দেশ চলছে “চাপার জোরে”...............
লিখেছেন লিখেছেন শাহমুন নাকীব ফারাবী ৩০ অক্টোবর, ২০১৫, ১০:৩৪:৫২ রাত
ঘটনা নংঃ১
বেশ কিছুদিন আগে,টিএসসিতে এক বড় ভাইয়ের সঙ্গে চা খাচ্ছি। হঠাৎ এক মহিলা সুদর্শন এক যুবককে নিয়ে আমাদের সামনে হাজির হল।বড় ভাই তাকে দেখে সৌজন্যমূলক হাসি দিল।তখন বুঝলাম ওনার পূর্ব পরিচিত।মেয়েটি ভাইয়ের বান্ধবির বড় বোন।আমার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিল।মেয়েটি তার পাশে দাড়িয়ে থাকা ছেলেটিকে দেখিয়ে বলল,তোমাদের ভাইয়া!
ওনাদেরকে চা খাওয়ার অফার করলে তারাও আমাদের সঙ্গে বসে পড়ে।কিছুক্ষনের মধ্যেই সেই সুদর্শন যুবকের মুখ থেকে কথার খই ফুটতে শুরু করল।গল্পের এক পর্যায়ে বলল,আমিতো মেডিকেলে চান্স পেয়েছিলাম।কিন্তু কাঁটা ছেঁড়া ভাল লাগে না বিধায় আর ভর্তি হই নি।আমি অবাক হয়ে বললাম,কোন মেডিকেলে চান্স পেয়েছিলেন? উনি বললেন,বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়(!) তাকে বললাম,বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় এ এমবিবিএস কোর্স আছে আজই প্রথম শুনলাম।ওনারা চলে যাওয়ার পর,বড় ভাই বললেন, সবকিছুই চলছে চাপার জোরে ঐ চাপার জোরে বউ জুটিয়েছে।এখন বসে বসে বউয়ের কামাই খায়!
ঘটনা নংঃ২
আর একদিন,বাংলা একাডেমির কাছে হঠাৎ গ্যানজাম।এগিয়ে গিয়ে দেখা গেল,এক লোক প্রচন্ড চেঁচামেচি করতেছে।ভার্সিটির এক ভাইয়ের সঙ্গে সেই লোকের থাক্কা লেগেছে।সে ভাই দুঃখ প্রকাশ করার পরও সে অহেতুক চেঁচামেঁচি করছে।হঠাৎ বড় ভাইটি তাকে প্রশ্ন করল,আপনি কি ক্যাম্পাসের? লোকটি হ্যা সূচক উত্তর দিল।বড় ভাই প্রশ্ন করল,কোন হলে থাকেন? লোকটি বলল,আমি কার্জন হলে থাকি(!) তখন বড় ভাইটি হেসে বলল,মিয়া!আপনি তো চাপার জোরে পুরো বিশ্বটাকেই দখল করে ফেলবেন।
আজকে সেই চাপার জোরে সরকার দেশকে উন্নয়নের জোয়ারে ভাসিয়েছেন।বলা হচ্ছে দেশে আইন শৃংখলার উন্নতি হয়েছে।দেশে নারীদের অধিকার প্রদানে বর্তমান সরকারই নাকি একমাত্র কার্যকর ভূমিকা রাখে। তাহলে পরিসংখ্যানটা একটু মিলিয়ে দেখুন তো,
“জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ছয় মাসে সারা দেশে ধর্ষণের ঘটনাসহ মোট ২ হাজার ৭৯ জন নারী বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। হত্যা, ধর্ষণ, জখমসহ বিভিন্ন ধরনের নির্যাতনের ঘটনা এর মধ্যে অন্তভূক্ত। এর মধ্যে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ৪৯২ টি আর গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৯৯ জন। শুধু তাই নয়, ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৪৬ জন নারীকে। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে ৬৩ জনকে। কিন্তু এ সংখ্যা আরো অনেক বেশি। কারণ, গণমাধ্যমে এসব ঘটনার বেশির ভাগই প্রকাশ পায়না”।Click this link
শুধু ২০১৪ সালেই সারাদেশে ৫০৬১ টি হত্যাকান্ড ঘটেছে।এর মধ্যে, ক) ধর্ষণের পর হত্যা ৩১ জন, খ) যৌন নির্যাতনে হত্যা ২৭ জন, গ) যৌতুকের কারণে হত্যা ৩০ জন, ঘ) এসিড নিক্ষেপে হত্যা ১ জন, ঙ) পারিবারিক সহিংসতায় নিহত ৬৮৫ জন, চ) সামাজিক সহিংসতায় নিহত ১০৪৬ জন, ছ) সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় নিহত ২৫ জন, জ) রাজনৈতিক হত্যা ১০১ জন, ঝ) আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক হত্যা ৮৬ জন, ঞ) সীমান্তে হত্যা ৩০ জন, ট) চিকিৎসকের অবহেলায় মৃত্যু ৩২ জন, ঠ) সাংবাদিক হত্যা ২ জন, ড) অপহরণের পর হত্যা ৮৫ জন, ঢ) গুপ্ত হত্যা ৩২২ জন, ণ) আত্মহত্যা ২০২ জন, ত) রহস্যজনক মৃত্যু ২৫১ জন, থ) পরিবহন দুর্ঘটনায় মৃত্যু ২১০৫ জন।
২। মোট ধর্ষণের শিকার —————————————————————- ১৫৫ জন
৩। যৌতুক নির্যাতন —————————————————————- ১৬ জন।
৪। এসিড নিক্ষেপ —————————————————————- ৯ জন
এডভোকেট এ. কে. আজাদ
পরিচালক-বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন।
আর চলতি বছরের হিসাব তো এখনো বাকিই আছে!
তবে বিলবোর্ড কিন্তু ভিন্ন কথা বলে।
গত ২৯ তারিখ রেহমান সোবহানের নতুন একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।সে অনুষ্ঠানে রেহমান সোবহান বলেছেন, ‘আমি যখন পেছনে ফিরে তাকাই, এ ভেবে বিস্মিত হই যে, তখন(পাকিস্তান আমলে) আমরা যা চিন্তা করেছি, তা-ই লিখতে পেরেছি। ডানে-বাঁয়ে না তাকিয়েই আমরা তা লিখেছি। কেননা, সেই চিন্তা আমাদের ভেতর থেকে এসেছিল বলেই আমরা তা পেরেছি। আজ আমি যখন একটি নিবন্ধ লিখি, আমার এক সপ্তাহ লেগে যায় এবং এই স্বাধীন বাংলাদেশে অন্যদের মতো আমিও একটি লেখা ছাপতে দেয়ার আগে পাঁচবার ভাবি। আজ আমি যা লিখি, তার প্রতিটি শব্দ নিয়েই আমাকে ভাবতে হয়। কিন্তু আমরা যখন (পাকিস্তান আমলে) সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি, লেখার টেবিলে বসে দুই ঘণ্টায় একটি লেখা শেষ করতে পারতাম।’
তার এই বক্তব্য শোনার পর,প্যাষ্টর নাইমোলারের সেই বিখ্যাত “ওরা প্রথমে এসেছিল” কবিতাটি মনে পড়ে গেল!
“ওরা এসেছিল ট্রেড পন্থিদের ধরবে বলে,আমি প্রতিবাদ করিনি
কেন না, আমি ট্রেড ইউনিয়নের সদস্য নই।
ওরা এলো ইহুদীদের ধরতে আমি প্রতিবাদ করিনি
কেন না,আমি ইহুদি নই।
ওরা এসছিল জিপসিদের ধরতে,আমি প্রতিবাদ করিনি
কেন না,আমি জিপসি নই।
তারপর ওরা এলো আমাকে ধরতে
কিন্তু আমার হয়ে প্রতিবাদ করার মত অবশিষ্ঠ কেউ ছিল না”।
যখন দৈনিক সংগ্রামের সম্পাদক আবুল আসাদ স্যারকে গ্রেফতার করা হল,তখন এই রেহমান সোবহানরা কোন প্রতিবাদ করেনি।কারন আবুল আসাদ তাদের মতাদর্শী ছিল না।এরপর যখন মাহমুদুর রহমানকে গ্রেফতার করা হল এবং “আমার দেশ” পত্রিকার ছাপাখানা বন্ধ করেদিল তখনও রেহমান সোবহানরা প্রতিবাদ করেনি।কারন মাহমুদুর রহমান কিংবা আমার দেশ পত্রিকা তার আদর্শে বিশ্বাসী ছিল না।কিন্তু আজ যখন তার নিজের কলমকে স্বাধীন ভাবে ব্যবহার করতে দিচ্ছে না,তখন সে তার ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত।হয়তো প্রতিবাদী হলে শেষ পর্যন্ত নায়মোলারের ভাগ্যই তাকে বরন করতে হতে পারে।নায়মোলারের অবস্থা থেকে “প্রথম আলো” কিংবা ডেইলি ষ্টারও ভিন্ন কোন অবস্থানে নেই।বিজ্ঞাপন খরা সামাল দিতে “আল জাজিরায়” টাকা দিয়ে রিপোর্ট করায়।অথচ আল জাজিরাকে প্রথম আলোই সর্বপ্রথম জামাতি টিভি বলে গালি দিয়েছিল।
রাত ফুরালে কার ভাগ্য যে কোথায় গিয়ে দাড়ায় তা বলা মুশকিল হলেও,আপাতোত প্রথম আলোর মতিয়ার আর ডেইলি ষ্টারের মাহফুজ গংরা নিজেদের পত্রিকার অস্তিত্ব নিয়ে রাতের ঘুম হারাম করে ফেলেছেন।আর বাংলাদেশের উন্নয়ন বিলবোর্ডের অভ্যন্তরেই থমকে দাঁড়িয়েছে।
বিষয়: বিবিধ
১২৫৫ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
বাস্তব লিখেছেন......।
শুকরিয়া।
মন্তব্য করতে লগইন করুন