যে অভিযোগে ফাসির দন্ড দেয়া হলো, মুজাহিদ সাহেব কে(!)

লিখেছেন লিখেছেন শাহমুন নাকীব ফারাবী ১৬ জুন, ২০১৫, ১১:৫৮:১২ সকাল

ষষ্ঠ অভিযোগ

যে অভিযোগে ফাসির আদেশ।

দেখুন কি নাটোকে নির্দোষ একজন মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে----

৬ নং অভিযোগে বলা হয় যে,

১৯৭১ সালে, মোহাম্মাদপুর ফিজিকাল ইন্সটিটিউট বা শারীরিক শিক্ষা কলেজ পাকিস্তানী আর্মিদের একটি টর্চার ক্যাম্প ছিল। জনাব মুজাহিদের বিরুদ্ধে অভিযোগে বলা হয়, তিনি নিয়মিত এই টর্চারক্যাম্পে যেতেন এবং পাকিস্তানী সেনা কর্মকর্তার সাথে শলাপরামর্শ করতেন। ঐ পরামর্শের আলোকেই ১০ ডিসেম্বর ১৯৭১ থেকে ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত বুদ্ধিজীবি হত্যাজজ্ঞ নিধন চলে। এই অভিযোগে ট্রাইব্যুনাল জনাব মুজাহিদকে ফাসিঁর দন্ডাদেশ প্রদান করেন।

এই অভিযোগটি সুনির্দিষ্ট নয়।

- জনাব মুজাহিদ কবে, কাকে, কিভাবে হত্যা বা অপহরন করেছেন সুনির্দিষ্ট কোন দিন তারিখ উল্লেখ নাই।

- কোন আর্মি অফিসারের সংগে কোথায় বসে এই পরামর্শ হয়েছে সে ব্যপারেও কোন উল্লেখ নেই।

- এই পরামর্শের সময় আর কেউ উপস্থিত ছিলো কিনা এই মর্মে সুনির্দিষ্ট কোন তথ্য দেয়া হয়নি।

এই ভাবে অভিযোগ গঠন ১৯৭৩ সালের আইনের পরিপন্থী। তাছাড়া-

- কোন বুদ্ধিজীবি পরিবারের কোন সদস্য কিংবা

- যারা এই ফিজিকাল ট্রেনিং ইন্সটিটিউটের কথিত ঘটনার ভিকটিম তাদের কারও স্ত্রী বা সন্তান

-সন্ততিট্রাইবুনালে এসে জনাব মুজাহিদের বিরুদ্ধে কোন স্বাক্ষ্য প্রদান করেননি।

সাক্ষী

এই মামলার একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী স্বাক্ষী রুস্তম আলী মোল্লা। ১৯৭১ সালে তার বয়স ছিল ১৪ বছর।

তার বাবা রহম আলী মোল্লা ঐ ফিজিকাল ট্রেনিং ইন্সটিটিউটের সিকিউরিটি গার্ডের চাকুরী করতেন। সে এখনও জীবিত আছে। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষ তাকে স্বাক্ষী হিসেবে আদালতে হাজির করেনি।

ঐ সময়কার প্রিন্সিপাল বা অধ্যক্ষ এখনও জীবিত আছেন। তাকেও এই মামলার স্বাক্ষী করা হয়নি।

তদন্তকারী কর্মকর্তা স্বীকার করেছেন যে, তৎকালীন কোয়ার্টারে থাকা কোন স্টাফ, অধ্যাপক বা অন্য কোন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে তিনি এই ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদ করেননি।

স্বাক্ষী রুস্তম আলী মোল্লা

প্রাপ্ত বয়স্ক কাউকে এই ঘটনায় স্বাক্ষী না করে ১৪ বছরের একজন বালককে স্বাক্ষী করা আইনের দৃষ্টিতে গর্হিত কাজ। সে ছিল নাবালক। সে নিজেই স্বীকার করেছে তার বাবা সার্বক্ষনিক গার্ডের কাজ করতেন। এটি হাস্যকর যে, সে তার জবানবন্দিতে বলেছে, এই ঘটনা সংক্রান্তে সে তার বাবার চেয়েও বেশী জানে।

এহেন পরিস্থিতিতে এই স্বাক্ষীর স্বাক্ষ্যের উপর নির্ভর করে মাননীয় ট্রাইবুনাল জনাব মুজাহিদকে বেআইনীভাবে মৃত্যুদন্ড প্রদান করেছেন। সবচেয়ে বড় কথা হল, তার বাবা রহম আলী বিভিন্ন টিভি সাক্ষাৎকারে ঘটনার বর্ননা করলেও জনাব মুজাহিদকে তার সাথে সম্পৃক্ত করেননি।

এই স্বাক্ষী একজন অসৎ স্বাক্ষী। কেননা সে জেরায় স্বীকার করেছে আমি কোন স্কুলে লেখাপড়া করিনি তবে চাকুরীর জন্য পঞ্চম শ্রেণী পড়া একটি সার্টিফিকেট গ্রহন করেছে।

সে বলেছে, “আমার পিতা ফিজিক্যাল ট্রেনিং কলেজের কোন পদে চাকরি করতেন সেটা আমার জানা নাই।” এটা কি হতে পারে? কোন সন্তান তার পিতার চাকুরীর পদ ও পদবী নিয়ে কিছু জানবেনা, এটা কি সম্ভব!সে আরও জানায়, “১৯৭১ সালে ফিজিক্যাল ট্রেনিং কলেজের টর্চার সেন্টারে নির্যাতিত এমন কারো নাম আমি বলতে পারব না। যাদেরকে টর্চার সেলে নির্যাতন করা হত তারা বুদ্ধিজীবি ছিলো শুনেছি।”

এরকম মানের কোন স্বাক্ষ্য দিয়ে কোন ব্যক্তিকে আদৌ অভিযুক্ত করা বা এমন কোন স্বাক্ষ্যকে গুরুত্ব দিয়ে যদি কোন সিদ্ধান্তে আসা হয়, তা কি আদৌ গ্রহনযোগ্য হবে?

স্বাক্ষী জেরায় স্বীকার করে যে, পূর্বে কোন সাক্ষাৎকারে সে বা তার পিতা ১৯৭১ সালে মুজাহিদ সাহেবকে চিনতো, তাকে দেখেছে কিংবা জনাব মুজাহিদ সাহেব ফিজিক্যাল কলেজে যাতায়াত করতেন মর্মে বিটিভি বা পত্রিকায় কোন বক্তব্য দেয়নি। -যেখানে সকল স্বাক্ষীর বক্তব্যই অসংযত,

- যেখানে স্বাক্ষীদের বিশ্বাসহীনতা আর মিথ্যা কথায় পূর্ন জালিয়াতিই বারবার ধরা পড়েছে,সেইখানে এহেন নিন্মমানের স্বাক্ষীর মিথ্যা বক্তব্যের উপর নির্ভর করে মৃত্যুদন্ড দূরের কথা কোন মানুষকে একদিনের জন্য সাজা দেয়াটাও অমূলক।

বিষয়: বিবিধ

১০২০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File