একটি ট্রেন ভ্রমন এবং বিবেকের অনুধাবন

লিখেছেন লিখেছেন শাহমুন নাকীব ফারাবী ১১ আগস্ট, ২০১৫, ১০:৩০:৪৯ রাত

গত বছরের ঘটনা!

রংপুর থেকে ট্রেনে করে লালমনিরহাটের হাতিবান্ধা উপজেলায় যাচ্ছি!রংপুর থেকে হাতিবান্ধার দূরত্ব প্রায় ৯০ কি.মি!ট্রেনে করে যেতে প্রায় সাড়ে তিন ঘন্টা সময় লাগে!সময়টা একটু বেশি লাগলেও ভ্রমনটা মন্দ লাগে না!

আসরের নামায পড়ে ট্রেনে চড়লাম!মাগরিবের কিছুক্ষন আগে আমরা লালমনিরহাট ষ্টেশনে পৌছলাম!ট্রেন ক্রসিং হবে!যার কারনে ট্রেন দাড়িয়ে আছে!এ অবস্থায় নামায কোথায় পড়ব চিন্তা করতেছিলাম!এক ভাইয়ের কাছে পরামর্শ চাইলে তিনি বলেন,ভাই বাংলাদেশের ট্রেনের কোন নিয়ম নীতি নাই!দুই মিনিটের মধ্যে ক্রসিং হতে পারে আবার আধা ঘন্টাও সময় লাগতে পারে!তাই ট্রেনেই নামায পড়েন!

তায়াম্মুম করে নামায পড়লাম!আমার নামায পড়া শেষ হলেেআমার পাশের সিটে দুইজন বৃদ্ধা এবং এক শিশু মাল পত্র নিয়ে বসে পড়ল!এদিকে ট্রেন ক্রসিং এর কোন নামগন্ধও নেই!

পাশে বসে থাকা বাচ্চাটির দিকে হঠাৎ করে নজর পড়ল!দেখি ও আমার হাতের সাদা স্মার্ট ফোনটার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে!ওকে কাছে টেনে বললাম,মোবাইল দেখতে চাও?সে আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে!মোবাইলে গেম বের করে ওকে খেলতে দিলাম!কিন্তু এন্ড্রয়েড এ গেম খেলা তো অতো সহজ নয়!কিন্তু ওর মনের একটি সুপ্ত বাসনা পূরন করতে পেরে বেশ ভালই লাগল!

এর মধ্যে ট্রেনের ক্রসিং হল এবং আমাদের ট্রেন চলতে শুরু করল!বাচ্চাটির সঙ্গে আমার কথা বলা দেখে,বৃদ্ধা দুজন আমার নাম পরিচয় জানতে চাইল!নামধাম সবই ঠিক বললেও নিজ উপজেলার নামটা বরাবরের মত মিথ্যাই বলতে হল!কারন শুধু উত্তরবঙ্গ নয়,গোটা বাংলাদেশে মিঠাপুকুরের নাম শুনলে সাধারন মানুষ আঁতকে উঠে!

তাদের সঙ্গে গল্পের এক পর্যায়ে জানতে পারলাম,বাচ্চাটা ওনাদের নাতি!বৃদ্ধা দুজনের একজন ওর দাদী আর একজন ওর নানী!ওর আব্বু আম্মু দুজনে ঢাকায় গার্মেন্টেসে চাকরি করতেছে!আর সে নানী এবং দাদীর যৌথ ভালবাসায় বেড়ে উঠতেছে!

কথা বলতে বলতে,ওনাদের গন্তব্য স্থল চলে আসল!আমি বললাম,দাদী নানী!আপনারা যদি কিছু মনে না করেন, তবে আপনাদের তিন জনের একটা ছবি তুলতে চাই!দাদী নানী দাঁতের মাঝে আঁচল কামড়ে ধরে, ছবিতে পোঁচ দিলেন!ছবি তোলার পর তাদেরকে ছবিটা দেখালাম!ওনারা নেমে যাবার সময় আমার মাথায় হাত রেখে বললেন,ভাই!আল্লাহ তোমাক হাজার বছর বাঁচায় রাখুক!

আমি তাদের ট্রেন থেকে নেমে যাওয়া দেখতে দেখতে ভাবলাম,একটু ভাল ব্যবহার একজন মানুষকে কতোটা খুশি করতে পারলে তিনি এমন করে দোয়া করেন।

আমাদের আশে পাশে এমন হাজারো মানুষ রয়েছে!যারা আপনার কাছে বেঁচে থাকবার জন্য টাকা প্রত্যাশা করে না!তাদের দিকে হাসি মুখ নিয়ে,পরম ভালবাসা নিয়ে কথা বললেই তারা মহাখুশি হয়ে যান!তাই আসুন,আমাদের আশে পাশের গরীব খেটে খাওয়া মানুষদেরকে ভালবাসবার চেষ্ঠা করি!তাদের সঙ্গে হাসি মুখে কথা বলার চেষ্ঠা করি।

আল্লাহপাক আমাদের সকলকে হেদায়াত দান করুন এবং সঠিক বুঝ দান করুন!

বিষয়: বিবিধ

১৪৩০ বার পঠিত, ৭ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

335274
১১ আগস্ট ২০১৫ রাত ১০:৫৪
আবু সাইফ লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ..


আপনার এ কাহিনীর মাঝে আমি অন্যকে স্মরণ করলাম!

উত্তরবঙ্গের রেলভ্রমনের অভিজ্ঞতা দীর্ঘদিনের (সখের নয়, কাজের)
মানুষ কত সহজে মানুষের আপন হয়ে যায় বর্ণনা করে বোঝানো কঠিন!

অনেক কিছুই স্মরণ করিয়ে দিলেন,
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, জাযাকাল্লাহ
১১ আগস্ট ২০১৫ রাত ১১:০১
277223
শাহমুন নাকীব ফারাবী লিখেছেন : ওয়ালাইকুম আসসালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহ!বারাকাল্লাহ।
335275
১১ আগস্ট ২০১৫ রাত ১০:৫৬
আফরা লিখেছেন : খুব ভাল লাগল ধন্যবাদ শেয়ার করার জন্য ।

আল্লাহপাক আমাদের সকলকে হেদায়াত দান করুন এবং সঠিক বুঝ দান করুন!আমীন ।
১১ আগস্ট ২০১৫ রাত ১১:০২
277224
শাহমুন নাকীব ফারাবী লিখেছেন : জাজাকাল্লাহ।আমীন সুম্মা আমীন।
335282
১১ আগস্ট ২০১৫ রাত ১১:২২
আবু জান্নাত লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ সুন্দর পোষ্টটির জন্য শুকরিয়া।
335285
১১ আগস্ট ২০১৫ রাত ১১:২৮
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
335430
১২ আগস্ট ২০১৫ বিকাল ০৪:৩৫
শুভ কবি লিখেছেন : Thumbs Up Thumbs Up Thumbs Up Thumbs Up Thumbs Up ভালো লাগলো

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File