বউ গেছে তাতে কি, নতুন বউ পেয়েছি...................

লিখেছেন লিখেছেন শাহমুন নাকীব ফারাবী ২৫ নভেম্বর, ২০১৫, ০১:৪৩:৫৪ দুপুর

প্রখ্যাত সাংবাদিক মোনাজাতউদ্দিন এর গ্রামগঞ্জের সংবাদে খুব ইন্টারেষ্টিং একটি ঘটনা পড়েছিলাম। ঘটনাটি সম্ভবত বৃহত্তর রংপুরের এক শ্রমিক নেতার। ঘটনাটি লেখকের ভাষায় লিখছি।

একদিন সন্ধ্যায় আমরা কয়েকজন সাংবাদিক সহ প্রেসে আড্ডা দিচ্ছিলাম। এমন সময় বাশার নামের ভাঙ্গা চোয়াল এবং লিকলিকে শরীর নিয়ে শ্রমিক নেতা প্রেসে প্রবেশ করল। সে আমাদের পূর্ব পরিচিত। প্রায়ই তাকে বিভিন্ন রাস্তাখাটে মিছিল করতে দেখা যায়। মিছিল শেষে শ্রমিকদের উদ্দেশ্যে জ্বালাময়ী বক্তৃতা দিতেও দেখা যায়। সেই নেতা হঠাৎ পত্রিকা অফিসে আসার কারণ কি হতে পারে? নিশ্চয়ই শ্রমিকদের বিষয়ে কিছু বলতে চায়! কিন্তু বাশার নামের লোকটিকে উদ্ভ্রান্তের মত দেখাচ্ছিল। মনে হচ্ছে যেন, তার উপর দিয়ে ঝড় বয়ে গেছে! সে বিড়বিড় করে কাকে যেন গালিও দিচ্ছিল। বাশার বলল, রিপোর্টার সাব! আমার একখান সংবাদ আছে! ছাপে দিবার পারবেন! ছাপতে কয় ট্যাকা লাগবে, কন? এ কথা বলে, বাশার পকেট থেকে কয়েকটি পাঁচ টোকার মোড়ানো নোট বের করল! তখন এক রিপোর্টার বলল, সংবাদ ছাপাতে টাকা লাগে না! কি হয়েছে তাই বলেন? বাশার বলল, একখান ছবি ছাঁপা লাগবে! সে পকেট থেকে একটি মুখ খোলা খাম আমাদের দিকে এগিয়ে দিল! খামের ভিতরে এক মধ্যবয়স্ক নারীর ছবি! বাশার বলল, এই মহিলা আমার বউ! গত দিন হল সে পালিয়ে গেছে! এই ব্যাটি আমার মান সম্মান সব শেষ করে ফেলেছে! এখন ছবি পত্রিকায় প্রকাশ করে দিয়ে ওর মান সম্মান খামু! বাশার কে শান্ত হতে বলি এবং পুরো ঘটনা খুলে বলতে বলি! সে বলল, ওর সঙ্গে তিন বছর ভালোবাসা করার পর বিয়ে করেছি! বিয়ের ছয় মাসের মাথায় আমার এক বন্ধু খুব ঘন ঘন আমাদের বাড়ি আসা শুরু করল। ওকে স্নো পাউডার কিনে দিতে লাগল। কিন্তু আমার বুঝে উঠার আগেই ওরা অনেক দূর পৌছে গেছে! গত পরশু রাতে বাড়ি ফিরে দেখি দরজা খোলা! ভাবলাম, বউ হয়তো ভুল করে দরজা খুলে রেখেই ঘুমিয়ে পড়েছে। কিন্তু ঘরে গিয়ে দেখি বউ নেই। সব জায়গা খোঁজ করলাম কিন্তু বউ নেই। তখন কি মনে করে ঐ বন্ধুর বাড়ি গেলাম! ওর বউকে জিজ্ঞেস করলাম, কোথায় সে? ওর বউ বলল, একটা কাজ আছে বলে সেই সকালে বেরিয়ে গেছে আজও আসেনি! তারপর নিশ্চিত হই, আমার বউ ওর সঙ্গে পালায় গেছে! এরপর বাশারকে বুঝিয়ে শুনিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেই! বলি এই সংবাদ প্রকাশ হলে তোমার নিজেরই ক্ষতি। এই ঘটনার ঠিক পাঁচ বছর পর বাশারের সঙ্গে ঢাকায় দেখা! সঙ্গে ঘোমটা দেয়া বউ এবং তিনটি বাচ্চা! তখন ভাবলাম, তার আগের বউ কি ফিরে এসেছে নাকি নতুন বিয়ে করেছে? আর নতুন বিয়ে করলে এতো বড় বড় বাচ্চা কি করে হবে? বাশার আমার মনের অবস্থা বুঝতে পেরে, আমাকে এক কোনায় নিয়ে গেল! সে বলল, রিপোর্টার সাব! আমার যে বন্ধুটা আমার বউকে নিয়ে পালিয়েছিল, সেই বন্ধুরই বউ এটা! ও আমার বউকে ভাগিয়ে নিয়েছে। আমি ওর বউকে নিয়েছি। সঙ্গে রেডিমেড তিনটা বাচ্চাও পেয়েছি!

গত সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরী চত্বরে আড্ডা দিচ্ছিলাম। সে সময় পাবলিক লাইব্রেরী চত্বরের অভ্যন্তরের শওকত ওসমান মিলনায়তনে কোন এক সাংস্কৃতিক সংগঠনের ব্যনারে একটি অনুষ্ঠান চলতেছিল। যার প্রধান অতিথি ছিলেন, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী মোজাম্মেল হক।মিডিয়ার ভাষায় আমি বা আমরা স্বাধীনতা বিরোধী শক্তির সাপোর্টার। এ রকম কোন অনুষ্ঠানে আমাদের যাওয়ার সুযোগ খুব কমই হয়েছে। মাননীয় মন্ত্রী প্রধান অতিথি হিসেবে কি বক্তব্য দিতে পারে, তা হয়তো অনেকেই ধারনা করতে পারছেন! তিনি বলেন,“আমাদেরকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদবুদ্ধ হতে হবে। সেই চেতনার সংস্কৃতিকে আমাদের লালন করতে হবে”। বক্তৃতা পর্ব এবং আরও আনুষাঙ্গিক বিষয়াদির পর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু হল। প্রথমেই নাচ। আমরা ভাবলাম হয়তো নাচ হবে, ধন ধান্যে পুষ্পে ভারা আমাদেরই এই বসুন্ধরা টাইপের কিছু! কিন্তু মঞ্চের পাশে সাজিয়ে রাখা সাউন্ডবক্সে বেজে উঠল, আমাদের প্রতিবেশী দেশের হিন্দি গান! আমার পাশের জনকে বললাম, ভাই! এই গানটির কি নাম! তিনি বললেন, ঐ যে সানি লিওনের নাম শুনেনি? সে যে বেবি ডল গানটিতে নেচে ফাটিয়ে দিল! সেই গান এটি! সানি লিওন পর্ব শেষ হলে এর পরের জনও আর এক হিন্দি গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করলেন। চেতনাময় সংস্কৃতির চর্চা দেখে মন্ত্রী মহাশয় দ্রুত হল ত্যাগ করলেন। জানি না মন্ত্রী মহাশয় বেজার হয়েছেন কিনা? তবে যে চেতনা প্রতিবেশী রাষ্ট্রের গভীর অধ্যাবসায়ের কারণে আমরা পেয়েছি, সেখানে তাদের চেতনাময় সংস্কৃতিকে বরণ করে নিলে খুব একটা ক্ষতি হবে বলে মনে হয় না। যদি সঙ্গে পাওয়া যায়, সানি লিওনের মত রেডিমেট অনুকরনীয় শিল্পী বৃন্দ! অবস্থাটা এমন,বউ পালিয়ে গেছে তাতে কি! আর একটা বউ তো পেয়েছি! বাংলার ইতিহাসে হিন্দি সংস্কৃতি ঢুকেছে তাতে কি উর্দুকে তো তাড়াতে পেরেছি! সংস্কৃতির বদলে সংস্কৃতি পেয়েছি!

বাংলাদেশের রাস্তাঘাটে পুলিশের উপস্থিতি এবং কারণে অকারণে তল্লাশি চালানো দেখলে মনে হয় যেন, সরকার দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে দারুণ চিন্তিত। কিন্তু বাস্তবতা যেন ভিন্ন কথা বলে? চোরের ভয়ে, ছাগল কে বাঘের জিম্মাদারিতে রেখে গেরেস্তো নিশ্চিন্তে থাকলে লোকে যমন তাকে পাগল বলবে, তেমনি প্রতিবেশী রাষ্ট্রকে ট্রানজিট নামক ব্যবস্থা প্রদান করে দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে জোরালো করাকে পাগলেরই কাজ বলতে হয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের খসড়া রিপোর্টে ভারতের সেভেন সিস্টার অঞ্চলকে অনেকটা ল্যান্ড লক্ড হিসেবে দেখিয়ে ভারতকে ট্রানজিট দেয়ার পক্ষে যুক্তির অবতারণা করা হয়েছে। বলেছে বাংলাদেশ মাঝখানে থাকায় ভারতের ত্রিপুরাকে প্রায় ১৬শ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে কলকাতা বন্দরে যেতে হয়, সেই কারণেই নাকি ভারতকে ট্রানজিট দেয়া অপরিহার্য। কিন্তু আমাদের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জানা নেই ইতিহাস। ভারতের ত্রিপুরা মিজোরামের সাথে ভারতের অন্যান্য অঞ্চলের যোগাযোগ ও লেনদেনের সুবিধার জন্য '৪৭ সালে দেশ বিভাগের সময় বাংলাদেশের প্রাপ্য করিমগঞ্জকে করিডোর হিসেবে ভারতের দিয়ে দেয়া হয়। সুতরাং দেশ বিভাগের সময়ই ত্রিপুরা মিজোরামের সাথে ভারতের অন্যান্য অঞ্চলের যোগাযোগ রক্ষার ব্যবস্থা বাংলাদেশ করে দিয়েছে। ত্রিপুরাকে কলকাতা বন্দরে যাবার জন্য অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হয় একথা সত্য। কিন্তু এই সমস্যাটা কি ত্রিপুরা মিজোরামের একার? ভারতের অন্য অঞ্চলের কি নেই? কলকাতা বন্দরে যাবার জন্য ত্রিপুরাকে ১৬শ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হয়, কিন্তু ভারতের হিমাচল প্রদেশকে তার নিকটবর্তী মুম্বাই বন্দরে যেতে ১৭৪২ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে হয়। আর জম্মুকে মুম্বাই বন্দরে যেতে পাড়ি দিতে হয় ২২৭৫ কি. মি. ,দেখা যাচ্ছে ত্রিপুরার চেয়ে আরও খারাপ অবস্থায় আছে ভারতের কিছু প্রদেশ। সুতরাং দূরত্ব কোনো বিষয় নয়।

ভারত আসলে তার পূর্বাঞ্চল অর্থাৎ সেভেন সিস্টারের সঙ্গে বহুমুখী ট্রানজিট চায় অর্থনৈতিক কারণে নয় সামরিক কারণে। বহুমুখী ট্রানজিটের নামে বহুমুখী করিডোরের পথে ভারত দ্রুত সৈন্য অস্ত্র আনা-নেয়া করতে যেতে চায় তার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে। টার্গেট উলফা দমন এবং স্বাধীনতাবাদীদের দমন করা।

যে বাংলাদেশকে ব্যবহার করে উলফা দমন করা হবে, সেই বাংলাদেশকে কি উলফা ছেড়ে দিয়ে কথা বলবে? সেভেনসিষ্টারের সেই সব ফ্রিডম ফাইটাররা শুধু ‍মুখে আঙ্গুল পুরে বসে থাকবে না! এর ফলে হয়তো বাংলাদেশের আপামোর জনসাধারণকে চড়া সুদে মূল্য দিতে হবে!

বিষয়: বিবিধ

১৩৩২ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

351401
২৫ নভেম্বর ২০১৫ দুপুর ০১:৫৯
হতভাগা লিখেছেন : এই সরকারের মন্ত্রীদের ভারতীয় শিল্পীদের ব্যাপারে মারাত্মক ফ্যাসিনেশন আছে
২৫ নভেম্বর ২০১৫ দুপুর ০২:০১
291690
শাহমুন নাকীব ফারাবী লিখেছেন : হুম সেটাই তো দেখতেছি!
২৫ নভেম্বর ২০১৫ দুপুর ০২:০৫
291691
হতভাগা লিখেছেন : সামুতে যে পোস্ট দিছেন ঐখানের পোলাপানরা তো আপনাকে গালির উপর রাখবে !
২৫ নভেম্বর ২০১৫ দুপুর ০২:১৫
291694
শাহমুন নাকীব ফারাবী লিখেছেন : সেই আশঙ্কা নিয়েই দিয়েছি!তার উপর পরের আইডিতে। আমার তিনটা আইডি ব্যন করে দিয়েছে!
351404
২৫ নভেম্বর ২০১৫ দুপুর ০২:০৫
নূর আল আমিন লিখেছেন : মূল্য দেওয়ার আর কি আছে? সেই ৭১ থেকেই তো দিয়ে আসতেছে এই জাতী, তবে এতোদিন ছিলো ভারতের অঘোষিত গোলাম, এখন হব স্বঘোষিত//
২৫ নভেম্বর ২০১৫ দুপুর ০২:১৬
291695
শাহমুন নাকীব ফারাবী লিখেছেন : গোলাম হবার আর কিছু বাকি আছে বলে মনে হয় না!
351418
২৫ নভেম্বর ২০১৫ দুপুর ০২:৪৮
নকীব কম্পিউটার লিখেছেন : ভালো লাগলো ধন্যবাদ
২৫ নভেম্বর ২০১৫ দুপুর ০৩:০৩
291716
শাহমুন নাকীব ফারাবী লিখেছেন : আপনাকেও ধন্যবাদ
351480
২৫ নভেম্বর ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:৪৯
মোঃ আবু তাহের লিখেছেন : সেই ‘৪৭ সাল থেকে আজ অবধি ইন্ডিয়া আমাদেরকে গোলাম করে রাখার জন্য যারপর নাই সব ধরনের চেষ্টাই করেছে। এক্ষেত্রে তারা সফলও হয়েছে।
লজ্জার বিষয় হলো আমরা প্রায় সব সময়েই অন্যের গোলামী করতে, অনুকরণ-অনুসরণ করতে কেন জানি ভাল বাসি! আমরা যদি এই গোলামী পরিহার করতে না পারি তাহলে ভবিষ্যতে আমাদেরকে আরো চরম মূল্য দিতে হতে পারে। তাই এখনই সময়, তরুন আর যুবকদের জেগে ওঠার। এসব অন্যায় আর অপ-সংস্কৃতির কড়া প্রতিবাদ আর প্রতিরোধ করার।
২৬ নভেম্বর ২০১৫ রাত ০৯:৪৬
291931
শাহমুন নাকীব ফারাবী লিখেছেন : জি যথার্থ বলেছেন
351510
২৫ নভেম্বর ২০১৫ রাত ০৮:৫৮
শেখের পোলা লিখেছেন : এখানেওতো সেই শান্ত্বনা আমরা এইট সিস্টার হই তাতে কি পাকিস্তানকেতো তাড়িয়েছি৷ ধন্যবাদ৷
২৬ নভেম্বর ২০১৫ রাত ০৯:৪৭
291932
শাহমুন নাকীব ফারাবী লিখেছেন : আপনাকেও ধন্যবাদ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File