ওয়াজ মাহফিল নামক ধর্ম ব্যবসা আর কতদিন চলবে........................

লিখেছেন লিখেছেন শাহমুন নাকীব ফারাবী ২২ ডিসেম্বর, ২০১৫, ০৮:৫০:১২ রাত

শহীদ লাভলু ভাই এর শাহাদাতের কয়েক মাস আগের ঘটনা,

.

একদিন মিঠাপুকুর বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে যোহরের নামায পড়ে লাভলু ভাই এর সঙ্গে দেখা হল। তাঁকে বেশ চিন্তিত লাগতেছিল। আমি চিন্তার কারণ জানতে চাইলাম! উনি বললেন, বিষয়টা খুব স্পর্শকাতর। তোমার কাছে কি এর কোন সমাধান আছে?

.

আমি বললাম, আগে সমস্যাটা শুনেই দেখি না! উনি বললেন, ওয়াজ করে হুজুরেরা যে টাকা নিচ্ছে এক একজন ৪০-৫০ হাজার টাকা দাবি করতেছে এটা কতোটুকু শরীয়ত সম্মত?

.

তাঁর এই প্রশ্ন আর এক বড় ভাই শুনলেন। তিনি আগ বাড়িয়ে বললেন, কেন বৈধতা থাকবে না? লোকটা যদি ঐসময় অন্য কোথাও কাজ করত, তাহলে তো সে টাকা পেত! যেহেতু সে তার কাজকে বিসর্জন দিয়ে দ্বীনের কাজ করছে তাই টাকাটা নেয়া ঠিক হবে! এসময় আর এক হুজুর আমাদের আলোচনায় সামিল হলেন! তিনিও ওয়াজ করেন! তাঁর রেট ২০ হাজার(!) তিনি ঐ ভাইয়ের বক্তব্যকে সমর্থন করলেন।

.

গুনীজনরা বলেছেন, বড়দের কথাকে কখনো সরাসরি ভুল বলতে হয় না! সেখানে জবাব দিতে গিয়ে বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিতে হয়। কতটুকু বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছি তা ঠিক জানি না! তাদেরকে বললাম, আপনাদেরকে একটা ঘটনা বলি শুনেন!

.

ইখওয়ান মুসলিমিনের প্রতিষ্ঠাতা ইমাম হাসানুল বান্না, প্রথম দিকে মিশরের কফিশপ গুলোতে স্বঃপ্রনোদিত হয়ে ওয়াজ করতেন কিংবা লেকচার দিতেন। তাঁর লেকচার এতোটাই তথ্যপূর্ন্ এবং জ্ঞানগর্ভ ছিল যে, তাঁর কথা শোনার জন্য কফি শপে ভিড় লেগেই থাকতো।

.

কফি শপের মালিকরা ইমাম হাসানুল বান্নাকে যখন কিছু খাবার খেতে অনুরোধ করতেন এবং পারিশ্রমিক বাবদ কিছু অর্থ নিতে অনুরোধ করতেন। তখন তিনি কফি শপের মালিক কে ‍শুনিয়ে দিলেন সূরা হুদের ১৫ নাম্বার আয়াত।

“ লোকসকল! এ উপদেশের জন্য আমরা তোমাদের কাছে কোন বিনিময় চাই না”।

[ঘটনাঃ হাসানুল বান্নার ডায়েরী দ্রঃ]

.

হিন্দু পুরোহিত থেকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করা আবুল হোসেন ভট্টাচার্যের নাম হয়তো শুনে থাকবেন। তিনি জীবনে এতো বেশি ওয়াজ মাহফিলে আমন্ত্রীত হয়েছিলেন যে, সেই সব মাহফিল থেকে যদি শুধু যাতায়াত বাবদ আরও টাকা গ্রহণ করতেন, তবে তিনি হতেন তৎকালীন সময়ের অন্যতম ধনী ব্যক্তি। তাকে টাকা নেয়ার জন্য জোর করলে তিনি সূরা বাকারার আয়াত শুনিয়ে দিতেন। “তোমার আল্লাহর কালামকে আহলে কিতাবদের ন্যায় স্বল্প দামে বিক্রি করে দিয়ো না”।(সূরা বাকারা)

.

অথচ শেষ জীবনে আবুল হোসেন ভট্টাচার্য টাকার অভাবে প্রায় বিনা চিকৎিসায় মারা যান। আল্লাহপাক তাঁকে জান্নাত দান করুন।

[ঘটনাঃ আবুল হোসেন ভট্টাচার্যের লেখা “আমি কেন ইসলাম গ্রহণ করলাম” বই দ্রঃ]

.

কিন্তু আজকে কিছু আলেম নামধারী শয়তান ওয়াজ মাহফিলকে পুঁজি করে সাধারণ মুসল্লিদের বোকা বানিয়ে নিজেদের উদর ভর্তি করছে।ওয়াজ নামক ব্যবসা খুলে বসেছে। এরা আলেম নয়,এরা ইসলামের সেবকও নও। বরঞ্জ এরাই ইসলামের সর্বাধিক ক্ষতি সাধন করছে। আল্লাহপাক সবাইকে সঠিক বুঝ দান করুন।

বিষয়: বিবিধ

১৬৩৩ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

355001
২২ ডিসেম্বর ২০১৫ রাত ০৯:১১
ঘুম ভাঙাতে চাই লিখেছেন : মাথাব্যাথা হচ্ছে বলে মাথাই কেটে ফেলতে হবে, এটা ঠিকনা। সমস্যা হল কিছু নামধারী আলেমদের এসব আলেমদের ভন্ডামির ব্যাপারে মানুষকে বোঝান। তা না করে ওয়াজ মাহফিল বন্ধ করার দাবি সঠিক মনে হয়না। দীন প্রচারের সব মাধ্যমই আস্তে আস্তে বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে সেখানে এটা বন্ধের দাবি আরো বরং ইসলামের অপকারেই বেশি কাজে দিবে। ওয়াজ মাহফিলে ধর্মব্যবসায়ীদের প্রবেশ বন্ধ করুন, প্রকৃত আলেমদের স্হান দিন।
355004
২২ ডিসেম্বর ২০১৫ রাত ০৯:২৪
শেখের পোলা লিখেছেন : জাকীর নায়েক আর ব্রাদার ইমরানের (ভারত) দ্বারা আল্লাহ একদিন এটা বন্ধ করেই ছাড়বেন৷ এরাও যেখানে যান টিকিট আর থাকা খাওয়া ছাড়া কোন পারিশ্রমিক নেন না৷ ডঃ ইসরার আহমাদ মরহুম ও কোনদিন কোন দেশে ওয়াজ করে টাকা নেননি অথচ তিনি ডাক্তারী করা দশ বছরে একটি বাড়ি করেছিলেন বাকী জীবন সেই বাড়ীর ভাড়ার টাকায় চলেছেন৷ বাকী প্রায় ৪০/৪৫ বছর দরিদ্রের জীবন কাটিয়েছেন৷ তাঁর শত শত ডিভিটি ক্যাসেট বই থেকেও তিনি কোন পারি্রমিক নেননি৷ সবটুকু আয় তাঁর তানজিমে ইসলামী আর খুদ্দামুল কোরআন একাডেমির জন্য ব্যয় হয়েছে, আজও হচ্ছে৷ধন্যবাদ আপনার সঠিক ভাবে জবাব দেওয়ার জন্য৷
355005
২২ ডিসেম্বর ২০১৫ রাত ০৯:২৪
গাজী সালাউদ্দিন লিখেছেন :
[q] “ লোকসকল! এ উপদেশের জন্য আমরা তোমাদের কাছে কোন বিনিময় চাই না”।

“তোমার আল্লাহর কালামকে আহলে কিতাবদের ন্যায় স্বল্প দামে বিক্রি করে দিয়ো না”।(সূরা বাকারা)[/q]

কিছু আলেম নামধারী শয়তান ওয়াজ মাহফিলকে পুঁজি করে সাধারণ মুসল্লিদের বোকা বানিয়ে নিজেদের উদর ভর্তি করছে।


কাউকে ভুল পথ থেকে ফিরিয়ে আনতে হলে এই ধরণের আক্রমণাত্মক শব্দ ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকা উচিত।
355009
২২ ডিসেম্বর ২০১৫ রাত ১০:০৫
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ওয়াজ মাহফিল গুলি কিন্তু অতি সামান্য হলেও এ্ই দেশে ইসলাম এর নামটুক বাঁচিয়ে রেখেছে। যেটা প্রয়োজন এই ওয়াজ মাহফিল গুলিতে প্রকৃত ইসলাম সম্পকে বক্তব্য দেওয়ার মত মানুষ বৃদ্ধি করা।
355023
২২ ডিসেম্বর ২০১৫ রাত ১০:৪০
মোহাম্মদ লোকমান লিখেছেন : দ্বীনি ইলম শিক্ষা করা এবং ঈমান তাজা রাখার জন্য ওয়াজ মাহফিলের গুরুত্ব অপরিহার্য্য। তবে দামদর না করাই উত্তম। এবং এটাকে ব্যবসায় হিসেবে গহণ করাও উচিৎ নয়। কিছু প্রয়োজনীয় খরছ অবশ্যই নেয়া যায়। ধন্যবাদ।
355024
২২ ডিসেম্বর ২০১৫ রাত ১০:৪৯
কালো পাগড়ী লিখেছেন : সূরা হুদের ১৫ নাম্বার আয়াত।

“ লোকসকল! এ উপদেশের জন্য আমরা তোমাদের কাছে কোন বিনিময় চাই না”।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File