সবুজ জমিন রক্তাক্ত সিঁড়ির শ্রেষ্ঠ শহীদ আবদুল কাদের মোল্লার সংগ্রামী জীবন : পর্ব-১
লিখেছেন লিখেছেন বার্তা কেন্দ্র ১২ ডিসেম্বর, ২০১৫, ০৫:৫৬:০১ বিকাল
আজ ১২ ডিসেম্বর আবদুল কাদের মোল্লার দ্বিতীয় শাহাদাত বাষির্কী। ২০১৩ সালের এই দিনে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর করে সরকার। শহীদ আবদুল কাদের মোল্লা প্রকৃতপক্ষে মানবসত্ত্বাবান অসংখ্য মানবিক গুণাবলীর সমন্বয়ে গঠিত একজন রক্ত-মাংসের মানুষ ছিলেন। শহীদ আবদুল কাদের মোল্লা, একটি নাম, একটি ইতিহাস, একজন কিংবদন্তী।
মেধাবী ছাত্র আবদুল কাদের মোল্লা :
শিশুকাল থেকে শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লা অসাধারণ মেধাবী ছাত্র হিসেবে গ্রামে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিচিত হয়ে ওঠেন। তিনি ১৯৫৯ সালে প্রাথমিক বৃত্তি এবং ১৯৬১ সালে মাধ্যমিক শিক্ষাবৃত্তি লাভ করেন। ১৯৬৪ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে আমিরাবাদ ফজলুল হক ইনিস্টিটিউট থেকে উত্তীর্ণ হন। ১৯৬৬ সালে ফরিদপুর সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হন এবং ১৯৬৮ সালে একই বিদ্যাপীঠ থেকে বিএসসি পাস করেন। তার নির্মোহ জীবন সম্পর্কে আঁচ করা গিয়েছিলো অতি শৈশবকালীন আচরণ থেকে।
স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের পুরোধা:
এটা আশির দশকের কথা। দেশ তখন সামরিক জান্তা স্বৈরশাসক প্রেসিডেন্ট এরশাদের কবলে। সামরিক জান্তা সরকার জনগণের কণ্ঠ রোধ করে ফেলেছে প্রায়। সামনে এগিয়ে এলেন শহীদ আবদুল কাদেরের মতো সাহসী লোকরা। তিনি সাংবাদিকতা পেশার প্রতি আকৃষ্ট হন। সত্য প্রকাশে একজন নির্ভীক সাংবাদিক হিসেবে আবদুল কাদের মোল্লার নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে বাংলাদেশের সাংবাদিকতার ইতিহাসের পাতায় পাতায়।
সাংবাদিক হিসেবে কাদের মোল্লা:
১৯৮১ সালে সহকারী সম্পাদক পদে ‘দৈনিক সংগ্রাম’ পত্রিকায় যোগ দেন আবদুল কাদের মোল্লা। সামরিক স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে যে সকল পত্রিকা গণতন্ত্রের অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকা পালন করেছিলো ‘দৈনিক সংগ্রাম’ তার মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। শহীদ আবদুল কাদের মোল্লা ‘বীক্ষণ’ ও ‘সহজ বচন’ ছদ্মনামে কলাম লিখতেন। তার লেখা আর্টিকেলগুলো সচেতন পাঠক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এবং জনপ্রিয়তা লাভ করে। দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক সংগ্রাম, সোনার বাংলা, পালাবদল, মাসিক পৃথিবী, কলম ইত্যাদি নানা দৈনিক, মাসিক, পাক্ষিক, সাপ্তাহিক পত্রিকা এবং ম্যাগাজিনে তিনি লিখেছেন।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের নির্বাচিত সহ-সভাপতি :
সাফল্যের ধারাবাহিকতায় জাতীয় প্রেস কাবের সদস্য পদ লাভের পাশাপাশি ১৯৮২ ও ১৯৮৪ সালে পরপর দু’বার তিনি ঐক্যবদ্ধ ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। আবদুল কাদের মোল্লা একজন আপোষহীন সাংবাদিক নেতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। সক্রিয় রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ার কারণে এক সময় সাংবাদিকতার পেশাকে বিদায় জানাতে হয় তাকে। তিনি জাতীয় প্রেস ক্লাবের একজন সম্মানিত সদস্য হিসেবে ছিলেন সাংবাদিক সমাজের অকৃত্রিম বন্ধু হয়ে।
কুরআনের ছায়াতলে :
১৯৬৬ সালে তিনি ছাত্র ইউনিয়নে যোগ দেন। ১৯৬৮ সালে তিনি মাওলানা মওদূদী (রহ.)-এর তাফসীর ‘তাফহীমুল কুরআন’ পড়ে কুরআনের হৃদয়স্পর্শী বাণীতে মুগ্ধ হন এবং ছাত্র ইউনিয়ন ছেড়ে ছাত্র সংঘে যোগদান করেন। তিনি পরবর্তীতে ছাত্রসংঘের শহিদুল্লাহ হল শাখার সভাপতি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি, ঢাকা মহানগরীর সেক্রেটারি এবং কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
সাংগঠনিক জীবন :
১৯৭৯ সালের মে মাসে তিনি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর রুকন হন এবং একই সাথে ইসলাম বিরোধী মহলের মাথাব্যথার কারণ হয়ে ওঠেন। তিনি ভাষাসৈনিক অধ্যাপক গোলাম আযমের ব্যক্তিগত সেক্রেটারি এবং ঢাকা মহানগরীর শূরা সদস্য এবং কর্মপরিষদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে অল্পদিনের ব্যবধানেই জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিস-এ-শূরার সদস্য হন। ১৯৮২ সালে জামায়াতের ঢাকা মহানগরীর সাধারণ সম্পাদক নিয়োজিত হন। ১৯৮৬ সালে ঢাকা মহানগরীর নায়েবে আমীর, ১৯৮৭ সালে ভারপ্রাপ্ত আমীর, ১৯৮৮ সালের শেষের দিকে ঢাকা মহানগরী আমীর এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি জামায়াতের ঢাকা মহানগরীর আমীর হিসাবে নতুন যুগের সুচনা করেন।
সাংবাদিক নেতা হওয়ার কারণে সব ধরনের রাজনৈতিক মহলে উনার অবাধ যাতায়াত ছিল। মানুষের সাথে অন্তরঙ্গ হয়ে মিশে যাওয়ার কারণে জামায়াত তাকে বিভিন্ন দলের সাথে লিয়াজোঁ করার দায়িত্ব দেয়। এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে প্রথম তার বিভিন্ন দলের সাথে লিয়াজোঁ করার দক্ষতা প্রকাশ পায়। যদিও তখন এটা ছিল অনানুষ্ঠানিক ও গোপন। ’৯০ এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে ঢাকা মহানগর জামায়াতে ইসলামীর আমীর হিসেবে কেন্দ্রীয় লিয়াজোঁ কমিটির সদস্য ছিলেন তিনি।
পরবর্তীতে ১৯৯৫ সালে আওয়ামী লীগের সাথে জামায়াত আনুষ্ঠানিকভাবে লিয়াজোঁ কমিটি করে বিভিন্ন দলের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে। ওই সময়ে আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের সাথে দিনের পর দিন তিনি মিটিং করে আন্দোলনের কর্মসূচি ঠিক করতেন ও সাংবাদিকদের কাছে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করতেন। তখন কমিটিতে গৃহীত আন্দোলনের কর্মসূচি সম্পর্কে ব্রিফিং করতেন আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ নাসিম এবং তা বিভিন্ন পত্রিকায় ছাপানোর ব্যবস্থা করতেন শহীদ আবদুল কাদের মোল্লা। ১৯৯৬ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ নেতা তোফায়েল আহমেদের সাথে একই দিনে তিনি গ্রেফতার হন। গ্রেফতার হওয়ার আগে তিনি ও তোফায়েল আহমদ একসাথে আত্মগোপনে ছিলেন। জেলে তিনি ও অন্যান্য আওয়ামী লীগ নেতারা বাসার খাবার ভাগাভাগি করে খেতেন।
আওয়ামী লীগ শাসন আমলে ১৯৯৯ সাল থেকে জামায়াত-বিএনপি লিয়াজোঁ শুরু হয়। চারদলীয় লিয়াজোঁ কমিটির অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। লিয়াজোঁ কমিটিতে বিভিন্ন সময়ে নানা দায়িত্ব পালন করার কারণে বিএনপি দলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনাসহ উভয় দলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দের সাথে আন্দোলনের নীতি নির্ধারণী সভাতে মিলিত হতেন তিনি। বিভিন্ন সময়ে নানাবিধ দলের সাথে লিয়াজোঁ করার কারণে রাজনৈতিক নেতাদের সাথে উনার সখ্যতা হয়। রাজনৈতিক নেতাগণ তাদের একান্ত পারিবারিক অনুষ্ঠানেও উনাকে দাওয়াত করতেন।
বই পড়া ছিল তাঁর প্রিয় :
বই পড়া ছিল তার নিয়মিত অভ্যাস। শত-সহস্র ব্যস্ততার মাঝে তিনি শুধুই পড়তেন। জ্ঞানপিপাসু এই মানুষটি জ্ঞানার্জনে ছিলেন অবিচল, শ্রান্তিহীন। ছোটবেলা থেকেই তিনি বই কিনতেন, নিজের লাইব্রেরি ছিল তার সেই সদরপুরের জীবন থেকেই। ইসলামী আদর্শে বিশ্বাসী মানুষটি শুধু ইসলামী বই-পুস্তকের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিলেন তা নয়, বরং তিনি কুরআন, হাদীস, ইসলামী সাহিত্যের পাশাপাশি অন্যান্য ধর্ম, মতাদর্শ, দর্শন, বিজ্ঞানের বই পড়তেন। আন্তর্জাতিক রাজনীতির উপরে ইংরেজিতে লেখা বই উনি নিয়মিত সময় করে পড়তেন। আন্তর্জাতিক নানা পত্র-পত্রিকার আর্টিকেল প্রিন্ট করে রাতে শোওয়ার সময় পড়তেন।
যখন একজন সমাজকর্মী:
জনাব মোল্লা সক্রিয়ভাবে সামাজিক সংস্থার সাথে যুক্ত ছিলেন। যার মধ্যে সাইয়্যেদ আবুল আ’লা মওদূদী রিসার্চ একাডেমি, সদরপুর মাদরাসা ও এতিমখানা, ফরিদপুর জেলার হাজিডাঙ্গি খাদেমুল ইসলাম মাদরাসা ও এতিমখানা, সদরপুর আল-আমিন একাডেমি ইত্যাদি অন্যতম। এছাড়া ফরিদপুরের নানা অঞ্চলে মসজিদ নির্মাণ করে দিয়েছেন। অসংখ্য দরিদ্র মানুষের তিনি চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। গরিব শিক্ষার্থীদের মাঝে বই-খাতা বিলি করেছেন। এতিম-মিসকিনদের মাঝে জামাকাপড় দিয়েছেন। গরিব মেয়েদের বিয়ে দিতে সাহায্য করেছেন।
সাদা হৃদয়ের অধিকারী :
শহীদ আবদুল কাদের মোল্লার জীবন সব সময়ই প্রকাশ্য এবং স্বচ্ছ। তিনি কোন গোপন আন্দোলনের সদস্য কিংবা কোন গোপন ব্যক্তি ছিলেন না। দীর্ঘ রাজনৈতিক ও সামাজিক জীবনে কেউ কখনও তাকে যুদ্ধাপরাধী হিসাবে চিহ্নিত করেননি অথবা “কসাই কাদের মোল্লা” বলেও ডাকেনি। বিগত ৪০ বছরে তার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের বা মানবতাবিরোধী অপরাধের একটি অভিযোগও কোথাও উত্থাপিত হয়নি। যুদ্ধাপরাধী বা রাজাকার, আলবদর, আলশামস হিসাবে কোন তালিকায় তার নামতো দূরের কথা, সন্দেহভাজনের তালিকায়ও নাম ছিল না। এমনকি এধরনের অপরাধে তাকে কেউ ইতঃপূর্বে অভিযুক্তও করেনি।
স্বাধীনতার প্রায় ৪ দশক পর ২০০৭ সালে ওয়ান ইলাভেনের সরকারের সময়ে হঠাৎ করেই যুদ্ধাপরাধের বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়। শুরু হয় ইসলামী আন্দোলনের নেতৃবৃন্দের পরিকল্পিত চরিত্র হনন। আওয়ামী লীগ বিরোধী আন্দোলনে যে সব জামায়াত নেতা সাহসী ও কার্যকর ভূমিকা রাখতে সক্ষম ছিলেন, তাদের বিরুদ্ধে চলে অব্যাহত মিথ্যা প্রচারণা। যে আওয়ামী লীগ নেতারা এক সময়ে যে জামায়াত নেতাদের সাথে একই টেবিলে বসে চা খেতে খেতে আন্দোলনের পরিকল্পনা করেছেন, সেই আওয়ামী নেতারা ঐ সব জামায়াত নেতাদের বিরুদ্ধে কুৎসিত বক্তব্য দিতে থাকেন। আওয়ামী লীগ দলীয় লোকদের দিয়ে জামায়াত নেতাদের নামে নানা মামলা দায়ের করতে থাকে। ঐ বছরেরই ১৭ ডিসেম্বর আবদুল কাদের মোল্লাসহ কয়েকজন শীর্ষ জামায়াত নেতার বিরুদ্ধে কেরানীগঞ্জ থানায় একটি মামলা হয়। ১৩ জুলাই ২০১০। সকাল ১১টা। জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লা ও মুহাম্মদ কামারুজ্জামান হাইকোর্টে আসেন জামিনের জন্য। মামলার যখন শুনানি চলে তখন সুপ্রিম কোর্ট প্রধান গেটের সামনে অবস্থান নেয় বিপুলসংখ্যক গোয়েন্দা সদস্য এবং শাহবাগ থানার পুলিশসহ অগণিত পুলিশ। আবদুল কাদের মোল্লা এবং মুহাম্মদ কামারুজ্জামান সুপ্রিম কোর্ট চত্বর পার হয়ে প্রধান ফটকে গেলে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়।
২৬ জুলাই ২০১০ তারিখে আব্দুল কাদের মোল্লাকে প্রথম আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ হাজির করা হয়। আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারী করে ট্রাইব্যুনাল। ১৮ ডিসেম্বর ২০১১ তারিখে তার বিরুদ্ধে কসাই কাদের উল্লেখ করে সাতটি চার্জ দাখিল করে সরকার পক্ষ। ২৮ ডিসেম্বর ২০১১ আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ আমলে নেয় ট্রাইব্যুনাল। ২৮মে ২০১২তারিখে আব্দুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে ছয়টি অভিযোগ উল্লেখ করে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ গঠন করে ট্রাইব্যুনাল-২। ৩ জুলাই কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়। সরকারপক্ষে ১২ জন এবং আসামী পক্ষে ছয় জন সাক্ষী সাক্ষ্য প্রদান করে। ২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি আব্দুল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড প্রদান করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। এরপর শুরু হয় তথাকথিত শাহবাগ আন্দোলন। ‘অভিনব’ এই আন্দোলনের ফলে ২০১৩ সালের ১৭ ফেরুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধন করে সরকার পক্ষকে আপিলের সুযোগ সৃষ্টি করা হয়। পরবর্তীতে তার সর্বোচ্চ শাস্তির আবেদন করে সরকার পক্ষ।
২০১৩ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগ যাবজ্জীবন সাজা বাড়িয়ে মৃত্যুদণ্ড দেয় আবদুল কাদের মোল্লাকে। ৫ ডিসেম্বর ২০১৩ আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। ৮ ডিসেম্বর ট্রাইব্যুনাল তার বিরুদ্ধে মৃত্যু পরোয়ানা জারি করে। এরপরই শুরু হয়ে যায় ফাঁসি কার্যকরের প্রস্তুতি।
সরকারের নির্দেশে ১০ ডিসেম্বর রাতেই আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকরের যাবতীয় উদ্যোগ নিয়েছিল ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে সরকারের দুইজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি সাংবাদিক সম্মেলন করে। কিন্তু ফাঁসি কার্যকরের মাত্র দেড় ঘণ্টা আগে চেম্বার বিচারপতি ফাঁসি কার্যকর পরদিন সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত স্থগিত করে আদেশ দেন। ১১ডিসেম্বর সকালে প্রধান বিচারপতি মো: মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের আপিল বেঞ্চে শুরু হয় রিভিউ আবেদনের শুনানি। এ ছাড়া আসামীপক্ষ স্থগিতাদেশের মেয়াদ বাড়ানোরও আবেদন করে। রিভিউ আবেদন চলবে কি চলবে না এ বিষয়ে ১১ ডিসেম্বর শুনানি শেষে ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত মুলতবি করায় ফাঁসি স্থগিতাদেশও বহাল থাকে ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত।
ফাঁসির মঞ্চে আল্লাহর সৈনিক:
১২ ডিসেম্বর সকালে আবার শুরু হয় রিভিউ আবেদনের ওপর শুনানি। শুনানি শেষে ১২টা ৭ মিনিটে প্রধান বিচারপতি ঘোষণা করেন আবেদন ডিসমিসড। ১২ ডিসেম্বর রাত ১০টা ১মিনিটে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আবদুল কাদের মোল্লাকে ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে মৃত্যু কার্যকর করা হয়। মৃত্যু কার্যকর করার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারির মধ্যে এই মহান শহীদের লাশ নিয়ে যাওয়া হয় তার জন্মস্থান সবুজ ছাওয়া ঘেরা ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার আমিরাবাদ গ্রামে। পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতি ছাড়া পুলিশী প্রহরায় ইসলামী আন্দোলনের এই নেতাকে তার পিতা-মাতার পাশে দাফন করা হয়।
(সৌজন্যে-দৈনিক সংগ্রাম, ১২ই জুন ২০১৫)
বিষয়: বিবিধ
১৪৪১ বার পঠিত, ১৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
সিরিয়ালি ভালই লিখতেছেন ।
তীর চিন্হিত স্থানে মনে হয় আরেকটি প্যারা ছিল । সেটা এডিট করে দিবেন ।
প্লিজ, কারো দিকে আর তাকিয়ে থাকা নয়, কেউ আসুক অথবা নাই আসুক, আপনি আসছেন, লিখছেন, ভালো কিছু উপহার দেয়ার চেষ্টা করছেন, এটাই নিশ্চিত করুন!
মন্তব্য করতে লগইন করুন