জাতীয় সংসদ পুতুল নাচের নাট্যশালায় পরিণত হয়েছে --টিআইবি (সংগ্রাম)
লিখেছেন লিখেছেন বার্তা কেন্দ্র ২৬ অক্টোবর, ২০১৫, ০৬:২০:৩৭ সন্ধ্যা
জাতীয় সংসদ পুতুল নাচের নাট্যশালায় পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সংস্থাটির বিশ্লেষণে বর্তমান সংসদ ক্ষমতাসীন দলের একচ্ছত্র ভুবনে পরিণত হয়েছে। টিআইবি’র বিশ্লেষণে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন কার্যতই একটি বিতর্কিত নির্বাচন। কেননা, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াতে সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন না হলে সেটাকে সুষ্ঠু নির্বাচন বলা যাবে না। সরকার যখন বিতর্কের উর্ধ্বে উঠে সব দলের অংশ গ্রহণে নির্বাচন দিতে পারবে তখনি সেটাকে সুষ্ঠু নির্বাচন বলা যাবে বলেও মন্তব্য করেছে টিআইবি। আর সবার অংশ গ্রহণে নতুন আরেকটি নির্বাচনই সংসদকে কার্যকর করতে পারে বলেও মনে করছে তারা।
এছাড়া সংসদের সার্বিক কার্যক্রমে সবাই হতাশ বলেও উল্লেখ করেছে টিআইবি। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠনের পর থেকে প্রশ্নবিদ্ধ প্রধান বিরোধীদলের জোরালো ভূমিকার ঘাটতিসহ নানা কারণে এই সংসদ প্রত্যাশিত পর্যায়ে কার্যকর হয়নি বলেও জানায় সংস্থাটি। গতকাল রোববার দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডির মাইডাস সেন্টারে ‘পার্লামেন্টওয়াচ’ বিষয়ক প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।
বর্তমান সংসদকে ‘পুতুল নাচের নাট্যশালা’ হিসেবে আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, ‘সার্বিকভাবে সংসদের কার্যক্রমে আমরা হতাশ। সংসদে সরকারি ও বিরোধী দলের উপস্থিতি গ্রহণযোগ্য নয়। সংসদীয় আচরণ থেকে ব্যাপক বিচ্যুতি হয়েছে। একটি দল বা জোট যাদের সংসদে উপস্থিতি নেই, তাদের নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়েছে। প্রতিপক্ষের সমালোচনা আগের সংসদের চেয়ে ১২ গুণ বেড়েছে।’
প্রতিবেদনের উদ্বৃতি দিয়ে ড. ইখতেখার বলেন, ‘সংসদীয় আচরণ সার্বিকভাবে হতাশাব্যঞ্জক। দশম সংসদে আগের তুলনায় সরকার দলীয়দের মধ্যকার পারস্পরিক প্রশংসার’ পরিমাণ বেড়েছে ১২গুণ। সেই সঙ্গে রাজনৈতিক এক জোটের সমালোচনা বেড়েছে ৯ গুণ। এসব জায়গায় স্পিকারের দায়িত্বেও ঘাটতি দেখা গেছে। এছাড়া বিধি অনুসারে সংসদীয় কমিটিগুলোর মাসে একটি করে বৈঠক করার কথা থাকলেও গত এক বছরে সংসদীয় কমিটির বৈঠক হয়েছে মাত্র চারটি।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি সংসদীয় বিরোধী দলের সমালোচনা করে বলেন, ‘আমাদের সংসদের বর্তমান ‘কথিত বিরোধী দল’ বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করছে না। তাদের কথিত বিরোধী দল বলছি এ কারণে যে, তাদের দায়িত্ব ও অবস্থান এখনো স্পষ্ট নয়।’ অপর এক প্রশ্নের জবাবে টিআইবি’র নির্বাহী বলেন, ‘দশম সংসদ নির্বাচন আসলেই বিতর্কিত। একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সব দলের অংশগ্রহণ ছাড়া কার্যত নির্বাচন হয় না। ফলে ওই নির্বাচনকে বিতর্কিতই বলতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘যখন সরকার বিতর্কের ঊর্ধ্বে নির্বাচন দিতে পারবে তখন আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন বলবো।’
সাংবাদিক সম্মেলনে ড. ইফতেখার বলেন, ‘মূলত ক্ষমতাসীন দলের একচ্ছত্র ভুবন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সংসদ। এ ছাড়া সংসদ বিরোধীদলের সমালোচনা ও ক্ষমতাসীন দলের প্রশংসার স্থান হিসেবে পরিণত হয়েছে। নিয়ম রক্ষার্থে এক ধরনের সংসদ চলছে বলেও জানান তিনি।
তিনি বলেন, ‘সংসদীয় কমিটির মূল দায়িত্ব পালনের প্রতি অনীহা ও সংসদ সদস্যদের অবহেলা বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয়। নবম সংসদে বিরোধী দলের উপস্থিতির হার ৪ শতাংশ। এবার বিরোধীদলের উপস্থিতি ৫৩ শতাংশ। সেদিক থেকে সংসদে বিরোধী দলের অংশগ্রহণ বেড়েছে। তবে বিরোধীদল কতটুকু বিরোধী তা নিয়ে যথেষ্ট প্রশ্ন রয়েছে।’ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি একটি ‘বিতর্কিত’ নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠনের পর থেকে প্রশ্নবিদ্ধ ‘প্রধান বিরোধীদল’ এর জোরালো ভূমিকার ঘাটতিসহ নানা কারণে সংসদ প্রত্যাশিত পর্যায়ে কার্যকর হয়নি বলেও সাংবাদিক সম্মেলনে বলা হয়।
টিআইবি’র গবেষণা প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, দশম সংসদের দ্বিতীয় থেকে ষষ্ঠ অধিবেশন পর্যন্ত সময়ে আইন পাসের জন্য বিল প্রতি ব্যয়িত গড় সময় ও প্রতি কার্যদিবসের সদস্যদের গড় উপস্থিতির হার তুলনামূলকভাবে বৃদ্ধি ও গড় কোরাম সংকট হ্রাস পাওয়ার মতো কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন হয়েছে।
কিন্তু ‘বিতর্কিত’ নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠনের পর থেকে প্রশ্নবিদ্ধ প্রধান বিরোধীদলের প্রত্যাশিত জোরালো ভূমিকার ঘাটতি; সংসদের বাইরের রাজনৈতিক জোট নিয়ে অপ্রাসঙ্গিক সমালোচনা ও অশালীন ভাষার প্রাধান্য; অসংসদীয় আচরণ ও ভাষার ব্যবহার বন্ধে স্পিকারের শক্তিশালী ভূমিকার অনুপস্থিতি; বিধান থাকলেও আন্তর্জাতিক চুক্তি বিষয়ক আলোচনা অনুষ্ঠিত না হওয়া; আইন প্রণয়ন; প্রশ্নোত্তর ও জনগুরুত্বপূর্ণ নোটিশের আলোচনায় সদস্যদের কম অংশগ্রহণ; কমিটির সদস্যদের ব্যবসায়িক সংশ্লিষ্টতাসহ স্বার্থের দ্বন্দ্ব; সংসদীয় কার্যক্রমে তথ্যের উন্মুক্ততা ও অভিগম্যতার ঘাটতি ইত্যাদি কারণে সংসদ প্রত্যাশিত পর্যায়ে কার্যকর হয়নি।
পর্যবেক্ষণাধীন অধিবেশনগুলোতে সংসদীয় আলোচনার ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো সরকারি দল ও ‘প্রধান বিরোধীদল’ সম্মিলিত সুরে সংসদের বাইরে রাজনৈতিক দলের সমালোচনায় মুখর হয়েছেন। সরকারের মন্ত্রিসভার অংশবিশেষ এই কথিত ‘প্রধান বিরোধীদলের’ সরকারের লেজুড়বৃত্তি ছিলো পরিস্কার। তদুপরি সরকার দলের পক্ষ থেকেও এই লেজুড়বৃত্তিকে বিভিন্নভাবে দশম সংসদের ইতিবাচক অর্জন হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা অব্যাহত ছিলো।
প্রতিবদনটি ‘পার্লামেন্টওয়াচ’ ধারাবাহিকের ১২তম ও দশম জাতীয় সংসদের ওপর দ্বিতীয় প্রতিবেদন। ২০১৪ সালের জুন মাস থেকে ২০১৫ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত সময়ে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।
=======
বিষয়: রাজনীতি
৮৭৯ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
যথার্থ মুল্যায়ণ!
তবে,পুতুল নাচ বিনোদনের খোরাক হলেও এই সংসদ সাধারণের জীবন কে নরকে পৌছে দিচ্ছে!!
মন্তব্য করতে লগইন করুন