ফাঁসির দেশ মামলাদেশ-খন্দকার মাহবুব হোসেন
লিখেছেন লিখেছেন বার্তা কেন্দ্র ০৩ ডিসেম্বর, ২০১৫, ১২:৩৩:২২ দুপুর
‘এ দেশ এখন ফাঁসির দেশ হয়ে গেছে’ - খন্দকার মাহবুব হোসেন
বুধবার সকাল সোয়া ৯টা থেকে দুপুর পৌনে ১টা পর্যন্ত নিজামীর আপিলের ওপর যুক্তিতর্ক উপস্থাপন হয়। ওই সময়ে নিজেদের পক্ষে একের পর এক যুক্তি তুলে ধরেন প্রধান বিচারপতি এবং নিজামীর আইনজীবী খন্দকার মাহবুব।
প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের বেঞ্চে এ মামলার শুনানি চলছে। বেঞ্চের অপর সদস্যরা হলেন বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।
আজ নিজামীর পক্ষে খন্দকার মাহবুব হোসেন ছাড়াও যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন আরেক আইনজীবী এস এম শাহজাহান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের সময় খন্দকার মাহবুব বলেন, এ দেশ এখন ফাঁসির দেশ হয়ে গেছে। জবাবে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘সৌদি ও চীনের অবস্থা দেখেন। আমরা একটা দিলে (মৃত্যুদণ্ড) হৈ চৈ পড়ে যায়। সৌদিতে যা হচ্ছে আমাদের দেশে তার এক পার্সেন্টও (শতাংশ) হচ্ছে না। ওদের টাকা আছে, স্ট্যান্ড (অবস্থান) আছে।’
শুনানিকালে নিজামীর বক্তব্য উদ্ধৃত করে খন্দকার মাহবুব আদালতে বলেন, ‘আমি (নিজামী) ১৯৭১ সালে ছাত্র ছিলাম। ১৯৭১ সালের ৩০ সেপ্টেম্বরের পর ছাত্রসংঘের আর কোনো দায়িত্বে ছিলাম না। তাই আমি কাউকে হত্যা, গণহত্যার জন্য বক্তব্য দিইনি।’
পরে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আপনারা মুজাহিদের পূর্ণাঙ্গ রায় দেখেননি? ওখানে বলা আছে কার দায়দায়িত্ব কতটুকু।’
খন্দকার মাহবুবের উদ্দেশে এস কে সিনহা বলেন, ‘তাঁরা (নিজামীরা) যদি পাকিস্তানিদের সমর্থন না করত, তাহলে সিন্ধু, পাঞ্জাব, বেলুচিস্তান থেকে এসে তারা এ দেশে নয় মাস থাকতে পারত না। তারা তিন মাস থাকত। ১৯৭১ সালে দেশে আইনশৃঙ্খলা ছিল না। তারা ব্যক্তিগতভাবে ইয়ে করেছে..। মানে সহযোগিতা করেছে মিলিটারিদের। এরা জড়িত ছিল।’
জবাবে খন্দকার মাহবুব বলেন, ‘৩০ সেপ্টেম্বরের পর উনি নেতা ছিলেন না।’
এ সময় প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘বিভিন্ন সংবাদে রয়েছে উনি নেতা ছিলেন। ওনার বক্তব্য প্রচার হয়েছে। যুদ্ধের শেষ দিকে অনেক নর-নারী হত্যা করা হয়েছে। এটা থেকে প্রমাণ হচ্ছে না উনি (নিজামী) লিডার ছিলেন?’
প্রধান বিচারপতির ওই বক্তব্যের পর খন্দকার মাহবুব বলেন, ‘মতিউর রহমান নিজামী ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নিখিল পাকিস্তানের দায়িত্বে ছিলেন। কিন্তু বুদ্ধিজীবী হত্যার ঘটনা ছিল এর পর।’
ওই বক্তব্যের পরিপ্রক্ষিতে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘৭১ সালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ছিল না। এরাই সহযোগিতা করেছেন মিলিটারিদের।’ তিনি বলেন, ‘যুদ্ধের শেষে যদি এ কথা বলেন, তাহলে কি প্রমাণ হচ্ছে না যে, নিজামী লিডার ছিলেন? আপনি টোকিও ট্রায়াল দেখেন।’
তখন খন্দকার মাহবুব বলেন, ‘টোকিও ট্রায়াল দেখাবেন না। আপনারা তাহলে ১৯৫ জন পাকিস্তানি সেনার বিচার করছেন না কেন? পাকিস্তান তো জড়িত ছিল।’ জবাবে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আজ তো পাকিস্তান এটা অস্বীকার করছে।’
খন্দকার মাহবুব বলেন, ‘ঘটনা ঘটেছে, এটা সত্য। কিন্তু নিজামী ওই সময় আলবদর বাহিনীর সুপিরিয়র (সর্বোচ্চ) ক্ষমতায় ছিলেন না। দেশের পুলিশ বাহিনী পাক আর্মিদের পথ দেখিয়েছে। কোনো আর্মি মুভ করত না যদি পুলিশ লিড না দিত।’
খন্দকার মাহবুব বলেন, ‘নিজামীর মতো ইয়াংরা (তরুণ) পথ দেখাল আর আর্মিরা সেখানে গেল—এটা ইমপসিবল (অসম্ভব)।’
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘নিজামী একটা বাহিনীর প্রধান ছিলেন না; ছাত্রসংঘের লিডার ছিলেন।’ এ সময় তিনি আদালতে একটা মামলার প্রতিবেদন পড়ে বলেন, ‘‘এ প্রতিবেদনে লেখা আছে, ‘মাদানী বাহিনীর মতো জেহাদে ঝাঁপিয়ে পড়ো।” এভাবে রক্ত ঝরল, আর বাকি থাকল কী।’
ওই সময় খন্দকার মাহবুব বলেন, ‘এটা এখন ফাঁসির দেশ হয়ে গেছে।’
জবাবে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘এটা বলবেন না; সৌদি, চীনে কী হচ্ছে? আমরা একটি দিলে হৈ চৈ পড়ে যায়। সৌদিতে যা হচ্ছে আমাদের দেশে তার এক পার্সেন্টও হচ্ছে না। ওদের টাকা আছে, স্ট্যান্ড আছে।’
পরে খন্দকার মাহবুব বলেন, ‘আমরা মনে করি, ১৯৭১ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর বদর বাহিনীতে তিনি (নিজামী) ছিলেন না। সাক্ষীরা মামলার তদন্ত কর্মকর্তার কাছে যে বক্তব্য দিয়েছেন, আদালতে সাক্ষী দেওয়ার সময় বক্তব্যের সঙ্গে কোনো মিল নেই। প্রসিকিউশন সেফ হোমে দিনের পর দিন সাক্ষীদের মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য তৈরি করেছেন। হত্যা, খুন, অপহরণের সঙ্গে নিজামী জড়িত ছিলেন না। প্রসিকিউশন অপরাধ প্রমাণ করতে পারেনি।’
‘শেষ সময়ে বলব আদালত যদি মনে করে উনি (নিজামী) দোষী, তাহলে তাঁর বয়স ও শারীরিক অসুস্থতার কথা বিবেচনা করে মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন করতে পারে।’ যোগ করেন খন্দকার মাহবুব।
ওই বক্তব্যের পর দুপুর পৌনে ১টার দিকে আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে আদালত মামলার কার্যক্রম আজকের মতো শেষ করেন। আগামী ৭ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপক্ষের শুনানির জন্য দিন ধার্য করেন আদালত।
এর আগে গতকাল মঙ্গলবার দ্বিতীয় দিনে নিজামীর করা আপিল আবেদনের ওপর যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন আইনজীবী এস এম শাহজাহান। নিজামীকে নির্দোষ প্রমাণ করতে তিনি চারটি যুক্তি তুলে ধরেন।
প্রথম যুক্তি : যুদ্ধের পর ১৯৭২ সালে জেলা প্রশাসকরা একটি রাজাকারের তালিকা জমা দিয়েছিলেন। ওই তালিকায় মতিউর রহমান নিজামীর নাম ছিল না।
দ্বিতীয় যুক্তি : যুদ্ধের পর বুদ্ধিজীবী হত্যায় ৪২টি মামলা হয়েছিল। কিন্তু একটিতেও নিজামীর নাম ছিল না।
তৃতীয় যুক্তি : মতিউর রহমান নিজামী ইসলামী ছাত্র সংঘের নিখিল পাকিস্তানের দায়িত্বে ছিলেন ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। অথচ বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড হয় ডিসেম্বর মাসে। তাই ওই সময় তিনি কোনো দায়িত্বে ছিলেন না।
চতুর্থ যুক্তি : রাষ্ট্রপক্ষের মৌখিক অনেক সাক্ষ্যর মধ্যে অসামঞ্জস্যতা পাওয়া গেছে। আলবদর নেতা হিসেবে নিজামীর বিরুদ্ধে কোনো নথি রাষ্ট্রপক্ষ উপস্থাপন করতে পারেনি।
http://www.sheershanewsbd.com/2015/12/02/106062#sthash.JuBjwlHo.dpuf
বিষয়: বিবিধ
১০০১ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন