বৃদ্ধাশ্রমে, মায়ের শেষ অনুরোধ!
লিখেছেন লিখেছেন শাহমুন নাকীব ফারাবী ০৯ জুলাই, ২০১৫, ০৩:২৩:৫৫ দুপুর
জন্মের তিন বছর পরে বাবা মারা যায়,শফিকের।তার মা স্থানীয় একটি হাইস্কুলে শিক্ষকতা করতেন।তাদের সহায় সম্পত্তি বলতে,মিরপুর-২ এ তাদের বাড়িটি।দুই তালা বাড়িতে চারটা ফ্লাট।একটাতে শফিক আর তার মা থাকেন,আর বাকি তিনটা ভাড়া দেয়া হয়।সেই বাড়ি ভাড়ার টাকা এবং মায়ের শিক্ষকতার টাকা দিয়ে তাদের দিন দিব্যি চলে যেতে থাকে।গত বছর মা চাকরি থেকে রিটায়ার্ড করেছেন।আর শফিকও মাত্র, একটা প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে ছোটখাট একটা চাকরিতে জয়েন করেছে।
চাকরি হওয়ার পর মা শফিকের বিয়ের জন্য পিড়াপিড়ি করতে থাকেন।বলেন,সারাদিন বাড়িতে একা একা থাকতে ভাল লাগে না।এভাবে থাকলে পাগল হয়ে যাবো।
ভার্সিটিতে পড়ার সময় তার এক ব্যাচ জুনিয়র এক মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল।সেও ঢাকার বাসিন্দা।শফিক তার মাকে তাদের সম্পর্কের কথা খুলে বলে।শফিকের মা দুই পরিবারের সঙ্গে কথা বলে তাদের ধুমধাম করে বিয়ে দিলেন।তারপর বেশ সুখেই দিন পার করতেছিল শফিক,শফিকের স্ত্রি এবং মা।বিয়ের দুই বছরের মাথায় তাদের একটি পুত্র সন্তান জন্ম নিলে তাদের সুখের মাত্রাটা আরো বেড়ে যায়।
এর মাঝে একদিন,শফিকের স্ত্রির বিদেশ ফেরত খালা তাদের বাড়িতে বেড়াতে আসে।কথাবার্তার এক ফাঁকে, খালা শফিকের স্ত্রিকে বলেন তোরা এমন পুরনো আমলের বাড়িতে থাকিস কেন?
শফিকের স্ত্রিঃ আসলে খালা এই বাড়িতে শফিকের দাদা বানিয়েছিলেন।তাই একটু পুরনো হয়ে গেছে।
খালাঃ আজকালকার যুগে এমন বাড়িতে থাকলে প্রস্টিজ থাকবে বলে মনে করিস!
শফিকের স্ত্রিঃ তাহলে কি করবো খালা?
খালাঃ শোন,তোর খালুর এক বন্ধুর রিয়েলস্টেট কোম্পানি আছে। তাদেরকে এই জমি দিলে তারা ফ্ল্যাট বানিয়ে দিবে।তুই শফিককে রাজি করা।আমি তোর খালুর সঙ্গে কথা বলছি।
শফিকের স্ত্রিঃ ঠিক আছে খালা।
রাতে শফিক বাড়ি ফিরলে তার স্ত্রি বলে তোমাকে একটা কথা বলব,রাগ করবা না তো? শফিক বলে,উহু করব না,বল।শফিকের স্ত্রি আদর মাখা গলায় বলে,আমরা এই পুরনো বাড়িতে থাকবো না।শফিক বলে,তাহলে কোথায় থাকবো?? শফিকের স্ত্রি,খালার কথাগুলো সব খুলে বলে!শফিক বলে,মা কি রাজি হবেন?শফিকের স্ত্রী বলেন,আমি কিচ্ছু জানি না তোমাকে রাজি করাতে হবে।
শুক্রবার অফিস ছুটির দিন।জুম্মার নামায পড়ে এসে,শফিক মাকে আবদারের সুরে বলে, মা তোমাকে একটা কথা বলব রাখতে হবে কিন্তু।তারপর শফিক মাকে সব খুলে বলে।মা কিছুক্ষন চুপ করে থেকে একটি দির্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বলেন,ঠিক আছে তুই যা ভাল মনে করিস তাই হবে।
তারপর রিয়েল স্টেট কোম্পানির সঙ্গে সব চুক্তি হয়ে গেল।কিন্তু বাড়ির যতোদিন কাজ চলবে,তাদেরকে তো অন্য কোথাও থাকতে হবে।শফিক এক রুমের একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিল।আর মাকে বুঝিয়ে শুনিয়ে কয়েক মাসের জন্য গাজীপুর বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসল।সে বলল, মা চিন্তা করো না।ঢাকায় আমাদের আত্নীয় স্বজন তেমর কেউ নেই যে সেখানে তোমাকে রাখব।মা আমি ৫-৬মাসের মধ্যেই তোমাকে নতুন বাড়িতে নিয়ে যাবো।
মাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসার পর নিজে একবার দেখা করতে গিয়েছিল।আর একবার বউ ছেলেসহ গিয়েছিল।এভাবে থাকতে থাকতে কেটে গেল,৯টি মাস।কিন্তু তাকে নতুন বাড়িতে নিয়ে যাবার কোন নামগন্ধও নেই।তিনি ছেলেকে বোন দিয়ে বলেন,কিরে তুই আমাকে নিবি না?শফিক বলে,কি বলো মা।আমি আগামী শুক্রবারে আসতেছি,তোমাকে নিয়ে আসার জন্য।তুমি কিন্তু রেডি হয়ে থেকো।মা খুশিতে কেঁদে ফ্যালেন।
শুক্রবার মা রেডি হয়ে বসে আছেন।সকাল গড়িয়ে দুপুর হল কিন্তু শফিকের দেখা নেই।বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা হল শফিক আর আসল না।মা শফিককে টেলিফোন করলেন।শফিক বলল, ও মা জানো আজ তো আমাদের বিবাহ বার্ষিকী। তাই বাসায় ছোটখাট অনুষ্ঠান করলাম।এদিকে এত্তো ব্যস্ত ছিলাম যে,তোমাকে আনার কথাটা স্মরন ছিল না।আগামী সপ্তাহে মা।
পরের সপ্তাহে শফিক বৃদ্ধাশ্রমের অফিসে বসে আছেন।বৃদ্ধাশ্রমের ইনচার্জ এসে শফিকের হাতে একটা চিঠি দিলেন।
খোকা,
তুই ইদানিং আমার কথা ভুলে যাস।তাই তোকে ভুলে আমিও চলে গেলাম।ভাল থাকিস।
ইতি
তোর মা।
বৃদ্ধাশ্রমের ইনচার্জ জানান।গত শুক্রবারে আপনার সঙ্গে কথা বলার পর রাতে ভীষন জ্বর আসে।আমরা তাকে হাসপাতালে ভর্তি করাই।তিনি শেষ সময়ে বলেন,আমার যদি কিছু হয় শফিককে কিছু জানাবেন না।তার কাজের অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে।আপনারই আমাকে কবর দিবেন।এটাই আমার শেষ অনুরোধ।
বিষয়: বিবিধ
৪৯৫৯ বার পঠিত, ১৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আর এই যে শুধু ম্যা ম্যা করেন - বউয়ের কাজ কি মাকে দিয়ে হয় ?
@ফারাবী ভাই আপনি এভাবে না বললেও পারতেন।
আর @হতভাগা ভাই আপনি কি কারণে একথা বললেন সেটা যদি একটু খুলে বলতেন তাহলে আর এই ভুল বোঝাবুঝি গত না।
এটা এখনকার স্ত্রীদের কমন ডায়লগ স্বামী ও শাশুড়ির মাঝে ফাঁড়াক সৃষ্টি করাতে । স্ত্রীরা যেসব স্বামীকে শুরুতেই কব্জা করতে পারে না , এটা তাদের একটা আপগ্রেড ভার্সন অস্ত্র । যারা এটা শুনেনি বুঝতে হবে তারা স্ত্রৈন হয়ে গেছেন বলেই এই অস্ত্র আর ব্যবহার করার দরকার পড়ে নাই স্ত্রীর।
যারা এ কথায় মাথায় সমস্যা আছে বলে মনে করে , আমি মনে করি তারা এর চেয়েও জঘন্য শব্দ শুনে অভ্যস্ত এবং তারা মুখে যতই বৃদ্ধাশ্রমের পিন্ডি চাপকাক না কেন - তারাই প্রথম এই ট্রেন্ড শুরু করে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন