ও আল্লাহ ! দয়া করে একটু রহম করুন।

লিখেছেন লিখেছেন শাহমুন নাকীব ফারাবী ১২ নভেম্বর, ২০১৫, ০৭:৫৬:০৯ সন্ধ্যা

ট্রেন ষ্টেশনের অন্ধকার প্লাটফর্মের এক কোনায়, আমি আর আব্বা দাঁড়িয়ে আছি। কিছুক্ষন এভাবে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকার পর, আব্বা আমার হাতে ট্রেনের টিকিটটা ধরিয়ে দিলেন।

দূর থেকে ট্রেন ছুটে আসার শব্দ ভেসে আসছে। এতোক্ষন ট্রেন আসার জন্য অপেক্ষা করে, এখন মনে হচ্ছে ইশ! ট্রেনটা আরও একটু দেরি করে আসলে কি এমন ক্ষতি হতো! আব্বার সঙ্গে আরও কিছুক্ষন সময় কাটানো যেতো। ট্রেন ষ্টেশনে থামা মাত্র আমি ধীর পায়ে ট্রেনের দিকে এগিয়ে যেতে থাকলাম। তখন মনে হচ্ছিল, আমি কিছু একটা হারিয়ে ফেলতে যাচ্ছি।

ট্রেনের দরজায় দাঁড়িয়ে আব্বার দিকে তাকিয়ে আছি। আব্বা শুধু বললেন,“ আল্লাহ হাফেজ। ফি আমানিল্লাহ”। শুধু এ দু’টি বলতে গিয়ে আব্বার গলাটা ভেঙ্গে যাচ্ছিল। ট্রেন কুঁ হুঁইসেল দিয়ে একটু একটু করে প্লাটফর্ম থেকে দূরে সরে যাচ্ছিল। আর আমার বুকটা কান্নায় ফেঁটে যাচ্ছিল। আব্বার দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলাম। ট্রেন এবং প্লাটফর্ম এর মাঝে আরও কিছুটা দূরত্ব তৈরী হবার পর দেখলাম, দূরে অন্ধকারে দাড়িয়ে থাকা আব্বার ছায়া মূর্তিটি বার বার কেঁপে কেঁপে উঠছে। বুঝতে কষ্ট হল না, আমার সবচেয়ে প্রিয় মানুষটি, আজ আমার জন্যই কাঁদছেন। কে জানে এ কান্নার শেষ কোথায়?

তিন বছরের যাযাবর জীবনে আম্মার কাছ থেকে প্রায়শ দূরে থাকতে হয়েছে। কখনো এক মাস আবার কখনও তিন মাস পর আম্মার সঙ্গে দেখা হতো। হঠাৎ সন্ধ্যায় বাসায় ঠুকে রান্না ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে বলতাম,“ আসসালামু আলাইকুম। আম্মাজান কেমন আছেন”। আম্মা যেন ভূত দেখার মত চমকে উঠতেন! বিষ্ময়ের রেষ কাটা মাত্রই জড়িয়ে ধরে কপালে একটা চুমু দিয়ে দিতেন। আলহামদুলিল্লাহ! কিযে শান্তি। যেন পৃথিবীর সবটুকু সুখ এই ছোট্ট চুমুর মাঝেই লুকিয়ে আছে। এই এক আলিঙ্গনে পূর্বের সমস্ত কষ্টগুলো মলিন হয়ে যায়।

এক সন্ধ্যায় আসতাম আর পরের সন্ধ্যায় চলে যেতাম। মাঝখানের এই সময়টুকুতে আম্মা কি করবেন আর না করবেন ভেবে কুল পান না। প্রতিবারই বলবেন, “এতো শুকায় গেছো কেন? খাওয়া দাওয়া কিছু করো না! চোখের নিচে কালি কেন?আরও কত কি”! বলতাম আপনি আম্মা তো! চোখের আড়াল হয়েছি বলেই ভাবছেন কিছুই করি না! আম্মা আমার কথা শুনে হাসতেন।

সকাল বেলা, প্রিয় নাস্তা ডিম পিঠা আর দুপুর বেলা আমার প্রিয় খাবার গরুর গোশত, মুসুরের ঘন ডাল আর আলুর ভর্তা তো থাকবেই। আর এই সময়ের মাঝে আম্মা রান্না করতেন আমি আমি আম্মার পাশে বসে গুটুর গুটুর করে গল্প করতাম! কবে কবে কি করলাম! দেশের হাল হাকিকত! আর আম্মা মুগ্ধ নয়নে আমার দিকে তাকিয়ে থাকতেন।

আজ ১০ মাস পেরিয়ে ১১ মাস হয়ে গেল! বাড়ি ফেরা আর হল না। কবে ফিরবো তাও জানি না! শেষবার আম্মা বিদায় দেবার সময়,আম্মা হাসিমুখে বিদায় দেবার চেষ্ঠা করেছিলেন! প্রচন্ড কষ্টের মাঝে যখন কেউ মিথ্যে হাসি দেবার চেষ্ঠা করে তখন সেই হাসিকে আরও করুন মনে হয়। শেষবার পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখি,আম্মা ওড়না দিয়ে নিজের মুখটাকে লুকিয়ে রেখেছেন। হয়তো তিনি চোখের পানি নয়, আমাকে শুধুই হাসি উপহার দিতে চান। তবে সে হাসির আরও কতোটা দূর?

এই ১০ টি মাসের মধ্যে, কতোটা দিন মুক্ত আকাশ দেখেছি,তা বলতে পারবো না। কতোটা দিন পূর্বের অভ্যাস মত জ্যোৎস্না দেখেছি তাও মনে করতে পারছি না। আজ যে আমি বা আমরা পরাধীন! তবে পরাধীন না হলে নাকি স্বাধীনতার প্রকৃত স্বাদটা উপলবদ্ধি করা যায় না।

কতো মানুষ বাড়ি যায়, আমার না কাজ ফুরায়! কতো বন্ধুর পোষ্ট দেখি, ট্রাভেলিং টু রংপুর! কিন্তু আমার আর রংপুর যাওয়া হয় না। সেই প্রিয়, মিঠাপুকুরের আনাকানাচে আব্বার সঙ্গে প্রোগ্রাম করে ছুটে বেড়ানো হয় না। চাচ্চুদের সঙ্গে আড্ডায় মেতে ওঠা হয় না। উকিল চাচ্চুর সেই বকা খাওয়া হয় না। মারজান চাচ্চু বলেনা, নাকীব খান! কালকে কিন্তু প্রোগ্রাম আছে! ফজর পড়ে গোসল করে বাইক নিয়ে রেডি থাকবা!

কবে ফিরবে সেই দিনগুলো? কবে ফিরে আসবে সেই শতব্যস্ততাময় আনন্দমুখর মূহুর্ত গুলো? কবে ফিরবো সেই বাড়িতে? যেখানে আম্মা অধীর অপেক্ষায় আমাকে কাছে পাবার প্রহর গুনছেন! কষ্টগুলো দিনকে দিন বেড়েই চলেছে।

ও আল্লাহ ! দয়া করে একটু রহম করুন।

বিষয়: বিবিধ

১১৮৫ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

349508
১২ নভেম্বর ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:৫৮
তোমার হৃদয় জুড়ে আমি লিখেছেন : আল্লাহ আপনাকে রহম করুন আমিন
১২ নভেম্বর ২০১৫ রাত ০৮:০০
290095
শাহমুন নাকীব ফারাবী লিখেছেন : শুকরান। সুম্মা আমীন।
349525
১২ নভেম্বর ২০১৫ রাত ০৯:০০
শেখের পোলা লিখেছেন : " নিরাশ আঁধারে খোদা তুমিযে আশার নূর৷"
349535
১২ নভেম্বর ২০১৫ রাত ০৯:৫২
জেদ্দাবাসী লিখেছেন : আমরা আজন্ম মিছিলেই আছি,
এর আদি বা অন্ত নেই।
পনের শত বছর ধরে সভ্যতার উত্থান-পতনে আমাদের পদশব্দ একটুও থামেনি।
আমাদের কত সাথীকে আমরা এই ভূ-পৃষ্ঠের কন্দরে কন্দরে রেখে এসেছি-
তাদের কবরে ভবিষ্যতের গুঞ্জন একদিন মধুমক্ষিকার মত গুঞ্জন তুলবে।
আমরা জানি,
আমাদের ভয় দেখিয়ে শয়তান নিজেই অন্ধকারে পালিয়ে যায়।
আমাদের মুখায়ববে আগামী ঊষার উদয়কালের নরম আলোর ঝলকানি।
আমাদের মিছিল ভয় ও ধ্বংসের মধ্যে বিশ্রাম নেয় নি, নেবে না।
আমাদের পতাকায় কালেমা তাইয়্যেবা,
আমাদের এই বাণী কাউকে কোনদিন থামতে দেয়নি
আমরাও থামবো না।

আমাদের মিছিল - কবি আল-মাহমুদ


জাযাকাল্লাহ খায়ের
349536
১২ নভেম্বর ২০১৫ রাত ১১:১৫
আবু সাইফ লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ..


Praying Praying Praying Praying Praying Praying Praying Praying

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File