শবে কদরের ফজিলাত ও তাৎপর্য ।
লিখেছেন লিখেছেন জলন্ত শিখা ১৪ জুলাই, ২০১৫, ০৮:৩২:৫৬ সকাল
লাইলাতুল কদরের রজনী অত্যন্ত
মর্যাদাপূর্ণ ও অসীম কল্যাণে ভরপুর।
লাইলুন’ শব্দটি আরবী এর শাব্দিক অর্থ
হচ্ছে, রজনী। কদর শব্দটি ও আরবি এর
কয়েকটি অথর্ রয়েছে, একটি অর্থ হচ্ছে
মাহাত্ম ও স¤মান। আরেক অর্থ হচ্ছে
তাকদির বা আদেশ। রজনীকে
লাইলাতুল কদর বলা হয়ে থাকে। আবার
এ রাত্রে যেহেতু পরবর্তী এক বৎসরের
অবধারিত বিধিলিপি
ফেরেশতাগণের নিকটে হস্তান্তর করা
হয় সে জন্য ও এ রজনিকে কদরের রজনি
বলা হয়।
সুরা কদর অবতীর্ণ হওয়ার পটভুমি: ইবনে
আবি হাতেম রা: থেকে বর্ণিত,তিনি
বলেন একদা রাসুলুল্লাহ সাহাবিগণের
সম্মুখে বনী ইসরাঈলের জনৈক চাঁরজন
লোক সর্ম্পকে আলোচনা করলেন
যে,তারা দীর্ঘ হায়াত লাভ করে
অধিককাল যাবত ইবাদত করেন। এ সময়ের
মধ্যে তারা একটি ও নাফরমানি
করেননি। রাসুল (দঃ) এর যবান মোবারক
থেকে এ কথা শুনতে পেরে
সাহাবায়ে কেরামগণ অত্যান্ত
বিস্মিত হলেন এবং নিজেদের
ব্যাপারে আফসোস করতে লাগলেন।
সাহাবায়ে কেরামগণের এ
আফসোসের পরিপ্রেক্ষিতে মহান
রাব্বুল আলামিন হযরত জিবরাঈল আ: এর
মাধ্যমে রাসুল সা:এর অপর এমন সময় এই
সুরায়ে ‘কদর’অবতীর্ণ করেন।
লাইলাতুল কদরের গুরুত্ব ও তাৎপর্য: যে
ব্যক্তি ঈমানের সাথে সওয়াব লাভের
আশায় লাইলাতুল কদরের রাতকে
ইবাদতের মাধ্যমে সারা রাত্র জাগরণ
করে কাটাবে তার পূর্বকৃত গুনাহসমুহকে
মাফ করে দেয়া হবে’। -বুখারি ও
মিশকাত শরিফ
লাইলাতুল কদরের ফজীলত: লাইলাতুল
কদরের ফজিলত অপরিসীম। কদরের
ফজীলত বুঝানোর জন্য মহান আল্লাহ
তায়ালা পবিত্র আল কুরআনে ‘কদর’
নামে আলাদা একটি সুরা-ই অবতীর্ণ
করেন । কেবল কুরআনেই নয় বরং হাদিসে
ও কদরের ফজীলত রয়েছে বলে প্রমাণ
রয়েছে। কদরের ফজীলত সর্ম্পকে মহান
আল্লাহতা’লা পবিত্র কুরআনের সুরায়ে
কদরে ইরশাদ করেন,নিশ্চয়ই আমি
মানবতার মুক্তির মহান সনদ পবিত্র আল
কুরআনকে লাইলাতুল কদরে অবতীর্ণ
করেছি।
আপনি কি জানেন লাইলাতুল কদর কি?
লাইলাতুল কদর হচ্ছে হাজার মাস
অপেক্ষা উত্তম।উক্ত রজনীতে
ফেরেশতাগণ ও জিবরাঈল আ: তাদের
প্রতিপালকের নির্দেশে প্রত্যেক
বিষয় নিয়ে অবতীর্ণ হন এটা শন্তিময়
রজনী যা ফজরের উদয় পর্যন্ত অব্যাহত
থাকে।আল কুরআনে কদরের রাত্রিকে
হাজার মাসের চেয়ে ও উত্তম বলা
হয়েছে।হাজার মাস ৮৩ বৎসর ৪ মাস হয়ে
থাকে।
অর্থাৎ হাজার মাস ইবাদত-বন্দেগী
করে যে সওয়াব অর্জন করা যায় সে
সওয়াব শুধু এক কদরের রজনীতে ইবাদত-
বন্দেগী করে-ই অর্জন করা যায়।এ জন্য
যতটুকু পারা যায় ততটুকু ইবাদত করে
কদরের রজনীকে কাটানো আমাদের
জন্য জরুরী।
বিখ্যাত সাহাবি হযরত আবু হোরায়রা
রা: থেকে বর্ণিত,রাসুল সা:আ:ইরশাদ
করেন,‘মহানবী (দঃ) ইরশাদ করেন,‘যদি
তোমরা কবরকে আলোকময় পেতে চাও
তাহলে লাইলাতুল কদরে জাগ্রত
থেকে ইবাদত কর’। -মিশকাত ও
বাইহাকি শরিফ।
রাসুল (দঃ) ইরশাদ করেন,‘তোমরা
লাইলাতুল কদরকে মাহে রামাযানের
শেষ দশকের বেজোড় রাত সমুহে
তালাশ কর। -বুখারি শরিফ।
হযরত উমর রা:থেকে বর্ণিত রাসুল (দঃ)
ইরশাদ করেন,‘রামাযানের ২৭
তারিখের রাত্রের ভোর পর্য›ত ইবাদত-
বন্দেগী আমার কাছে সারা
রামাযানের অন্য সব রাত্রের ইবাদত
অপেক্ষা অধিক প্রিয়।-তিরমিযি
শরিফ।
হযরত আনাস ইবনে মালিক রা: থেকে
বর্ণিত,রাসুল (দঃ) ইরশাদ করেন,‘যে
ব্যক্তি লাইলাতুল কদর পেল কিšত ইবাদত
বন্দেগীর মাধ্যমে কাটাতে পারলনা
তার মত হতভাগা দুনিয়াতে আর কেউ
নেই!রাসুল (দঃ) আরো বলেন ,যে লোক
শবে কদর থেকে বি ত হয় সে যেন সমগ্র
কল্যাণ থেকে পরিপুর্ণ বি ত হল।ইবনে
মাজাহ শরিফ।
হযরত আয়েশা রা:থেকে বর্ণিত তিনি
বলেন ,একদা আমি রাসুল (দঃ) কে
জিজ্ঞাসা করলাম হে আল্লাহর রাসুল
আমি যদি কদরের রাত সর্ম্পকে অবহিত
হতে পারি তবে আমি কি করব?তখন
রাসুল (দঃ) আমাকে এই দু’য়া পাঠ করার
জন্য বললেন।দুয়াটি হল,‘আল্লাহুম্মা
ইন্নাকা আফুউউন তুহিব্বুল আফওয়া ফা’ফু
আন্নি।
লাইলাতুল কদরের তারিখ: লাইলাতুল
কদরের নির্দিষ্ট কোন তারিখ নেই।
লাইলাতুল কদরের তারিখের ব্যাপারে
হযরত উবায়দা রা: নবী করীম (দঃ)কে
জিজ্ঞাসা করলে তখন নবী (দঃ) সেই
সাহাবীকে বললেন রামাযানের
বেজোড় শেষের দশ দিনের
রাতগুলোকে তালা কর।
তাই২১,২৩,২৫,২৭,২৯ তারিখের
রাতগুলোকেই বেশী গুরুত্ব দিতে হবে।
কদরের রজনীতে আমাদের করণীয় :
লাইলাতুল কদরের ফজীলত অপরিসীম।
তাই সারা রাত্র জাগরণ করে
সঠিকভাবে ইবাদত-বন্দেগীতে
মনোনিবেশ করা সকলের জন্য একান্ত
কর্তব্য।বেশী বেশী নফল নামাজ,
তাহাজ্জুদ,সালাতুস তাসবিহ,উমরী
কাযা নামাজ, কুরআন তিলাওয়াত,দান-
সাদকা,যিকির-আযকার,তাসবিহ-
তাহলিল,তাওবা-ইসতেগফার,দু’য়া-দুরুদসহ
ইত্যাদি নফল আমলের প্রতি মনযোগি
হওয়া একাšত জরুরী। আল্লাহ যেন
আমাদের সকলকে বিদআত ও কুসংস্কার
মুক্ত বিশুদ্ব ইবাদত ও আমল করার তাওফিক
দান করুন।
বিষয়: বিবিধ
১২৬০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন