সময়ের প্রয়োজনে রাজনৈতিক দলগুলোর খোলস পরিবর্তন করতে সামান্য সময়ও লাগে না।

লিখেছেন লিখেছেন শাহমুন নাকীব ফারাবী ১০ নভেম্বর, ২০১৫, ১২:৪৮:২২ দুপুর

ইন্টার মিডিয়েট এ পড়ার সময় কিছু অতিরিক্ত চঞ্জল বন্ধু পেয়েছিলাম। যাদের হাত ধরে এমন কিছু করেছি যা করা আমার মত গো বেচারার একার পক্ষে কোনদিন সম্ভব ছিল না। আমরা বিজ্ঞান বিভাগের ষ্টুডেন্ট। একদিন ঠিক করলাম, আমরা মানবিক বিভাগের ক্লাস করব। আমরা ৬ জন বন্ধু মানবিকের ক্লাস করার জন্য ঢুকে পড়লাম। কলেজে আমাদের গ্রুপটাকে সবাই ডানপিটে হিসেবে চিনে। তাই মানবিকের কোন ষ্টুডেন্ট কোন প্রশ্ন বা প্রতিবাদ করল না। স্যার নাম প্রেজেন্ট করে ক্লাস শুরু করলেন। ক্লাসটা ছিল সম্ভবত পৌরনীতি। ক্লাসের এক পর্যায়ে হঠাৎ গনতন্ত্র নিয়ে কথা বলা শুরু করলেন। স্যার হঠাৎ চোখ মুখ লাল করে বললেন,“ আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় এমন কিছু পাঠ্য বিষয় রয়েছে,যেগুলোর সঙ্গে বাস্তব জীবনে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই। তা শুধু বইয়ের মাঝেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। তেমনই একটি বিষয় হল গনতন্ত্র”। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সূচনাও হয়েছিল এই গনতান্ত্রিক মুক্তির আন্দোলন থেকে। কিন্তু দেশ স্বাধীন হবার পর কি হল? আমরা রক্ষিবাহিনীর হাতে জিম্মি হলাম। আগে আমরা জিম্মি ছিলাম পাকিস্তানী সেনাবহিনীর হাতে আর এখন নিজ দেশের রক্ষিবাহিনীর হাতে। বঙ্গবন্ধু নিজেও গনতন্ত্রের মুক্তি না দিয়ে বাকশাল করে তা চিরতরে হত্যাই করতে চেয়েছিলেন।

কিছুদিন আগে এক বয়বৃদ্ধ প্রশ্ন করলেন,বল তো শেখ মুজিবুর রহমান কবে মৃত্যু বরন করেছেন? এ প্রশ্নের উত্তর তো কিন্টার গার্ডেনের প্লে গ্রুপের একটা বাচ্চাও জানে। বললাম, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট। উনি কিছুটা আশাহত ভঙ্গিতে বললেন,তুমি পড়াশুনা জানা মানুষ! ভেবেছিলাম, অনুধাবন মূলক এই প্রশ্নের তুমি সঠিক ‍উত্তর দিতে পারবা! বঙ্গবন্ধু ১৯৭১ সালেই মারা গেছেন। যেদিন তিনি দেশের স্বাধীনতার ঘোষনা দিয়ে পাক বাহিনীর হাতে স্বেচ্ছায় ধরা দিলেন সেদিনই তার মৃত্যু ঘটেছে। এরপর তিনি আর জনগনের বন্ধু ছিলেন না। দেশ স্বাধীনের পরের সময়টা নাকি এমন ছিল, ঝড় বৃষ্টির রাতে যখন বজ্রপাত ঘটত তখন নাকি সাধারন মানুষ আক্ষেপ করে বলত, আল্লাহ ঠাডাটা(বজ্রপাত) মুজিবরের মাথায় পড়ে না ক্যা? আর মানুষের এই চরম বিরক্তির কারনটা ছিল গনতান্ত্রিক মুক্তি না থাকার কারনে।

সেই গনতান্ত্রিক মুক্তি আজও ঘটেনি। আজকের এই দিনটিকে নূর হোসেন দিবস অথবা গনতান্ত্রিক মুক্তিদিবস বলা হলেও আমরা কি গনতান্ত্রিক অধিকার ভোগ করতে পারছি? আমরা কি ভোটের অধিকার পেয়েছি? ভোটার হবার পরও সংসদ নির্বাচনে নিজের মতামতটা দিতে পারলাম না। তার আগেই বিনা ভোটে জয়ী ঘোষনা করা হয়েছে। তাহলে কোথায় আজ সেই গনতন্ত্র?

শুধু ব্যনার ফেষ্টুন আর খালি গায়ে মিছিল করলেই তাকে গনতন্ত্রের মুক্তি বলা যায় না। গনতন্ত্রের মুক্তি বলা যায় তখনই যখন মানুষ নিজের পূর্ন অধিকারটুুকু ভোগ করতে পারে। একজন পার্লামেন্ট সদস্য মাতাল হয়ে শিশুকে গুলি করার পরও যখন স্বসম্মানে মুক্তি পায় তখন তাকে গনতান্ত্রিক মুক্তি বলা যায় না। নিজ স্বার্থে পুলিশ বাহিনীর দ্বারা বিরোধী দলের উপর দমন নিপিড়ন এবং গন গ্রেফতার চালিয়ে এবং মুখে গনতন্ত্র গনতন্ত্র বলে ফেনা তুললেও তা গনতান্ত্রিক কর্মের অংশ হয়ে যায় না।



নূর হোসেন দিবস উপলক্ষে আমাদের রাষ্ট্রপতি এবং বিনাভোটে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী শেক হাসিনা পৃথক পৃথক গনতান্ত্রিক বিবৃতি দিয়েছেন।

রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘এ দেশের মানুষ জন্মগতভাবে গণতন্ত্রপ্রিয়। কিন্তু আমাদের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রার পথ কখনো মসৃণ ছিল না। স্বাধীনতাবিরোধী ঘাতক চক্রের হাতে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের আপনজনদের নৃশংসভাবে হত্যার মধ্যদিয়ে এ দেশে গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা রুদ্ধ হয়। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য বাংলার জনগণ আন্দোলন করে। এরই ধারাবাহিকতায় ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তিপাক’ এই স্লোগান শরীরে ধারণ করে সাহসী নূর হোসেন ১৯৮৭ সালের এই দিনে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিলেন। মিছিলের পুরোভাগে থাকা এই অকুতোভয় যোদ্ধা অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়তে বুকের তাজা রক্ত দিয়ে গেছেন।’

কিন্তু সেই অকুতোভয় যোদ্ধার আত্নঃত্যাগ কি সফল হয়েছে? সেকথা বুকে হাত দিয়ে মাননীয় রাষ্ট্রপতি কি বলতে পারবেন?

শহিদ নূর হোসেন দিবস উপলক্ষে দেওয়া বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৯৮৭ সালের নভেম্বর মাস। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন তখন তুঙ্গে। নূর হোসেন তার বুকে ও পিঠে ‘গণতন্ত্র মুক্তিপাক, স্বৈরাচার নিপাত যাক’ স্লোগান উৎকীর্ণ করে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৫-দলীয় ঐক্যজোটের মিছিলে যোগ দিয়েছিলেন। মিছিলটি যখন জিরো পয়েন্টে পৌঁছে, তখন স্বৈরাচার সরকারের নির্দেশে মিছিল লক্ষ্য করে গুলি বর্ষণ করা হয়। বুলেট নূর হোসেনের বুক ঝাঁঝরা করে দেয়। তঁর এই আত্মত্যাগ তৎকালীন স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রকামী মানুষের আন্দোলকে বেগবান করে।’

তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের এই সংগ্রামে বাবুল, ফাত্তাহসহ অগণিত গণতন্ত্রকামী মানুষের রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা। তাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে বাংলাদেশ ফিরে পায় ভোট ও ভাতের অধিকার।’

বাংলাদেশের মানুষ কি প্রকৃত অর্থে ভোটের অধিকার ফিরে পেয়েছে? সেদিন গনতন্ত্র উদ্ধারের আন্দোলনে আওয়ামিলীগ ভূমিকা পালন করলেও আজ কিন্তু সেই আওয়ামিলীগই গনতন্ত্রকে গলাটিপে হত্যা করার সমস্ত বন্দোবস্ত সম্পন্য করেছে।

হায় সেলুকাস!সময়ের প্রয়োজনে রাজনৈতিক দলগুলোর খোলস পরিবর্তন করতে সামান্য সময়ও লাগে না।

বিষয়: বিবিধ

৯৯০ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

349245
১০ নভেম্বর ২০১৫ দুপুর ০২:৫৯
দিল মোহাম্মদ মামুন লিখেছেন : আপনার লিখাটা ভাল লাগলো, তবে মনে হলো আপনি আধুনিক আ্ওয়ামী গণতন্ত্রের কিছুই বুঝেন না....আপনার জেনে রাখা ভাল, যা লীগের পক্ষে যায় তাই গনতন্ত্র, তাই চেতনা.....এই চেতনা নিয়া আর কতকাল চেইত্তা থাকমু তাও বুজতাছিনা.....
ধন্যবাদ আপনাকে
349277
১০ নভেম্বর ২০১৫ রাত ০৮:০৬
শেখের পোলা লিখেছেন : স্যারের কথা কখন শেষ হল না সবটুকুই তার কথা বুঝলাম না৷এমনড চেতনা বিরোধী স্যার এখনও আছেন?ন

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File