মরহুমা বেগম রোকেয়া! আজ যদি আপনি বেঁচে থাকতেন আর নারীদের এরূপ অবস্থা দেখতেন। তাহলে নির্ঘাত হার্টএ্যাটাক করতেন।
লিখেছেন লিখেছেন শাহমুন নাকীব ফারাবী ০৯ ডিসেম্বর, ২০১৫, ১২:৪৭:২৮ দুপুর
মহিয়সী নারী খ্যাত বেগম রোকেয়ার জন্মস্থান রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলায়, আমার বাড়ি। তাই প্রয়োজনে বা অপ্রয়োজনে অনেকবারই বেগম রোকেয়ার গ্রামে গিয়েছিলাম। সেরকম একদিন সেখানে ঘুরতে গিয়ে একটা অদ্ভূদ এবং মজাদার ঘটনার মুখোমুখি হই। বেগম রোকেয়ার বাড়ির পাশে কিছু মানুষ ভাড়া অথবা সরকারী কোয়ার্টারে থাকেন। সম্ভবত তারা বেগম রোকেয়ার বাড়িকে ঘিরে গড়ে ওঠা সরকারী প্রকল্পে চাকরী করেন। সেই কতক পরিবারের মধ্যে এক দম্পত্তির মধ্যে ঝগড়া লেগেছে। বাড়ির বাহির পর্যন্ত তাদের ঝগড়ার শব্দ আসতেছিল এবং কথাগুলো ষ্পষ্ট শোনা যাচ্ছিল। তখন পুরুষ কন্ঠে শুনলাম,আজকে যদি বেগম রোকেয়া বাঁচি থাকিল হয় আর যদি মোর অবস্থা দেখিল হয়, তাইলে কোন দিন মহিলা মানুষক নিয়ে বই লিখল না হয়! তুই মোক যেংকা করি ডাঙ্গাইস এটা দেখলে বেগম রোকেয়া দাঁতকপাটি নাগিল হয়!
কথাগুলো শোনার পর নিজেরে হাসিটুকু দমিয়ে রাখা অবশ্যই কষ্টকর তা পাঠক নিশ্চয়ই অনুমান করতে পারছেন। তবে কথাগুলো কিন্তু অবান্তর নয়। আর আজকাল প্রায়ই পত্রিকায় নারী কতৃক পুরুষ নির্যাতনের কথা শোনা যায়। কিন্তু নারী জাগরনের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া কলেছিলেন,মেয়েদের এমন শিক্ষায় শিক্ষিত করিয়া তুলিতে হইবে, যাহাতে তাহারা ভবিষ্যৎ জীবনে আদর্শ গৃহিণী, আদর্শ জননী এবং আদর্শ নারীরূপে পরিচিত হইতে পারে। কিন্তু তারা আজ যে শিক্ষায় শিক্ষিত হচ্ছে তাকে সুশিক্ষা না কুশিক্ষা বলবেন! সে শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে তারা কি আদর্শ গৃহিনী, আদর্শ জননী কিংবা আদর্শ নারী হতে পেরেছেন কিনা তার বিচার ভার আজকের সমাজ এবং ভুক্তভোগীদের উপরই থাকল! আর তাদের বিচার কার্যে সহায়তা করতে পাঠকদের সামনে কয়েকটি পয়েন্ট তুলে ধরার চেষ্ঠা করছি।
কয়েকদিন আগে পত্রিকায় একটি বৃদ্ধাশ্রমের বিজ্ঞাপন দেখলাম। ঢাকা শহরসহ বাংলাদেশের সর্বত্র আজ বৃদ্ধাশ্রম গড়ে উঠতেছে। সংসারের সুখের কথা চিন্তা করে এবং পুত্র বধূর অত্যাচারে অতিষ্ঠিত হয়ে তাদের শেষ আশ্রয় ঘটে বৃদ্ধাশ্রম। আর এই নির্যাতনের ঘটনা ঘটে শিক্ষিক পুত্র বধূূদের দ্বারাই। তাহলে বেগম রোকেয়ার এই আন্দোলনের মূল্য থাকলো কোথায়। এ যেন উলু বনে মুক্ত ঝড়ানো হলো। বেগম রোকেয় বলেছিলেন,“আমরা সমাজের অর্থাঙ্গ, আমরা পড়িয়া থাকিলে সমাজ উঠিবে কিরূপে? কোন ব্যক্তি এক পা বাধিয়া রাখিলে সে খোড়াইয়া খোড়াইয়া কতদূর চলিবে? পুরুষের স্বার্থ ও আমাদের স্বার্থ নহে। তাহাদের জীবনের উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য যাহাই আমাদের লক্ষ্য তাহাই”। নারীরা সমাজ উদ্ধারের নিমিত্তে এসে আজ যেন সভ্যতাই লজ্জায় পতিত হচ্ছে। কারণ প্রাচীন কালেও অশিক্ষিত নারীদের দ্বারা পিতা-মাতাকে অসম্মানের এহেন কাজ করা হতো না। বরঞ্জ তখন বৃৃদ্ধা মাতারা পুত্র বধূদের ঘাড়ে চেপেই কবর যাত্রা করতেন। কিন্তু আজকের শিক্ষিত বধূদের সেই সময় কোথায়! বেগম রোকেয়া বলেছিলেন,“দেহের দুটি চক্ষুস্বরূপ, মানুষের সবরকমের কাজকর্মের প্রয়োজনেই দু’টি চক্ষুর গুরুত্ব সমান”। তবে আজকের সভ্যতা যেন নারী নামক চক্ষুর দিকেই বেশি ঝুঁকে পড়েছে।
এখন পর্যন্ত যতদূর লিখেছি তাতে মনে হতে পারে আমি নারী বিদ্বেসী! তবে আমি মনে হয় একটু বেশিই নারী ঘেসা। আমার আম্মাকে কয়েকদিন না দেখলেই অস্থির হয়ে যাই। বাস্তবিক অর্থে আমি নারী বিদ্বেসী নই বেগম রোকেয়ার বিরোধীও নই। তবে বেগম রোকেয়ার শিক্ষাকে অপব্যহার করে যারা তার শিক্ষাকে বিকৃত করেছে আমি তাদের বিরোধী এবং সেই বিকৃত শিক্ষার বিরোধী। বেগম রোকেয়া বলেছিলেন,পৃথিবীতে সর্বপ্রথম পুরুষ- স্ত্রীলোককে সমভাবে সুশিক্ষা দান করা কর্তব্য বলিয়া নির্দেশ করিয়াছিলেন হযরত মুহাম্মাদ (সঃ)। তিনি বলেছিলেন, শিক্ষা লাভ করা সব নর নারীর কর্তব্য। অথচ আজকের কতক মিডিয়া ব্যক্তিত্ব বলেন, বেগম রোকেয়া নাকি কথিত প্রগতিবাদী শিক্ষার পক্ষে ছিলেন। তিনি নাকি নারীদেরকে পর্দাভেদ করে সামনের দিকে এগিয়ে আসতে বলেছিলেন। বরঞ্জ বেগম রোকেয়া বলেছিলেন, ভগিনীরা! চক্ষু রগড়াইয়া জাগিয়া উঠুন, অগ্রসর হউন। বেগম রোকেয়া নারীদের তাদের আপন বলয়ে থেকেই জেগে উঠতে বলেছিলেন। তাদেরকে আজকের নারীদের ন্যায় অর্থনগ্ন হবার জন্য জেগে উঠতে বলেন নি।
(তথ্যসূত্রঃ বেগম রোকেয়া রচনাবলী থেকে সংগৃহিত)
আজকে বিভিন্ন গণমাধ্যমে নারীদের অধিকারের কথা বলা হয়। কয়েকদিন আগে এক সাংবাদিক বড় আক্ষেপ করে বললেন,“ ভাইরে! চ্যানেলে আজ তিন বছর থেকে কাজ করতেছি! কিন্তু কোন অগ্রগতি নাই! কেনো যে নারী হয়ে জন্ম হল না। তাহলে আজ আমার পদউন্নতি কেউ রুখতে পারতো না। সিইও এর এক নজরেই আমি উপরে উঠে যেতাম”।
এসব দেখে আজ আমার অবচেতন মন বলে ওঠে, মরহুমা বেগম রোকেয়া! আজ যদি আপনি বেঁচে থাকতেন আর নারীদের এরূপ অবস্থা দেখতেন। তাহলে নির্ঘাত হার্টএ্যাটাক করতেন।
বিষয়: বিবিধ
১২১২ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
-বেগম রোকেয়া হার্ট এটাক নয়, আত্নহত্যা করতেন হয় তো বা
এবার মূল কথায় আসি। সেকুলার শিক্ষাব্যবস্হা শুধুমাত্র নারী নয়, বরং নারী-পুরুষ সকলের জন্যই বিষফোড়া। যা মানুষের নীতি-নৈতিকতা, মূল্যবোধ, মানবিকতা, সহজাত প্রবৃত্তি ইত্যাদি প্রতিটি জিনিসই ধ্বংশ করে দেয় এবং মানুষকে তথাকথিত আধুনিক সেকুলার বিশ্বব্যবস্হার পিওর দাসে পরিণত করে। তাই শেকড় নিয়ে কথা বলুন, আগা, আগাছা, পরগাছা নিয়ে নয়।
মন্তব্য করতে লগইন করুন