ত্রুটিপূর্ণ ট্রাইব্যুনালে আসামীর অধিকার নিদারুণভাবে ক্ষুণ্ন হয়েছেঃ ইকোনমিস্টের নিবন্ধ (The Economist)

লিখেছেন লিখেছেন বার্তা কেন্দ্র ২৯ নভেম্বর, ২০১৫, ০৭:০৮:৫৬ সন্ধ্যা



২২ই নভেম্বর বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় যে ট্রাপডোর খুলেছে, তাতে ফাঁসির মাধ্যমে কেবল বাংলাদেশের দুই প্রখ্যাত বিরোধী ব্যক্তির জীবনের সমাপ্তিই ঘটেনি। এর ফলে ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইম ট্রাইব্যুনালের কাজেরও সমাপ্তি ঘনিয়ে এসেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের কাছ থেকে বাংলাদেশের পৃথক হওয়ার যুদ্ধে সংঘটিত ঘৃণ্য অপরাধের বিচার করার জন্য ৫ বছর আগে এ দেশীয় আদালতটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ওই যুদ্ধের নৃশংসতার সঠিক বর্ণনা প্রয়োজনীয় ছিল। কিন্তু ট্রাইব্যুনালটি ছিল ত্রুটিপূর্ণ। এ ট্রাইব্যুনাল বিবাদীর অধিকার নিদারুণভাবে ক্ষুণ্ণ করেছে। এমনকি এটিতে রাজনৈতিক অনধিকার চর্চার প্রভাবও থাকতে পারে। কিন্তু শেখ হাসিনার জন্য এ সবকিছুই লাভজনক। তিনি স্বাধীনতার জন্য সংগ্রামের সময়কার ঘটনার প্রতিশোধ নিলেন। এবং তিনি তার চিরশত্রু খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) মারাত্মক ক্ষতি করলেন। লন্ডনের প্রভাবশালী ম্যাগাজিন দ্য ইকোনমিস্টের একটি নিবন্ধে এসব বলা হয়েছে। ওই নিবন্ধে আরও বলা হয়েছে, মৃত দুই ব্যক্তির প্রথমজন সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী পরিবার বেশ সুস¤পর্কযুক্ত। তার রাজনীতিক পিতা বাংলাদেশের স্বাধীনতার পূর্বে মাঝে মাঝে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেছিলেন, যখন লৌহমানব আইয়ুব খান অনুপস্থিত থাকতেন। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী নিজেও দুইবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম জিয়ার ঘনিষ্ঠ ছিলেন। তাকে প্রায়ই পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের দূত হিসেবে বিবেচনা করা হতো। ট্রাইব্যুনাল তাকে বিভিন্ন অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করেছে। এর মধ্যে ১৯৭১ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সঙ্গে চক্রান্ত করে হিন্দুদের হত্যার অভিযোগও অন্তর্ভূক্ত। কিন্তু এরপরও ট্রাইব্যুনাল নিরপেক্ষ ছিল না। বাদি পক্ষ ৪১ জন স্বাক্ষীকে হাজির করার অনুমতি পেয়েছে, অথচ বিবাদি পক্ষ পেরেছে মাত্র ৪ জন। সাবেক একজন আমেরিকান রাষ্ট্রদূতসহ আরও অনেক প্রখ্যাত ব্যক্তিকে স্বাক্ষ্য দিতে দেয়নি আদালত। তাদের হলফনামায় দাবি করা হয়েছে, কথিত অপরাধসমূহ সংঘটনের সময় সালাউদ্দিন চৌধুরী পাকিস্তানে ছিলেন। দ্বিতীয় ব্যক্তি আলি আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ছিলেন ইসলামপন্থী দল জামায়াতে ইসলামির সাধারণ স¤পাদক। বিএনপি সর্বশেষ যখন ক্ষমতায় ছিল তখন তার দল ছিল জোটসঙ্গী। তিনি নিজে ছিলেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রী। মুজাহিদ ১৯৭১ সালে আল বদরের জ্যেষ্ঠ কমান্ডার হিসেবে বুদ্ধিজীবী ও হিন্দুদের হত্যাকান্ড সংঘটনের দায়ে অভিযুক্ত। বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাকালীন জনক শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনা এখন বলতে পারবেন যে, ২০০৯ সালের নির্বাচনের পূর্বে নৃশংসতায় দায়ীদের শাস্তি দেয়ার যে কথা তিনি দিয়েছিলেন, তা তিনি রাখতে পেরেছেন। এদিকে বেগম জিয়া (জিয়াউর রহমানের বিধবা স্ত্রী। ১৯৭৫ সালে শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকান্ডের পরে ক্ষমতারোহন করেন তিনি এবং ১৯৮১ সালে নিজেও হত্যাকান্ডের শিকার হন) লন্ডনে কিছুকাল কাটিয়ে এ সপ্তাহে দেশে ফিরেছেন। কর্তৃপক্ষ তার বিমানকে ঢাকায় অবতরণ করতে দিয়েছে। তার সমর্থকদের মাঠ থেকে তাড়িয়েও দেয়া হয়েছে। তার ছেলে ও রাজনৈতিক উত্তরাধিকারী তারেক রহমানের বিরুদ্ধে তার মায়ের ‘ক্লেপটোক্রেটিক’ প্রশাসনে দুর্নীতি করার অভিযোগে মামলা থাকায় তিনিও লন্ডন থেকে ফিরতে পারছেন না। দলের ভেতরের অনেকেই বর্ণনা করেছেন অগোছালো উত্তরাধিকারের কথা। সাবেক এক নেতা তারেক রহমানের ‘লম্বা ও বিপজ্জনক হাত’ ও পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে পাল্টা প্রতিক্রিয়া দেখাতে দলের অক্ষমতা নিয়ে আক্ষেপ করেছেন। খুব সহজেই দলটি রাস্তায় সহিংসতা উস্কে দিতে বলছে ক্যাডারদের। তৃণমূলে শক্তিশালী সমর্থন থাকলেও, ব্যবসায়িক পৃষ্ঠপোষকদের ক্ষমতা হারাচ্ছে বিএনপি। সর্বশেষ নির্বাচন বয়কট করায় দলের কোন এমপিও নেই। পরবর্তী নির্বাচন ২০১৯ সালের আগে হবে না। এবং যদি শেখ হাসিনা বর্তমান অবস্থানই ধরে রাখেন, তবে সর্বশেষ নির্বাচনের মতো আগামী নির্বাচনের নিরপেক্ষতা নিশ্চিতের দায়িত্বেও তত্বাবধায়ক সরকার থাকবে না। ওদিকে শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ বিরোধী রাজনীতিকদের হয়রানি করা অব্যাহত রেখেছে, ঠিক যেমনটি বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালীন করেছিল। অনেকেই এখন কারাগারে, বাকিরা পালিয়েছেন অথবা আত্মগোপনে গেছেন। বেগম জিয়ার বিরুদ্ধেও দুর্নীতির অনেক মামলা। বাকি যারা আছেন, তাদের অনেকে তারেক রহমান-বিহীন ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখেন। ২০ই নভেম্বর নাজমুল হুদা, বিএনপি’র সাবেক বড় নেতা, নতুন দল ‘তৃণমূল বিএনপি’র ঘোষণা দিয়েছেন। কিন্তু বিএনপি’র সমস্যা কলঙ্কিত আপাত-উত্তরাধিকারের চেয়েও বেশি কিছু। দলটি পাশের বৃহৎ প্রতিবেশী ভারতকে নিশ্চয়তা দিতে পারছে না যে, ভবিষ্যতের বিএনপি সরকারের সময়ে বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষ ঐতিহ্য নিরাপদ থাকবে। জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক ক্ষুণ্ণ করতে বিএনপি’র অনিচ্ছায় এতে উপকার হচ্ছে না। জামায়াত সৌদি-প্রভাবিত ইসলামের প্রচার চালায়, খুব শিগগিরই এটি বেআইনি ঘোষিত হতে পারে। অপরদিকে আওয়ামী লীগ ও ভারতের সম্পর্ক ধীরে ধীরে ঘনিষ্ঠ থেকে ঘনিষ্ঠতর হচ্ছে। এ মাসে অনুপ চেটিয়াকে হস্তান্তরের মাধ্যমে ভারতের চাহিদার বিশাল তালিকার সর্বশেষটি পূরণ করেছে বাংলাদেশ। অনুপ চেটিয়া আসামের একজন বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা, যাকে বাংলাদেশ ১৮ বছর ধরে কারাগারে পুরে রেখেছে কষাকষির ভালো অবলম্বন হিসেবে। ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য পৌরসভা নির্বাচনে উদ্যোম ফিরে পেতে পারে বিএনপি। কিন্তু প্রায় সর্বত্রই আওয়ামী লীগের আধিপত্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ও আইনি প্রতিষ্ঠানসমূহ, যেগুলোকে সুরক্ষিত করার কথা ছিল দেশের ভিত্তিমূলের, সেগুলোর মূল্য অবশ্য ভিন্ন বিষয়।

...........

বিষয়: বিবিধ

৯৬৯ বার পঠিত, ১১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

352038
২৯ নভেম্বর ২০১৫ রাত ০৮:০৪
আরাফাত হোসাইন লিখেছেন : ভালো লাগলো
৩০ নভেম্বর ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:৪৮
292388
বার্তা কেন্দ্র লিখেছেন : আপনাকেও ধন্যবাদ..
352044
২৯ নভেম্বর ২০১৫ রাত ০৮:৪৯
কুয়েত থেকে লিখেছেন : লেখাটি ভালো লাগলো অনেক অনেক ধন্যবাদ
৩০ নভেম্বর ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:৪৮
292387
বার্তা কেন্দ্র লিখেছেন : আপনাকেও ধন্যবাদ..
352067
২৯ নভেম্বর ২০১৫ রাত ১১:১৫
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
৩০ নভেম্বর ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:৪৭
292386
বার্তা কেন্দ্র লিখেছেন : আপনাকেও..
352118
৩০ নভেম্বর ২০১৫ দুপুর ১২:৫৪
৩০ নভেম্বর ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:৪৭
292385
বার্তা কেন্দ্র লিখেছেন : Good Luck Good Luck
352138
৩০ নভেম্বর ২০১৫ দুপুর ০২:৪৯
হতভাগা লিখেছেন : এদের বিচার না করে সরাসরি লটকিয়ে দিলেই তো ল্যাঠা চুকে যেত
৩০ নভেম্বর ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:৪৫
292384
বার্তা কেন্দ্র লিখেছেন : কিলাররা আপনার চেয়ে কম বুঝে নাকি?
০৩ ডিসেম্বর ২০১৫ সকাল ০৮:১১
292673
হতভাগা লিখেছেন : Kill them all

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File