বিক্রিত মাল ফেরত দেয়া যায় না................................।
লিখেছেন লিখেছেন শাহমুন নাকীব ফারাবী ২১ নভেম্বর, ২০১৫, ০৬:৩০:৪৩ সন্ধ্যা
‘বিক্রিত মাল ফেরত নেয়া হয় না’ অনেক দোকানে এমন লেখাটি প্রায়শ দেখা যায়। এই ক্ষুদ্র বাক্যটির সঙ্গে আমরা অনেকটাই পরিচিত। প্রকৃত অর্থেই কোন ভালো কিছুর বিনিময়ে যখন আমাদের সামান্য সম্পদ বিক্রি করি পরে তা আর ফেরত নেয়া যায় না কিংবা ফেরত নেই না। কারণ ফেরত নিতে চাওয়াটা আমাদের কাছে লজ্জাজনক কাজ মনে হয়।
তেমনি আমরা অনেকেই হয়ত জানি না কিংবা যারা জানি তারা আবেগের তাড়নায় ভুলে যাই, মহান রবের সাথে আমাদের কৃত সেই চুক্তির কথা। আমাদের এই সামান্য জীবনের বিনিময়ে আল্লাহপাকের কাছ থেকে জান্নাত কিনে নিয়েছি ।
নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’য়ালা মু’মিনদের থেকে তাদের প্রাণ ও ধন-সম্পদ জান্নাতের বিনিময়ে কিনে নিয়েছেন। তারা আল্লাহর পথে লড়াই করে অতপর তারা (কাফেরদের) মারে এবং (নিজেরাও) মরে। তাদের প্রতি তাওরাত,ইনজিল ও কুরআনে (জান্নাত) দানের পাকাপোক্ত ওয়াদা করা হয়েছে। আল্লাহর চাইতে বেশি ওয়াদা পূরণকারী কে আছে ? অতএব (হে মুমিনরা) তোমরা খুশি হয়ে যাও সেই বেচা-কেনা জন্য যা তোমরা আল্লাহার সাথে করেছো। আর এটিই সবচেয়ে বড় সাফল্য।
(সুরা তওবা ৯ম সুরা -১১১ নং আয়াত)
যখন আমরা মুমিন হয়েছি , কালেমা পড়েছি, সাথে সাথেই তো আমরা আল্লাহপাকের নিকট হতে জান্নাত কিনে নিয়েছি বিনিময়ে আল্লাহপাককে আমাদের জীবন দিয়ে দিয়েছি। আর তাইতো কাদের মোল্লা, কামারুজ্জামানরা হাসতে হাসতে ফাঁসির দড়ি গলায় পরে আর মুজাহিদরা হাসিমুখে অপেক্ষা করে ।
আপনি বলুনঃ আমার নামায, আমার কোরবাণী এবং আমার জীবন ও মরন বিশ্ব-প্রতিপালক আল্লাহরই জন্যে।
(সূরা-আল-আন-আম, আয়াত নং ১৬২)
আমাদের শুভাকাঙ্ক্ষী , সুধী এমনকি কোন সময় শত্রুপক্ষরাও বলার চেষ্টা করে যে , আমাদের দিয়ে কিচ্ছু হবে না! আমরা একটা ফাঁসিও ঠেকাতে পারলাম না। আমাদের নেতাদের হত্যা করা হচ্ছে আমরা চুপচাপ বসে আছি , কোন প্রতিবাদ করছিনা। অনেকে আবার সরকারের সাথে আঁতাতের গন্ধ পায়। আঁতাত যে কি মাপে হয়েছে তা সারাদেশে গ্রেফতারের হার দেখলেই তা আর বোঝার অপেক্ষা রাখে না।
সাধারণভাবে দেখলে একটা জীবনের সরল অর্থ দাড়ায়, ২৬ বছর ধরে পড়াশোনা শেষ করে চাকুরি করতে হবে, তারপর ৩০ বছর বয়সে বিয়ে , এরপর সন্তান-সংসার-চাকরি নিয়ে ব্যস্ত হতে হবে। ন্যায়-অন্যায়, হালাল-হারাম প্রয়োজনের সাপেক্ষে বিচার করতে হবে। সময় পেলে নামাজ-রোজা করতে হবে। কোরবানি আর যাকাত ফলাও করে আদায় করতে হবে। ৬০ বছর বয়স হলে মসজিদকে ভালো করে আঁকড়ে ধরতে হবে।
কিন্তু এর মাঝের সময়টুকুর সফলতা মাত্র এতোটুকুই, কোরবানি আর যাকাত দেয়া দেখে মানুষ বাহবা দিবে । কিন্তু এর মাঝে চূড়ান্ত সফলতার সামান্য ছোঁয়াও নেই। মরার সাথে সাথে সব শেষ।
নিঃসন্দেহে আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য দ্বীন একমাত্র ইসলাম। (সূরা ইমরান , আয়াত-১৯)
ইসলাম যেমন পরিপূর্ণ জীবন বিধান আর আল কোরআন তার নির্দেশিকা। কাজেই যারা ইসলামকে জীবন বিধান মানবে তারা এই শুধু এই পার্থিব সফলতার পেছনে না ছুটে বরং ইহকালিন ও পরকালিন দুই সফলতাই তাদের জীবনের লক্ষ্য হবে।
আর পরকালিন সফলতা পাওয়ার জন্য অবশ্যই অনেকবেশি মুল্য দিতে হয় । কি মুল্য দিতে হয় তা জানার জন্য সাহাবীদের(রা) জীবনী আমাদের সামনে জীবন্ত হয়ে আছে। আবার ভাবনায় আসতো, উনারা তো রাসুল(সা)কে কাছ থেকে পেয়েছেন তাদের পক্ষে সব কিছু দেয়া সম্ভব , তারা ছাড়া কি আর কেউ দিতে পেরেছেন?
তখন সামনে পেয়ে যাই ওমর মুখতার, হাসান আল বান্না, সাইদ কুতুব সহ মিসরের হাজার হাজার মুজাহিদের উদাহরণ। আর ফিলিস্তিনতো এক জীবন্ত রণক্ষেত্র। আমরা দায়িত্বশীলদের থেকে ওনাদের সংগ্রাম এবং আত্নত্যাগের ব্যাপারে শুনেছি। আবার আমরা যখন সামান্য দায়িত্ব পেয়েছি, তখন আমাদের অধীনস্ত কর্মীদের সেসব ঘটনা বলার চেষ্টা করেছি। এরপরও মনে হত বাংলাদেশে কি এমন মানুষ পাওয়া যাবে না বা এমন কেউ কি হবে না, যার কথা আমরা আমাদের কর্মীদের শোনাতে পারবো। সেই ১৯৭৭ থেকে অনেক ভাই জীবন দিয়েছেন, হাত দিয়েছেন, পা দিয়েছেন, চোখ দিয়েছেন। এরপরও ওমর মুখতার এর শাহাদাতের যে কাল্পনিক ভিডিও দেখেছি মনে হয়েছে আমরা বা আমাদের ভাইয়েরা ফাঁসির মঞ্চে কি তাঁর ন্যায় স্বাভাবিক থাকতে পারবো? নাকি ভেঙে পড়বো ?
এই প্রশ্নের জবাব যাদের দেয়ার তারাই দিয়ে গেলেন।
যদি কখনও কোথাও ঝামেলা হয় তাহলে কর্মীরা জীবন দিয়ে দায়িত্বশীলকে হেফাজত করার চেষ্টা করে। আমাদের কাফেলায়ও তা সবসময় হয়েছে। কিন্তু জীবন দেয়ার মিছিলে মুরুব্বিরা সবাইকে ধমক দিয়ে হটিয়ে দিয়ে নিজেরাই চলে গেলেন।
শেষে একটা কথাই শিখিয়ে গেলেন , উনারা ছাত্রজীবনে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন, এরপর বৃহত্তর আন্দোলনেও সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন , সর্বশেষ জীবন দেয়ার মিছিলেও নেতৃত্ব নিজেদের হাতেই রাখলেন।
বাংলার মানুষ দেখেছে, ফাঁসির পূর্ব মুহূর্তেও সেইসব মানুষ এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা কি অসাধারণ ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছেন।কি অসাধারণ ব্যক্তিত্বের পরিচয় দিয়েছেন। ফাঁসির কথা শুনলে সেখানে মানুষ জ্ঞান হারিয়ে ফেলে সেখানে তাদের মুখে হাসি দেখা যায়।
ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্তদের পরিবারের সদস্যরা স্বাভাবিক কারণেই বাকরুদ্ধ হয়ে যাবার কথা। কিন্তু কারাগার থেকে জীবনের শেষবার দেখা করে ফিরে তারা দেশবাসীকে বিজয়ের চিন্হ দেখায়!
তাদের এই দৃঢ় মনোবল এবং নেতাদের অসাধারণ ব্যক্তিত্বকে ধুলিস্ন্যাৎ করতে সরকার নগ্ন খেলায় মেতে উঠল! ফেসবুক বন্ধ করে দিয়ে দালাল মিডিয়ার দ্বারা একপেশে নিউজ প্রচার করতে শুরু হল। তাঁদের দৃঢ় ঈমানকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে সরকার রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনার নতুন এক নাটক রচনা করল। যে নাটক দেখে হয়তো ইবলিশ শয়তান নিজেও হতভম্ব। এতোসব কূটবুদ্ধি নিয়ে শেখ সাহেবের বড় এবং তার সাঙ্গপাঙ্গরা ঘুমায় কি করে(!)
বিষয়: বিবিধ
১৩৫১ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মিথ্যার আলীক প্রাসাদের মালিকরা এখন পূরাই পাগল
সত্যের বিজয় অনিবার্য,
মিথ্যার বিণাশ অবশ্যম্ভাবী
মন্তব্য করতে লগইন করুন