তারুন্যের জোয়ার এখন গাজার নিকোটিনে..........

লিখেছেন লিখেছেন শাহমুন নাকীব ফারাবী ১৪ অক্টোবর, ২০১৫, ০৮:০৪:৫৫ রাত

ঘটনাটিকে মজাদার বলব নাকি দুঃখজনক বলব সে সিদ্ধান্তটা সচেতন দেশপ্রেমিকদের উপর ছেড়ে দিলাম!

বেশ কিছুদিন আগে,মাঝরাতে মোবাইল বেজে উঠল।মোবাইলের স্ক্রিনে দেখলাম,আমার খুব কাছের এক বন্ধুর নাম ভেসে উঠেছে!রিসিভ করার পর,ওপাশ থেকে ভেসে আসলো,দোস্ত!আমি তো শেষ!আমি বললাম,কি হয়েছে?সে বলব,ঘটনা পরে শুনিস।এখন ঘটনার রিএকশন হিসেবে আমার প্রচন্ড জ্বর আর বুক ব্যথা করতেছে।বললাম,সকাল হলেই তোর বাসায় আসতেছি।

সকাল বেলা ওর বাসায় গিয়ে আসল ঘটনা জানতে পারলাম!গত তিন মাস থেকে ফেসবুকে একটা মেয়ের সঙ্গে নিয়মিত চ্যাটিং হত।তারপর তাদের মাঝে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে!আর সেই বন্ধুত্ব থেকে মন দেয়া নেয়ার পর্বটাও সম্পন্ন করে।বেচারা যখন প্রেমের সাগরে হাবুডুব খাচ্ছে,তখনই হাটে হাড়ি ভেঙ্গে পড়ল!অনেক জোরাজুরির পর তাদের মাঝে প্রথম যেদিন মোবাইলে কথা হল,সে দিন ওপাশ থেকে একটি ছেলের গলার আওয়াজ ভেসে আসল।তারপর সে বলল,ভাইয়া আমাকে ক্ষমা করে দিন।আমি বন্ধুদের সঙ্গে বাজি ধরে আপনার সঙ্গে এই কাজটা করেছি!শেষে দেখা গেল,ফেসবুকের ঐ মেয়ে রূপী ছেলেটা আমার বন্ধুর পূর্ব পরিচিত।

মাঝপথে এসে প্রেমের নৌকা ডুবে যাওয়ার কষ্টে,আমার বন্ধু জ্বর বাঁধিয়ে বসে!সেই সাথে বুক ব্যথা!এই হল আজকের তরুন সমাজের অবস্থা!আর পত্রিকার কল্যানে জানতে পেরেছেন,কয়েকদিন আগে ইডেন কলেজের এক তরুনী তার ২৪ জন বয় ফ্রেন্ডকে একসঙ্গে হাজির করেছিলেন।উগ্র আধুনিকতার প্রতিযোগিতায়,আমরা ভালই উন্নতি করেছি!

প্রাচ্যের অক্সফোর্ডখ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়!যে তরুনেরা প্রথমবারের মত ঢাকায় আসেন,ঢাকার ঐতিহ্যবাহী জায়গাগুলো দেখার পাশাপাশি তাদের আগ্রহে থাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। কয়েকদিন আগে সন্ধ্যায়, এক প্রবাসী বাংলাদেশীকে নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর ঘুরে দেখাচ্ছিলাম!তখন বাতাসের প্রতি ভাজে মিশে ছিল,গাজার নিকোটিন।গাজা খোরদের উৎপাতে সম্প্রতি সোহরাওয়ারর্দি উদ্যানে সন্ধ্যার পর প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।তাই বলে কি তাদের গাজা খাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে?

এখন টিএসসি থেকে শুরু করে কেন্দ্রিয় শহীদ মিনার পর্যন্ত গাজার আসরের স্থানের পরিব্যাপ্তি ঘটেছে!কি নারী কি পুরুষ!সমানে গাজায় টান চলছে!আর ভার্সিটির নির্জন জায়গা গুলোতে চলছে,প্রেমিক প্রেমিকার অবাধ মিলন!রাস্তায় দাড়িয়েই আলিঙ্গন বদ্ধ হয়ে একে অপরকে কিস করতেও তাদের বিবেকে বাঁধছে না!অথচ এরাই নাকি আবার দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠের ছাত্র এবং রাষ্ট্রের চোখে তরুন প্রজন্ম।

বেশ কিছুদিন আগে,একটি ইংরেজি জার্নালে বাংলাদেশকে নিয়ে একটি নিবন্ধ পড়েছিলাম!সেখানে বলা হয়েছিল,“বাংলাদেশ সত্যি অনেক ভাগ্যবান।উন্নতির যাত্রা এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য এখনই মৃখ্য সময়!কারন তাদের মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকই তরুন!আর কর্মক্ষম লোক সংখ্যা মোট জনসংখ্যার প্রায় ৫৮%।আর এই উন্নতির সুযোগ তারা আর মাত্র ২৫ থেকে ৩০ বছর পাবে।কারন এই সময় পর তাদের তরুনদের সংখ্যা কমে যাবে।আর কর্মক্ষম লোকের সংখ্যাও কমে যাবে”।কিন্তু আমাদের তরুনদের প্রকৃত অবস্থান কোথায়?তারা কেউ মেতে আছেন তথাকথিত গার্লফ্রেন্ড কে নিয়ে,কেউ মেতে আছেন গাজা আর ইয়াবা নিয়ে আর কেউবা মাথা ঢুকাচ্ছে ফেসবুকের ইনবক্সে।

একটা সময় দেশের তরুন সমাজের লাইব্রেরীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকলেও আজ সেই সম্পর্ক হয়ে গেছে সাময়িক।পরীক্ষার আগের দিন লাইব্রেরীর দিকে ছাত্রদের ছুটতে দেখা গেলেও,বলতে গেলে সারা বছর এই চিত্রটা দেখতে পাওয়া যায় না।তাদের চিন্তা চেতনা এখন ভিন্ন খাতে!তাদের চিন্তার ভিন্নতা এবং প্রসারতার দিকে তাকালে মনে হবে,তারা যেন পুরো পৃথিবীটাকে উদ্ধারের দায়িত্ব গ্রহন করেছে।কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়,সে নিজেই তার জীবনের লক্ষ্য উদ্দেশ্য সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নয়।কথায় সুরে লুকিয়ে থাকে উদাসী ভাব!দেশ নিয়ে কোন কথা বলতে গেলে,চট করে বলে দেন,“আরে এটাতো রাজনৈতিকদের বিষয়।এনিয়ে কথা বলাটা আমাাদের বেমানান”!দেশ নিয়ে যারা ভাবনার বিন্দু মাত্রও অবকাশ পান না,তাদের কাছে বেমানাই বৈকি!

বাংলাদেশের আন্দোলন গুলোর জাগ্রত ইতিহাস!যেখান থেকে শুরু হয়েছিল,ভাষা আন্দোলনের অগ্রযাত্রা।সেখান থেকে শুরু হয়েছিল,স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রথম ট্রেনিং,যেখান থেকে শুরু হয়েছিল স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলন সেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আজ গাজার ধোঁয়ায় মলিন হয়ে গেছে!সেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আর আমাদের কে যোগ্য নেতৃত্ব উপহার দিতে না পারলেও একদল নেশাগ্রস্থ তরুন প্রজন্ম উপহার দিচ্ছে!যাদের বইয়ের ভিতরে সোভা পায় ইয়াবা সেবনের সিরিজ কাগজ!

জাতীয় কবি আমাদের জাতির করুন অবস্থা উপলবদ্ধী করে,“কান্ডারী হুঁশিয়ার” কবিতায় তরুনদের জেগে ওঠার আহব্বান করেছেন!

দুলিতেছে তরী, ফুলিতেছে জল, ভূলিতেছে মাঝি পথ,

ছিঁড়িয়াছে পাল, কে ধরিবে হাল, আছে কার হিম্মৎ?

কে আছ জোয়ান, হও আগুয়ান, হাঁকিছে ভবিষ্যত।

এ তুফান ভারী, দিতে হবে পাড়ি, নিতে হবে তরী পার।

বিষয়: বিবিধ

১১৭৮ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

345701
১৪ অক্টোবর ২০১৫ রাত ১০:০৪
দুষ্টু পোলা লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
345712
১৪ অক্টোবর ২০১৫ রাত ১১:০৭
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : গাঁজা শিল্পের তো উন্নতি হচ্ছেই!!
345757
১৫ অক্টোবর ২০১৫ সকাল ১০:৩৭
দ্য স্লেভ লিখেছেন : জাজাকাল্লাহ ভালো লিখেছেন। তরুন প্রজন্ম যে বিশ্বাস ধারন করছে তা ভয়াবহ। এমন একটা স্রোত তৈরী হয়েছে যেটাতে মোটামুটি ইসলামিক পরিবারে জন্ম নেওয়া ভালো তরুনরাও স্রোতে গা ভাসাচ্ছে। সমাজের উপর থেকে প্রতিনিয়ত বিষ ঢেলে ব্রেইন ওয়াশ করা হচ্ছে এবং ভালো কাজে মানুষিক বাধা দেওয়া হচ্ছে
345879
১৬ অক্টোবর ২০১৫ সকাল ০৮:১৩
হতভাগা লিখেছেন :
আর পত্রিকার কল্যানে জানতে পেরেছেন,কয়েকদিন আগে ইডেন কলেজের এক তরুনী তার ২৪ জন বয় ফ্রেন্ডকে একসঙ্গে হাজির করেছিলেন।


০ ইডেন কলেজের এখনকার আমলের মেয়েদের জন্য এটা সাধারণ ব্যাপার ।

এরা আসলেই টেলেন্টেড , ভাগ্যবতী - কারণ এসব বয় ফ্রেন্ডদের কাছ থেকে তারা প্রতিদিনই কিছু না কিছু পেয়ে থাকে যা দিয়ে সে তার পড়াশুনা ও লাক্সারীর খরচ মিটিয়ে নেয় ।

By the way , এরা কি বয়ফ্রেন্ডের আড়ালে খদ্দের ছিল নাকি ?

খবরটা পড়া হয় নি , লিংক থাকলে দিয়েন ।
346154
১৮ অক্টোবর ২০১৫ দুপুর ০১:৪৭
মনসুর লিখেছেন : মাশাআল্লাহ, সুন্দর লিখেছেন। আলহামদুলিল্লাহ, জাজাকাল্লাহু খাইরান। শুভেচ্ছান্তে ধন্যবাদ।
একটি সময়োপযুগী জরুরী পোস্ট।
মহান আল্লাহ আমাদর সবাইকে হেদায়েত দিয়ে দুনিয়া ও আখেরাতে নেক কামিয়াবী দান করুন, আমীন।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File