শয়তানের প্রেতাত্মা খায়রুলের তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের রায়ের এখন কী হবে? (অতএব প্রমাণিত হল অবসরের পর রায় লেখা যায় না)
লিখেছেন লিখেছেন বার্তা কেন্দ্র ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১১:৫৯:৫১ সকাল
http://www.ittefaq.com.bd/print-edition/first-page/2016/02/11/101464.html
দেখুন বিস্তারিত :
অবসরের পর রায় লেখা যায় না ১৯৬৪ সালে সুপ্রিম কোর্টের রায়-ইত্তেফাক
*অবসরের পর তিনি আদালতের নথি স্পর্শ করবেন কোন্ অধিকারে? : অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান
সর্বোচ্চ আদালতের রায় ও নির্দেশনা অনুযায়ী অবসরের পর রায় লেখা যায় না। ১৯৬৪ সালে তত্কালীন সুপ্রিম কোর্টের এ সংক্রান্ত রায়ে বলা হয়েছিলো, অবসর পরবর্তী সময়ে একজন বিচারপতির লিখিত ও স্বাক্ষরকৃত রায় কোন রায় নয়।
১৯৬৪ সালে দেয়া এই রায় বর্তমান বাংলাদেশে মান্য করা বাধ্যতামূলক কিনা তা নিয়ে সংবিধান বিশেষজ্ঞদের মধ্যে দ্বিমত রয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক ইত্তেফাককে বলেছেন, ‘এই রায় বাধ্যতামূলক না হলেও তার নৈতিক ভিত্তি রয়েছে’।
অবসরের পর রায় লেখা নিয়ে দেশে একটি সাংবিধানিক বিতর্ক তৈরি হয়েছে। খোদ জাতীয় সংসদ ছাড়াও বর্তমান এবং সাবেক বিচারপতিরাও এ নিয়ে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছেন। প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা বলেছেন, অবসরের পর রায় লেখা সংবিধানসম্মত নয়। তিনি আরো বলেছেন, ভারত ও পাকিস্তানে অবসরের পর রায় লেখা যায় না।
অন্যদিকে আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক জানিয়েছেন, অবসরের পর রায় লিখতে সাংবিধানিক কোন বাধা নেই। আইনমন্ত্রী বলেন, সংবিধানের কোথাও লেখা নেই অবসরের পর বিচারপতিরা রায় লিখতে পারবেন না। যদিও সাংবিধানিক পদাধিকারীদের নিয়োগ কার্যকর হয় শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে এবং পদত্যাগ ও অবসরের মধ্য দিয়ে তাদের নিয়োগের অবসান ঘটে। এ কারণে সংবিধান বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, অবসরের পর রায় লেখা সংবিধানের ১৪৮ অনুচ্ছেদের পরিপন্থী। কেননা অবসরের পর বিচারপতির শপথ বহাল থাকে না এবং তিনি একজন সাধারণ নাগরিকে পরিণত হন।
সুপ্রিম কোর্টের রুলসে অবসরের পর রায় লেখা যাবে কি যাবে না এ নিয়ে কিছু লেখা নেই। এ প্রসঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট এম আসাদুজ্জামান ইত্তেফাককে বলেন, এ কথা লেখা থাকবে কেন? রায় তো বিচারপতিরা দেন, একজন অবসরপ্রাপ্ত লোক যিনি অবসরের পর সাধারণ নাগরিকে পরিণত হন তিনি আদালতের নথি স্পর্শ করবেন কোন অধিকারে? এই বিতর্ক নিয়ে আদালতে তেমন নজির নেই। একটি নজির রয়েছে তাও পাকিস্তান আমলের। ১৯৬৪ সালে কাজী মেহারদিন বনাম মুরাদ বেগম মামলায় এ বিষয় নিয়ে একটি বিতর্ক তৈরি হয়েছিলো। হাইকোর্টের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারক অবসরের পর একটি রায় লেখেন এবং তাতে স্বাক্ষর করেন। এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করলে সুপ্রিম কোর্টের তত্কালীন প্রধান বিচারপতি এআর কর্নেলিয়াসের নেতৃত্বে পাঁচজন বিচারক একটি রায় দেন। রায়ে বলা হয়, অবসর পরবর্তী সময়ে একজন বিচারপতির লিখিত ও স্বাক্ষরকৃত রায় কোন রায় নয়। এই রায় এখনো বলবত রয়েছে। কেননা অন্য কোন রায় দ্বারা এই রায় এখনো উল্টায়নি।
আমাদের সংবিধানের ১১১ অনুচ্ছেদে উল্লেখ রয়েছে, “আপিল বিভাগ কর্তৃক ঘোষিত আইন হাইকোর্ট বিভাগের জন্য এবং সুপ্রিম কোর্টের যে কোন বিভাগ কর্তৃক ঘোষিত আইন অধস্তন সকল আদালতের জন্য অবশ্যই পালনীয় হইবে।” অর্থাত্ সুপ্রিম কোর্টের কোন আদেশ ও নির্দেশ, রায়, ডিক্রি ইত্যাদি মান্য করা সকল আদালতের বিচারকদের জন্য বাধ্যতামূলক। এই অনুচ্ছেদটি স্বাধীন দেশে রচিত সংবিধানের একটি অনুচ্ছেদ।
পাকিস্তানের সংবিধানেও অনুরূপ অনুচ্ছেদ রয়েছে। পাকিস্তান আমলে উচ্চ আদালতের দেয়া রায়ের ধারাবাহিকতা স্বাধীন দেশেও বহাল ছিলো (ক্ষেত্র বিশেষ ছাড়া)। অবসরের পর রায় দেয়া বেআইনি এই নির্দেশনা দেশ স্বাধীন হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত মান্য করা হয়েছে। কিন্তু দেশ স্বাধীনের পর অবসরের পরও বিচারকরা রায় লিখতে থাকেন। এ প্রসঙ্গে ড. শাহদীন মালিক বলেন, “অবসরের পর রায় আইনের দৃষ্টিতে রায় নয়’- পাকিস্তান আমলের এই রায়টি না মানার প্রথা যেহেতু চালু হয়ে আছে ফলে এটা বলা যাবে না অবসরের পর লেখা সব রায়ই বেআইনি। তবে ওই রায়ের একটি নৈতিক ভিত্তি আছে। এখন পর্যন্ত আমাদের দেশের উচ্চ আদালতের কোন রায়ে যেহেতু বিষয়টি উল্টায়নি ফলে এটি একটি বলবত্ রায় বা নজির হিসেবে ধরে নেয়া যেতে পারে।
আমাদের দেশে অবসরের পর রায় লেখার বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের ক্ষেত্রেই প্রচলন ছিলো। কেননা আপিল বিভাগে দীর্ঘকাল একটি বেঞ্চেই বিচার অনুষ্ঠিত হয়েছে। দ্রুত মামলা নিষ্পত্তির স্বার্থে আপিল বিভাগ শুধু আদেশের অংশ পাঠ করে শোনাতেন। হাইকোর্টে প্রথা ছিলো প্রকাশ্য আদালতে রায় ঘোষণা করতে হবে। ওই রায় শর্টহ্যান্ডে আদালতের সহকারীরা লিখে নিতেন। টাইপ করার পর বিচারককে দেখিয়ে তা দ্রুত প্রকাশ করা হতো। কিন্তু ইদানীং হাইকোর্টে অনেক বিচারককে প্রকাশ্য আদালতে পূর্ণাঙ্গ রায় ঘোষণা না করে সংক্ষিপ্ত আদেশের অংশ শুধু পড়ে শোনাতে দেখা যাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে সাবেক প্রধান বিচারপতি মাহমুদুল আমিন চৌধুরী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, “এখন মাসের পর মাস পূর্ণাঙ্গ রায় দেয়া হয় না। বিচারপ্রার্থীদের ভোগান্তি হয়। জজ সাহেব সম্বন্ধে নানা আলাপ-আলোচনা হয়। তিনি রায় লিখতে পারেন না বলেই প্রকাশ্যে রায় বা আদেশ দেন না।”
তিনি আরো বলেন, “অবসরের পর রায় লিখতে হলে কোনভাবেই আদেশের অংশ পরিবর্তন করা যাবে না। পরিবর্তন করতে হল রিভিউ করতে হবে। এটা না করে ৬ মাস বা এক বছর বা দেড় বছর পর যদি কেউ রাতের অন্ধকারে রায়ের আদেশের অংশ পরিবর্তন করে তবে সেটি হবে ফৌজদারি অপরাধ।”
আরো লিঙ্ক :
http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=958&cat=2/%E0%A6%96%E0%A6%BE%E0%A7%9F%E0%A6%B0%E0%A7%81%E0%A6%B2-%E0%A6%B9%E0%A6%95-%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%A4%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%95%E0%A7%87--%E0%A6%A8%E0%A6%A4%E0%A7%81%E0%A6%A8-%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%BE
=====
বিষয়: বিবিধ
১১৮১ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
তাতে কি কাপ আর্জেন্টিনার কাছ থেকে নিয়ে নিয়েছে ফিফা ?
হায়রে কপালপোড়া?
মন্তব্য করতে লগইন করুন