সত্যিই সেলুকস! কি বিচিত্র এই দেশ.........................
লিখেছেন লিখেছেন শাহমুন নাকীব ফারাবী ১৯ নভেম্বর, ২০১৫, ১২:৫০:৩৩ দুপুর
পারস্য সাম্রাজ্য বিজয়ের পর গ্রীক বীর আলেকজান্ডার ভারতবর্ষের দিকে দৃষ্টি দিলেন। তিনি প্রথমেই ভারতবর্ষের পাঞ্জাবে এর দিকে এগিয়ে যেতে লাগলেন। প্রথমেই পরে গান্ধার রাজ্য ( বর্তমান রাওয়ালপিন্ডি ও আশেপাশের জায়গা নিয়ে গঠিত হয়েছিল গান্ধার রাজ্য)। তক্ষশিলা তখন ছিল এর রাজধানী। গান্ধার রাজ্যের রাজা অম্ভি আলেকজান্ডারকে অভ্যর্থনা জানিয়ে সাদরে গ্রহণ করলেন। আলেকজান্ডারকে সাধুবাদ জানানোর কারণ ছিল স্পষ্ট, রাজা অম্ভির সঙ্গে অসুস্থ প্রতিযোগিতা ও রাজনৈতিক বিবাদ চলছিল ঝিলাম ও চেনার নদীর পাশের প্রতিবেশী রাজ্যের রাজা পুরুর সঙ্গে। রাজা পুরুকে পরাজিত করার জন্য রাজা পুরু আলেকজান্ডারকে সব রকমের সহায়তাও করলেন। বন্দী অবস্থায় পুরুকে সামনে হাজির করা হলে আলেকজান্ডার তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে তিনি কেমন ব্যবহার আশা করেন। তার প্রশ্নের উত্তরে পুরু স্বগর্বে বলেছিলেন, একজন রাজা আর একজন রাজার কাছে যেরূপ ব্যবহার আশা করে, আমিও সেইরূপ ব্যবহারই আশা করি। এতে আলেকাজন্ডার খুশি হয়েছিলেন এবং তাকে তার রাজ্য ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। এরপর আলেকজান্ডার ভারতবর্ষের পূর্ব অঞ্চল মগধে ( বিহার ও এর আশেপাশের অঞ্চল) অভিযান চালানোর পরিকল্পনা করলেন। সেখানে তখন বিখ্যাত নন্দ বংশের রাজত্ব চলছিল। আলেকজান্ডার এই রাজ্য জয় করার জন্য বিপাশা নদীর পাশে তাঁবু ফেললেন। পাঞ্জাব অভিযানের সময় চন্দ্রগুপ্ত নামে এক যুবক গ্রীক বীরের সংস্পর্শে এসেছিলেন। ধারনা করা হয়, চন্দ্রগুপ্তই আলেকজান্ডারকে মগধ আক্রমনের জন্য প্ররোচিত করেছিলেন। চন্দ্রগুপ্ত আলেকজান্ডারের কাছ থেকে গ্রীক রণকৌশল এবং যুদ্ধবিদ্যা রপ্ত করেছিলেন। কিন্তু আমাদের এই উপমহাদেশের লোকদের একটি বদঅভ্যাস- আমরা যে পাত্রে খাই আবার সেই পাত্রেরই তলা ফুটো করে দিতে কার্পন্য বোধ করিনা। চন্দ্রগুপ্ত আলেকজান্ডারের সঙ্গে ভয়ানক বেয়াদবি এবং অভদ্রতা করলেন। এতে গ্রীকবীর চন্দ্রগুপ্তের উপর ভয়ানক রাগান্বিত হলেন। আলেকজান্ডার তার সেনাপতি সেলুকসকে নির্দেশ দিলেন চন্দ্রগুপ্তকে বন্দী করতে। কিন্তু চন্দ্রগুপ্ত শেষ পর্যন্ত পালিয়ে গিয়ে নিজের জীবন বাঁচালেন। আর চন্দ্রগুপ্তের এমন আচরনের জন্য আলেকজান্ডার তার সেনাপতি সেলুকস কে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন,- সত্যিই সেলুকস! কি বিচিত্র এই দেশ।
নিজ প্রয়োজনে ৯৬ এ আজকের যুদ্ধোপরাধীদের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে আন্দোলন করতে গিয়ে তাদের চেতনাতে আঘাত করেনি উপরন্তু তাদেরকে যুদ্ধোপরাধী কিংবা রাজাকারও বলা হয় নি। ৯৬ এর নির্বাচনে আজকের প্রধানমন্ত্রী তার দলের নেতাদের যুদ্ধোপরাধীদের বাড়িতে পাঠিয়েছিলেন দোয়া নেয়ার জন্য। তখনও চেতনা ব্যবসার কোন ক্ষতি না হলেও যখনই সেই ব্যক্তিরা নিজেদের শক্তিমত্তা প্রকাশ করলেন তখনই চেতনা ব্যবসার মারাত্নক ক্ষতি হয়ে গেল। তখনই একশ্রেণীর বুদ্ধী বিক্রেতা শাহরিয়ার কবির আর মুনতাসির মামুনরা দেশ গেল! দেশ গেল! বলে চিল্লানো শুরু করলেন। আর তাদের এই আওয়াজ পৌছানোর জন্য হলুদ মিডিয়া যেন চার হাত পায়ে খাড়া। শাহবাগের বিরিয়ানী আন্দোলন কে তাহরির স্কোয়ার এর আন্দোলনের সঙ্গে তুলনা করতেও তারা কুন্ঠাবোধ করে না। কিন্তু এই মিডিয়াওয়ালারা (এটিএন বাংলা) নিজেরাও অনুসন্ধান করে বলতে পারে না, কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা আজকের যদ্ধোপরাধীরা কবে কোথায় কাকে হত্যা করেছে কিংবা কাকে ধর্ষন করেছে।
বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী এক টক-শো তে বলেছিলেন,যুদ্ধো এতোটা ঠুন্ক বিষয় নয় যে! মন চাইলো আর যুদ্ধের মাঝে হাজার হাজার নারীকে ধর্ষন করবেন। এতে যেমন মুক্তিযুদ্ধকে খাটো করা হয় তেমনি প্রকৃত বীরঙ্গনাদেরকেও অসম্মান করা হয়। আর এসব ছড়ানো হচ্ছে, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে। আর এসব যারা ছড়াচ্ছে, তারা মুক্তিযুদ্ধের সময় কলকাতায় বসে বসে মুড়ি চানাচুর খেয়েছে যুদ্ধ করেনি। অতএব, তারা যুদ্ধের অবস্থাটা বুঝবে কি ভাবে(!) তাই আলেকজান্ডারের ভাষায় বলতে হয়,“ সত্যিই সেলুকস! কি বিচিত্র এই দেশ”।
স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে দুর্নীতিমুক্ত কোন মন্ত্রনালয় যে পাওয়া যাবে না তা ১০০% নিশ্চিত করে বলা যায়। মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তি সময়ে বঙ্গবন্ধু আক্ষেপ করে বলেছিলেন,“ মানুষ পায় সোনার খনি আর আমি পেয়েছি চোরের খনি” । আর সেই চোরের খনির মাঝেও যে দু’জন মন্ত্রী বাংলার ইতিহাসে অমর হয়ে থাকবেন। যাদের অনুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে খুজেও দু্ই পয়সার দুর্নীতি পাওয়া যায় নি। আজ সেই রত্নের বিরুদ্ধে ত্রুটি পূর্ন বিচার ব্যবস্থার মাধ্যমে বিচারের নাটক সাজিয়ে মৃত্যুদন্ড দেয়া হলেও জাতি নির্বাক ভূমিকা পালন করছে। আজকের মানুষদের অবস্থা জার্মান কবি নায়মোলার এর মত।
নায়মোলার বলেছিলেন,
“প্রথমে ওরা এসেছিল কমিউনিষ্টদের ধরতে,আমি প্রতিবাদ করিনি।-কারন আমি কমিউনিষ্ট ছিলাম না।
তারপর তারা এলো ট্রেড ইউনিয়ন পন্থিদের ধরতে আমি প্রতিবাদ করিনি।-কারন আমি ট্রেড ইউনিয়ন পন্থি ছিলাম না।
তারপর তারা এলো ইহুদিদের ধরতে,তখনও আমি প্রতিবাদ করিনি।-কারন আমি ইহুদি নই।
তারপর ওরা আমাকে ধরতে এলো,তখন আর আমার হয়ে প্রতিবাদ করবার অবশিষ্ঠ কেউ ছিল না”।
আজ সকল অন্যায় মুখ বুঝে সইতে সইতে জাতি এমন অবস্থায় পৌছে যাচ্ছে, তাদের হয়ে প্রতিবাদ করবার অবশিষ্ঠ কেউ থাকবে না।
বিষয়: বিবিধ
১৩২১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন