একটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে..................

লিখেছেন লিখেছেন শাহমুন নাকীব ফারাবী ১৭ অক্টোবর, ২০১৫, ১০:৪৪:৪৮ রাত

নাইট ডিউটি করে সবে মাত্র বাসায় ফিরেছে,উসমান।সে র‌্যাব ১৩(রংপুর) সেকেন্ড অফিসার।নিজের রুমে ঠুকেই উসমান চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে দিল।আম্মা!ও আম্মা!আমার রুমের জানালা কে খুলেছে?আমি বলেছি না,আমার রুমের কোন জানালা কেউ খুলবেন না!তারপরও কে খুলেছে?রান্না ঘর থেকে ছুটে আসলেন,উসমান এর আম্মা!বিব্রত ভঙ্গিতে বললেন,কাজের মেয়েটা হয়তো ভুলে খুলে রেখে গেছে!আমি লাগিয়ে দিচ্ছি!তুই ফ্রেশ হয়ে আয়!আমি টেবিলে খাবার দিচ্ছি।

উসমান তার আব্বা আম্মার একমাত্র সন্তান।উসমান এর আব্বা ৫ বছর আগে ষ্ট্রোক করে মারা গেছেন।উসমান এখনো বিয়ে করেন নি।বিয়ের জন্য পাত্রী দেখা হচ্ছে!কিন্তু উসমানের যে মানসিক অবস্থা!তাতে ওকে বিয়ে দিবেন কিনা,সেই চিন্তা করছেন ওর আম্মা!

রংপুর ক্যাডেট কলেজ থেকে ইন্টার পাশ করার পর,বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে ক্যাডেট অফিসার পদে জয়েন করে উসমান।তারপর পর্যায়ক্রমে আজ সে,র‌্যাবের সেকেন্ড অফিসার।সেনাবাহিনীতে থাকাকালীন সময়ে উসমান হাসি খুশি এবং চঞ্জল থাকলেও,র‌্যাবে ঠোকার পর থেকেই সে চুপচাপ হয়ে যায়!মেজাজটা সব সময় খিটমিটে!

আম্মা একদিন টেবিল গোছাতে গিয়ে একটি ডায়রী খুঁজে পেলেন!প্রথমে ভাবলেন,ডায়রী খূলবেন না!কিন্তু পরোক্ষনে ভাবলেন,এ ডায়রীতেই হয়তো উসমানের মানসিকতা বদলে যাওয়ার কারন খুজে পাওয়া যাবে!আম্মা উসমানের ডায়রীর প্রথম পাতা খুললেন!

৬ নভেম্বর ২০১২ সাল!

রাত তিনটায় আমাদের বিশেষ টিম বেরিয়ে পড়ল!ক্যাপ্টেন স্যারের নেতৃত্বে ঔদিন আমরা রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলাতে অভিযান চালাই।উপজেলা বন্দর থেকে পশ্চিম দিকে ১০ কি,মি যাওয়ার পর আমরা আমাদের টার্গেটকৃত বাড়িতে পৌছলাম!বাড়ির দরজায় কয়েকবার নক করার পরও দরজা না খুলাতে,কয়েকজন সেপাহী লাত্থি দিয়ে দরজা ভেঙ্গে ফেলল!আমরা পজিশন নিয়ে নিলাম!ইতিমধ্যে বাড়ির রুমগুলোতে লাইট জ্বলে উঠেছে!আমরা রুম তল্লাশি করে,তারিফুল ইসলাম নামে এক যুবককে গ্রেফতার করলাম!গ্রেফতার করার সঙ্গে সঙ্গে ক্যাপ্টেন সেপাহিদের একশনে যাওয়ার নির্দেশ দিলেন।আর সেপাহিরাও সঙ্গে সঙ্গে তাদের রাইফেলের বাট এবং বুট দিয়ে তাকে প্রহার করা শুরু করল।আর সেই দৃশ্য তারিফুলের আম্মা দেখে সঙ্গে সঙ্গে অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলেন।তখন আমি ভাবলাম,আজ তারিফুলের জায়গায় যদি আমি থাকতাম!

৭ নভেম্বর ২০১২ বিকাল ৫টা ৩০ মিনিট।

তিন নাম্বার সেল থেকে,সেগুন কাঠের সপাং সপাং বাড়ির শব্দ ভেসে আসছে!আর তারিফুল এর শুকিয়ে যাওয়া গলায় ভেসে আসছে,করুন চিৎকার!আল্লাহগো বাঁচাও।তারিফুলের সেই চিৎকার আজও আমার কানে বাজে!

৭ নভেম্বর ২০১২,রাত ১১টা।

তারিফুলের সেলে বিশেষ টিম পাঠানো হল।সেই সঙ্গে আরও কিছু যন্ত্রপাতি।সেই যন্ত্রপাতি দেখে আমার নিজেরই ইচ্ছে হচ্ছিল,এক দৌড়ে কোথাও পালিয়ে যাই!কারন এখনই তারিফুলের আত্নচিৎকার ভেসে আসবে!প্লাস দিয়ে তারিফুলের হাত এবং পায়ের নখ তুলে ফেলা হল।আর সেই ক্ষত স্থানে মরিচের গুড়া ঠেলে দেয়া হল।সে কি চিৎকার!সেই চিৎকারে হয়তো আল্লাহর আরশও কেঁপে উঠেছে!কিন্তু সেই টিম মেম্বারদের হৃদয় কাঁপেনি।এরপর তারিফুলকে জোর করে পানি খাওয়ানো হল!পানি খাওয়ার পর একটি নির্দিষ্ট বালতিতে প্রসাব করতে বাধ্য করানো হল।আর সেই বালতির পানিতে নিল ইলেকক্ট্রিক লাইন।প্রসাব বালতিতে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে,তারিফুল দূরে ছিটকে পড়ে অজ্ঞান হয়ে গেল।

রাত ৩টা।

জ্ঞান ফিরল তারিফুলের।তাকে বেশ কিছু খাবার খেতে দেয়া হল।আর সেই খাবারের সঙ্গে মেশানো ছিল,ঘুমের ওষুধ।খাবার খাওয়ার পর,তারিফুলের দুই পা দুদিকে বাঁধা হল।আর তার দুই হাতে হ্যান্ডকাপ পরিয়ে গ্রিলের সঙ্গে দাড় করিয়ে রাখা হল।আর তার মাথার উপর ৫০০ পাওয়ারের একটি বাল্প জ্বালিয়ে দেয়া হল!ঘুমের জন্য ছটফট করতে থাকে তারিফুল!মাথার উপরে লাইটের তিব্র তাপে দরদর করে ঘামতে থাকে,তারিফুল।আর নখহীন পা নিয়ে সারারাত দাঁড়িয়ে থাকতে হয়!

এভাবেই আমাকে নিজের চোখে তারিফুল কে সুস্থ জীবন থেকে পঙ্গুত্ব বরন করা দেখতে হল!এরপর তারিফুলকে কোর্টে চালান করে দেওয়া হলেও,ওর আত্নঃচিৎকারগুলো আমার মন থেকে চালান করতে পারিনি!আমি রুমে ঠুকে জানালা খুললে,দূর থেকে তারিফুলের কান্না ভেজা কন্ঠে শুনতে পাই,আল্লাহ !আল্লাহ!আর কখনো বা সে নিজেই নিজেকে শুনাতো,“হাসবুনাল্লাহু ওয়া নি’মাল ওয়াকিল নি’মাল মাওলা ওয়া নি’মান নাসির”।

বিষয়: বিবিধ

১৩০১ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

346080
১৭ অক্টোবর ২০১৫ রাত ১১:১২
আবু জান্নাত লিখেছেন : ইশ! সংক্ষেপ হয়ে গেছে ভাই। আরো লিখার প্রয়োজন ছিল। এভাবে কত বনী আদম যে আজ ক্ষমতাবাজদের জুলুম অত্যাচারের শিকার।

ধন্যবাদ
১৭ অক্টোবর ২০১৫ রাত ১১:৩২
287196
শাহমুন নাকীব ফারাবী লিখেছেন : জি ভাই!ইচ্ছে ছিল পুরো ডিটেইল লিখব!কিন্তু হল না।আরো কিছু ভাইয়ের ঘটনা আছে!তাদেরটাও লিখব ইনশা আল্লাহ
346093
১৮ অক্টোবর ২০১৫ রাত ০১:৩৭
সাদিয়া মুকিম লিখেছেন : আসসালামুআলাইকুম! চোখ ভিজে এলো! দুঃশাসনের সময় কি ফুরোবে না?

সৎকাজের আদেশ আর অসৎ কাজের নিষেধ করাকে মুমিনের জন্য ফরজ করা হয়েছে , একান্ত অক্ষম হলে ঘৃনা করা! আল্লাহ আমাদের আমল করা সহজ করে দিন!

শুকরিয়া আপনাকে!
346112
১৮ অক্টোবর ২০১৫ সকাল ০৮:৫৩
দ্য স্লেভ লিখেছেন : হাসবুনাল্লাহু ওয়া নি’মাল ওয়াকিল

আখিরাতে বোঝা যাবে কার চিৎকার সে শোনে। যালিমের কোনো সাহায্যকারী নেই। ...একটা উক্তি মনে পড়ল----ঈমাম ইবনে তাঈমীয়া(রহঃ) যখন কারাগারে,তখন জেলার একদিন বলল-আমি জানি আমি নির্দোষ,কিন্তু শাসকের কথায় আপনাকে আটকে রাখতে হচ্ছে। আমি কি যালিমের সহযোগী ? ঈমাম বললেন-না তা নয়, বরং আপনি নিজেই যালিম....
346175
১৮ অক্টোবর ২০১৫ দুপুর ০২:৫২
দিল মোহাম্মদ মামুন লিখেছেন : হয়তো এই রকম হাজারো তারিফুলের জীবন র‍্যাব নামক লীগেরা কেড়ে নিতেছে...তবে আসল বিচারক সবকিছুই দেখতেছেন, বিচার হবেই হবে... ঐদিন তারিফুলেরা হাসবে..
ধন্যবাদ আপনাকে

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File