মুজাহিদ সাহেব! আপনার ব্যবসা লাভজনক হয়েছে.............

লিখেছেন লিখেছেন শাহমুন নাকীব ফারাবী ১৭ নভেম্বর, ২০১৫, ০৮:৪২:০২ রাত

অনেক বছর আগের ঘটনা........

বসরার প্রাচীন শহর ‘উবুল্লাহর’ শাসক এর স্ত্রী তাঁর পাঁচ বছর বয়সী ছেলে সুহাইব কে নিয়ে ইরাকের ‘সানিয়্যা’ নামক গ্রামে বেড়াতে আসেন। সেই গ্রামে রোমের একদল ডাকাত আক্রমন করে। তারা নির্বিচারে মানুষদের হত্যা করে এবং শিশুদের বন্দি করে। আর সেই বন্দি শিশুদের মধ্যে ছিলেন সুহাইব। সেই ডাকাত দল সুহাইব কে রোমে নিয়ে বিক্রি করে দেয়। এরপর সুহাইব পালাক্রমে বিক্রি হতে লাগল। আর এভাবেই সুহাইব এর কৌশর এর সময়টুকু পেরিয়ে গেল। সুহাইব সব সময় পালানোর সুযোগ খুঁজতো। একদিন সুযোগ পেয়ে সুহাইব মক্কায় পালিয়ে গেল।

মক্কায় গিয়ে এক কুরাইশ নেতার সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। সেই কুরাইশ নেতা সুহাইব কে ব্যবসায়িক পার্টনার করে নেয়। এবং তারা ব্যবসায় দারুন সাফল্য পায়। খুব অল্পদিনের মাথায় সুহাইব অনেক সম্পদের মালিক হয়ে যান। এক ব্যবসায়িক সফর থেকে ফেরার পর তিনি শুনতে পেলেন, মুহাম্মাদ নামে এক ব্যক্তি রিসালাতের দাওয়াত দিচ্ছেন। তখন সুহাইব ভাবলেন রোমে থাকতে এক খ্রীষ্টান পাদ্রী ভবিষ্যৎ বাণীতে রাসূল (সঃ) এর আগমনের কথা শুনেছিলেন। রাতের আধারে সুহাইব রাসূল (সঃ) এর বাড়ি পৌছলেন এবং ইসলামের দাওয়াত কবুল করলেন।

সুহাইব (রাঃ) এর ইসলাম গ্রহণের কথা খুব দ্রুত মক্কায় ছড়িয়ে পড়ল। আর সেই সাথে তার উপরে নেমে এল কাফেরদের অমানবিক নির্যাতন। একদিন সুহাইব (রাঃ) জানতে পারলেন, রাসূল (সাঃ) হিজরত করবেন বলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। সুহাইব (রাঃ) মনস্থির করলেন তিনি হবেন “সালেসু সালাসা-তিন জনের তৃতীয় জন”। অর্থাৎ রাসূল (সাঃ) আবু বক্কর (রাঃ) এবং সুহাইব (রাঃ)।

সুহাইব (রাঃ) এর এই পরিকল্পনার কথা কাফেররা জানতে পারল। আর সে কারণে সুহাইব (রাঃ) বাড়িতে পাহারার ব্যবস্থা করল। যেন তিনি পালিয়ে যেতে না পারেন। এক প্রচন্ড শীতের রাতে সুহাইব (রাঃ) ঘন ঘন টয়লেটে যাচ্ছিলেন। তখন পাহারাদাররা মনে করল, তাদের দেবতা লাত ও উযযা সুহাইব (রাঃ) এর পেট খারাপ করে দিয়েছে। তাই তারা নিজ বাড়িতে গিয়ে শুয়ে পড়ল। কিন্তু এটি ছিল সুহাইব (রাঃ) এর পরিকল্পনার একটি অংশ। আর এই সুযোগে সুহাইব (রাঃ) মদীনার পথ ধরলেন।

পাহারাদাররা কিছুক্ষনের মাঝেই খবর পেল সুহাইব (রাঃ) তাদেরকে ফাঁকি দিয়ে চলে গেছে। তখন তারা দ্রুত গতির ঘোড়া নিয়ে সুহাইব (রাঃ) কে ধাওয়া করল। সুহাইব (রাঃ) তাদেরকে দেখতে পেয়ে একটি উঁচু পাহাড়ে উঠে তাদের দিকে তীর নিশানা করে বললেন,“ তোমরা জানো, আমি একজন দক্ষ তীরন্দাজ। আমার হাতের একটি তীর থাকতে তোমারা আমার ধারে কাছেও আসতে পারবে না। আর এরপর তো আমার তরবারী আছেই”।

তখন কাফেররা বলল, সুহাইব! তুমি মক্কায় এসেছিলে খালি হাতে। তোমাকে মক্কা ছাড়তেও হবে খালি হাতে। সুহাইব (রাঃ) বললেন, আমার সব সম্পদ তোমাদেরকে দিয়ে দিলে, আমাকে কি মদীনায় আল্লাহর রাসূলের কাছে যেতে দিবে? তারা বলল, হ্যাঁ দিব। তখন সুহাইব (রাঃ) তার বিশাল সম্পত্তি কাফেরদের হাতে দিয়ে মদীনার পথে যাত্রা শুরু করলেন।

সুহাইব (রাঃ) যখন মদীনার কুবায় পৌঁছলেন, তখন আল্লাহর রাসূল তাঁতে দেখে বললেন,“ সুহাইব! ব্যবসা লাভজনক হয়েছে।”( তিনবার এ কথা বললেন)

ঠিক তখনই আল্লাহপাক জীবরাঈল (আঃ) এর দ্বারা ওহী নাজিলকরে বললেন,, ‘ওয়া মিনান নাসে মান ইয়াশরী নাফসাহু ইবতিগা মারদাতিল্লাহ। ওয়াল্লাহু রাউফুম বিল ইবাদ’ অর্থাৎ ‘কিছু মানুষ এমনও আছে যারা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নিজেদের জীবনও বিক্রি করে দেয়। আল্লাহ তাঁর বান্দাদের প্রতি অত্যন্ত মেহেরবান’।

আজকের দিনেও সুহাইব (রাঃ) এর উত্তরসূরীরা রয়েছেন। যারা শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য গলায় ফাঁসির দড়ি পরতেও কুন্ঠাবোধ করেনা। যারা ফাঁসির আদেশ শোনার পরও নির্ভয়ে থাকে। যাদের মুখে শোভা পায় প্রশান্তি মাখা হাসি। তাঁরাই তো সফল। তাদের মুখের এ হাসি, অত্যাচারি জালিমের বুকে সদা সর্বদা ভীতির সঞ্জার করছে। তোমারই তো সফল। তোমাদের ব্যবসা আজ লাভজনক হয়েছে।

ইয়া গাফুরুর রাহীম! ইসলামী আন্দোলনের জন্য যা কিছু মঙ্গলজনক তুমি সেই ফয়সালা দান করো। মজলুম ভাইদের ধৈর্য ধরার তৌফিক দান করুন।

“আমাদের প্রত্যয় একটাই, আল্লাহর পথে মোরা চলবো

নিকশ কালিমা মাখা আকাশে, ধ্রুব জ্যোতি তারা হয়ে জ্বলবো”



বিষয়: বিবিধ

১৬৫৮ বার পঠিত, ৯ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

350097
১৭ নভেম্বর ২০১৫ রাত ০৮:৫৮
মোহাম্মদ আব্দুল মতিন মুন্সি লিখেছেন : আল্লাহ তুমি আমাদের মুজাহিদ ভাইকে বীর মুজাহিদ হিসেবে কবুল করো এবং আমাদের মাঝে আবার ফিরিয়ে দাও
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ
350099
১৭ নভেম্বর ২০১৫ রাত ০৯:১৩
হতভাগা লিখেছেন : উনি ৭১ এ যাদেরকে মেরেছেন , মারতে সাহায্য করেছেন তারা বা তাদের ওয়ারিশেরা কি মুজাহিদ সাহেবকে মাফ করেছে ?
350100
১৭ নভেম্বর ২০১৫ রাত ০৯:২৪
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : শিক্ষনিয় লিখাটির জন্য অনেক ধন্যবাদ। অবশ্যই তারাই বিজয়ি হবেন।
১৮ নভেম্বর ২০১৫ রাত ১২:৫০
290574
অপি বাইদান লিখেছেন : হুমম!! আইনের ফয়সালায় পদে/পদে নাজাহেল হওয়া করিৎ কর্মা অথর্ব আল্লার পরকালের মূলা ছাড়া রাজাকার মুজার কপালে কিছু নেই।
350114
১৭ নভেম্বর ২০১৫ রাত ১০:৫৩
দুষ্টু পোলা লিখেছেন : ভালো লাগলো ধন্যবাদ
350122
১৭ নভেম্বর ২০১৫ রাত ১১:৩০
আবু সাইফ লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ..
ইয়া গাফুরুর রাহীম! ইসলামী আন্দোলনের জন্য যা কিছু মঙ্গলজনক তুমি সেই ফয়সালা দান করো। মজলুম ভাইদের ধৈর্য ধরার তৌফিক দান করুন।

“আমাদের প্রত্যয় একটাই, আল্লাহর পথে মোরা চলবো

নিকশ কালিমা মাখা আকাশে, ধ্রুব জ্যোতি তারা হয়ে জ্বলবো”
১৮ নভেম্বর ২০১৫ রাত ১২:৫০
290573
অপি বাইদান লিখেছেন : হুমম!! আইনের ফয়সালায় পদে/পদে নাজাহেল হওয়া করিৎ কর্মা অথর্ব আল্লার পরকালের মূলা ছাড়া রাজাকার মুজার কপালে কিছু নেই।
350126
১৮ নভেম্বর ২০১৫ রাত ১২:৫৫
শেখের পোলা লিখেছেন : জেহাদে মুমিনের সামনে দুটি পথ৷ দুটিই শেষ হয়েছে সাফল্য নিয়ে, শহীদ অথবা গাজী৷ অতএব, অবশ্যই ব্যবসা সফল হয়েছে৷ ধন্যবাদ৷
350135
১৮ নভেম্বর ২০১৫ রাত ০৩:৪৯
কাহাফ লিখেছেন :
মহান রব তার বান্দাদের কে জান-মালে বিপর্যস্হ্য করেও পরীক্ষা নেন! আজ এমনি পরীক্ষার মুখোমুখী ইসলামী সমাজ ব্যবস্হার আন্দোলনে নিবেদিত প্রাণ ব্যক্তিরা!
আল্লাহ চুড়ান্ত সফলতা দান করন,আমিন!

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File