তবুও তারা স্বপ্ন দেখে.....................
লিখেছেন লিখেছেন শাহমুন নাকীব ফারাবী ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ১০:১৭:৩১ রাত
রাত ৯ টায় ক্লাস শেষ হল।সেই দুপুর ৩টা থেকে একটানা ক্লাস করতে হয়েছে।দুপুরের ভাতই খাওয়া হয়নি তার উপর রাতের খাবারের সময় হয়ে গেছে।।পেটে তিমি মাছের ক্ষুধা।
সময় নষ্ট না করে, বাংলা মটর থেকে ৮ নাম্বার বাসে উঠে বসল,আহনাফ।বাসটা বেশ ফাঁকাই ছিল।কিন্তু সাধারনত অন্যান্যদিন বাস ফাঁকা থাকে না।কোন রকমে ঝুলে ঝুলে যেতে হয়!
প্রথম দিকে ঝুলে ঝুলে যাওয়াটা আহনাফের খারাপ লাগলেও এখন বেশ মজাই লাগে!তখন নিজেকে বানর বানর লাগে!হয়তো ডারউইন ব্যাচারা এই দৃশ্য দেখলে,তার বিবর্তনবাদের স্বপক্ষে এটাকেও যুক্তি হিসাবে দাঁড় করাতে পারত!
পল্টনের জ্যামে থেমে গেল বাসটি।কি মনে করে আহনাফ বাস থেকে নেমে গেল।অথচ তার বাসা এখনো অনেক দূরে।
এরপর দৈনিক বাংলার দিকে সোজা হাটতে শুরু করে। হাটার সময় ক্ষুধার জ্বালাটা বেশ ভালই অনুভব করতে থাকে, আহনাফ।একবার ভাবে কিছু খেয়ে নিলে হাটতে মজা পাওয়া যেত।কিন্তু পরোক্ষনেই ভাবে,ক্ষুধা পেলেই খেতে হবে এমন কোন কথা নেই।
আর ক্ষুধা নিয়ে হাটলে হয়তো হাটার মধ্যে ভিন্ন স্বাদ পাওয়া যাবে।ক্ষুধায় পেট চোঁ চোঁ করবে!মাথা মাঝে মাঝে চক্কর দিযে উঠবে।চোখ মাঝে মাঝে ঝাপসা হয়ে যাবে।ভাবতেই কেমন একটা পৈশাচিক আনন্দ বোধ হচ্ছে।নিজেকে কষ্ট দেবার আনন্দ।আর এতে নতুন একটা অভিজ্ঞতাও হলে,মন্দ কি!।এক কথায় যাকে বলে,হাটাহাটির মধ্যে ভ্যারিয়েশন আসবে।
আজ আহনাফের মনটা খুবই খারাপ।মন খারাপ হলেই সে রাস্তায় হাটতে বের হয়।তারপর যতোক্ষন ভাল লাগে রাস্তায় হাটে আর রাস্তার সঙ্গে কথা বলে।
আহনাফের এই অভ্যাসের সঙ্গে তার পরিবারের সদস্য এবং বন্ধুরা বেশ পরিচিত।বন্ধুরা একারনে তাকে পাগলা বলেও ডাকে।
আহনাফ খুব ভাল ক্রিকেট খেলতে পারতো।আর এই ক্রিকেট খেলার কারনে আশে পাশের দশ গ্রামের মানুষসহ পাশের উপজেলার মানুষরাও তাকে চিনত।যারা চিনত না তারা অন্ত্যত তার নামটা জানত।আর তার এতো নাম ছড়ানোর কারন ছিল অসাধারন দক্ষতায় কিপিং এবং ক্ল্যাসিং ব্যাটিং।সেই সাথে সালামের কথাটা না বললেই নয়।আর আহনাফের মাঝে সকলকেই সালাম দেবার একটা প্রবনতা দেখা যেত ।
তিন হাত লাফ দিয়ে কোন ক্যাচ লুফে নেয়া কিংবা কাভার অঞ্চল দিয়ে ছক্কা হাকানোটা তারা শুধু টিভিতেই দেখতে পারতো,বাস্তবে তেমন সুযোগ পেতো না।আর সেই সুযোগটাই করে দিয়েছিলো আহনাফ।এককথায় সুন্দর ক্রিকেটের প্রতিচ্ছবি ছিল আহনাফ।
এভাবেই মজায় মজায় দিন পেরিয়ে যাচ্ছিল আহনাফের!কিন্তু হঠাৎ রাজনৈতিক একটি মামলায় জীবনের সবকিছু এলোমেলো হয়ে যায়।জীবন পাতার ডায়রি তখন অন্যভাবে লেখা শুরু হয়।
আহনাফ হয়ে যায় পুলিশের তালিকায় মোষ্ট ওয়ান্টেড আসামী।দির্ঘদিন খোঁজাখুঁজির পরও গ্রেফতার করতে না পারায়,এসপি তাকে দেখা মাত্রই গুলির আদেশ দেন।এই সংবাদ বেশিদিন চাপা থাকে না।খুব তাড়াতাড়ি সারা উপজেলায় এই সংবাদ ছড়িয়ে পড়ে।
আহনাফ তখন জীবন বাঁচানোর তাগিদে আজ এইখানে,কাল ঐখানে ছুটতে থাকে।
আম্মা পাগল আহনাফ!তাকে বাধ্য হয়ে তার আম্মার কাছ থেকে শতশত মাইল দূরে থাকতে হতো।নিরাপত্তার কারনে ঠিকভাবে মোবাইলটাও ব্যবহার করা যেত না।দুই তিন দিন পরপর আহনাফ বাসায় কল করতো।কল করেই ব্যাকুল হয়ে বলত,আম্মা!ও আম্মা!আমি বাসায় আসি? আমি শুধু একটি বার আপনাকে দেখেই চলে আসবো।আম্মা আসি না!
আহনাফের আম্মা তখন ডুকরে কেঁদে বলে,বাবা!এমন করে না।তোমার আম্মা তো মরে যাচ্ছে না।তোমার ট্যাবে আমার অনেক ছবি আছে।সেগুলো দেখো না।আব্বা!তুমি একটু ধৈর্য ধর!ইনশা আল্লাহ আল্লাহ একিদিন ঠিক তোমাকে আমার কাছে ফিরিয়ে দিবে।একথাগুলো বলতে যেয়ে আহনাফের আম্মা হুঁ হুঁ করে কেঁদে উঠে।
সেই স্বপ্ন বুকে নিয়ে আজও বেঁচে আছে আহনাফ।কিন্তু সে জানে না,আদৌও সে জীবিত অবস্থায় তার আম্মার কোলে ফিরতে পারবে কিনা!হয়তো আহনাফের আম্মাও শঙ্কায় থাকেন,এ জীবনে তার পাগল ছেলেকে পাগলামো করতে দেখেতে পারবেন কিনা!
তবুও তারা স্বপ্ন দেখে।
বিষয়: বিবিধ
৯৮১ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এমন আহনাফরাই ইতিহাসকে টেনে নিয়ে যায় বন্দর থেকে বন্দরে
জাযাকাল্লাহ..
ধন্যবাদ
মন্তব্য করতে লগইন করুন