আযমী স্যারের লেখায় আমি বিতকের কিছু দিকলাম না এটা গোলা পানিত মাছ শিকার

লিখেছেন লিখেছেন বিদ্রোহী রাজা জাবির ৩১ মে, ২০১৫, ০৫:৪৫:১০ বিকাল



গোলাম আযমের ছেলে আযমী নতুন বিতর্কে

মুকতিযুদ্ধে বাংলাদেশি শহীদদের পর এবার ভারতীয় শহীদদের সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তুলে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে তোপের মুখে পড়েছেন আব্দুল্লাহিল আমান আযমী, যার বাবা ছিলেন একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের হোতা জামায়াতগুরু গোলাম আযম।

মুক্তিযুদ্ধে চার হাজার ভারতীয় সেনা শহীদের তথ্য দিয়ে সুশীল সমাজের সমালোচনা করে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও সাংবাদিক অঞ্জন রায় গত ২৮ মে ফেইসবুকে একটি পোস্ট দেন।

এর সূত্র ধরে পরদিন তাকে ‘দালাল’ আখ্যায়িত করে আরেকটি পোস্ট দেন গোলাম আযমের ছেলে আযমী। এখানেও মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের তথ্যকে ‘কাল্পনিক’ বলেন সেনাবাহিনী থেকে বরখাস্ত হওয়া এই কর্মকর্তা।

জামায়াত ও সমমনারা এর আগেও বিভিন্ন সময়ে শহীদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক তোলার চেষ্টা করেছে। সম্প্রতি এ আলোচনার সূত্র ধরে কথিত সুশীল সমাজের একটি অংশ ট্রাইব্যুনালে অবমাননার অভিযোগের মুখে পড়েছে।

অঞ্জন রায় তার স্ট্যাটাসে বলেছিলেন, “আমাদের মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রায় ৪ হাজার সদস্য তাদের জীবন দিয়েছেন, মারাত্মক আহত হয়েছেন প্রায় ১০ হাজার সেনা সদস্য। আমাদের সুশীলজনেরা ভারত ইস্যুতে বিভিন্ন কথা বলেন- ভারতবিরোধী কার্ড খেলার বুদ্ধি দেন।

“কিন্তু কখনো তারা বলেন না- এই ৪ হাজার জীবন দেয়া ভারতীয় সেনাদের জন্য অন্তত একটা স্মারক স্তম্ভ হলেও নির্মাণ করার কথা। ভুলে গেলে চলবে না- প্রতিবেশী দেশের ১ কোটি শরণার্থীকে আশ্রয় দেয়া আর ৪ হাজার সেনা সদস্যেরর জীবন দানের বিষয়টি কিন্তু বিশ্ব ইতিহাসে খুব বেশি নাই।”

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ভুলে গিয়ে ‘ভারতবিরোধী কার্ডের’ ব্যবহার ‘রাজনৈতিক অসততা’ বলে মন্তব্য করেন অঞ্জন।

এর সমালোচনায় আযমী যে পোস্ট দিয়েছেন তার শিরোনাম ‘অদ্ভুত এক দালাল!!’

সেখানে তিনি বলেন, “১৯৭১ এর ৩ থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত ভারতীয় বাহিনী যে যুদ্ধ করেছে এই (ইস্টার্ন) ফ্রন্টে, তাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনী তেমন কোনো প্রতিরোধই করেনি, মাত্র ২/১টা ব্যাটল ছাড়া। তাহলে, এই ৪০০০ এর তত্ত্ব/তথ্য তিনি কোথায় পেলেন?

“১৯৭১ এর সেই যুদ্ধ নিয়ে পড়াশুনা করেও কোথাও তো এই সংখ্যা কোনদিন পাইনি! রায় বাবু কি 'তিন মিলিয়ন' এর মত কোন কাল্পনিক নতুন সংখ্যা নতুন প্রজন্মকে গিলাতে চাইছেন?

২৯ মে তার ওই পোস্টের পর তীব্র প্রতিক্রিয়া হয় ফেইসবুকে। একজন দণ্ডিত যুদ্ধাপরাধীর ছেলের এ ধরনের বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করেন অনেকেই।

অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট মাহমুদুল হক মুন্সী ফেইসবুকে লিখেছেন, “স্বাধীনতার ৪৩ বছর পরও আমাদের এমনই দুর্ভাগ্য, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস শেখাচ্ছে রাজাকারের বাচ্চা!”

তিনি লিখেছেন, “গোলাম আযমের পোলা আবদুল্লাহিল আমান আযমী বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনী ও তার বাপের তৈরি রাজাকার বাহিনীর হাতে মৃত ভারতীয় সেনাদের সংখ্যার ব্যাপারে সন্দেহ প্রকাশ করেছে।”

অঞ্জন রায় অবশ্য তার ফিরতি স্ট্যাটাসে গোলাম আযমের ছেলের ‘গালিকে’ ভিন্নভাবে দেখেছেন।

শনিবার ফেইসবুকে তিনি লিখেছেন, “যখন বঙ্গবন্ধুকে খুন করা হলো- তার পরেই গ্রেপ্তার হয়েছিলেন বাবা (সিপিবির প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য কমরেড প্রসাদ রায়)। কয়েক বছর আমরা জানতাম না কোথায় তিনি? বেঁচে আছেন কি না? তারপরেও পরিবারের কেউ মাথা নত করেননি। ভিক্টর যারা, কর্নেল তাহের, বেঞ্জামিন মালোয়েস, খালেদ মোশারফের ইতিহাস আমাকে সাহস দেয়।

“সেই আমাকে নিয়ে খামোখা লিখে, পোস্ট দিয়ে কি লাভ? আমি যা বিশ্বাস করি- সেটা বলি। আর আমি জানি সহসা অপমৃত্যুর সাথে দেখা হওয়াটা আমার জন্য খুবই স্বাভাবিক। তবে একটাই কথা- আমি ভদ্রলোক না, স্টিট ফাইটার। শেষ পর্যন্ত দাঁত আর নখ দিয়ে লড়াইটা জানি।”

আযমপুত্রের উদ্দেশে অঞ্জন লিখেছেন, “আমি মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসাবে গর্বিত, কারণ আমাকে নিয়ে যিনি পোস্টটি দিয়েছেন তার পিতার নাম গোলাম আযম। আজ আবার বুঝলাম- আমার ট্র্যাকটা ঠিকই আছে।”

মাহমুদুল হক মুন্সী ফেইসবুকে তার লেখায় মুক্তিযুদ্ধে প্রাণ দেওয়া ভারতীয় সৈন্যদের সংখ্যার বিষয়ে একটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন।

তিনি বলেন, অফিসিয়াল হিসাবে ডিসেম্বরের ১৩ দিনে ভারতীয় বাহিনীর চার হাজারের মতো সেনা মারা গেছে। ৩০ লাখ শহীদের সবার নাম-ঠিকানা নাই, কিন্তু ভারতীয় সৈন্যদের নাম ঠিকানা তাদের সরকারের কাছে ‘ঠিকই আছে’।

“যেটা কখনো মুখ ফুটে বলা যায় না, সেটা হলো ভারত অফিসিয়ালি শুধু এই ১৩ দিন আমাদের মুক্তিবাহিনীর পক্ষে যুদ্ধ করেছে, তার আগের নয় মাসে গোপনে সাহায্য সহযোগিতা করতে গিয়ে ভারতীয় সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী ও 'র' এর আরও ১৪ হাজারের মতো মারা গেছেন।

“এই চার হাজার জনের স্বীকৃতি আছে, বাকিদের যে প্রকাশ্য কোন স্বীকৃতিই নাই।”

আযমীর সমালোচনায় অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল আবদুর রশিদ লিখেছেন, “ইতিহাসের অজ্ঞতা। সামরিক জ্ঞানের নামে মিথ্যাচার। পাকিস্তানি বাহিনীর পরাজয়ের গ্লানি ঢাকতে মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদান স্বীকার করার কুণ্ঠা বোধ থেকে ইতিহাস বিকৃতির অপচেষ্টা।”

কাজী অংকন লিখেছেন, “একেতো উনার সেনাপ্রধান হওয়ার খায়েশ মেটে নাই, তার উপর ঘাতক বাপটাও গেছে মরে, .... সব দোষ ভারতের!!!!”

মাহমুদুল হক মুন্সীর পোস্টে বলা হয়েছে, “বাংলাদেশে তাদের (ভারতীয় বাহিনীর শহীদ) স্মরণে একটি স্মৃতিসৌধ পর্যন্ত নেই, এইটা বলা কি ভারতের দালালি করা? মুক্তিযোদ্ধার সন্তান অঞ্জন রায়ের উপর তাই রাজাকারের বাচ্চা আযমী চেতেছে।

“তাদের ভারতের উপর রাগ, ভারত কেন ১ কোটি শরণার্থীদের স্থান দিলো? তাদের ভারতের উপর রাগ, কেন ভারত জামায়াতের ইচ্ছেমতো মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষ হত্যা করলো না?”

বিষয়: বিবিধ

১০২৯ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

323697
৩১ মে ২০১৫ রাত ০৮:০৫
কুয়েত থেকে লিখেছেন : আমাদের স্বাধীনতা গৌরবের। কিন্তু ভারত আমাদের মুক্তিযোদ্ধের সুফল ভোগ করতেই দেয়নি। আমাদের আজ ভোটের অধিকার নেই,ফারাক্কার কারনে আমাদের দেশ মরুভূমিতে পরিনত হচ্ছে,তাও স্বাধীনতার পরেই হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধার সর্বাধিনায়ক কি অপরাধ করেছিল? তাঁকে ঢাকায় আসতেই দেওয়া হয়নি। মুসলিমলীগ যারা করেছে তারা আজ কোথায়? আমরা আজ অরক্ষিত স্বাধীনতার পরাধীনতাই ভোগ করছি। আওয়ামীলীগের প্রতি নির্দেশ যদি ক্ষমতায় থাকতে চাও যে ভাবে বলবো সে ভাবেই শুনতে হবে। কে মারা গেল কাকে মারতে হবে কাকে গুম করতে হবে সেটা সিদ্ধান্ত সরকারের নয়। আমাদের স্বাধীনতা কি এই জন্য? ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File