“ দেশ যাক রসাতলে তাতে আমার কী”?
লিখেছেন লিখেছেন শাহমুন নাকীব ফারাবী ০৯ নভেম্বর, ২০১৫, ০৩:২৪:২২ দুপুর
২০০৩-০৪ সাল, চারদলীয় জোট সরকারের সময়কালে মন্ত্রনালয়ের কোন এক কাজে রংপুর সফরে এসেছিলেন তৎকালীন সমাজকল্যান মন্ত্রী আলী আহসান মুহাম্মাদ মুজাহিদ। সেই সফরের অংশ হিসেবে রংপুরের মিঠাপুকুরে এক জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। তাঁর মিঠাপুকুরে আগমন উপলক্ষে পরিবেশটা অন্যান্য মন্ত্রীদের আগমন ঘটলে যেমন হয়,তেমনটা ছিল না। রাস্তার মোড়ে মোড়ে গেট সাজিয়ে,রঙ্গচঙ্গা ব্যনার লাগিয়ে তাঁকে আমন্ত্রন জানোনোর মত একটি গেটও লক্ষ্য করা যায় নি। আর এই দৃশ্য দেখে সাধারন মানুষ বেশ অবাক হয়েছিল। কেউ কেউ বলছিল,মন্ত্রী আসতেছে অথচ রাস্তায় একটি গেটও নেই! এটা কোন কথা হলো? মিঠাপুকুরবাসীর মানসম্মান বলে তো একটা কথা আছে!
মন্ত্রী মহোদয় মঞ্চে উঠলেন বক্তৃতা দেবার জন্য। বক্তৃতার এক পর্যায়ে বললেন, আলহামদুলিল্লাহ! আমার এখানে আগমন উপলক্ষ্যে একটি গেটও দেখতে পাইনি। যদি উপজেলা জামায়াত এর পক্ষ থেকে কিংবা অন্য কারো পক্ষ থেকে একটি গেটও দেখতাম,তাহলে মিঠাপুকুর উপজেলা জামায়াতের আমীরের আমীরত্ব বাতিল করে তারপর ঢাকার পথ ধরতাম(!) সাধারন জনতা অবাক বিষ্ময়ে হাঁ করে তাকিয়ে আছে! তখন তিনি বললেন, এটা আমার দায়িত্ব যে আপনাদের এলাকায় সফর করা। তাই আমাকে গেট সাজিয়ে অভিনন্দিত করে আমার ভিতরে অহমিকা সৃষ্টি করতে চাইবেন না কিংবা আমি যে আপনাদেরই সেবক সে কথা ভুলিয়ে রাখবার চেষ্ঠা করবেন না। আমাদের ভিতরে আজও সেই দাসত্ব কেন্দ্রীক মানসিকতা লক্ষ্য করা যায়। একজন জনপ্রতিনিধির আগমন উপলক্ষ্যে শত শত গেট সাজিয়ে অভ্যর্থনা জানানোটা সেই দাসত্বেরই একটি অংশ। তাই দাসত্বের মনোভাব ছেড়ে আপনাদের জনপ্রতিনিধিদের থেকে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করুন।
তৎকালীন সমাজ কল্যান মন্ত্রী আলী আহসান মুহাম্মাদ মুজাহিদ দাপ্তরিক সফরে চাঁদপুর গেলেন। ওনার নির্ধারিত দিনের একদিন আগে অর্থাৎ ওনার যাওয়ার কথা ছিল সকালে কিন্তু তিনি অনেকটা গোপনে রাতের আধাঁরে চাঁদপুর পৌছলেন। চাঁদপুরে বেশ কয়েকটি এতিমখানা আছে যেগুলো মন্ত্রনালয় থেকে নিয়মিত অনুদান পায়। চাঁদপুরের স্থানীয় জামায়াত নেতাকে সঙ্গে নিয়ে কোন ধরনের পূর্ব নোটিশ ছাড়াই ছদ্মবেশে, তিনি সেসব এতিমখানায় উপস্থিত হলেন। তিনি গিয়ে দেখলেন,এতিমখানার বাচ্চারা শীতে জড়াজড়ি করে ছেড়া কম্বল গায়ে দিয়ে ঘুমাচ্ছে। অথচ মাস খানেক আগেই শীতের কাপড় এবং কম্বল কেনার জন্য মন্ত্রনালয় থেকে অর্থ বরাদ্দ দিয়েছেন।
পরের দিন যখন তিনি সেসব এতিমখানায় আনুষ্ঠানিক ভাবে উপস্থিত হলেন,তখন দেখলেন ভিন্ন চিত্র। বাচ্চাদের গায়ে ভালো জামা এবং তাদের বিচানার উপর শোভা পাচ্ছে দামী কম্বল। তখন মুজাহিদ সাহেব বুঝলেন,এতিমখানার নাম ভাঙ্গিয়ে টাকা মেরে খাওয়ার বিশাল আয়োজন করেছে। তিনি সঙ্গে সঙ্গে সেসব এতিমখানার রেজিষ্ট্রেশন বাতিল করে দিলেন এবং বাচ্চাদের থাকার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিলেন। [ঘটনাটি তাঁর ব্যক্তিগত সেক্রেটারি থেকে সংগৃহিত]
কবি আফসোস করে বলেছিলেন,
“এমন যদি হতো আমার দেশের শাসক হতো
উমরেরই মতো হতো,আবু বক্করের মতো”।
রাসূল (সাঃ) এর প্রিয় দুই সাহাবা হযরত আবু বক্কর (রাঃ) কিংবা উমর (রাঃ) এর শাসন পাওয়ার সৌভাগ্য আমাদের হবে না জানি। কিন্তু রাসূল (সাঃ) এর দুই উম্মত এর একজন আলী আহসান মুহাম্মাদ মুজাহিদ স্যারের শাসন পাওয়ার সৌভাগ্য আমাদের হয়েছিল। যারা অন্যান্যদের মত নিজেদের পেট পূজা না করে জনগনের সেবায় নিজেদের নিয়োজিত রেখেছিলেন।
এমন ষ্পষ্টভাষী এবং ন্যায়পরায়ন নেতারা বেঁচে থাকলে রাজনীতি যাদের একমাত্র পেশা তাদের পেটে যে ভাত জুটবে না। তাই তো বিরিয়ানী খাওয়া আন্দোলন এবং মাসে ২ লক্ষ ১০ হাজার টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে নিরাপত্তার জন্য ব্যয় করে এমন অসাধারন ব্যক্তিদের ফাঁসি দেবার বন্দোবস্ত করা হচ্ছে। হাবভাব দেখলে মনে হয়,“ দেশ যাক রসাতলে তাতে আমার কী”?
বিষয়: বিবিধ
১২৭৫ বার পঠিত, ১১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন