ইন্দিরা মুজিব চুক্তি এবং ঢাকায় নরেন্দ্র মোদির সফর

লিখেছেন লিখেছেন শাহমুন নাকীব ফারাবী ১২ জুন, ২০১৫, ১০:৫২:৩৫ সকাল



সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক দেশ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ সফর করলেন। বাংলাদেশের মানুষ অধির আগ্রহে অপেক্ষা করছিলেন যে তাঁর কাছ থেকে হয়তো আমরা এবার ভাল কিছু পাব। বাংলাদেশের মানুষ তাঁকে যারপরনাই সম্মান করলেন, আদর আপ্যায়ন করালেন। সাথে সাথে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ এতই বেশি আনন্দিত হলো যে, মনে হচ্ছিল তারা আকাশের চাঁদ হাতে পাচ্ছে।

সব মিলিয়ে আয়োজনটাও হলো রমরমা। কিন্তু মোদির সেই সফর থেকে আমরা কি পেলাম সেই বিষয়ে সঠিকভাবে কেন জানি কেউ ভালভাবে মুখ খুলছেন না। তবে এক্ষেত্রে বরাবরের মতো আওয়ামীলীগই একমাত্র ব্যতিক্রম, তারা ঠিকই মুখ খুলেছে। শুধু মুখ খুলেছে বলছি কেন তারা রিতিমত বগল বাজাচ্ছে।

এই তো সেদিন দেখলাম আওয়ামীলীগ অনেক বড় বড় পোস্টার ছাপিয়ে প্রচার করছে মোদির সফরে শেখ হাসিনার সফলতার। সেখানে মরা পদ্মায় আবার জোয়ারের কথা বলা হয়েছে, বলা হয়েছে ইন্দিরা-মুজিবের চুক্তির কথাও। কিন্তু সেই পোস্টার পড়ে আমার মেজাজটা বিগড়ে গেল। কারন আমরা নিয়মিতই পত্র-পত্রিকাতে দেখছি পদ্মা এখন মৃত্যুবরণ করেছে, পদ্মায় এখন আর সেই নৌকা নাই আছে গরুর গাড়ি বা অন্য কিছু। তাহলে সেই পদ্মায় আওয়ামীলীগ কবে পানি নিয়ে আসলো! আর তিস্তার পানি নিয়ে তো কোন কথাই তাঁরা বললো না!

অন্যদিকে আমরা সবাই জানি যে, ইন্দিরা-মুজিব চুক্তি হয়েছে ১৯৭৪ সালে। সেই চুক্তি আমরা বাস্তবায়ন করলেও ভারত আমাদের সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করেছে। আর এতে আওয়ামীলীগেরই বেশি কষ্ট পাওয়ার কথা ছিল। কারণ এই চুক্তির মুল ব্যক্তি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি ঠিকই চুক্তি অনুযায়ী কাজ করলেন কিন্তু ইন্দিরা করলেন না। দীর্ঘ ৪১ কছর পরে এসে কোন কারনে নরেন্দ্রো মোদির শুভ বুদ্ধির উদয় হওয়ার কারনে সেই চুক্তি বাস্তবায়নের দিকে যাচ্ছে।

কিন্ত আমার কথা হলো, যেই চুক্তি বাস্তবায়নে ভারত দীর্ঘ ৪১ বছর সময় নিল সেই কথা স্মরণ করে তো তাদের বাংলাদেশের মানুষের কাছে প্রথমেই ক্ষমা চেয়ে নেওয়া উচিত ছিল। নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশে এসে ভাষন দেওয়ার সময় যদি এটা বলতেন যে, ওমুক ওমুক কারনে আমরা দীর্ঘদিন এই চুক্তি বাস্তবায়ন করতে পারিনি এই কারনে আমি ভারতের প্রধানমন্ত্রী হয়ে বাংলাদেশের মানুষের কাছে ক্ষমা চাচ্ছি, তাহলে আমরা বাংলাদেশীরা তাঁকে আরও বেশি সম্মান বা শ্রদ্ধা দেখাতে পারতাম। কিন্তু উল্টো আমরা আবেগী যে, চুক্তি বাস্তবায়ন হোক বা না হোক মোদী তো আমাদের দেশে এসেছেন এতেই আমরা অনেক খুশি, আর কিছু না হলেও আমাদের চলবে!

কথিত চুক্তি যদি বাস্তবায়ন হয়েই তাহলে এতে ভারতেরই বেশি খুশি হওয়ার কথা ছিল এই কারনে যে, দীর্ঘদিন পরে তারা বাংলাদেশের সাথে করা তাদের চুক্তি বা ওয়াদা পুরণ করতে পারছে।

আমরা বাংলাদেশীরা অনেক বেশি আবেগী, কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে, দেশের উন্নয়নের জন্য এই আবেগ কিছু সময় অনেক বেশি ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। আমরা অন্যকে সম্মান-শ্রদ্ধা সবই করবো ঠিক আছে কিন্ত নিজেদের স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে নয়।

শেষে আওয়ামীলীগের বন্ধুদেরকে বলবো, নরেন্দ্র মোদীর সফরে এত খুশি হওয়ার তেমন কিছুই নাই। বাংলাদেশের জন্য তিনি তেমন কিছুই করেননি বা করবেনও না যা করার তা আমাদেরকেই করতে হবে, এজন্য প্রয়োজন আবেগ নির্ভর না হয়ে বাস্তবতার নিরিখে কাজ করা। দেশের শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রেখে, দল-মতের উর্ধ্বে উঠে ঐক্যমতের ভিত্তিতে কাজ করা। আমরা যদি আমাদের অধিকার সচেতন না হই তাহলে সবাই আমাদেরকে শুধু ঠকাবেই। যেমন বঙ্গবন্ধুকে ঠকিয়েছিলেন ইন্দিরা।

বিষয়: বিবিধ

৮৬৭ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

325389
১২ জুন ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:১৯
শেখের পোলা লিখেছেন : আর কটাদিন অপেক্ষা করুন ওদের সেনা প্রধান আমাদের সেনাবাহিনীর ক্ষমতা যাচাই করতে আসছে৷ তার পর অন্যকিছু হবে৷

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File