আমাকে শহীদ করে সামিল করে নিও হামযার মিছিলে

লিখেছেন লিখেছেন শাহমুন নাকীব ফারাবী ২৯ নভেম্বর, ২০১৫, ০৬:২১:০৮ সন্ধ্যা

আঙ্গিনার মাঝখানে সাদা কাফনে মোড়ানো একটি লাশ! লাশটিকে গোসল করানোর পরও গা বেয়ে তাজা রক্ত চুঁয়ে চুঁয়ে পড়ছে! সাদা কাফন ভিজে লাল হয়ে গেছে! সবাই অপেক্ষা করছে লাশটিকে কবর দেবার জন্য। কিন্তু কোথায় যেন একটা গোলমাল হয়ে গেছে! তাই অপেক্ষা করতে হচ্ছে! উৎসুক জনতা বাড়ির মাঝখানে ভিড় করে আছে। হঠাৎ একজন এসে বললেন, পুরুষ মানুষরা সবাই বাড়ির বাহিরে চলে যান! মাইয়্যাত এর আম্মা তার ছেলেকে শেষ দেখা দেখবেন!

লোকজন বাড়ির বাহিরে চলে গেলে মহিলারা ধীরে ধীরে সাদা কাফনে মোড়ানো লাশটির দিকে এগিয়ে এল। একজন এগিয়ে এসে কাফনের মুখ খুলে দিল দেখার জন্য! মুখটি খুলতেই দেখা গেল, লাশটির চোখের কোনা দিয়ে অঝরে রক্ত ঝরছে! এমন সময় চিৎকার দিয়ে একজন বললেন, আমার আহনাফের চোখ কোথায়? ওর চোখ নেই কেন? ওর মুখের দাঁত গুলো এমন হয়ে আছে কেন?

মুখ হাঁ করে থাকায়, আহনাফের আম্মা বললেন, আমার ছেলের জীহ্বাটাকেও ওরা কেটে ফেলতে পারলো!

হ্যাঁ কাটারই তো কথা! এই জীহ্বাটাই তো ওদের সবচেয়ে বড় ক্ষতি করেছে। ওর চোখ দু’টোই তো ওদের কে সবচেয়ে বেশি জ্বালিয়েছে! এই জীহ্বা দিয়েই তো আমার আহনাফ সবাইকে দ্বীনের পথে ডাকতো। তার এই চোখ দিয়েই তো কুরআন পড়ে মানুষকে সে পথে ডাকতো।

গতকাল সকালবেলা আহনাফ বাসা থেকে বেরিয়ে যায়! যাবার সময় আম্মা বলেন, কোথায় যাচ্ছো? ভাত হয়ে গেছে তো! অন্তত ভাতটুুকুতো খেয়ে যাও! আহনাফ বলে, আম্মা আমি কলেজে যাবো আর আসবো। আপনি ভাতে বেড়ে রাখুন আমি আসতেছি। এ কথা বলেই আহনাফ বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়!

এরপর সময় গড়াতে থাকে কিন্তু আহনাফ আর ফিরে না। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে গেল কিন্তু তারপরও আহনাফের ফেরার কোন নাম নেই। সন্ধ্যার দিকে আহনাফের আম্মা একটা খবর পান! কলেজে যাবার সময় পথিমধ্যে একটি সাদা মাইক্রোতে করে কয়েকজন মানুষ আহনাফকে তুলে নিয়ে গেছে! এই খবর পাওয়ার পর চারদিকে আহনাফের খোঁজ চলতে থাকে!

সারারাত খোঁজ করার পর আহনাফের আম্মা যখন ফজরের নামাযের জন্য উযু করতে ছিলেন, তখন আহনাফের কয়েকজন বন্ধু চ্যাংদোলা করে কাকে যেন বাসায় ঢুকাচ্ছে! আহনাফের আম্মা কি যেন মনে করে তাদের দিকে দৌড়ে গেলেন! গিয়ে দেখেন তাদের কাঁধে আহনাফেরই নিধর দেহ! এ দৃশ্য দেখার পর আহনাফের আম্মা সঙ্গে সঙ্গে অজ্ঞান হয়ে পড়ে যান।

আহনাফের বিধবা আম্মা এক ছেলে এবং এক মেয়েকে অবলম্বন করেই এতোদিন বেঁচেছিলেন। কিন্তু আজ সেই আহনাফও চলে গেল! আহনাফের আর ভাত খাওয়া হলো না। শেষ বিদায়ের সময় ক্লাস সিক্সে পড়া বোনটি বলে, ভাইয়া! আমিতো সূরা সফের শেষ আয়াত মূখস্ত করেছি! তুমি শুনবে না?

এরপর আহনাফ এর সঙ্গি সাথীরা তাকে কবরস্থানের দিকে নিয়ে যেতে লাগলো! আর আহনাফের আম্মা ওর রুমে গিয়ে বই পত্রগুলোতে আহনাফের স্পর্শ খুঁজতে লাগল! আহনাফের ডায়রিটির প্রথম পাতা খুলতেই চোখে পড়ল,“আমাকে শহীদ করে সামিল করে নিও হামযার মিছিলে আমীন”।

বিষয়: বিবিধ

১৩৮২ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

352023
২৯ নভেম্বর ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:৩০
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
২৯ নভেম্বর ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:৪১
292247
শাহমুন নাকীব ফারাবী লিখেছেন : আপনাকেও ধন্যবাদ
352024
২৯ নভেম্বর ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:৪৭
মাহমুদ নাইস লিখেছেন : আমাকেও...
২৯ নভেম্বর ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:৫২
292253
শাহমুন নাকীব ফারাবী লিখেছেন : আল্লাহ কবুল করুন
৩০ নভেম্বর ২০১৫ রাত ০৮:১৮
292398
মাহমুদ নাইস লিখেছেন : আমিন
352027
২৯ নভেম্বর ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:৫৬
আবু সাইফ লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ..


শেষ বিদায়ের সময় ক্লাস সিক্সে পড়া বোনটি বলে, ভাইয়া! আমিতো সূরা সফের শেষ আয়াত মূখস্ত করেছি! তুমি শুনবে না?



নিশ্চয়ই শুনবে- জান্নাতের বাগানে ঝর্ণার পাশে বসে (ইনশাআল্লাহ!)
২৯ নভেম্বর ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:৫৯
292261
শাহমুন নাকীব ফারাবী লিখেছেন : ইনশা আল্লাহু তায়ালা
৩০ নভেম্বর ২০১৫ রাত ০৮:১৯
292399
মাহমুদ নাইস লিখেছেন : ইন শা আল্লাহ
352031
২৯ নভেম্বর ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:২১
আকবার১ লিখেছেন :
২৯ নভেম্বর ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:৪৫
292270
শাহমুন নাকীব ফারাবী লিখেছেন : শিহরিত হলাম
352032
২৯ নভেম্বর ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:২৫
মনসুর আহামেদ লিখেছেন : চোখ দিয়ে পানি ঝড়ছে।
২৯ নভেম্বর ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:৪৬
292271
শাহমুন নাকীব ফারাবী লিখেছেন : কিছু বলবার ভাষা নেই

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File