কারা নির্যাতিত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান এর সুরে সুর মিলিয়ে বলব,“ মুসলমানদের মানবাধিকার থাকতে নেই”।
লিখেছেন লিখেছেন শাহমুন নাকীব ফারাবী ১৬ নভেম্বর, ২০১৫, ১২:৩৬:০৩ দুপুর
গতবছর ইসরাঈলী দখলদার বাহিনী যখন “অপারেশন প্রটেসটিভ এজ” নামে ফিলিস্তিনীদের উপর অন্যায়ভাবে গনহত্যা চালাচ্ছিল, তখনকার একটি ঘটনা! গাজার একটি প্রাইমারী স্কুলে চাকরি করতেন সুমাইয়া আফরিন (ছদ্মনাম) নামের এক ফিলিস্তিনী মহিলা! স্বামী এবং চার বছরের এক পুত্র সন্তান নিয়ে বেশ সুখেই তাঁদের দিন যাচ্ছিল! তাঁর স্বামীও স্থানীয় একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক!
যুদ্ধ শুরু হবার তাদের দুজনের স্কুল এবং বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ হয়ে যায়! ইসরাঈলী দখলদার বাহিনীর কারনে সুমাইয়ার স্বামী ঘর থেকে বের হতে পারতেন না! সামনে পেলে গ্রেফতার অথবা গুলি করে দিবে! তাই তাঁকে সারাদিন ঘরে বসেই দিন পার করতে হতো! কিন্তু চার বছরের ছেলে রাফসাম, যুদ্ধের ভয়াবহতা সে বুঝতে পারে না! সে মাঝে মাঝে বাবা মায়ের চোখ ফাঁকি দিয়ে খেলতে চলে যায়! একদিন দুপুর বেলা রাফসাম কাউকে কিছু না জানিয়ে খেলতে বের হয়ে যায়! সুমাইয়া সবাইকে দুপুরের খাবার খাওয়ার জন্য টেবিলে আসতে বলে! কিন্তু কিছুক্ষন পর বুঝতে পারে,দুষ্টু রাফসাম ঘরে নেই! তিনি বাসা থেকে বেরিয়ে রাফসাম কে খুজতে যাবেন,এমন সময় তাঁর স্বামী বাধা দিয়ে বলেন আমি যাচ্ছি! সুমাইয়ান স্বামী রাফসামকে খুজতে বেরিয়ে গেল,তার কিছুক্ষন পর রাফসাম একা বাড়ি ফিরল! সুমাইয়া তাকে জিজ্ঞেস করল,তোমার বাবা কোথায়? রাফিম বলল,আমার সঙ্গে তো দেখা হয় নি! সুমাইয়া বলল,সে তোমাকে খুজতেই বেরিয়েছে!
রাফসাম বলল,আচ্ছা! আমি ওনাকে নিয়ে আসতেছি!
রাফসাম বাবাকে খুঁজতে খুঁজতে মূলরাস্তায় চলে আসে!সে দেখতে পায় রাস্তায় কার যেন রক্তাত্ব লাশ পড়ে আছে! তার কিছুটা দূরেই ইসরাঈলী ট্যাঙ্ক দাড়িয়ে আছে!সে এক দৌড়ে লাশটির কাছে পৌছে দেখল,লাশটি তার হতভাগা বাবার(!) বাবা ছেলের দেরি দেখে, সুমাইয়া তাদের খুঁজতে বেরিয়ে পড়ে! সুমাইয়া যখন মূল রাস্তায় চলে আসে,তখন সে দেখতে পায় রাফসাম একটি রক্তাত্ব লাশের উপর শুয়ে কাঁদছে! আর ঠিক সে সময় ইসরাঈলী বাহিনীর ট্যাঙ্ক গাড়িটি এগিয়ে এসে বাবা ছেলেকে পিষ্ঠ করে দিল! আর চারদিকে তাদের শরীরের খন্ডিত অংশ এবং মাথার মগজ ছিটিয়ে পড়ল! রাস্তাটা হয়ে গেল রক্তের সমুদ্র!
এ অবস্থায় সুমাইয়া একদম পাথর হয়ে যায়! সে নিশ্চল পায়ে,তাঁর স্বামী এবং সন্তানের ছিন্ন ভিন্ন লাশের দিকে তাকিয়ে থাকে!
তখন এক ইসরাঈলী সৈন্য তাঁর দিকে এগিয়ে আসে! সে উচ্চস্বরে হেসে বলে, এবার তুমি কি নিয়ে বাঁচবে? তোমার বেঁচে থাকার অবলম্বন কি হবে? ( একটি বিদেশী জার্নাল থেকে অনুবাদকৃত)
ফিলিস্তিনি অন্তঃসত্বা নারী নুর হাসান। তার পেটে ৫ মাসের বাচ্চা। পরিবারে খুশির আমেজ। তাদের ঘরে দ্বিতীয় সন্তান এর আগমন ঘটতেছে। তার তিন বছরের মেয়ে সাদও নতুন ভাই অথবা বোনের আগমনে দারুন উত্তেজিত ছিল। কিন্তু সেই আনন্দ এক নিমিষেই বিষাদে পরিনত হয়ে গেল। ইসরাঈলী বিমান বাহিনীর হামলায় নুর হাসান নামের ঐ ফিলিস্তিনি নারী এবং তার তিন বছরের কন্যা সাদ দু’জনেই নিহত।Click this link
ইসরাঈলী বাহিনী মূলত ফিলিস্তিনি শিশুদের টার্গেট করে গ্রেফতার এবং হত্যা করতেছে। ইউনিসেফের এক সমীক্ষায় জানা যায়, “ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় গত ৮ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি আগ্রাসনে ৪৬৯ জন শিশু নিহত হয়েছে”।
ইউনিসেফের গাজা অধিকৃত ফিলিস্তিনের ফিল্ড অফিসের প্রধান পেরনিল ইরোনসাইড হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে নতুন করে সংঘাত শুরু হওয়ার পর বৃহস্পতিবার চীনের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সিনহুয়া আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, শিশুদের ওপর এই আগ্রাসনের প্রভাব ও শিশু মৃত্যুর প্রেক্ষাপটে বলা যায় সেখানকার পরিস্থিতি খুবই ভীতিকর।তিনি আরও জানান, গত ৪৮ ঘণ্টায় গাজায় আরও ৯টি শিশু নিহত হয়েছে। ফলে এই আগ্রাসনে শিশু মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে ৪৬৯ জনে দাঁড়িয়েছে। তিনি আরও জানান, এই আগ্রাসনের ফলে হতাহতের ঘটনা ও বাড়িঘরের ধ্বংসস্তূপ দেখার ফলে তা শিশুদের ওপর প্রচণ্ড মনোস্তাত্ত্বিক প্রভাব ফেলবে। তিনি বলেন, এর ফলে শিশুরা মনে করতে পারে বিশ্বে কোনো নিরাপদ স্থান নেই। কিন্তু শিশুদের তো নিরাপত্তারবোধ থাকাটা জরুরি। Click this link
শিশুদের জন্য হয়তো নিরাপত্তা কিংবা সাম্রাজ্যবাদীদের জন্য নিরাপত্তা থাকা জরুরী হলেও, মুসলিম শিশু কিংবা বিশ্বের মুসলিম জনগোষ্ঠীর জন্য তা আদৌও জরুরী নয়। কারণ মুসলিমদের মানবাধিকার নেই। তাদের বেঁচে থাকবার কোন অধিকার নেই। যদি সত্যি অধিকার থাকতো, তাহলে আজকে যেমন মাত্র ১৫৩ জন ফরাসী নিহত হবার পর বিশ্ব মিডিয়া এবং বিশ্বের মানুষ হৈচৈ এবং প্রতিবাদ করছে। তেমনি, ফিলিস্তিনে সেই অনঃস্বত্তা নারী এবং তার তিন বছরের মেয়ের হত্যাকান্ডের পর আজকের ন্যায় প্রতিবাদ করত। ফিলিস্তিনের ৪৬৯ জন শিশু নিহত হবার পর সকলে একযোগে প্রতিবাদ করত।
ফ্রান্সের বোমা হামলা ঘটনার পর হলিউড অভিনেত্রী অ্যঞ্জেলিনা জলি তার ফেসবুক পোষ্টে বলেছিলেন,“ লেবাননে তো প্রতিদিনই এমন ঘটনা ঘটছে। এমনকি আজকেও বোমা হামলায় ৪৩ জন নিহত। কিন্তু কেউ তো লেবাননিদের নিয়ে উদ্বিগ্ন নন”!
আর এ কারণেই কারা নির্যাতিত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান এর সুরে সুর মিলিয়ে বলব,“ মুসলমানদের মানবাধিকার থাকতে নেই”।
বিষয়: বিবিধ
১১১৯ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন