শায়লার পরকীয়া এবং কিছু কথা..........................
লিখেছেন লিখেছেন শাহমুন নাকীব ফারাবী ০৭ ডিসেম্বর, ২০১৫, ০১:৫২:০৮ দুপুর
ঢাকার উত্তরায় বসবাসরত প্রবাসীর স্ত্রী শায়লা আমীনকে প্রায়ই তার একমাত্র মেয়েসহ বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে দেখা যায়। তার সারাদিনের কাজের মধ্যে অন্যতম কাজ হল, তার ৬ বছর বয়সী মেয়েকে স্কুলে নিয়ে যাওয়া এবং নিয়ে আসা। এই যাতায়াতের প্রাক্কালে শায়লা প্রায় লক্ষ্য করেন, একজোড়া উৎসাহি চোখ তার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। প্রথম দিকে বিষয়টি তেমন আমলে না নিলেও পরবর্তিতে যখন সেই একজোড়া তাকে সর্ববস্থায় অনুসরন করতে থাকে তখন শায়লা আমীন সেই জোড়া চোখের অধিকারীর প্রতি কিছুটা বিরক্তি এবং কিছুটা কৌতূহল বোধ করতে থাকে। সেই জোড়া চোখের অধিকারী তেজদিপ্ত তরুন চেহারা তাকে মুগ্ধ করে। একদিন মেয়েকে নিয়ে স্কুলে যাবার সময় তাড়াহুড়ো করে একটি বাসে উঠে বসলেন। প্রচন্ড ভড়ের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকতে শায়লার ভীষন অসস্থি লাগতেছিল। সেই সময় একজন আসন ছেড়ে বলে উঠল, আপনি এখানে বসুন। সেই লোকটির দিকে তাকাতেই শায়লা চমকে উঠল। এ যে সেই জোড়া চোখের অধিকারী। শায়লা আমীন তার মেয়েকে কোলে নিয়ে সেই আসনে বসে পড়ল। আর তার ঠিক পাশে দাঁড়িয়ে আছে সেই মানুষটি। বাসের প্রচন্ড ভীড়ের মাঝেও লোকটি একবার শায়লার দিকে এগিয়ে এসে বলল, আমি ইশতিয়াক! উত্তরায় থাকি। ভদ্রতার খাতিরে শায়লা বলল, আমি শায়লা আমীন। আমিও উত্তরায় থাকি। সেদিন এটুকুতেই সীমাবদ্ধ ছিল।
পরের সপ্তাহে মেয়েকে নিয়ে আড়ং এর শো-রুমে গেলেন কিছু কেনাকাটা করার জন্য। হঠাৎ একজন বলল, আপনি এখানে! শায়লা পিছন ফিরে দেখল সেদিনের সাহায্যকারী সেই তরুন ছেলেটি। এখনও সে কৌতূহলী চোখে শায়লার দিকে তাকিয়ে আছে। শায়লা বলল, মেয়ের জন্য কিছু কেনাকাটা করার জন্য বের হয়েছি। ইশতিয়াক নিজেই বলল, আমিও হালকা কিছু কেনার জন্য এসেছি। এরপর ইশতিয়াক বলল, চলুন না কোথাও গিয়ে বসি। শায়লা বলল, ঠিক আছে চলুন। তার নিকটবর্তি একটি কফি শপে বসল। ইশতিয়াক আগ বাড়িয়ে নিজের কথা বলতে লাগল। সে একটি কর্পোরেট অফিসে চাকরি করতেছে। উত্তরায় কয়েকজন বন্ধু মিলে একটি বাসা ভাড়া নিয়ে থাকে। ইশতিয়াকের স্মার্টনেস এবং উৎসুক চেহারা শোয়লাকে মুগ্ধ করে। ফেরার সময় ইশতিয়াক বলে, আমি কি আপনার মোবাইল নাম্বারটা পেতে পারি? শায়লা হেসে বলল, অবশ্যিই। শায়লা নিজের নাম্বরাট বলল, আর ইশতিয়াক নিজের মোবাইলে নাম্বারটা তুলে ডায়াল করল। শায়লার ফোনে কলার রিং বেজে উঠলে ইশতিয়াক বলে এটা আমার নাম্বার। এভাবেই তাদের প্রথম সাক্ষাতের দিনটি শেষ হয়।
এরপর প্রায়ই ইশতিয়াক শায়লাকে কল দিতে থাকে। স্বামী প্রবাসে থাকার কারণে নিঃস্বঙ্গ পুরুষহীন শায়লারও ইশতিয়াকের সঙ্গে কথা বলতে ভালো লাগতে শুরু করে। এভাবে প্রথমে তাদের মাঝে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। আর তাদের মাঝে মোবাইলে কথা বলা এবং সাক্ষাতের পরিমানও বাড়তে থাকে। এভাবে চলতে চলতে শায়লা কখন যে ইশতিয়াককে ভালোবেসে ফেলেছে সে নিজেও তা বুঝতে পারেনি। শায়লার পুরুষহীন জীবনে ইশতিয়াক নতুন প্রাণের দোলা দিতে থাকে। এক সময় তারা দু’জনে গভীর থেকে গভীরতর সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ল। শায়লার মেয়ে স্কুলে চলে গেলে ইশতিয়াক শায়লার বাসায় চলে আসত। এভাবেই তাদের সম্পর্কটা পরকীয়ার দিকে এগোতে লাগল। তারা প্রায়ই যৌন সম্পর্কে জড়াত। এখন তাদের বসবাস অনেকটা স্বামী স্ত্রীর মত। আর এই সম্পর্ক তৈরী হবার পর ইশতিয়াক প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে শায়লার কাছ থেকে টাকা নিতো। শায়রা ভাবতো, ইশতিয়াক আমাকে ভালোবাসে। তাছাড়া সে আমার চাহিদা পূরণ করতেছে। তাই ওর বিপদে আমি সাহায্য করতেই পারি। এভাবে চলতে চলতে একদিন শায়লার স্বামী বিদেশ থেকে দেশে চলে আসল। আর এ কারণে শায়লার সঙ্গে ইশতিয়াকের যোগাযোগটাও প্রায় বন্ধ হয়ে গেল। যার কারণে ইশতিয়াক সোনার ডিম পাড়া হাসের কাছেও যেতে পারছে না এবং নিজের প্রয়োজনে টাকাও নিতে পারছে না। শায়লার স্বামী প্রথমে ভেবেছিল দুই মাস পর আবারও বিদেশ চলে যাবেন। কিন্তু কী একটা ঝামেলার কারণে তিনি সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছেন। তিনি আর বিদেশ যাবেন না। এখন দেশেই ব্যবসা শুরু করবেন।
শায়লার স্বামীর এরূপ সিদ্ধান্ত পরবির্তনের কারণে শায়লা খুব চিন্তিত হয়ে পড়ল। একদিকে তার স্বামী সন্তান। আর অন্যদিকে তার প্রেমিক ইশতিয়াক। শায়লা অনেক ভেবে চিন্তে ইশতিয়াককে একদিন কফি শপে আসতে বলল। কফি শপে দেখা করে, শায়লা ইশতিয়াককে সব কথা খুলে বলল। তারপর বলল, তোমার সঙ্গে আমার আর যোগাযোগ রাখা সম্ভব নয়। ইশতিয়াক হঠাৎ করেই তেলে বেগুনে জ্বলে উঠল। কেন সম্ভব নয়? তোমাকে সম্পর্ক রাখতেই হবে! আর যদি সম্পর্ক না রাখো তা হলে তোমার আমার গোপন ভিডিও তোমার স্বামীর হাতে পৌছে যাবে! এ কথা শুনে শায়লার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ল। সে এতোদিন কাকে ভালোবেসেছে! শায়লা বলল, তুমি কি চাও? ইশতিয়াক বলল, আমার ৫০ লাখ টাকা লাগবে। শায়লা বলল, তুমি কি এই টাকার জন্যই আমার সঙ্গে সম্পর্ক করেছো! ইশতিয়াক বলল, হ্যা! এখন টাকা না দিলে তোমার সংসার টিকতে দিবো না! শায়লা কাঁদতে কাঁদতে বলল, তোমার যা ইচ্ছা হয় কর! এরপর ইশতিয়াক শায়লার স্বামীকে মোবাইলে কল দিয়ে সব কথা বলে। আর এও বলে আমাকে ৫০ লক্ষ টাকা না দিলে আপনার স্ত্রীর গোপন ভিডিও আমি ইন্টারনেটে ছাড়িয়ে দিবো। শায়লার স্বামী বিষয়টা শায়লাকে জিজ্ঞেস করলেন। শায়লাও স্বীকার করে নিলো। শায়লার স্বামী ইশতিয়াককে ৫০ লক্ষ টাকা দিল সেই সঙ্গে শায়লাকেও তালাক দিয়ে দিলো। এখন শায়লার জীবন সম্পূর্ন নিঃসঙ্গ। এখন তার জীবনে না আছে ইশতিয়াক না আছে তার স্বামী আর না আছে তার মেয়ে! (একটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে)
আজকে বাংলাদেশের সরকারের সঙ্গে ভারতেরও এমনি একটি পরকীয়া সম্পর্ক চলতেছে। যে সম্পর্কে বাংলাদেশ শায়লার ভূমিকায় ভারত ইশতিয়াকের ভূমিকায় এবং বাংলাদেশের জনগণ শায়রার স্বামীর ভূমিকা পালন করে আসছে। ক্ষমতায় রাখার বদলতে ভারত একের পর সুবিধা আদায় করে নিচ্ছে। সেই পরকীয়া সম্পর্কের জোরে সমুদ্র সীমা, ট্রানজিড, টিপাইমুখ বাঁধ, নদীর পানি, সমুদ্র বন্দর এবং সর্বশেষ বেন্ডউইথ ইন্টারনেট গ্রহণ করল ভারত। কিন্তু বিনিময়ে শায়লার শুধুমাত্র জৈবিক চাহিদা পূরনের মত আওয়ামিলীগকে ক্ষমতায় বসিয়ে রেখেছে ভারত।
ভারতের সমস্ত টিভি চ্যানেল বাংলাদেশের ক্যাবল সিষ্টেমে চললেও বাংলাদেশের একটি চ্যানেলও ভারতের আকাশসীমায় ছাড়পত্র পায় না। এতে করে সংস্কৃতির বিকাশ ঘটছে বলে এক শ্রেণীর আবালরা বললেও কিন্তু প্রায়ই শাহবাগের মোড় অথবা টিএসসি চত্বরে হাতে প্ল্যাকাড নিয়ে কোন কোন মধ্যবয়সী তরুনকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। যেখানে লেখা থাকে, ষ্টার জলসা,জি বাংলা বন্ধ কর বাংলাদেশের পরিবার রক্ষা কর। সবাই বলে লাভ নেই! কে শুনবে কার কথা! নাহ! এবার মনে হয় কথা শুনবে! কারণ এবার ষ্টার জলসা নয় জঙ্গিবাদের ধোঁয়া তুলে ভারতীয় ইসলামীক চ্যানেল পিস টিভি বন্ধ করার পায়তারা চলছে। অবস্থাটা মাথা ব্যথার কারণে পুরো মাথাটাকেই কেটে ফেলা।
আমাদের পাশ্ববর্তি রাষ্ট্র নেপাল যেখানে সমস্ত ভারতীয় চ্যানেল বন্ধ করে দিতে পারে, সেখানে বাংলাদেশ কেন সেই কথা ভাবতেও পারে না? নেপাল যে বাংলাদেশের তুলনায় খুব বেশি সমৃদ্ধ তা নয়। সমরেশ মজুমদারের “আট কুঠুরি নয় দরজা” উপন্যাসটি পড়লে নেপালের রাজনীতি সম্পর্কে মোটামুটি ধারনা পেয়ে যাবেন। আজকে যদি জঙ্গিবাদের ধোঁয়া তুলে পিস টিভির সম্প্রচার বাংলাদেশে বন্ধ করাই হয় তাহলে ভারতের সমস্ত চ্যানেলের সম্প্রচারও বাংলাদেশে বন্ধ করে দিতে হবে! আজকে পিস টিভির সম্প্রচার বন্ধের কথা উঠতে একটা ঘটনা মনে পড়ে গেল। ভিক্টোরিয়া যুগের বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী মিঃ গ্লাডষ্টোন একটি কুরআন হাতে নিয়ে নিয়ে House of Commoons এর সদস্য গণকে বলেন, “মুসলিমদের নিকট যতদিন এই গ্রন্থ বর্তমান থাকবে ততদিন পৃথিবীর বুকে আমরা আধিপত্য ও নিরাপত্তার সাথে থাকতে পারবো না। পিস টিভি বন্ধ করার কথা বলে সরকার যেন সেই কথারই পূর্নবতারনা করছেন।
পরকীয়াটা যে এক পাক্ষিক তা ক্রিকেটের দিকে তাকালেই বোঝা যায়! বাংলাদেশ টেষ্ট ষ্ট্যাটাস পাওয়ার ১৫ বছর হয়ে গেল কিন্তু আজ অবধি ভারতে বাংলাদেশকে নিজের দেশে খেলার জন্য আমন্ত্রন জানালো না। আগামী পাঁচ বছরেও সেই সম্ভাবনা নেই। আর বাংলাদেশের টেষ্ট ষ্ট্যাটাসের পাওয়ার বিরোধীতা করে যারা গলাবাজি করেছিল তাদের মধ্যে কিন্তু এই ভারতই অন্যতম। বাংলাদেশে চলছে বিপিএল। যেখানে ক্রিস গেইল, তিলকারাত্নে দিলশান, কুমার সাঙ্গাকারার মত তারকা ক্রিকেটাররা খেললেও ভারতের দ্বিতীয় ক্যাটাগরির ক্রিকেটারদেরকেও বাংলাদেশের লীগে খেলার ছাড়পত্র দেয়া হয় না।
শায়লার মত অন্ধভাবে পরকীয়া করে গেলে শেষ পর্যন্ত সরকারকে শায়লার পরিনতিই বরণ করতে হবে। নিজের অধিকারটুকু আদায় না করে সব দিয়ে দিলে পরবর্তিতে দেবার মত আর কিছুই থাকবে না। তখন ভারতও আজকের ক্ষমতাধরদের ডাষ্টবিনের সর্বনিম্নে ছুড়ে দিতে কুন্ঠাবোধ করবে না। যেখানে থাকবে না ক্ষমতা, থাকবে না প্রটোকল, থাকবে না ক্ষমতার বাহাদূরি!
বিষয়: বিবিধ
৩২৭৯ বার পঠিত, ৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
পরকীয়ায় সব হারালেন শ্যামলী
রুদ্র মিজান | ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৫, শনিবার, ১১:২৬
শ্যামলী সরকারি চাকরি করেন। স্কুল পড়ুয়া একমাত্র সন্তানকে নিয়ে রাজধানীর ইন্দ্রিরা রোডে থাকতেন তিনি। তার স্বামী থাকতেন মধ্যপ্রাচ্যে। স্বামীর এই দূরত্বটাই কাল হয়ে দাঁড়ায় শ্যামলীর জীবনে। কারণ এই সুযোগে তার জীবনে জড়িয়ে যায় আনিস। দীর্ঘদিন ছুটিয়ে প্রেম করেছেন আনিসের সঙ্গে। এই আনিসের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়েই জীবনের সর্বনাশ ঘটিয়েছেন এই নারী। এখন তার স্বামী নেই, আনিসও নেই। এখন একলা চলছেন তিনি।
শুরুটা ছিলো স্মরণীয়। সময়টা ২০০৭ সাল। দ্বিতীয় শ্রেণীতে পুড়ুয়া মেয়েকে স্কুলে নিয়ে যেতেন তিনি। আসা-যাওয়ার পথে প্রায়ই দেখা হতো এক যুবকের সঙ্গে। সুঠামদেহী এই যুবক অপলক তার দিকে তাকিয়ে থাকতেন। কিছু একটা বোঝাতে চেষ্টা করতেন শ্যামলীকে। সুযোগ পেলেই এই যুবক যে তার সঙ্গে কথা বলবে এতে কোন সন্দেহ নেই। ত্রিশোর্ধ শ্যামলী তা বেশ উপভোগ করতেন। কিন্তু এসবে জড়ানোর কোন ইচ্ছে ছিলো না তখন। যুবকের আচরণে কলেজ জীবনের প্রথম বর্ষের দিনগুলো মনে পড়তো খুব। কিন্তু এখন সেই সময়, অবস্থান নেই। শ্যামলীর স্বামী আছে। সন্তান আছে। তিনি জড়াতে চান না কিছুতেই। যদিও যুবককের সঙ্গে কখনও কখনও দেখা না হলে কিছু খারাপ লাগে- তা অনুভব করেন। তবু তাকে পাত্তা দিতে রাজি না তিনি।
কিন্তু যুবক নাছোড়বান্দা। একদিন একদম কাছাকাছি দুজন। সেদিন বাসে চড়ে মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে গুলশানে যাচ্ছিলেন তিনি। বাসে প্রচন্ড ভীড়। এরমধ্যেই তাকে উঠতে হয়। নারী সীটগুলো যাত্রীতে পূর্ণ দাঁড়িয়ে থাকেন। পাশে একটি সীট ছেড়ে যাত্রী নামেন। তাড়াহুড়া করে বসতেই দেখেন পাশের জন সেই যুবক। যুবকও চমকে উঠেন। তিনিও ভাবতে পারেননি এভাবে এই নারীর কাছাকাছি বসার সৌভাগ্য হবে তার। পথচলতে বারবার দেখার সুবাধে যুবকই জিজ্ঞাসা করেন, কেমন আছেন? তারপর পুরো পরিচয়, পরিবারে কে কে থাকেন.. কিছুই বাদ যায়নি তাদের আলাপচারিতায়। এই যুবকের নাম আনিস। কাজ করেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে মতিঝিলে। মহাখালীতে যানজটে আটকে যায় বাস। আনিস মুচকি হাসেন। ভালোই হলো, আপনার সঙ্গে আরও কিছু সময় কাটানো যাবে। নিজের অজান্তেই মিষ্টি হাসির আভা ছড়িয়ে যায় শ্যামলীর ঠোঁট থেকে। আনিস তাতেই আপ্লুত। শ্যামলীর ছোট্ট মেয়েটির গাল টেনে আদর করে দেন আনিস। গুলশান-১ নেমে যান শ্যামলী। আনিস জানালা দিয়ে হাত নেড়ে বিদায় জানান। জবাবে শ্যামলী মিষ্টি হাসি দেন।
এর দিন পরে মেয়েকে স্কুলে দিতে গেলে দেখা হয় আনিসের সঙ্গে। সেদিন পাশের কফি হাউসে বসেন দুজন। কফি পান করেন। ওই দিনই ফোন নম্বর চেয়ে নেন আনিস। তারপর থেকেই শ্যামলীর প্রতি দায়িত্বশীল আনিস। প্রতিদিনই ফোনে খোঁজ-খবর নেন। বিশেষ করে রাতে ঘুমানোর আগে। প্রথমে অল্প সময়। পরে আধা ঘন্টা থেকে এক ঘন্টা পর্যন্ত। দীর্ঘ সময় কথা হয় তাদের। হাসি-তামাশা হয়। এরমধ্যেই প্রবাসী স্বামী কল দিয়ে ফোন ব্যস্ত পান দীর্ঘ সময়। পরে মিথ্যা কথা বলে রক্ষা পান শ্যামলী। বিষয়টি আনিসের সঙ্গে আলোচনা করেন তিনি। পরবর্তীতে নতুন সংযোগসহ শ্যামলীকে একটি মোবাইলফোন উপহার দেন আনিস। ওই ফোনেই কথা হয় দুজনের। এই ফোনটি শুধুই আনিসের জন্য। আগের মোবাইলফোনে স্বামীসহ অন্যান্যরা কথা বলেন। আনিসের সঙ্গে কথা হয় গভীর রাত পর্যন্ত। বিশেষ করে বন্ধের দিনের আগের পুরো রাতই কথা বলে পার করে দেন তারা।
মোটরসাইকেলে করে শ্যামলীকে অফিসে পৌঁছে দেন। আবার বাসায় নিয়ে যান। বন্ধের দিন ছোট্ট মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে তারা বেড়াতে যান বিভিন্নস্থানে। এভাবে আর ভালো লাগে না। কাছে পেতে ইচ্ছে করে দুজনকে দুজনেরই। অবিবাহিত আনিস জানান, শ্যামলীর স্বামী-সন্তান না থাকলে তাকে বিয়ে করতেন তিনি। এভাবে থাকা খুব কষ্টকর। তারপর থেকে মাঝে মাঝে অফিস থেকে ছুটি নিয়ে বাসায় সময় কাটাতেন আনিস ও শ্যামলী। বিশেষ করে শ্যামলীর মেয়েটি যখন স্কুল থাকতো। ওই সময়টাই বেছে নিতেন তারা। এভাবে চলতে থাকে কয়েক মাস। পরে কখনও কখনও রাতেও একসঙ্গে থাকতেন তারা। বিষয়টি বাড়ির প্রহরীর দৃষ্টি এড়াতে পারেনি। এক বিকালে শ্যামলীর কাছে জানতে চান, ম্যাডাম ওই লোকটি প্রায়ই বাসায় আসেন। তিনি কি হোন আপনার?
শ্যামলীর গলা শুকিয়ে যায়। অবশ্য সময় নেননি। ছটফট বলে দেন- আমার খালাতো ভাই। ঢাকাতেই থাকেন। আমার স্বামী এলে এ বাসাতেই থাকবেন তিনি। তারপর গতি বেড়ে যায় আনিস-শ্যামলীর প্রেমের। এরমধ্যে কক্সবাজারে দুই দিন ছিলেন তারা। অফিসের সহকর্মীদের সঙ্গে ভ্রমনে যাচ্ছেন অজুহাতে সন্তানকে বোনের বাসায় রেখে যান। সম্পর্কের বিষয়টি বেশি দিন গোপন কথা গোপন রাখতে পারেননি তিনি। ২০১০ সালে আসে বড় ঝড়টি। স্বামী তখন দেশে। স্বামীকে নিয়ে ব্যস্ত শ্যামলী। আনিসকে সময় দেওয়ার মতো সুযোগ কম। মাঝে-মাঝে অফিসের পাশে দেখা হয় তাদের। তা অল্প সময়ের জন্য। এমন পরিস্থিতি মেনে নিতে পারেন না আনিস। এরমধ্যেই গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হন শ্যামলীর স্বামী। আনিসকে ফোনে খবরটি জানান শ্যামলী। দ্রুত শ্যামলীর বাসায় ছুটে যান আনিস। এর কিছু সময়ের মধ্যেই হঠাৎ ডাকা বাস ধর্মঘটের কারণে বাসায় ফিরে কলিং বেল চাপেন শ্যামলীর স্বামী। কিন্তু দরজা খোলা হয় না। আবার বেল চাপেন। এভাবে কয়েক মিনিট। তারপর দরজা খোলে দেন শ্যামলী। ড্রয়িংরুমে মেহমানের মতো বসে আছেন আনিস। চোখ বড় বড় হয়ে যায় শ্যামলীর স্বামীর। জানতে চান কে? সহকর্মী বলে পরিচয় দেন তিনি। তারপর ভেতরের কক্ষে গিয়ে এলোমেলো বিছানাটা চোখে পড়ে তার। বাসা থেকে বের হওয়ার আগেও যা গোছানো ছিলো। তারপর স্বামীর মুখে কোন রাঁ নেই।
এরমধ্যেই শ্যামলীর স্বামী খোঁজ নিতে শুরু করেন। পরদিন কথা বলেন বাড়ির প্রহরীর সঙ্গে। ওই রাতে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে প্রচন্ড বাকবিতন্ডা হয়। বাসা থেকে বের হয়ে ভাইয়ের বাসায় চয়ে যান। এর কিছুদিনের মধ্যেই শ্যামলীকে ডিভোর্স দেন তার স্বামী। ডিভোর্স লেটার হাতে পেয়ে আনিসের সঙ্গে দেখা করে তাকে বিয়ে করার প্রস্তাব দেন শ্যামলী। আনিস আমতা আমতা করেন। মাথা ঠান্ডা রাখতে বলেন। তারপর থেকেই আনিসের ফোন বন্ধ। যে বাসায় থাকতেন আনিস সেই বাসাতে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। বাসার মালিক জানিয়েছেন কয়েক দিন আগেই বাসা ছেড়েছেন তিনি। আনিসের বাড়ি বরিশালের পটুয়াখালীতে। এরচেয়ে বেশি জানা নেই শ্যামলীর। আনিসের কর্মস্থল মতিঝিলে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানের নাম কখনও জানতে চাননি তিনি।
এখন একমাত্র কন্যাকে নিয়ে ধানমন্ডির শঙ্করে বাস করেন এই নারী। তার প্রাক্তন স্বামী নতুন বিয়ে করেছেন। মেয়ের জন্য নির্দিষ্ট টাকা পাঠান তিনি। অন্যদিকে এখন আর আনিসকে খুঁজেন না শ্যামলী। শুধু চোখের জলে সিক্ত হন নিজের ভুলের কথা স্মরণ করে। স্বপ্ন দেখেন মেয়েকে নিয়ে। বলেন, আমার জীবন আমিই নষ্ট করেছি। আমার নিজেকে নিয়ে কোন স্বপ্ন নেই। আনিসের মতো ব্যক্তির খপ্পড়ে যেন কেউ না পড়েন এই কামনাই করেন তিনি। এ বিষয়ে হিইম্যান রিসোর্স এন্ড হেল্থ ফাউন্ডেশনের মহাসচিব আলমগীর সেলিম বলেন, প্রবাসীর স্ত্রী শুনলেই এক শ্রেণীর পুরুষ ওই নারীর সঙ্গে পরকীয়ায় জড়াতে চান। এটা অবশ্যয়ই ভালো উদ্দেশ্য না। মূলত জৈবিক উদ্দেশ্য থেকেই এটা হয়। এ থেকে সাবধান এবং সচেতন থাকতে হবে। স্বামী-স্ত্রীর ভালোবাসার বন্ধন দৃঢ় হতে হবে। প্রবাসে থাকলেও স্বামী-স্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগে সক্রিয় থাকা উচিত। দীর্ঘদিন দূরে না থাকাই ভালো বলে মনে করেন তিনি।
http://mzamin.com/detailsarchive.php?mzamin=OTIyMzQ=&s=MQ==
মন্তব্য করতে লগইন করুন