একজন মৌলবাদী মন্ত্রী এবং তার হিন্দু সচিবকে নিয়ে কিছু কথা.....
লিখেছেন লিখেছেন শাহমুন নাকীব ফারাবী ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৫, ০৫:০৯:১৬ বিকাল
এক শ্রেণীর লেখক আছেন, যারা সব সময় তাদের লেখনীতে সাম্প্রদায়িক দুঃখি মানুষের প্রতিচ্ছবি ফুটিয়ে তুলতে চান। আর এই কাজটিতে তারা সেই সব লোকদের দুঃখকে অতিরঞ্জিত করে প্রকাশ করতে গিয়ে তাদের দুঃখ গুলোকে আর দুঃখের জায়গায় রাখেন না। তখন সেগুলো হয়ে যায়, মানুষের চোখের বিষ! কারণ তখন সেখানে প্রতিযোগিতা চলে আসে। আমি কি বুঝাতে চাইছি, তা কি বুঝতে পারছেন? আমি সংখ্যালঘুদের কথা বলছি। আমাদের দেশের এক শ্রেণীর লেখকরা আছেন যারা প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের সঙ্গে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের নির্যাতন এর তুলনা করে থাকেন। আর এই কাজটি করার ক্ষেত্রে সর্বাধিক ভূমিকা পালন করে থাকেন তসলিমা নাসরিন গংরা!
তসলিমা নাসরিনের অধিকাংশ লেখনীতে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কথা থাকে। তার মধ্যে অন্যতম হল, তার রচিত “লজ্জা” নামক বইটি। বাবরি মসজিদ ভাঙ্গার পর বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর যে হামলার ঘটনা ঘটেছে তার জন্য মৌলবাদী গুষ্টিকে এক তরফা ভাবে দোষারোপ করেছেন। আর সেটিও একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলকে নির্দেশ করে বলা হয়েছে। যারা কিনা দেশে, আল্লাহর আইন এবং সৎ লোকের শাসন কায়েম করতে চায়। কিন্তু ইতিহাস এবং বাস্তবতা বলে ভিন্ন কথা! যা এক মতিউর রহমান রেন্টু তার অনবদ্য রচনা “ আমার ফাঁসি চাই ” বইটিতে প্রকাশ করে গেছেন। প্রয়াত রেন্টু লিখেছেন, “টিভিতে, ভারতের হিন্দু উগ্রবাদি গোষ্ঠি কতৃক বাবরি মসজিদ ভাঙ্গার দুশ্য দেখার পর, নেত্রী আমাকে ডাক দিলেন।তারপর বললেন, নেতাকর্মীদের খবর দাও,মাথায় টুপি আর গায়ে পাঞ্জাবি দিয়ে রাস্তায় নামতে বল! কারও হাতে যেন খালি না থাকে। সবার হাতে কেরোসিন আর মশাল আমার থাকা চাই। সংখ্যালঘুদের উপর হামলা করে মৌলবাদী গোষ্ঠি আর সরকারকে চাপে রাখার এটাই মোক্ষম সুযোগ”। তসলিমা নাসরিন গংরা এসব বই পড়েন কিনা তা আমার জানা নেই। কিন্তু ভারতের আখলাক,মেনন এবং আফজাল গুরুদের দিকে তাকালে আমরা সহজেই অনুধাবন করতে পারি প্রতিবেশী রাষ্ট্রে মুসলিম সংখ্যালঘুরা কিভাবে জীবন যাপন করে! কিন্তু বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়রা মৌলবাদীদের থেকে কি রকম আচরন পান তারই একটি ঘটনা আজ আপনাদের বলছি। আশা করব নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে লেখাটি পড়বেন।
স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে বেশ কয়েকজন মৌলবাদী ব্যক্তি আছেন যারা অতিমাত্রায় বিতর্কিত। ঠিক সেরকমই একজন গত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে মন্ত্রী হয়েছিলেন। তাঁর মন্ত্রীত্বের প্রথম দুই বছর ছিলেন কৃষি মন্ত্রী, সেখানে অসাধারণ সাফল্য দেখিয়ে শেষ তিন বছর তিনি শিল্প মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। কারণ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী চেয়েছিলেন,কৃষির মন্ত্রনালয়ের মত শিল্প মন্ত্রনালয়েও সাফল্য দেখতে। সবচেয়ে মজার বিষয়,তাঁর এই পুরো মন্ত্রীত্ব থাকাকালীন সময়ে সচিবের ভূমিকায় ছিলেন সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্তুভুক্ত জনৈক ব্যক্তি(সঙ্গত কারণে নাম লিখছি না)। সেই মন্ত্রী যখন কৃষি মন্ত্রনালয় থেকে শিল্প মন্ত্রনালয়ে চলে আসেন তখন সেই হিন্দু সচিবও অনেক চেষ্ঠা তদবির করে শিল্প মন্ত্রনালয়ে বদলি নিশ্চিত করেন।
একজন মৌলবাদী মন্ত্রীর ভিতরে সেই হিন্দু সচিব কী এমন খুঁজে পেলেন, যার কারণে তিনি সেই মন্ত্রীর পিছন ছাড়তে পারেন নি? কি এমন মায়া জালে পড়েছিলেন, যার কারণে তিনি এক মৌলবাদী বিতর্কিত মন্ত্রীকে এতোটা ভালোবেসে ফেলেছিলেন? সেই মন্ত্রীর ভিতরে কি এমন ছিল যে, সেই সচিব অনেক চেষ্ঠা তদবির করে তারই বদলিকৃত মন্ত্রনালয়ে স্থানান্তরিত হলেন? অথচ সেই ব্যক্তির নামেই আজ সংখ্যালঘুদের উপর হামলার অভিযোগ আনা হয়েছে। সেই অভিযোগে ক্যাঙ্গারু ট্টাইবুন্যাল হয়তো তাকে ফাঁসিও দিয়ে দিবেন। সেই বিতর্কিত ব্যক্তিই কিনা একজন সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ভুক্ত সচিবের, প্রিয় মানুষের পরিনত হলেন(!)
বিষয়গুলো রূপকথার গল্পের মত লাগছে,তাই না? লাগারই কথা! কারণ সংকৃন্যমনারা আর একজনের উদারপনার কথা শুনতে পারেন না। তারা মানবতা ধর্মের কথা বললেও, তাদের ভিতরে মানবতার লেশ মাত্রও খুঁজে পাওয়া যায় না। যা আছে তা শুধু তাবেদার গোষ্ঠিকে তোষামোদি এবং তাদের মনোরঞ্জনে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
অথচ তসলিমা গংদের কথানুসারে হওয়া উচিত ছিল, সেই সচিবকে রাঙ্গামাটি কিংবা বান্দরবান বদলি করে দেয়া হয়েছে! যেটাকে আমলাদের ভাষায় পানিশমেন্ট বলা হয়! আজকে যেসব সংখ্যালঘুরা মনে করেন, ইসলাম তাদের জন্য হুমকি তাহলে বলব আপনারা অন্ধকারে ডুবে আছেন। আপনারা ইসলামের ‘ই’ সম্বন্ধেও খবর রাখেন না। যদি রাখতেন তাহলে অবলিলায় স্বীকার করে নিতেন ইসলামই সংখ্যালঘুদের জন্য নিরাপত্তার বলয় তৈরী করে দেয়। আর মৌলবাদীরাই তাদের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয় স্থল।
আর তার প্রমাণ ইতিহাসের পাতায় ভরি ভরি রয়েছে। মক্কা বিজয়ের পর মুসলিমরা বিশ্ব বিজয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ল। তারই অংশ হিসেবে রাসূল (সঃ) এর প্রিয় সাহাবী আমর ইবনুল আস (রাঃ) আলেকজান্দ্রীয়া জয় করার জন্য তাঁর বাহিনী নিয়ে অগ্রসর হলেন। আলেকজান্দ্রীয় ছিল খ্রিষ্টান অধ্যুষিত এলাকা। খ্রিষ্টানরা মুসলিমদের রুখে দিতে তাদের সৈন্যবাহিনীকে সুসজ্জিত করল। তারপর আমর ইবনুল আস (রাঃ) এর বাহিনীর উপর মরণ কামড় দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ল। সে যুদ্ধে বহু মুসলিম মুজাহিদ শহীদ হলেও খ্রিষ্টানরা শেষ পর্যন্ত মুসলিমদের রন কৌশলের কাছে পেরে উঠে না। মুসলিমদের আধুনিক রনকৌশলের কাছে পরাজয় বরণ করে খ্রিষ্টান সৈন্যরা পালিয়ে যায় এবং বেশির ভাগই নিহত হয়।
সেই যুদ্ধে এতোবেশি মুসলিম সৈন্য শহীদ হন যা দেখে খ্রিষ্টান সাধারণ নাগরিকরা হকচকিয়ে যান। সাধারণ খ্রিষ্টান আর গির্জার পাদ্রীরা ভাবলেন এবার হয়তো তাদেরকে কচু কাটা করে মুসলিমরা তাদের সৈন্য হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণ করবে। কিন্তু মুসলিম সেনাপতি আমর ইবনুল আস (রাঃ) এর বক্তব্য এবং প্রস্তাব তাদের কে নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখায় ও অভিভূত করে। হযরত আমর বলেন, যারা আমাদের অানুগত্য স্বীকার করে এই রাজ্যে থাকতে চাও তাদেরকে জিজিয়া কর( অমুসলিমদের জন্য নির্ধারিত কর) দিয়ে থাকতে হবে। আর যারা আমাদের আনুগত্য স্বীকার করতে চাও না, তারা এই রাজ্য ছেড়ে চলে যাও! তোমাদের প্রতি আমাদের কোন দাবি কিংবা বন্দিত্বের বলয় নেই। খ্রিষ্টানরা সেই আলেকজান্দ্রীয়াতে জিজিয়া কর দিয়ে মুসলিম সৈন্যের পাহারায় সবচেয়ে নিরাপদে বাস করতে লাগল। এটাই ইসলাম। যা অন্য কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না।
বিষয়: বিবিধ
১২৯০ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন