তুমি আমাদের বাঙালী করেছো,মানুষ করোনি(!)
লিখেছেন লিখেছেন শাহমুন নাকীব ফারাবী ০৮ অক্টোবর, ২০১৫, ০৯:০৭:০৬ সকাল
“নায়মোলারের অনুশোচনা” নামক এই প্রবন্ধটি অনেকেই পড়ে থাকতে পারেন।এই জার্মান চিন্তাবিদের পুরো নাম মার্টিন নায়মোলার।নায়মোলার প্রথম মহাযুদ্ধে দুর্ধর্ষ ইউ কোট(সাবমেরিন)ক্যাপ্টেন ছিলেন।পরবর্তি সময়ে তিনি নাৎসি ডিক্টেরশিপের কঠোর সমালোচক হয়ে উঠেন।সে জন্য ১৯৩৭ সালের ১ জুলাই তাকে গ্রেফতার করা হয়।আদালত তাকে নাম মাত্র শাস্তি দিয়ে মুক্তি দিলেও,হিটলার তাকে সহজে ছাড়েননি।হিটলার তার ব্যক্তিগত নির্দেশনায় নায়মোলার কে গৃহবন্দি করে রাখেন।যুদ্ধের পুরোটা সময় জুড়ে নায়মোলার কে একাকী নিঃসঙ্গ অবস্থায় বন্দি থাকতে হয়।জার্মানির বুদ্ধিজীবীদের নিস্ত্রিয়তা ও সাহসের অভাবে কিভাবে নিজেদের এবং বিশ্বের সর্বনাশ করেছেন,সে কথাই নায়মোলার তাঁর গ্রন্ধে উল্লেখ করেছেন।
নায়মোলার অন্ত্যত মর্মস্পর্শী ভাষায় লিখেছেন,“প্রথমে নাৎসিরা এসেছিল কমিউনিষ্টদের ধরতে,আমি প্রতিবাদ করিনি।-কারন আমি কমিউনিষ্ট ছিলাম না।
তারপর তারা এলো ট্রেড ইউনিয়ন পন্থিদের ধরতে আমি প্রতিবাদ করিনি।-কারন আমি ট্রেড ইউনিয়ন পন্থি ছিলাম না।
তারপর তারা এলো ইহুদিদের ধরতে,তখনও আমি প্রতিবাদ করিনি।-কারন আমি ইহুদি নই।
তারপর ওরা আমাকে ধরতে এলো,তখন আর আমার হয়ে প্রতিবাদ করবার অবশিষ্ঠ কেউ ছিল না”।
২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর!ঢাকার রাজপথে প্রকাশ্য দিবালোকে লগি বৈঠা দিয়ে মানুষ হত্যা করা হল।হত্যা করে বাপ্পাদিত্য বসুরা লাশের উপরে পৈশাচিকভাবে নিত্য করল।সেই দৃশ্য দেখে বিশ্ববাসী হতভম্ব হয়ে গেল!সেই সময় তাদের সন্তানদের টিভিতে নিউজ দেখতে নিষেধ করে দিল।কিন্তু বাংলার আপামোর জনতা সেই দিন প্রতিবাদ করল না।কারন ঐ দিনের নিহতদের মধ্যকার মুজাহিদ,শিপন,হাবীব,মাসুমরা তাদের কেউ ছিল না।
২০০৯ সালের ২৫,২৬ ফেব্রয়ারী বিডিআর বিদ্রোহে ৫৭ জন সেনা অফিসারসহ সর্বমোট ৭৪ জনকে হত্যা করা হল।তবুও জনতা নিশ্চুপ।কারন সেই সেনা সদস্যদের মধ্যে আমাদের কেউ ছিল না।সেই দিনকার নির্যাতিত পরিবারদের মাঝে আমাদের কেউ ছিল না।
এরপর তাজরীন ফ্যাশন এ অগ্নিকান্ডে সহস্রাধিক গার্মেন্টস শ্রমিক আগুনে পুড়ে নিহত হল।রানা প্লাজা ধসে পড়ে আরও দুইসহস্রাধিক লোক নিহত হল।কিন্তু তাদের পক্ষ হয়ে কথা বলবার একটা মানুষও খুজে পাওয়া গেল না।সুশীলসমাজের ভদ্রলোকেরাও এক্ষেত্রে নীরবতা পালন করে আসছেন।অনেকটা চোখ থাকিতেও অন্ধদের মত অবস্থা!
এরপরও নানা ঘটনা ঘটে গেল তবুও জাতি নিশ্চুপ!এরই মাঝে বিশ্বজিৎকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হল।সেই হত্যা কান্ডের তথ্যচিত্র ইন্টারনেট এ আজও বিরাজও মান।কিন্তু জনগনের প্রতিক্রিয়া নেই।কারন বিশ্বজিৎও আমাদের কেউ না।
সেই সাথে নারায়নগঞ্জের ত্বকি হত্যাকান্ড কিংবা চাঞ্জল্যকর ৭ মার্ডার নিয়েও জনগন নিশ্চুপ।কারন সেই হতভাগ্যরা কেউই জনগনের আপন কেউ নয়।অতএব জনগন সেখানেও নিশ্চুপ থাকাকেই বুদ্ধিমত্তার কাজ ভেবে নিল।
জনগনের এই নিশ্চুপতাকে পুঁজি করে,আধিপত্যবাদীরা তাদের দাবি কিংবা লালসা আদায়ের নগ্নপন্থাটাকে ভালভাবেই আকড়েঁ ধরেছে!
আর সেই নিশ্চুপয়তার ফলস্রুতি স্বরূপ,আপামোর জনগনের ভাগ্যও আজ নায়মোলারের মত হয়ে গেছে!তাদের হয়ে প্রতিবাদ করবার অবিশিষ্ঠ আর কেউ নেই।ভোটের অধিকারটুকু কেড়ে নেবার পরও,টু শব্দটি করবার লোক খুজে পাওয়া দুষ্কর হয়ে গেল!
বাংলার জনগন আজ ধুতি পরা আর গলায় পৈতা বাঁধা ব্রাক্ষনদের মতো হয়ে গেছে।তারা সবকিছু রেডিমেট চায়।কিন্তু নিজের অধিকারটা আদায় করে নেবার হিম্মতটুকু নেই!যার কারনে আজ সবখানে আধিপত্যবাদ এবং ফ্যাসিবাদীদের এজেন্টরা রাজত্ব করছে।
একটি জাতিকে ধব্বংস করতে হলে,তার শিক্ষাব্যবস্থাকে ধব্বংস করতে হবে!আর সেই কাজটাই অতি সূক্ষভাবে সম্পন্ন করছেন একদল ফ্যাসিষ্ট!যারা পরীক্ষার আগের রাতে নিয়ম করে শিক্ষার্থীদের হাতে প্রশ্ন তুলে দিচ্ছেন!প্রশ্ন ফাঁসের প্রতিবাদ করতে গেলেও আজ পুলিশের ডান্ডার বাড়ি খেয়ে ঠান্ডা থাকতে হচ্ছে।শিক্ষাব্যবস্থার উপর ভ্যাট আরোপন করবার চেষ্ঠা করে,শিক্ষাব্যবস্থাকে পুরোদমে ধব্বংস করবার নগ্ন চেষ্ঠায় মেতে উঠেছিল একদল মস্তিষ্ক বিকৃত
ফ্যাসিষ্ট।
জাতির এরূপ নীরবতার কারনে দেশের ভাগ্য আজ কোন পর্যায়ে চলে যাচ্ছে তা ভাল ভাবেই অনুধাবন করা যাচ্ছে!
নিজের প্রাপ্য অধিকারটুকুও পেতেও আজ ভাগ্যের দিকে তাকিয়ে থাকতে হয়।অথচ আমাদের ইতিহাসটা এতোটা শান্ত নয়,বরঞ্জ প্রতিবাদ মুখর।যারা নিজের অধিকারটুকু আদায়ে সদা সর্বদা সোচ্চার।অথচ তাদের অবস্থাটা আজ,ঘরের চুরি পরিহিতা নববধূর ন্যায়।
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বড় আফসোস করে বলেছিলেন,“তুমি আমাদের বাঙালী করেছো,মানুষ করোনি”।
বিষয়: বিবিধ
১৩৯০ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন