শেষ পর্যন্ত হয়তো পুরো দেশটাকে বিক্রি করে দিয়েই দেশের সেবাকারীদের বেতন ভাতা প্রদান করতে হবে।
লিখেছেন লিখেছেন শাহমুন নাকীব ফারাবী ২২ অক্টোবর, ২০১৫, ১২:১৩:০৮ দুপুর
ঘটনাঃ১
বেশ কয়েকদিন আগে,বসুন্ধরা কনভেনশন সেন্টার থেকে ফিরতেছিলাম!এক রাজনৈতিক নেতার ভাইয়ের বিয়ের দাওয়াতে গিয়েছিলাম।ফেরার সময় কম বয়সী এক রিক্সাওয়ালাকে পেলাম!দরদাম করতে গিয়ে,ছেলেটার বাক্য উচ্চারন এবং মাজ্রিত আচরন দেখে মনে হলো সে শিক্ষিত।কিছুদূন যাওয়ার পর ওকে প্রশ্ন করলাম,তুমি কি পড়াশুনা কর?সে হ্যাঁ সূচক উত্তর দিল।তারপর নিজে থেকেই বলল,সে ইন্টার ফাষ্ট ইয়্যারে পড়ে।দিনের বেলা কলেজ আর পড়াশুনা করি।আর সন্ধ্যা থেকে মাঝরাত পর্যন্ত রিক্সা চালাই।তাকে প্রশ্ন করলাম,তোমার আব্বা কিংবা বড় ভাই নেই?সে জবাবে বলল,আমিই সবার বড়।আব্বা অনেক আগেই মারা গেছে।আর গ্রামে মা আর ছোট বোন আছে।আমি রিক্সা চালিয়ে যা পাই তা দিয়ে,নিজের পড়াশুনার খরচ চালাই আর বাকিটা গ্রামে পাঠিয়ে দেই।তখন মনে মনে ভাবি,হয়তো এই ছেলেটার মাঝে লুকিয়ে আছে নতুন কোন আতিউর রহমান।
ঘটনাঃ২
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এক ছাত্রের সঙ্গে কথা হচ্ছিল!অজানা এক কারনে তিনি শেষে পর্যন্ত পড়াশুনা শেষ করেন নি।অনার্স ফাইনাল পরীক্ষা না দিয়েই বাসায় চলে আসেন!ব্যক্তিগত খাতিরে আমি তার পড়াশুনা শেষ না করার কারন জানতে চেয়েছিলাম।তিনি বললেন,তোমাকে একটা গল্প বলি!
ধর,“তুমি একটি নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে আছো!এখন তোমাকে নৌকায় করে নদী পাড়ি দিতে হবে!নদীর পাড়ে অনেকগুলো নৌকা বাঁধা আছে।আর সেই নৌকাগুলোর মাঝে একটি পাল তোলা নৌকা!আর সেটি রেপিং কাগজ কিংবা রঙ্গচঙ্গে মোড়ানো।এক কথায় দৃষ্টিনন্দন।সেই নৌকার মাঝি নিজে এসে তোমার হাত ধরে নৌকায় বসালো!তখন স্বাভাবিক কারনেই সেই মাঝির নৌকায় আরোহন করতে তোমার ভাল লাগবে!কিন্তু নৌকা যখন মাঝ নদীতে পৌছে গেল,তখন তুমি বুঝতে পারলা নৌকার তলা ফুঁটা!তখন তোমার নৌকার সৌন্দর্য আর চোখে পড়বে না।মাঝির অমায়িক ব্যবহার তোমার মানস পটে ভেসে উঠবে না।তখন সব কিছু বাদ দিয়ে,তোমার মানস পটে জীবনের সৌন্দর্য ভেসে উঠবে।তখন জীবন বাঁচানোর জন্য নৌকা থেকে লাফ দিয়ে তোমাকে তীরে উঠতে হবে”।
ঠিক এমন একটি অবস্থার কারনে আমি পড়াশুনা বাদ দিয়ে চলে এসেছি।তিনি বললেন,ভার্সিটিতে যাওয়ার পর কিছু বড় ভাই আমাকে আপন করে নিলেন।তাদের সাহচর্যে হলে সিটও পেয়ে গেলাম!সেই বড় ভাইয়েরা আমাকে একটি শোষন মুক্ত সমাজের সম্পন্ন দেখাতো।দেখাতো বিপ্লবী হবার স্বপ্ন।তখন আমার মানস পটে জেগে উঠতো চে গুয়েভারা কিংবা ফিদেল ক্যাষ্ট্রো হবার অদম্য ইচ্ছা।কিন্তু কয়েকদিন পর আমি সব বুঝতে পারলাম।আসলে তারা যে,এসব শোষন মুক্ত সমাজের স্বপ্ন আর বিপ্লবী হবার ইচ্ছা আমাদের মনে জাগ্যত করত,তা প্রকৃত অর্থে ছিল সৌন্দর্য মন্ডিত তলা ফুঁটা নৌকার মত।এসব বুলি দিয়ে আমাদের কে ভুলিয়ে ভালিয়ে রাজনীতিতে আনবে তারপর নিজেদের ফায়দা হাসিল করবে।পরবর্তিতে এই নেতারাই দেশের বড় বড় সরকারী কর্মকর্তা!আমরা হবো তাদের চামচা!সেই অভিমানে আমিও ফিরে এসেছি।
তেমনি আজকে রাজনৈতিক নেতা ব্যাক্তিরা আমাদেরকে নতুন একটি দেশের স্বপ্ন দেখাচ্ছে!যেখানে থাকবে না কোন শোষন,নিপীড়ন কিংবা অবিচার!কিন্তু সেই রাজনৈতিক নেতা ব্যাক্তিরা শুধু নিজেদের আখের গোছানো নিয়েই ব্যস্ত।একদল হারানো ক্ষমতাকে ফিরে পাবার জন্য দেশকে বিকিয়ে দিচ্ছে!আর একদল ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখার জন্য দেশকে বিকিয়ে দিচ্ছে!মাঝখান থেকে দুজনেই বলছে,আমরা দেশের মানুষের জন্য করছি!কিন্তু দেশের মানুষের পেটে নাই ভাত!
সরকার প্রধান প্রায় বলেন,তিনি দেশের মানুষের সেবায় নিজের জীবনটাকেও বিরিয়ে দিতে প্রস্তূত!কিন্তু সেই দেশের মানুষ যখন রাতে ঘুমানোর জন্য নিরাপদ আশ্রয় পায় না!তাদের শেষ ঠিকানা হয় রাস্তার ফুটপাত অথবা পার্কের বেঞ্চ,তখন তাকে সেবাই বলতে হয়।আর এই দেশ সেবার বিনিময়ে আপনাদের বেতন রাতারাতি কয়েকগুন বেড়ে যায়!দেশের মানুষের ভ্যাটের টাকায় পিচঢালা রাজপথ তৈরী হয়!আর আপনারা মানুষের সেবার নামকরে সে রাস্তায় ট্যাক্স ফ্রী গাড়ি হাকিয়ে বেড়ান!
দেশের শিক্ষিত তরুনরা যখন বেকারত্বের অভিশাপে নুয়ে পড়ে আত্নহত্যা করে,তখন দেশের সেবাকারীরা দেশের টাকায় সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে বডি চেকআপ এ যায়!দেশের তরুনরা পড়াশুনার সুযোগ পায় না,আর দেশ সেবার সুযোগ সন্ধানী নেত্রীর নাতনি বিদেশে পড়তে গিয়ে পত্রিকার শিরোনাম হন!
গত তিনমাসে বিনিয়োগ যেখানে নেই বললেই চলে,সেখানে যেহারে দেশ সেবকরা নিজেদের বেতন ভাতা বৃদ্ধি করছেন,শেষ পর্যন্ত হয়তো পুরো দেশটাকে বিক্রি করে দিয়েই দেশের সেবাকারীদের বেতন ভাতা প্রদান করতে হবে।
বিষয়: বিবিধ
১২২১ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এখন অপেক্ষা একটি বড় দুর্যোগের, লন্ডভন্ড হয়ে যাবে সবকিছু, ভাসিয়ে দিবে পূরা দেশ...
তারপর...
পলি জমবে জমিনে, নতুন ফসলে হাসবে মানুষ, নতুন কুঁড়েঘর ঝিকমিকিয়ে উঠবে সোনালী রোদের আলোয়!!!!!
মন্তব্য করতে লগইন করুন