মুসলিমদের দায়িত্বানুভূতি আজ কোথায়???

লিখেছেন লিখেছেন শাহমুন নাকীব ফারাবী ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৫, ০৯:৫২:০৬ রাত

বছর দেড়েক আগে একদিন বাসায় গিয়েছি! উদ্দেশ্য বুক সেলফ থেকে কিছু বই সঙ্গে করে নিয়ে যাবো! পিডিএফ ফাইল পড়তে পড়তে চোখের সাড়ে সর্বনাশ ঘটিয়েছি! তারপর ডাক্তারের কাছে ছুটতেছি তা আজ অবধি চলমান আছে!

বই গুলো ঘাটতে গিয়ে দেয়ালের টাঙ্গানো আমার মেডেল গুলোর দিকে চোখ পড়ল! যেগুলো আমি ক্রিকেট ম্যাচের “ম্যান অব দ্যা ম্যা হিসেবে” পেয়েছিলাম! এসব অর্জন করতে গিয়ে আমি আমার জীবনের অনেক মূল্যবান সময় হারিয়েছি। আমি ক্রিকেট খেলা ছাড়ার আগে একটি ব্যাট উপহার পেয়েছিলাম। ব্যাটটির বাজার মূল্য প্রায় ২০ হাজার টাকা। আজ সেই ব্যাট আর মেডেলগুলোর বিন্দুমাত্রও মূল্যও আমার কাছে নেই। বাড়ি থেকে চলে আসার সময় মেডেল গুলোকে পুকুরের পানিতে ফেলে দিয়েছি। আর সেই ব্যাটের কোন খবর আমি ভুল করেও রাখি না।

আমার আফসোস হয়, আমি যদি এইসব মেডেলের বদলে একটি করে বই উপহার পেতাম! সেই ২০ হাজার টাকা দামের ব্যাটের চেয়ে যদি আমাকে ২০ টি বই উপহার পেতাম! তাহলে সেগুলো আমার সারাজীবনের শ্রেষ্ঠ সম্পদে পরিনত হত। জ্ঞান এমনই এক সম্পদ যা চাইলেই অর্জন কিংবা গ্রহণ করা যায়। অথচ এই জ্ঞানের যাবতীয় ধারক বাহক ছিলেন মুসলিমরাই।

জাবির ইবনে হাইয়ান জ্ঞান অর্জনে উৎসাহ দিতে গিয়ে বলেছিলেন,“আমার ধনদৌলত, টাকাকড়ি আমার ছেলেরা ভাইয়েরা ভাগ করে নিয়ে ভোগ করবে। কিন্তু জ্ঞানের দরজায় বারবার আঘাত করে আমি যে শিক্ষা দিয়ে গেলাম,তাই আমার তাজ হিসেবে চিরকাল শোভা পাবে”।

মুসলিম দার্শনিক আল রাজী বলেছেন,“জ্ঞান অর্জনের প্রতি আমার এতো তিব্র ক্ষুধা ছিল। যখনই কোন বই পেতাম সঙ্গে সঙ্গে পড়ে নিতাম। তিনি তাঁর ভবিষ্যৎ বংশধরদের জন্য দৈনিক ৬০ পৃষ্ঠা করে রচনা লিখতেন। যা একবছরে প্রায় ২০ হাজার পৃষ্ঠা। এসব কাজ করতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত আমি আমার চোখের আলো হারিয়ে ফেলি,অন্ধ হয়ে যাই। এরপরও আমি কাউকে কাছে পেলে তার কাছে বই পড়িয়ে শুনি। তাকে দিয়ে লেখাই।”

ইমাম বুখারী (রহঃ) যার পূর্ন নাম, আবু আব্দুলুল্লাহ মুহাম্মাদ ইবনে ইসমাইল আল বুখারী! তাঁর ইতিহাসের প্রতি ছিল দারুন অনুরাগ। তিনি ইতিহাস পড়তে উৎসাহ দিতে গিয়ে বলেন,“ ইতিহাসে এমন কোন নাম নেই যার সমন্ধে বিশেষ ঘটনা আমার জানা নেই। আর তিনি মাত্র ২০ বছর বয়সে জগৎবিখ্যাত বই, ‘কাদায়া আল সাহাবা ওয়ালা তাবেয়িন’ ও ‘আল তারিক আল কবির’ রচনা করেন।

দশম শতকের মাঝামাঝিতে আলেপ্পোর আমীর সায়েফউদ্দৌলার দরবারে তুর্কি পোশাক পরা একজন ক্ষুদ্রাকৃতির মানুষ হাজির হন। তাঁকে ৮-১০ টি ভাষায় অনর্গল কথা বলতে দেখে এবং ইসলাম ও দর্শনশাস্ত্র নিয়ে অসাধারণ পান্ডিত্য দেখে আমীর তাকে দরবারে সভাপতি নিয়োগ করেন। আর এই ব্যক্তির নাম বিখ্যাত মুসলিম দার্শনিক প্রাচ্যের মুয়াল্লিম সানি, আবু নসর মুহাম্মাদ আল ফারাবী।

এইসব অসাধারণ মেধাবী দার্শনিকদের বংশধর হয়ে আজ আমাদের বই পুস্তকের সাথে কোন সম্পর্ক নেই। আজ বই দেখলে মুসলিম শিশু তরুনদের গায়ে আগুন জ্বলে ‍উঠে। অথচ একমাত্র সঠিক জ্ঞান চর্চার কারণেই মুসলিমরা ইউরোপসহ গোটা বিশ্ব শাসন করেছে।

যারা মুসলিম বিশ্বের করুন অবস্থা দেখে আফসোস করেন, তাদের কে বলছি! একজন মুসলিম হিসেবে আপনার উপরও জ্ঞান অর্জনের দায়িত্ব বর্তায়। ঈমান আমল ও তাকওয়া অর্জনের পাশাপাশি জ্ঞান অর্জনকেও আল্লাহপাক ফরয করে দিয়েছেন। আর জ্ঞান চর্চার দিকে ধাবিত হলেই মুসলিমরা ফিরে পাবে তাদের হারানো গৌরব এবং ঐতিহ্য।

বিষয়: বিবিধ

১২০৪ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

355564
২৮ ডিসেম্বর ২০১৫ রাত ১০:৩৮
সাদাচোখে লিখেছেন : আস্‌সালামুআলাইকুম!
সুন্দর পোষ্ট। চমৎকার আহ্বান - সন্দেহ নেই।

ব্যাক্তিগতভাবে আমি মনে করি না যে, মুসলিমরা তাদের তথাকথিত হারানো গৌরব এবং ঐতিহ্য (যা জেনারেল সেন্স এ মিন করে) আর কখনো ফিরে পাবে। তবে নিঃসন্দেহে জ্ঞানঅর্জনে ব্রত হলে ট্রু আবদ্‌ হতে পারবে, আল্লাহর সন্তুষ্টি নিশ্চিত করতে পারবে, শান্তি ও স্বস্তি পাবে এবং কাল কেয়ামতের ময়দানে সাফল্যের দেখা পাবে।
২৯ ডিসেম্বর ২০১৫ সকাল ১১:৫৬
295281
আবু সাইফ লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ..

আমি হতাশ নই, বরং আশাবাদী-
বিশ্বে তাকালে এর আলামত দেখা যায়!!

মুমিন কখনো হতাশ হয়না!!
৩০ ডিসেম্বর ২০১৫ রাত ০৪:১৮
295364
ঘুম ভাঙাতে চাই লিখেছেন : উনি কোন বিশ্বাসভিত্তিক কথা বলেননি। জাস্ট হাদিসের ভবিষ্যতবাণীর আলোকে কথা বলেছেন। আমরা তো কতকিছুই পরিকল্পনা করি, কত কিছু ভাবি কিন্তু সব কি আমাদের ইচ্ছামত পরিকল্পনামাফিক হয়? সবসময় কি আমরা সফল হই ? আসলে কোন অদৃশ্যশক্তি আমাদের পরিকল্পনায় ধ্বস নামায়, আমাদের বুঝিয়ে দেয় আমরা আমাদের নিয়ন্ত্রক নই বরং অন্য় কারো দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। ইসলাম অন্ধভাবে বিশ্বাস করা শেখায়নি পথ দেখিয়ে দিয়েছে , সব জানিয়ে দিয়েছে তাই এখানে ধারনার কানাকড়ি মূল্য নেই। ইসলামের সফলতাও দুনিয়াকেন্দ্রিক না। এটাই উনি বলেছেন।
355569
২৮ ডিসেম্বর ২০১৫ রাত ১১:০৫
দুষ্টু পোলা লিখেছেন : ভালো লাগলো ধন্যবাদ পিলাচ
355590
২৯ ডিসেম্বর ২০১৫ সকাল ০৫:০৪
শেখের পোলা লিখেছেন : সহমত৷
355691
৩০ ডিসেম্বর ২০১৫ রাত ০৪:১৯
ঘুম ভাঙাতে চাই লিখেছেন : Really very nice article thanks for sharing.

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File