শুভ জন্মদিন : মা বেগম খালেদা জিয়া (মাহবুবা জেবিন-নয়াদিগন্ত থেকে..)
লিখেছেন লিখেছেন বার্তা কেন্দ্র ১৫ আগস্ট, ২০১৫, ০৫:১৬:০৭ বিকাল
আমার আম্মার নাম খালেদা খাতুন। বিদেশে থাকলেও সবসময় মনটা পড়ে থাকে দেশে থাকা মায়ের কাছে। আর মায়ের নামে নাম হওয়ায় বেগম খালেদা জিয়ার নিউজগুলো সবসময় আগ্রহ নিয়ে শুনি ও পড়ি। আজ বেগম খালেদা জিয়ার জন্মদিন।
১৯৪৬ সালের ১৫ আগস্ট দিনাজপুরের এক সম্ভ্রান্ত ও অভিজাত মুসলিম পরিবারে, বাবা ইস্কান্দার মজুমদার এবং মা বেগম তাইয়্যেবা মজুমদারের কোল আলোকিত করে জন্মগ্রহণ করেন এক কন্যা সন্তান। বিশিষ্ট ব্যবসায়ী বাবা মেয়ের নাম রাখেন খালেদা। পুতুলের মতো ফুটফুটে সুন্দর বলে আদর করে তাকে ডাকা হতো পুতুল নামে।
আদি বাড়ি ফেনী জেলার ফুলগাজী উপজেলার শ্রীপুরে। ব্যবসায়ী বাবার কর্মস্থল দিনাজপুর শহরে তিন বোন আর দুই ভাইয়ের পরিবারে বেড়ে উঠা পুতুল পরবর্তীতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হন। বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী এবং দ্বিতীয় মুসলিম নারী হিসেবে এই গৌরবের অধিকারিণী।
মিশনারি স্কুলে পড়াশুনার হাতেখড়ি হয় তার। এরপর দিনাজপুর গার্লস হাইস্কুল থেকে সাফল্যের সাথে মেট্রিক পাশ করেন ১৯৬০ সালে। এই সালেই বিয়ে হয় তৎকালীন তরুণ ক্যাপ্টেন জিয়াউর রহমানের সাথে। ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত দিনাজপুরের সুরেন্দ্রনাথ কলেজে পড়াশুনা চালিয়ে যান। এরপর তিনি স্বামীর কর্মস্থল পশ্চিম পাকিস্তানে গমন করেন।
শৈশবে শান্ত স্বভাবের বেগম খালেদা জিয়া পরিবারে সবার খুবই আদরের ছিলেন। পড়াশুনার পাশাপাশি কৈশোরে খুব ভালো ক্রীড়াবিদ ছিলেন তিনি। এথলেটিক্স সহ অন্যান্য ক্রীড়া নৈপুণ্যের জন্য অনেক কাপ, শিল্ড পেয়েছেন। বাংলাদেশের ক্রীড়া ক্ষেত্রে এগিয়ে যাবার পিছনে বেগম খালেদা জিয়ার অসামান্য অবদান রয়েছে। তিনি সন্তানদেরকেও খেলাধুলা করতে উৎসাহ দিতেন। পরবর্তীতে নাতনিদেরকেও খেলাধুলা করার প্রতি অনুপ্রানিত করেছেন। কারণ খেলাধুলা শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে সহায়তা করে। তারই একান্ত আগ্রহ এবং ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় গড়ে উঠে বাংলাদেশের প্রথম ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিকেএপি। এখান থেকেই তৈরি হয়েছে বিশ্বসেরা সাকিব, তামিম, মুশফিকদের মতো আন্তর্জাতিক মানের খেলোয়াড়। মেয়েদেরকে ক্রীড়া ক্ষেত্রে এগিয়ে নেবার পিছনেও রয়েছে তার অনেক অবদান।
শিশুদেরকেও খেলাধুলায় খুবই উৎসাহ দেন বেগম জিয়া। শিশুদের সাথে তাদের স্বভাব সুলভভাবেই মেশেন তিনি। ছড়া কেটে, তাদের কাছে গান শুনতে চেয়ে, শিশুদের সাথে খেলাধুলা করে তাদের সাথে সময় কাটাতে পছন্দ করেন তিনি। নাতনীদের সাথে অবসর সময় কাটাতে খুব পছন্দ করতেন বেগম খালেদা জিয়া।
শিক্ষানুরাগী বেগম খালেদা জিয়া ১৯৯৩ সালের ১ জুলাই থেকে বাংলাদেশে প্রাথমিক শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করেন। দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে শিক্ষা গ্রহনে আগ্রহী করে তুলতে তিনি ‘শিক্ষার বিনিময়ে খাদ্য’ কর্মসূচি চালু করেন। পল্লী অঞ্চলে মেয়েদের মাধ্যমিক শিক্ষা অবৈতনিক করেন এবং দেশব্যপী মাধ্যমিক পর্যায়ে ছাত্রীদের জন্য উপবৃত্তি কর্মসূচি চালু করেন বেগম খালেদা জিয়া।
ধর্মপরায়ণ বেগম খালেদা জিয়া ধর্মীয় সব আচার আচরণ মেনে চলেন কঠোরভাবে। প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়ের পাশাপাশি রমজানে নিয়মিত খতম তারাবি পরেন। প্রতিবছর ওমরাহ্ পালন করেন। সবাইকে উৎসাহ দেন নামাজ পড়তে এবং রোযা রাখতে। প্রতি রাতে কোরআন তেলাওয়াত করেন। তিনি মনে করেন প্রকৃত ধর্মপ্রাণ ব্যক্তি কখনো সমাজের প্রতি খারাপ হতে পারবে না।
পরিচ্ছন্নতা ও নিয়মানুবর্তিতাকে খুব গুরুত্ব দেন বেগম খালেদা জিয়া। পরিবার কিংবা প্রতিষ্ঠান সবক্ষেত্রেই তিনি অগ্রাধিকার দেন ডিসিপ্লিনকে। আদব কায়দা খুব পছন্দ করেন। তার পরিবার থেকেই তিনি সবাইকে এই শিক্ষা দেন। পারিবারিকভাবে স্বল্পভাষী, হাস্যজ্জল বেগম জিয়া পরিবারের প্রাণ। ব্যক্তিগতভাবে উদার খোলামেলা মনের অধিকারী হলেও খুব সাধারণ জীবন যাপন পছন্দ করেন।
পোশাক আশাকে নিজে যেমন রুচিশীল, তেমনিভাবে ছেলেদেরকেও সাদাসিদা কাপড় চোপড় পরাতেন বেগম খালেদা জিয়া। সাধারণ মানুষের মতো জীবন যাপনে সন্তানদের উৎসাহ দেন তিনি।
খুব একটা রসনা বিলাসী নন তিনি। ছেলেদেরকেও শিখিয়েছেন এক তরকারি দিয়ে ভাত খেয়ে নিতে। পছন্দ করেন সাদাসিদা দেশি খাবার। খাবারে বাহুল্য পছন্দ করেন না বেগম খালেদা জিয়া। তিনি দেশি ফল পছন্দ করেন। পেপে, লিচু, কামরাঙ্গা, বরই, জাম এসব খেতে খুব পছন্দ করেন বেগম খালেদা জিয়া।
ছোটবেলা থেকেই গাছপালা এবং পশুপাখির প্রতি রয়েছে বেগম জিয়ার গভীর মমত্ববোধ। অসম্ভব পছন্দ করেন বাগান করতে আর নিজের হাতে ফুল সাজাতে। প্রিয় ফুল গোলাপ আর অর্কিড। তিনি বাসায় পালন করতেন গাভী। ছিল অত্যন্ত প্রিয় কুকুর ‘জাম্বু’ আর ছিল একটি পোষা ময়নাপাখি। তিনি নিজে এদের দেখাশুনা করতেন যত্ন নিতেন।
কাজের প্রতি মমত্ববোধ তার বয়সকেও হার মানিয়েছে। অক্লান্ত পরিশ্রমী বেগম খালেদা জিয়া এখনো নিরলসভাবে দেশের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। কাজের জন্য প্রয়োজনে রাতের ঘুম কমিয়ে দিয়ে কাজের সময়কে বাড়িয়ে নেন তিনি। দেশপ্রেম আর কর্মস্পৃহা তার কাছে সবকিছুর উপরে। অনেক রাত পর্যন্ত তিনি বই পরেন, ফাইল দেখেন, পত্রিকা পড়েন। আর পছন্দ করেন নিউজ দেখতে। জাতীয় বা আন্তর্জাতিক সব খবর জানতে পছন্দ করেন তিনি।
পরনিন্দা বা অন্যের সমালোচনা অপছন্দ করেন। সবার সমস্যার কথা মন দিয়ে শোনেন এবং তার সমাধান করে দেন। কিন্তু কারো ব্যক্তিগত ব্যাপারে কখনো হস্তক্ষেপ করেন না। মমতাময়ী মা হিসাবে ছেলেদের প্রতি যেমন তার রয়েছে অগাধ ভালবাসা ঠিক তেমনি ছেলের বউদেরকেও নিজের মেয়ের মতো স্নেহ করেন। তিনি অত্যন্ত উদারমনা শাশুড়ি। প্রত্যেকের আলাদা আলাদা ব্যক্তিসত্তাকে প্রাধান্য দেন তিনি। অন্যের পছন্দের প্রতি সম্মান দেখান মূল্যায়ন করেন।
ছেলেদের কাছে মা হলেন বন্ধুর মতো। ছোটবেলায় বাবা জিয়াউর রহমানকে হারানোর ফলে মা বেগম খালেদা জিয়া ছেলেদের কাছে একাধারে বাবা এবং মায়ের ভুমিকায় অবতীর্ণ হন। সন্তানদেরকে মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন আদর্শ মানুষ হিসাবে গড়ে তোলার শিক্ষা দিয়েছেন। পিতার আদর্শকে ছেলেদের মাঝে ঢুকিয়ে দিতে চেষ্টা করেছেন। সর্বস্তরের মানুষের সাথে মেশা, ধর্ম, বর্ণ, শ্রেনী, পেশা সব মানুষকে একদৃষ্টিতে দেখা, মানুষকে আপন করে নেয়ার শিক্ষা দুই ছেলে তারেক রহমান ও আরাফাত রহমানকে দিয়েছেন। সময়ানুবর্তিতা, বড়দের সম্মান করা, দুঃস্থদের সহায়তা করা, কারো বিপদে এগিয়ে যাওয়ার শিক্ষা তিনি দিয়েছেন। দুই সন্তান ছিল তার দুচোখের মণি। তার পরও তিনি দেশকে সবচেয়ে বেশি ভালবেসেছেন। ছেলেদের শিখিয়েছেন দেশপ্রেম।
‘একজন মাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল- সন্তান নাকি দেশ? তিনি উত্তরে বলেছিলেন- দেশ। এরপর অমানুষিক নির্যাতন নেমে এলো তার দুই সন্তানের উপর। এক সন্তানের পায়ের হাড় ভেঙে দেয়া হলো। আরেক সন্তানকে ইলেকট্রিক শক দিয়ে ব্রেন ড্যামেজ করে দেয়া হলো। এরপর সেই মাকে আবার জিজ্ঞেস করা হলো- আপনার কাছে সন্তান বড় নাকি দেশ? উনি কেঁদেছেন। চোখের পানি ফেলতে ফেলতেই বলেছেন- দেশ। এই দেশ আমার ‘মা’ এই দেশ আমার স্বামী শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের স্বপ্ন। আমি আমার মায়ের কাছেই থাকব আমার স্বামীর স্বপ্নের দেশেই থাকবো।’
বেগম খালেদা জিয়া প্রচণ্ড রকম সাহসী এবং ধৈর্যশীল। রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে তার এই সাহসিকতার প্রমাণ মিলে। স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে পুলিশের গুলির সামনে তিনি হার মানেননি। এমনকি শেখ হাসিনা সরকারের গুণ্ডা বাহিনীর স্বশস্ত্র আক্রমণকে পাত্তাই দেননি বেগম জিয়া। নিজের কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছেন। কর্মজীবন, পারিবারিক জীবন বা রাজনৈতিক ক্ষেত্রেই হোক হুটহাট কখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেন না তিনি। বেগম খালেদা জিয়া সবসময় ধিরস্থির ভাবে চিন্তাভাবনা করেই সব ধরনের কর্ম পরিকল্পনা করে থাকেন।
বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ সংগ্রামে ত্যাগ এবং আপসহীন ভুমিকার জন্য দেশবাসীর কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রীতে পরিনত হন তিনি। প্রধানমন্ত্রী হিসাবে এবং বিরোধী দলীয় নেত্রী হিসাবে সুদীর্ঘ সময় তিনি গণতন্ত্র রক্ষার জন্য সংগ্রাম করেছেন। বাংলাদেশের গণতন্ত্র রক্ষায় তার এই সংগ্রামী ভূমিকার জন্য বেগম খালেদা জিয়াকে ২০১১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্সি স্টেট সিনেটর ‘ফাইটার ফর ডেমোক্রেসি’ খেতাবে ভূষিত করেন।
আপোষহীনটা ও কঠোর মনোবলের কারণে সহস্ত্র ষড়যন্ত্র এবং ভয়ভীতি তাকে দেশ ত্যাগে বাধ্য করতে পারেনি। তিনি বাংলাদেশের আপামর জনগনের আশা আকাঙ্খার মূর্ত প্রতীক। বাংলাদেশের মাদার তেরেসা বেগম খালেদা জিয়া রয়েছেন ১৮ কোটি মানুষের হৃদয়ের মণিকোঠায়। শতবর্ষ বেঁচে থাকুন মা আপনার জন্মদিনে এই শুভকামনা।
======
বিষয়: বিবিধ
২০৬৬ বার পঠিত, ২৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
বাংলাদেশের বহু দুর্দিনে একজন মহিলা হয়ে তিনি কত সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন - এ' জাতি একদিন জানবেই।
১৯৯৭ এ আইসিসি ট্রফি জয় - কার আমলে ?
১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপে পাকিস্তানকে হারানো - কার আমলে ?
২০০৭-২০১৫ পর্যন্ত ক্রিকেটে যে সাফল্য সেগুলো কার আমলে ?
২০০৩ এর বিশ্বকাপে ভরাডুবি - কার আমলে ?
১৯৯০ এ বিকেএসপি থেকে পাঠানো অনুর্ধ্ব ১৪ দল ইউরোপে গিয়ে ডানা ও গোথিয়া কাপ নিয়ে এসেছিল - ব্রাজিল ও রাশিয়াকে হারিয়ে । তখন এরশাদ রাজ করতেন । খালেদা জিয়া সে সময়ে রাজপথে ব্যস্ত ছিলেন ।
খালেদার চেয়ে হাসিনা বেশী ক্রীড়া মনঃষ্ক । তার তিন ভাইয়ের নামে ফুটবল ক্লাব আছে । বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের খেলা থাকলে উনি জায় নামাজে বসে থাকেন , দলের ভাল ফলাফলের জন্য দোয়া করতে থাকেন ।
এই ছবিতে কেউ একজন নেই বলে মনে হচ্ছে
উনি একেকবার টিভির সামনে এলে একেক রকম শাড়ি পড়েন । তার শাড়ি কোনটাই বাংলাদেশে পাওয়া যায় না । পাকিস্তানী ''কারচুপি শাড়ি '' উনার বিশেষ পছন্দের।
উনি ভ্রু প্লাক করেন এবং চুলে পাম্প লাগান । ডজন খানেক বিউটিশিয়ান না থাকলে ৭০-৭৫ বছর বয়সে চেহারায় এরকম গ্লেস ধরে রাখা সম্ভব না ।
খালেদা জিয়ার আপোষহীনতা এখন কাজে দেবে না , সে এখন হিস্ট্রি , তার দল ও জোটও ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন