গ্রেফতারের মহোৎসব চলছে : স্বেচ্ছায় কারাবরণ কর্মসূচি চাই..
লিখেছেন লিখেছেন বার্তা কেন্দ্র ০৮ নভেম্বর, ২০১৫, ০১:০৯:০৩ দুপুর
খবর-বিএনপি ও জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীসহ সারাদেশে গ্রেফতার ৬ শতাধিক :
-সারা দেশে পুলিশের ধরপাকড় অভিযান চলছেই। বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীরাই পুলিশের এ গ্রেফতার অভিযানের শিকার। বিশেষ করে জামায়াত-বিএনপি ও শিবিরের নেতাকর্মীদের নির্বিচারে গ্রেফতার করা হচ্ছ। বিভিন্ন স্থান থেকে বিএনপি-জামায়াত শিবিরের নেতাকর্মীসহ ৬০২ জনকে আটক করেছে পুলিশ।
চট্টগ্রাম : গত শুক্রবার দিবাগত রাতে চট্টগ্রাম জেলার বিভিন্ন উপজেলায় রাতভর অভিযান চালিয়ে জামায়াত শিবিরের ২৪ নেতাকর্মীসহ ৪৮১ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের অতিরিক্ত সুুপার (বিশেষ শাখা) নাঈমুল হাসান জানান, শুক্রবার রাতে জেলার বিভিন্ন উপজেলাগুলোতে বিশেষ অভিযান চালানো হয়। এসময় শিবিরের ২৪ নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে। এছাড়া নিয়মিত মামলার ৯৩ জন এবং গ্রেফতারি পরোয়ানাভুক্ত ৩৬৪ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তিনি জানান, অভিযানে একটি এলজি, দুইটি পিস্তল, ছয়টি কার্তুজ, ২৫২ লিটার মদ, ১৫০৫ পিস ইয়াবা এবং দুই কেজি গাঁজা উদ্ধার করা হয়েছে।
পুলিশ জানায়, জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীদের মধ্যে বাঁশখালী থেকে ২ জন এবং সাতকানিয়া থেকে ২২ জনকে আটক করা হয়েছে। বাঁশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) স্বপন কুমার মজুমদার জানান, শুক্রবার রাতে বিভিন্ন অভিযোগে মোট ৪০ জনকে আটক করা হয়। এর মধ্যে জামায়াত-শিবিরের এক নেতা ও এক কর্মী রয়েছে। সাতকানিয়া থানার ওসি ফরিদ উদ্দিন খোন্দকার জানান, তারা বিভিন্ন অভিযোগে মোট ১১১ জনকে আটক করেন। এর মধ্যে শিবিরের ১৭ ও জামায়াতের ৫ জন নেতাকর্মী রয়েছে।
নোয়াখালী : নোয়াখালীর সেনবাগ ও চাটখিল উপজেলায় যৌথ অভিযান চালিয়ে পুলিশ চাটখিল উপজেলা জামায়াতের আমীর সাইফুল্লাহসহ বিএনপি জামায়াতের ৫ নেতাকে গ্রেফতার করেছে।
শুক্রবার দিবাগত রাত ২টা থেকে ৩টা পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত অন্যরা হলেন- সেনবাগ উপজেলা জামায়াতের সাংগঠনিক সম্পাদক মিয়াজুর রহমান, ওমর ফারুক, মোহাম্মদপুর ইউনিয়ন বিএনপি নেতা জাফর মেম্বার ও বেলাল হোসেন।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শুক্রবার দিবাগত গভীর রাতে র্যাব ও পুলিশ যৌথ অভিযান চালিয়ে জেলার চাটখিল বাজার থেকে উপজেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা সাইফুল্লাহ এবং সেনবাগ উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ রাজারামপুর গ্রাম থেকে উপজেলা জামায়াতের সাংগঠনিক সম্পাদক মিয়াজুর রহমান ও অন্যদেরকে গ্রেফতার করে।
চাটখিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নাছিম উদ্দিন ও সেনবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, গ্রেপ্তারকৃতদের নামে হরতাল ও অবরোধসহ বিভিন্ন সময় নাশকতার সৃষ্টির ঘটনায় একাধিক মামলা রয়েছে।
বাঘা (রাজশাহী) : রাজশাহীর বাঘায় উপজেলা জামায়াতের নায়েবে আমীর মাওলানা আব্দুল লতিফ ও জামায়াতের কর্মী জাহাঙ্গীর হোসেনকে আটক করেছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। গতকাল শনিবার দুপুরে তাদের আটক করা হয়।
আটককৃত আব্দুল লতিফ বাঘা হযরত আব্দুল হামিদ দানিশ মন্দ (রহঃ) সিনিয়র ফাজিল মাদরাসার আরবি বিভাগের প্রভাষক ও জাহাঙ্গীর হোসেন বাঘা বাজারের মুদি ব্যবসায়ী। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, জোহরের নামাযে যাওয়ার সময় উপজেলার বানিয়াপাড়া এলাকা থেকে আব্দুল লতিফকে ও বাঘা বাজার এলাকায় নিজস্ব দোকান থেকে জাহাঙ্গীরকে আটক করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। উপজেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা জিন্নাত আলী বলেন, তাদের নামে নতুন কোন মামলা নেই। ইতঃপূর্বের যে মামলা রয়েছে সে সব মামলায় তারা জামিনে আছেন। তাদের রাজনৈতিকভাবে হয়রানির জন্যই আটক করা হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন। তবে এ বিষয়ে রাজশাহী ডিবি পরিদর্শক খাইরুল ইসলাম কিছু জানেন না বলে জানিয়েছেন। মাওলানা আব্দুল লতিফ ও জাহাঙ্গীর আলমকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতারের প্রতিবাদ জানিয়েছেন জামায়াতের বাঘা উপজেলা আমীর মাওলানা জিন্নাত আলী ও সেক্রেটারি জনাব আব্দুল্লাহ আল মামুন। এক যৌথ বিবৃতিতে তারা ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে তাদের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেন।
সাতক্ষীরা : পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সাতক্ষীরা ব্যাপক ধরপাকড় শুরু হয়েছে। পরিকল্পিত ভাবে নির্বাচনে বিরোধী দলীয় সম্ভাব্য প্রার্থীদের বাড়িতে পুলিশ হানা দিচ্ছে। পাটকেলঘাটার পাঁচটি ইউনিয়নের জামায়াতের সভাপতি সেক্রেটারিসহ বেশির ভাগ নেতাকর্মীদের নামে হয়রানি মূলক মামলা দিয়ে পুলিশ সকলকে কারাগারে পাঠিয়েছে। এছাড়া জেলার ৭৮টি ইউনিয়ন ও দুটি পৌরসভার বেশির ভাগ জামায়াতের নেতাকর্মীদের দৌড়ের উপর রেখেছে। যারা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে তাদেরকে গ্রেফতার করার অভিযোগ উঠছে। পুলিশ জেলাব্যাপী সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করছে। গত এক সম্পাহে দুই শতাধিক জামায়াতের নেতাকর্মী আটক করেছে পুলিশ। শুক্রবার রাত থেকে শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ৭১ জনকে আটক করেছে পুলিশ। এর মধ্যে শুধু জামায়াত শিবির সন্দেহে ৫২জন। গ্রেফতার হওয়া কয়েক জন জানান তারা কোন রাজনৈতিক দলের কর্মী নয়। জামায়াত শিবির সন্দেহে তাদেরকে আটক করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে একজন পৌর কাউন্সিলর ও একজন জেএমবি সদস্য রয়েছেন বলে পুলিশের দাবি।
শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে শনিবার বিকাল পর্যন্ত জেলার সাতটি উপজেলায় এই অভিযান পরিচালিত হয় ।
জেলা পুলিশের তথ্য বিষয়ক কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (সাব ইন্সপেকটর) কামাল হোসেন জানান গ্রেফতারকৃতরা নাশকতার লক্ষ্যে বিভিন্ন স্থানে জড়ো হয়েছিল । এসময় তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে । তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে একাধিক নাশকতার মামলাও রয়েছে । নতুন করে তাদের বিরুদ্ধে আরও একটি করে মামলা হবে বলে জানান তিনি ।
কামাল হোসেন আরও জানান গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে সাতক্ষীরা সদর থানায় ১৪ জন , কালীগঞ্জ ও কলারোয়ায় ১৩ জন, পাটকেলঘাটা ও আশাশুনিতে ৮ জন, তালায় ৬ জন, শ্যামনগরে ৭ এবং দেবহাটা থানায় ৫ জন রয়েছেন।
উল্লাপাড়া (সিরাজগঞ্জ) : উল্লাপাড়া থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে গতকাল শনিবার দুই শিবির ও দুই বিএনপিকর্মীকে গ্রেফতার করেছে। শিবিরকর্মীরা হলেন- উপজেলার ঝিকিড়া গ্রামের সুরুত আলীর ছেলে এরশাদ আলী ও রাঘববাড়িয়া গ্রামের আতাহার আলীর ছেলে আবু তালেব এবং বিএনপিকর্মীরা হলেন- নলসোন্দা গ্রামের ছানোয়ার হোসেনের ছেলে ফরহাদ এবং চর কালীগঞ্জ গ্রামের সাখাওয়াত হোসেনের ছেলে আব্দুল্লাহ আল মামুন।
উল্লাপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দেওয়ান কউশিক আহমেদ জানান, এদের বিরুদ্ধে থানায় নাশকতা সৃষ্টির মামলা রয়েছে।
সীতাকুণ্ড (চট্টগ্রাম) : সীতাকুণ্ডে রাতভর বিশেষ অভিযানে জামায়াত-শিবির ও বিএনপির ৫ নেতাসহ ওয়ারেন্টভুক্ত ৫৫ জন আসামীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এসময় তাদের কাছ থেকে ২ টি বিদেশী পিস্তল ও ৫ রাউন্ড গুলী উদ্ধার করা হয়েছে বলে দাবি করা হয়। শুক্রবার রাতভর উপজেলার পৌরসভা ও ৯টি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন,উপজেলার দোয়াজীপাড়া এলাকার মৃত আফলাতুনের পুত্র জামায়াত নেতা মিজানুর রহমান (৩০), পশ্চিম মুরাদপুর এলাকার আবুল মুনছুরের পুত্র জামায়াত নেতা আবু জাফর (৩০),উপজেলার পূর্ব লালানগর এলাকার জাহাঙ্গীর আলমের পুত্র শিবির নেতা জাহেদুল ইসলাম হৃদয় (২৮), মাদামবিবির হাট এলাকার নূর হোসেনের পুত্র শিবির নেতা আকবর হোসেন (২৫) ও ভাটিয়ারী তুলাতলি এলাকার শফিউর রহমানের পুত্র বিএনপি নেতা হাবিবুর রহমান (৩০)। উল্লেখিত ৫ নেতার বিরুদ্ধে নাশকতা ও ভাংচুরের একাধিক মামলা রয়েছে বলে জানান হয়।
রাজশাহী : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের তিনকর্মীকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। গতকাল শনিবার দুপুরে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়। এর আগে শুক্রবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে বিনোদপুর এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী আতিকুর রহমান, একই বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সোহাগ হোসেন ও নৃবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী রাকিবুল রানা। নগরীর মতিহার থানার পুলিশ জানায়, বিনোদপুর এলাকার বিভিন্ন ছাত্রাবাসে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়েছে। পরে তাদের নামে নাশকতার মামলা দিয়ে আদালতে পাঠানো হয়।
প্রিয় বিরোধী নেতৃবৃন্দ, আপনাদের প্রতি এখনও জনআস্থা আছে। হারাবার আগেই স্বেচ্ছায় কারাবরণ কর্মসূচি দিন। আর কতকাল পালিয়ে থাকতে হবে এভাবে। কোন আন্দোলন নেই তারপরও কেন এই জুলুম-নির্যাতন?
সামনে সালাউদ্দিন কাদের এবং মুজাহিদের রায়, পৌর নির্বাচন এবং জানুয়ারীতে আন্দোলন ঠেকাতে এই গণগ্রেফতার। জনগণ সেটা বুঝে।
বিরোধী নেতা-কর্মীরা কেমন মনে আর না পেরে পুলিশকে নিজেই ধরা দিচ্ছেন? একটু সতর্ক হলেই গ্রেফতার এড়ানো সম্ভব। সেভ ফার্স্ট।
বিষয়: রাজনীতি
১৪৮২ বার পঠিত, ১১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ধন্যবাদ স্যার..
মন্তব্য করতে লগইন করুন