বামদের বস্তাপঁচা মতবাদ,আজ জাদুঘরে!

লিখেছেন লিখেছেন শাহমুন নাকীব ফারাবী ২০ অক্টোবর, ২০১৫, ০২:৫৫:১৩ দুপুর

২০০১-০২ এই সময়কার ঘটনা।আমাদের মিঠাপুকুরের স্থানীয় কলেজে,বিশ্বসাহিত্যকেন্দ্রের উদ্যোগে বই পড়া প্রতিযোগিতা হতো।আর এর মূল দায়িত্বে ছিলেন,স্থানীয় কলেজের তৎকালীন ছাত্র ইউনিয়ন সভাপতি রাজিব ভাই।স্থানীয় হাইস্কুলের ভাল ছাত্র ছাত্রীদের অনেকটা জোর করেই সেই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহন করাতেন, রাজিব ভাই।কিছুদিন পর ঔ কলেজে,বিশ্বসাহিত্যকেন্দ্রের পুরো কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হলো।

বন্ধের কারন হিসেবে বলা হল,মৌলবাদী গোষ্ঠি এই সংগঠনের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র করতেছে।তাই সাময়িকভাবে মিঠাপুকুরে এর কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।কিন্তু কিছুদিন পরেই বেরিয়ে এসেছে থলের বিড়াল।ছাত্র ইউনিয়নের কাউন্সিল নিয়ে সে সময় তাদেরই দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ঘটে।আর সেই সংঘর্ষের কারন ছিল,বিশ্বসাহিত্যকেন্দ্রের বই বাজারে বিক্রি করে নিজেদের মধ্যে টাকা ভাগবাটোয়ারা করা নিয়ে।প্রথমত নিজেদের গায়ের গন্ধ ঠাকতে দোষ চাপানো হল মৌলবাদী শক্তির উপর। “সরকারী মাল দরিয়া মে ঠাল” এই আদর্শকে কে অন্তরে লালন করে বাহ্যিক দিক থেকে ‘চে গুয়েভারের’ বুলি আউড়িয়ে নিজেদেরকে সাম্যবাদী,প্রগতিবাদী এবং শোষন থেকে মুক্তি ও সম্পদের সুষম বন্টনের কান্ডারী বলে প্রকাশ করাটাই তাদের প্রকৃত চরিত্র।

মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি বলে যে মুনতাসির মামুনরা আজ লাফালাফি করেন!পাকিস্তান ক্যাম্পে মুরগী সাপ্লাই দেয়া মুরগী কবিররা যখন বলেন,মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় প্রগতিবাদীরা আজ উজ্জেবিত তখন নিজেকে বড় অসহায় মনে হয়।আর অসহায় হবোই বা না,কেন!পৃথিবীতে হয়তো বাংলাদেশই একমাত্র দেশ,যাদের স্বাধীনতার ইতিহাস প্রতিবছর নতুন করে হালনাগাদ করা হয়।তখন এইসব মুনতাসির মামুন আর মুরগী কবিররা মৌলবাদীদের বিরুদ্ধে দুচারটা বই লিখে এবং শাহবাগের বিরিয়ানী আন্দোলনের মঞ্চে বক্তব্য দিয়ে ক্রেডিট নিতেই পারেন।

বাম রাজনীতির ‍উৎপত্তি সাম্যের সপ্ন দেখিয়ে শুরু হলেও, সেই স্বপ্ন আজও স্বপ্নেই রয়ে গেছে!মূলত বাম শব্দটির উৎপত্তি হয় ১৭৮৯ সালে ফরাসী বিপ্লবের সময়।তখন পার্লামেন্টের ডান দিকে বসতেন শাসক দল আর সভাপতির বাঁ দিকে বসতেন বিরোধী দল।মূলত বাঁ দিকে বসবার কারনেই তাদেরকে ‘বাম’ বলা হয়।আর সাধারনভাবে সমাজতন্ত্রী এবং প্রগতিশীলদেরকেই বামপন্থি বলা হয়।সাম্যবাদের বুলি কিংবা স্লোক তাদের মুখে শোনা গেলেও,তারাই সাম্যবাদের আদর্শকে ধারন করতেন না।এই মুক্তিযুদ্ধের সময়টাতেই দেখুন না,বামদলগুলো ভেঙ্গে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব জাহিরের জন্য আলাদা হয়ে গেলেন।কেউ মস্কো পন্থি হয়ে আর কেউবা চীনা পন্থি হয়ে,তৎকালীন বাম নেতাদের মধ্যে,সিরাজ শিকদার চলে গেলেন পেয়ারাবাগানে।মান্নান ভূঁইয়া চলে গেলেন নরসিংদীর লোহজং এ।মতিন টিপু বিশ্বাসরা পাবনাতে।তখন অবস্থাটা এরকম ছিল যে,বামদের ভিতরেই আর একটা যুদ্ধ শুরু হবে।

বামদের মুখে প্রায়ই মার্কস,এডাম স্মিথ এভং মাও এর কিছু মুখস্ত স্লোক শুনতে পাওয়া যায়।যার মূল কথা ছিল,শ্রেণী শোষন থেকে মুক্তি ও সম্পদের সুষম বন্টন।কিন্তু তাদের সেই মতবাদগুলো আজ মস্কো কিংবা চীনাতেই বস্তাপঁচা মতবাদ বলে গন্য হয়।মস্কো মার্কস এর সেই সমবায় কেন্দ্রীক চাষাবাদের বুলিকে জাদুঘরে প্রেরন করেছে।কারন আজ মস্কোকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ভেঙ্গে বহিঃদেশ থেকে খাদ্য আমদানী করতে হচ্ছে।

আর সারাবিশ্বে বামশাসকদের অবস্থান পরিষ্কার করতে গিয়ে “প্রথম আলো” পত্রিকায় হাসান ফেরদৌস বলেন "কিন্তু পৃথিবীর যে দেশেই কমিউনিস্টরা ক্ষমতা দখল করেছে, সেখানে নতুন বিশ্ব গড়ার বদলে নিজেদের পকেট ভরেছে, আর বিরোধী সবাইকে হয় গুলির সামনে পাঠিয়েছে, অথবা জেলে পুরেছে। আমি শুধু সোভিয়েত ইউনিয়নের কথা বলছি না, সে দেশের কথা সবাই জানেন। চীন থেকে কিউবা, ইথিওপিয়া থেকে ইয়েমেন, সর্বত্র একই দৃশ্য। আর আঙুল ফুলে কলাগাছ? একসময়ের মহা বাম নিকারাগুয়ার দানিয়েল অরতেগা এখন সে দেশের নব্য ধনীদের শিরোমণি। প্রমাণের জন্য অত দূর নয়, পাশের বাড়ির বাম নেতা জ্যোতি বসুর সুযোগ্য পুত্র চন্দন বসুর আঙুল ফুলে কলাগাছ হওয়ার উদাহরণটা মনে রাখলেই চলবে। বস্তুত, ইথিওপিয়া থেকে ইয়েমেন—যেখানেই কমিউনিস্টরা ক্ষমতা দখল করেছে, দেশটা চিড়ে-ছিবড়ে খেয়ে তারপর মানুষের দাবড়ানি খেয়ে ইঁদুরের গর্তে ঢুকেছে।" -(প্রথম আলো, ০৮-০১-১৫)

সেই মুক্তিযুদ্ধ থেকে আজ অবধি,দেশের অভ্যন্তরে পারষ্পরিক দন্দ জিইয়ে রাখতে সুক্ষ ভুমিকা পালন করছে এই বাম ঘরনার রাজনীতিকরা।এক গনজাগরন মঞ্জ দিয়ে আজ জাতিকে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে।আর এই জাতি ভাগের কাজটিও করেছে বাম ঘরনার রাজনীতিকরা।সাম্যের গান গাহি বলতে বলতে গলার তার ছিড়ে ফেললেও তারা যে প্রহিহিংসা পরায়ন তা প্রমান করে,বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবি মরহুম পিয়াস করিমের লাশ শহীদ মিনারে নিতে না দেয়া!নিজেদের স্বার্থ জিইয়ে রাখতে আজ বামরা দেশের রাজনীতিতে ছড়িয়ে পড়েছে।৭৫ এর পর সোভিয়েত পন্থিরা ঢুকে গেছে আওয়ামিলীগে।আর চীন পন্থিরা প্রবেশ করেছে বিএনপিতে।আপাতো দৃষ্টিতে তারা দল পরিবর্তন করলেও কিন্তু তারা আদর্শ পরিবর্তন করেন নি।আজ ধারন করা হয়,সরকার ঘরনার গুটি কয়েক বাম মন্ত্রীদের কূ-মন্ত্রনায় দেশকে সহিংসতার দিকে পরিচালিত করছেন সরকার প্রধান।তাদের বস্তাপঁচা মতবাদ গুলো আজ ব্যবহৃত হচ্ছে নিজ দেশের সামগ্রিক অবস্থাকেই ধব্বংস করবার নিমিত্তেই।

পরিশেষে বলব,আধুনিক বিশ্বে এর ধারনা যোজন যোজন পথ পার হয়ে গেছে কিন্তু আমাদের দেশের বামপনিস্থরা এখনও পিকিং পন্থি আর মস্কো পন্থিদের আদর্শ নিয়ে তর্ক করেন।যা, পিকিং আর মস্কোর লোকজন ২০ বছর আগেই বিসর্জন দিয়েছে।

বিষয়: বিবিধ

১১৮২ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

346531
২০ অক্টোবর ২০১৫ বিকাল ০৫:৩০
আবু সাইফ লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ..



যথার্থ বলেছেন, সহমত
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, জাযাকাল্লাহ
২০ অক্টোবর ২০১৫ রাত ১০:২১
287664
শাহমুন নাকীব ফারাবী লিখেছেন : ওয়ালাইকুম আসসালাম।বারাকাল্লাহ।
346540
২০ অক্টোবর ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:১৬
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : চমৎকার তথ্যপূর্ন পোষ্টটির জন্য অনেক ধন্যবাদ।
পৃথিবীর কোথাও কম্যুনিষ্ট রা জনগনের সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করেনি। সবখানেই যুদ্ধ কিংবা কোন প্রাকৃতিক বিপর্যয় এর ফাঁকে অপপ্রচার অার শক্তি দিয়ে ক্ষমতা দখল করেছে। সোভিয়েট ইউনিয়ন নিজেই টিকতে পারেনি।
২০ অক্টোবর ২০১৫ রাত ১০:২২
287665
শাহমুন নাকীব ফারাবী লিখেছেন : সহমত।মন্তব্য করার জন্য আপনাকেও ধন্যবাদ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File