আমাদের পরিবারের আনন্দহীন ঈদ............
লিখেছেন লিখেছেন শাহমুন নাকীব ফারাবী ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০৬:৫৯:২৯ সন্ধ্যা
আমার আব্বা এবং চাচ্চুদের জেল জীবনের ঘটনা!
আব্বা ও মারজান চাচ্চু এবং তাদের মামাত ভাই সহ একসঙ্গে মিছিল থেকে গত বছর গ্রেফতার হলেন।আব্বার মামাত ভাই সম্পর্কে আমার চাচ্চু।
তার ঠিক দশ দিন পর,আমার ফুফাতো ভাই লাবীব আহসান গ্রেফতার হল।তারও কিছু দিন পর আমার উকিল চাচ্চু(বাহলুল)গ্রেফতার হলেন।এর ১ মাস পর ছোট চাচ্চুও গ্রেফতার।আর এর মধ্যে আমার ছোট মামাও গ্রেফতার হয়ে গেলেন।এর ঠিক মাস দেড়েক পর আমার বড় ফুফাজিও শ্রীঘরে আসন গ্রহন করলেন।পুরো একটি সেলের অর্ধেক জুড়ে আমাদের পরিবারের সদস্যরা।
জেলখানায় একদিন দেখা করতে গিয়ে বললা,ভালই তো!সবাই মজা করে একসঙ্গে থাকতেছেন!আর আমি একলা বাহিরে থেকে কি করি!চলে আসি।সকলের ধমক খেয়ে অবশেষে সে ইচ্ছাটার জলাঞ্জলি দিতে হল।
আমাদের পরিবারের সবচেয়ে বড় ভাই,আমার আব্বা।স্বাভাবিক কারনে তাঁকে সবাই সম্মান করে চলে।সেলে সবাইকে কাজ ভাগ করে দেয়া হল।
লাবীব এবং ছোট চাচ্চুর দায়িত্ব হল,লাইনে দাঁড়িয়ে খাবার নিয়ে আসা।আর এক চাচ্চুর দায়িত্ব হল থালাবাটি পরিষ্কার করা।আর মারজান চাচ্চু এবং উকিল চাচ্চুর দায়িত্ব হল,হরেক রকমের ভর্তা তৈরী করা।তাঁরা দুই ভাই আবার ভর্তা বিষয়ে উচ্চতর পরিকল্পনা করতে পারেন।
আব্বা সকলের বড়!যার কারনে তাঁকে কোন কাজ দেয়া হল না।তবে তাঁকে বলা হল,আপনি মনিটরিং করবেন।আব্বাও তাঁর দায়িত্ব বেশ সচেতনতার সাথেই পালন করে চলেছেন।
আব্বা প্রতিদিন বাদ মাগরিব তাফসির পেশ করতেন।তাঁর সহজ সরল বক্তব্যের আমি বিশাল বড় ভক্ত।তাঁরা যখন সেলে আসেন,তখন সেলে নামাজির সর্বমোট সংক্যা ছিল ৯ জন।আব্বা দুই সপ্তাহ ধরে নামাযের উপর তাফসির করলেন।এবং দুই সপ্তাহরে মাঝে,নামাযীর সংখ্যা হয়ে গেল ২১ জন।আর যারা নামায পড়ে না,তাদের অধিকাংশরাই নামায জানে না বলে পড়ত না।আব্বাকে একজন এ কথা জানানোর পর ,তাদেরকে নামায শেখানোর ব্যবস্থা করা হল।আর তাদের ভিতরে ছিল,কারমাইকেল কলেজের সরকার দলীয় ছাত্র সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক(!)
সেই ছাত্রলীগ নেতা একদিন আব্বাকে বললেন,আমার জামায়াত শিবির দেখাবার খুব শখ ছিল।কারন তারা নাকি মানুসরূপী হায়েনা।তারা রাজাকার।আরও কত কি!কিন্তু আজ আপনাদেরকে দেখে নতুন করে জামায়াত শিবিরকে চিনলাম।
আব্বা সব সময় ফিটফাট এবং স্মার্ট থাকেন।পরিষ্কার সাদা পাঞ্জাবি ওনার প্রিয় পোশাক।সম্ভবত আমি নিজেও ওনার মত স্মার্ট নই।আব্বার নিয়মিত তাফসির পেশ এবং নামায শিখানোর কারনে,সেলের সবাই ওনাকে আরও বেশি সম্মান করা শুরু করলেন।যাদের হাজিরা থাকতো,তারা সকালে এসে আব্বার কাছে দোয়া নিয়ে যেত।বলত,হুজুর আমার জন্য দোয়া করবেন।
উকিল চাচ্চু এবং মারজান চাচ্চু আব্বাকে মজা করে বলত,ভাইজান আপনিতো জেলখানার পীর সাহেব হয়ে গেছেন।
আব্বা,লাবীব এবং বড় ফুফাজি জেল থেকে ছাড়া পেলেও বাকিরা আজও রংপুর কারাগারে বন্দী!তাঁদেরকে ছেড়ে ঈদ করাটা কতোটা যে কঠিন,তা আল্লাহপাক ভাল জানেন।যার কারনে না,আজ আমিও বাসায় যেতে পারছি না।কোন এক অজানা অচেনা এলাকায় সময়টা শুধু পার করছি।
আজ কবি নজরুলের সেই অমর কবিতাটির যথার্থতা আরও একবার হাড়ে হাড়ে অনুভব করছি।
“যতোদিন না কায়েম হবে
খোদার ধরায় তাঁরই দ্বীন।
কীসের আবার ঈদের খুশি
এই আনন্দ অর্থহীন”।
তবুও সকলকে জানাই ঈদ মোবারক।আর আমার এবং আমার পুরো পরিবারের জন্য দোয়া করবেন।যেন আমরা আল্লাহপাকের এই পরীক্ষাতে লেটার মার্ক নিয়ে পাস করে,জান্নাতুল ফেরদৌসে পৌছাতে পারি।আল্লাহুম্মা আমীন।
বিষয়: বিবিধ
১০৫৬ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আপনাদের ত্যাগ ই তো শহিদি ঈদের শিক্ষা।
আল্লাহ ধৈর্য্যশিলদের সাথে আছেন।
মন্তব্য করতে লগইন করুন