশ্চিত করেছে। ইসলাম বলে যে আমার আমার শিক্ষা গ্রহণ করার অধিকার রয়েছে। ইসলাম এটাও বলে যে জ্ঞান অর্জন করা আমার কর্তব্য। ইসলামের কাঠামোর কোন জায়গাতেই বলা নেই যে একজন মহিলার ধোয়া-মোছা, রান্না-বান্নার কাজ করতে হবে। স্ত্রীর উপর নির্যাতনের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। নিন্দুকদের দেখবেন এলোমেলো ভাবে কুরআনের আয়াত উল্লেখ করে ইসলামকে অপমান করতে চাচ্ছে। কিন্তু তারা ঐ অনুচ্ছেদের প্রসঙ্গ ছাড়াই আয়াতগুলো বিচ্ছিন্নভাবে তুলে দেয়। একজন পুরুষ যদি তার স্ত্রীর দেহে হাত তোলেও, কিন্তু সেই আঘাতের কোন চিহ্ন রাখা তার জন্য অনুমোদিত নয়। “বউ পিটিয়োনা” কথাটা কুরআন এভাবেই বলেছে।
আপনারা যদি বলেন যে মুসলিম পুরুষদের নারীদের প্রতি আচরনের রীতি- নীতি গুলো আরেকবার খতিয়ে দেখা উচিৎ তাহলে আমি বলব শুধু মুসলিম না, সুসভ্য আমেরিকানদেরও নারীদের প্রতি আচরনের ব্যাপারে একটু চিন্তা করা উচিৎ। জাতীয় গৃহ নির্যাতন হটলাইনের (National Domestic Violence Hotline) জরিপে দেখা গেছে যে গড়ে সম্পর্ক শুরু হবার ১২ মাসে মধ্যে অ্যামেরিকান মহিলারা তাদের পুরুষ সঙ্গীদের দ্বারা মারাত্মক নির্যাতনের শিকার হন। গড়ে প্রতিদিন তিনজনেরও বেশি মহিলা তাদের বয়ফ্রেন্ড/স্বামীর নির্যাতনে মারা যান— ৯/১১ হামলার দিন থেকে হিসাব করলে বয়ফ্রেন্ড/ স্বামীর নির্যাতনে মারা যাওয়া নারীর সংখ্যা হবে ৫,৫০০।
উগ্র পুরুষরা যে শুধু মুসলিমই হবে এমন কোন কথা নেই। হটলাইন জরিপে দেখা যায় যে পৃথিবীতে প্রতি তিনজন মহিলার ভেতরে একজন তার পুরুষ সঙ্গীর হাতে মার খেয়েছে, যৌনসহবাস করতে বাধ্য হয়েছে অথবা অন্য কোনভাবে অপব্যাবহারিত হয়েছে। এখান থেকেই দেখা যায় যে নারী নির্যাতন একটি বৈশ্বিক সমস্যা। এই সমস্যা কোন ধর্ম, গোত্র, জাতি অথবা সংস্কৃতির ভেতর সীমাবদ্ধ নয়।
এটাও সত্যি যে পশ্চিমা মহিলারা যতই বিদ্রোহ করুক না কেন, পশ্চিমা পুরুষরা এখনো নিজেদেরকে মহিলাদের চেয়ে উচ্চতর পর্যায়ের সৃষ্টি মনে করে। কামলা খাটার ক্ষেত্রে অথবা বড় বড় মিটিং এর ক্ষেত্রে- যেখানেই মহিলা থাকুক না কেন তাদেরকে সবসময়ই পুরুষদের থেকে কম টাকা দেওয়া হয় এবং মিডিয়াতে মহিলাদের একধরনের পণ্যদ্রব্য হিসাবে ব্যাবহার করা হয়।
যারা এখনও দাবি করতে চাচ্ছেন যে ইসলাম আসলেই মহিলাদের উপর নিপীড়নকারী একটা ধর্ম তারা দয়া করে ১৯৯২ সালে দেওয়া প্যাট রবার্টসনের একটা বক্তব্য মনে করে দেখুন, এই বক্তব্যে তিনি নারীবাদকে সংজ্ঞায়িত করেছিলেন এভাবেঃ “নারীবাদ হচ্ছে সমাজতান্ত্রিক এবং পরিবার-বিরোধী রাজনৈতিক আন্দোলন যা মহিলাদের স্বামীকে তালাক দেওয়া, সন্তান হত্যা, পুঁজিবাদ ধ্বংস করা এবং সমকামী হতে শেখায়”
এখন আপনারাই আমাকে বলুন কারা বেশি সভ্য ও প্রগতিশীল ।
ঘটনা নংঃ ৪
সাবেক পপ-তারকা ক্যাট স্টিভেন্স একজন বিখ্যাত নও-মুসলিম। তার জন্ম হয়েছিল ১৯৪৮ সালে ব্রিটেনের এক খ্রিস্টান পরিবারে। তার বাবা ছিলেন একজন গ্রিক অর্থোডক্স খ্রিস্টান ও মা ছিলেন সুইডিশ ক্যাথলিক। অথচ স্টিভেন্স ব্রিটেনের প্রোটেস্টান্ট খ্রিস্টান সমাজে বসবাস করতে প্রোটেস্টান্ট ধর্মমত অনুযায়ী। মায়ের উৎসাহ পেয়ে স্টিভেন্স গান শেখেন। ফলে ২০ বছর বয়স হওয়ার আগেই তার ৮টি অ্যালবাম প্রকাশিত হয় এবং ব্যাপক খ্যাতি অর্জন করেন। তাঁর অ্যালবাম গুলো হলঃ
১৯৬৭: ম্যাথু এ্যান্ড পুত্র
১৯৬৭: নিউ মাস্টার
১৯৭০: মনা বোনে জ্যাকন
১৯৭০: টি ফর দ্যা টিলেরম্যান
১৯৭১: টিজার এ্যান্ড ফায়ারক্যাট
১৯৭২: ক্যাচ বাল এ্যাট ফোর
১৯৭৩: ফরেইনার
১৯৭৪: বুদ্ধ এ্যান্ড দ্যা চকোলেট বক্স
১৯৭৪: সাটারনাইট (লাইভ ইন টােকিও)
১৯৭৫: নাম্বারস
১৯৭৭: ইজিতসো
১৯৭৮: ব্যাক টু আর্থ
স্টিভেন্স ১৯৬৯ সালে যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত হন। তার শারীরিক অবস্থা এতই খারাপ হয়ে পড়েছিল যে চিকিৎসকরা তার বেঁচে থাকার সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছিলেন। প্রায় এক বছর ধরে হাসপাতালে থাকার পর তার মধ্যে বড় রকমের মানসিক পরিবর্তন ঘটে। এ সময় তিনি গভীর আগ্রহ নিয়ে প্রাচ্যের নানা ধর্ম সম্পর্কে পড়াশুনা শুরু করেন। এরপর থেকে তার গানের ভাবধারা ও পরিবেশ বদলে যেতে থাকে এবং সেগুলো হয়ে উঠতে থাকে আধ্যাত্মিক অর্থবহ।
স্টিভেন্স মরক্কো সফরে গেলে সেখানে আযানের সুমিষ্ট ধ্বনি তাকে বেশ আকৃষ্ট করে। এ সময় তার মনে যে ভাবনার উদয় হয়েছিল তা শোনা যাক তারই কথায়:
“মনে মনে ভাবলাম,আল্লাহর জন্য সঙ্গীত? এমন বিষয় তো আর কখনও শুনিনি। অর্থের জন্য সঙ্গীত, খ্যাতির জন্য সঙ্গীত এবং ব্যক্তির গায়ের জোর বা শক্তির জন্য সঙ্গীত—এ ধরনের কথা তো শুনেছি;কিন্তু আল্লাহর জন্য সঙ্গীতের কথা কখনও শুনিনি।”
স্টিভেন্স-এর পরবর্তী গানের ক্যাসেটগুলো আরো বেশি জনপ্রিয়তা অর্জন করে। ক্যাট স্টিভেন্সের ভাই ডেভিড জানতেন ক্যাট বিভিন্ন ধর্ম সম্পর্কে পড়াশুনা করতে খুব ভালবাসেন। তাই মধ্যপ্রাচ্য সফরের সময় ডেভিড তার ভাইয়ের জন্য ইংরেজি ভাষায় অনুদিত পবিত্র কুরআনের একটি কপি সংগ্রহ করেন এবং দেশে ফিরে এসে ওই কপিটি তার ভাইকে উপহার দেন।
পবিত্র কুরআন পড়ে ক্যাট স্টিভেন্স এত অভিভূত হন যে তিনি ইসলাম সম্পর্কে সার্বিক গবেষণা ও পড়াশুনা করার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি এ প্রসঙ্গে বলেছেন: “পবিত্র কুরআনের যে দিকটি সব কিছুর আগে আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল তা হল এ মহাগ্রন্থের কভারের ওপর লেখকের কোনো নাম ছিল না। এ উপহার ছিল এমনই মূল্যবান সম্পদ যে তা আমার জীবনকে বদলে দিয়েছে।
যাই হোক,শুরু করলাম কুরআন অধ্যয়ন। যতবারই এ মহাগ্রন্থ পড়তাম ততবারই প্রশান্তি অনুভব করতাম। মনে হত এ কুরআন যেন আমার জন্যই লেখা হয়েছে, তাই বার বার পড়েও তৃষ্ণা মিটত না। পবিত্র কুরআন পড়ে বুঝতে পারলাম যে ইসলামই হল সেই ধর্ম যার সন্ধান আমি করছিলাম। কারণ, আমার মনের সমস্ত প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেয়েছি এ মহান ধর্মে।
পবিত্র কুরআন আমার ওপর প্রভাব ফেলেছে কল্পনার চেয়েও অনেক গুণ বেশি। আমি বুঝতে পারলাম যে কুরআনের শাশ্বত বাণী নাজেল হয়েছে গোটা মানব জাতির চিরন্তন সৌভাগ্যের জন্যই। এ মহাগ্রন্থের বাণী খুবই সহজ ও স্পষ্ট। কুরআনের শব্দগুলো আমাকে খুবই বিস্মিত করে। এ পর্যন্ত জীবনে যত বই পড়েছি তার চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা বা ব্যতিক্রমধর্মী লেগেছে এ মহাগ্রন্থ।
পবিত্র কুরআন পড়ার আগে পার্থিব জীবনকে আমার কাছে এক দুর্বোধ্য রহস্য বা ধাঁধা বলে মনে হত। এ বিশ্ব জগতের যে একজন স্রস্টা রয়েছেন তা বিশ্বাস করতাম। কিন্তু জানতাম না এই যে স্রস্টা যাকে চোখে দেখা সম্ভব নয় তিনি কে। এটা জানার জন্য অনেক চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু কোনো ফল পাইনি। ঠিক যেন এমন এক নৌকার অবস্থায় ছিলাম যা উত্তাল ঢেউয়ের মধ্যে সুনির্দিষ্ট কোনো পথ খুঁজে পাচ্ছিল না। কিন্তু যখন পবিত্র কুরআন অধ্যয়ন করলাম তখন অনুভব করলাম যে এ বই যেন আমার সঙ্গে কথা বলছে। এভাবে এ মহাগ্রন্থের বাণীর মধ্যে পুরোপুরি ডুবে পড়েছিলাম।”
পবিত্র কুরআন অধ্যয়নের পর ধীরে ধীরে ইসলামী মূল্যবোধগুলোকে নিজ জীবনের ওপর প্রয়োগ করছিলেন ক্যাট স্টিভেন্স। মশগুল হতে থাকেন আল্লাহর ইবাদতে। মদ, ক্লাব ও পার্টি—এসব পাপপুণ্য অনুষ্ঠান এড়িয়ে চলছিলেন। অবশেষে গ্রহণ করেন পবিত্র ইসলাম ধর্ম। এভাবে ক্যাট স্টিভেন্স পরিণত হন ইউসুফ ইসলামে।”
ইউসুফ নামটি যোসেফ নামের আরবি রূপ। এই নামটি বেছে নেয়া প্রসঙ্গে সাবেক ক্যাট স্টিভেন্স বা নও-মুসলিম ইউসুফ ইসলাম বলেছেন: “আমি সব সময়ই যোসেফ নামটি পছন্দ করতাম। যে স্কুলে আমি প্রথম ভর্তি হই ও পড়াশুনা করেছিলাম সেই স্কুলটির নাম ছিল সেন্ট যোসেফ। অবশ্য এই নাম বেছে নেয়ার মূল কারণটি হল কুরআনের সুরা ইউসুফ অধ্যয়ন। এই সুরা দারুণভাবে নাড়া দিয়েছে আমার মনকে।”
ইসলাম ধর্ম গ্রহণের পর ইউসুফ ইসলাম মুসলমানদের প্রথম কিবলা অধ্যুষিত বায়তুল মুকাদ্দাস শহর সফর করেন। এই পবিত্র শহর সফরের কারণ তুলে ধরে তিনি বলেছেন, “এই পবিত্র স্থানে আমার ভাইয়ের জিয়ারতের সুবাদেই আমি সুপথ তথা ঈমানের সম্পদ পেয়েছি। মসজিদুল আকসা জিয়ারতের সময় যারা আমাকে নও-মুসলিম হিসেবে সনাক্ত করে ফেলে তারা আমার চার দিকে জড় হয়। আমি এই মসজিদে নামাজ পড়লাম ও অনেক কাঁদলাম। হায় আলকুদস! এ পবিত্র স্থান মুসলিম বিশ্বের হৃৎপিণ্ড। যতদিন এ হৃৎপিণ্ড অসুস্থ থাকবে ততদিন গোটা মুসলিম বিশ্বই অসুস্থ থাকবে। এই মসজিদুল আকসাকে দখল মুক্ত করা আমাদেরই দায়িত্ব। আমার দৃঢ় বিশ্বাস জাতিগুলো যদি কুরআন ও এর শিক্ষার আলোকে চলে তাহলে কুদস মুক্ত হবে। আসলে ফিলিস্তিন সংকট কেবল ফিলিস্তিনি জাতির সংকট নয়। বরং গোটা মুসলিম বিশ্ব এই সংকটের সঙ্গে সম্পর্কিত।”
সাবেক পপ তারকা ইউসুফ ইসলাম বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-কে নিয়ে সঙ্গীতের একটি অ্যালবাম রচনা করেছেন। তার কাছে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-কে সব সময়ই শান্তির প্রতীক বা আদর্শ বলে মনে হয়। নওমুসলিম ইউসুফ ইসলাম মনে করেন ইসলাম এমন এক ধর্ম যা অন্য সব ধর্মের কাছেও শান্তি ও সমঝোতার প্রচার-প্রসার ঘটাচ্ছে। তিনি বলেছেন, “বিশ্বনবী (সা.) নিয়ে রচিত সঙ্গীতের (সিডি) অ্যালবামটিতে আমি গোলাপ ফুলের সুঘ্রাণ দিয়েছি। তাই সিডিটি খোলার সাথে সাথেই শ্রোতা সুগন্ধ পান। এটা করার কারণ, গোলাপ ফুল বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)’র অস্তিত্বের প্রতীক। আমি চাই শ্রোতারা যখন এই অ্যালবামের গান শুনবেন তখন যেন তারা এ মহামানবের প্রতীকী সুঘ্রাণ অনুভব করেন।”
ইউসুফ ইসলাম হিসেবে অ্যালবামঃ
১৯৯৫: দ্যা লাইফ অব দ্যা লাস্ট প্রোফেট
১৯৯৯: প্রেয়ার অব দ্যা লাস্ট প্রোফেট
২০০০: এ ইজ ফর আল্লাহ
২০০১: বিসমিল্লাহ
২০০৩: আই লুক আই সি
২০০৫: ইন্ডিয়ান ওকান
২০০৬: ফুটস্টেপস ইন দ্যা লাইট
২০০৬: এ্যান আদার কাপ
২০০৭: ইউসুফস ক্যাফে সেশন
২০০৯: রোডসিঙ্গার
নও-মুসলিম ইউসুফ ইসলাম এখন ইসলামী জীবনের লক্ষ্য অর্জনের জন্য কঠোর প্রয়াস চালাচ্ছেন। মুসলমান হওয়ার পর তিনি কিছু দিন গান গাওয়া ও রেকর্ড করা ছেড়ে দিয়েছিলেন। বিয়ে করার পর তিনি ব্রিটিশ মুসলিম সমাজের সেবায় নিয়োজিত হয়েছেন। পপ তারকা হিসেবে তার বার্ষিক আয় ছিল দেড় মিলিয়ন ডলার। তার জমানো সেইসব অর্থ ও ভবিষ্যৎ আয়কে লন্ডন ও অন্যান্য অঞ্চলের মুসলমানদের শিক্ষার কাজে ও অন্যান্য দাতব্য খাতে ব্যয় করার পদক্ষেপ নিয়েছেন। মানব-দরদি শান্তি মিশন নিয়েও দেশে দেশে সফর করছেন সাবেক ক্যাট স্টিভেন্স। পৃথিবীর উত্তর থেকে দক্ষিণে এবং পূর্ব থেকে পশ্চিমে বিস্তৃত হয়েছে তার সফর।
এটা সত্য মুসলমান হওয়ার কারণে পাশ্চাত্যের শীর্ষস্থানীয় পপ তারকার পদটি এখন আর তার দখলে নেই, কিন্তু যা তিনি পেয়েছেন তা হল সবচেয়ে বড় সম্পদ তথা ঈমান ও আধ্যাত্মিক প্রশান্তি ।
ইসলাম যদি আসলেই কোন সন্ত্রাসের ধর্ম হতো তা হলে পৃথিবীতে এতা মানুষ পুনরায় ইসলাম গ্রহণ করতো না। এফবিআই এর রিপোর্টে জানা যায়, গত ৫০ বছরে ইসলাম গ্রহণের হার ৪৭% বৃদ্ধি পেয়েছে। অথচ গত ৫০ বছর ইসলামের অন্যতম নাযুক অবস্থা বিরাজ করছে।
বিষয়: বিবিধ
২৪৭৬ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
পূরোটাই পড়লাম
জাযাকাল্লাহ.....
আললাহ যাকে হেদায়াত দিতে চান ,
তার জন্য নসিহতের দরজা খুলে দেন
মন্তব্য করতে লগইন করুন