তাদের মুখে কী পড়বে? চুনকালি? ছাই? জুতার বাড়ি!? (সংগৃহীত )

লিখেছেন লিখেছেন বিনো৬৯ ০৫ জুন, ২০১৫, ১০:৪৮:৪৬ রাত

ভেবেছিলাম বিষয়টা নিয়ে কথা বলবো না। কারণ এ নিয়ে কথা বলাটা তেমন শোভন মনে হয়নি। কিন্তু আমাদের রাজনীতি ও দলমন্য সাংবাদিকতা শোভনীয়তার সীমানা ডিঙিয়ে যখন অশোভন বিষয়কেই ব্যাপক আলোচ্য করে তোলে তখন কেবল শোভনীয়তার দোহাই দিয়ে চুপ থাকা যায় না।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র দামোদর দাস মোদী দু'দিনের সফরে বাংলাদেশে আসছেন। এ সফর খুব গুরুত্বপূর্ণ তাতে সন্দেহ নেই। আমরা ভারত-বেষ্টিত দেশের বাসিন্দা। বাংলাদেশের তিন দিকেই বিশাল ভারত। ভারত আমাদের নিকটতম প্রতিবেশী। এটা প্রকৃতি নির্ধারণ করেছে, আমরা কেউ করিনি। তাই এই বাস্তবতা বদলাতে পারবো না আমরা। প্রতিবেশীকে সরানো যায়না। আমাদেরকে ভারতের প্রতিবেশী হয়ে থাকতেই হবে। প্রতিবেশীর সংগে অনেক সমস্যা থাকে। সেগুলো মেটাতে হয়।

নিরসন করতে হয় লেনদেনের মাধ্যমে। তাই প্রতিবেশীর দিকে দুয়ার বন্ধ করে এবং তার সংগে কথা না বলে থাকার উপায় নেই। তবে এই সমস্যাগুলোর নিরসনে জাতীয় স্বার্থ কতটা রক্ষা করা যাচ্ছে সে দিকেই নাগরিকগণ খেয়াল রাখে। এ নিয়ে দরকষাকষি হয়, কূটনীতির খেলা চলে, কৌশলের মারপ্যাঁচ কষা হয়, বুদ্ধির প্রতিযোগিতা চলে। এগুলোই স্বাভাবিক,সব অন্চলেই এটা রীতি। বাংলাদেশ ও ভারতও তার ব্যতিক্রম নয়।

দু'দেশের সম্পর্কের ইতিহাসের আরেকটি সত্য হচ্ছে, ভারতে বেশির ভাগ সময় জাতীয় কংগ্রেস পার্টি ক্ষমতায় থেকেছে কিন্তু কংগ্রেসি সরকারের কাছ থেকে বাংলাদেশ কখনো তেমন কিছু পায়নি, তারা সব সময় নিয়েছে বেশি। তবুও বাংলাদেশের আওয়ামী লীগ বরাবরই কংগ্রেসের সংগে বিশেষ সম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে।

এক বছর আগে ভারতের লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের নির্বাচনী তহবিলে বাংলাদেশ থেকে অর্থ যোগাবার কাহিনী কেবল এদেশে নয়, ওদেশেও বেশ চাউর হয়েছিল। এছাড়া কংগ্রেসি পণ্ডিতদের ডেকে ঢাকায় সরকারী উদ্যোগে সেমিনার করে আশ্বস্ত করা হয়েছিল যে, সরকার গঠনের মতো সংখ্যাগরিষ্ঠতা বিজেপি পাচ্ছে না। কোয়ালিশন করে বিজেপি যদি সরকার গঠন করতেও পারে তবুও নরেন্দ্র মোদী ভারতের প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না, অন্য কেউ হবেন।

যাই হোক, আওয়ামী লীগের আশাবাদ ধুলায় লুটিয়ে বিজেপি ভুমিধ্বস বিজয় পেয়েছে এবং নরেন্দ্র মোদীই প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। তাকে তুষ্ট করতে সবই করতে হচ্ছে আওয়ামী লীগকে এবং এটাই বাস্তবতা। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের উচ্ছ্বাস নিয়ে আমার কোনো মাথাব্যাথা নেই। কিন্তু তারা এ সফরে দেনাপাওনার হিশেব নিয়ে যতোটা ব্যস্ত তার চেয়ে বেশি গলদঘর্ম হচ্ছে শ্রী মোদী সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করবেন কিনা, সেটা নিয়ে। এটাই খুব অশোভন ব্যাপার।

দেশের একটি প্রধানতম রাজনৈতিক দল হিশেবে বিএনপি ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর সফরকে স্বাগত: জানিয়ে এ সফর দ্বিপক্ষীয় সমস্যা নিরসন ও সহযোগিতার পথ খুলতে সহায়তা করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে। এ সব বিষয়ে শ্রী মোদীর সফরকালে দেখা হলে আলাপ করার ইচ্ছেও প্রকাশ্যে ব্যক্ত করেছে বিএনপি। এই অভিপ্রায় তুলে ধরার সময় বিএনপিকে "ভারতবিরোধী দল" হিশেবে আওয়ামী সমর্থক সাংবাদিকরা চিত্রিত করে প্রশ্ন করলে দলের মুখপাত্র অবস্থান পরিষ্কার করে বলেছেন: বিএনপি কখনো ভারতবিরোধী নয়, জাতীয়তাবাদী দলের অবস্থান সব সময় জাতীয় স্বার্থের পক্ষে।

এর পরেও দলমন্য মিডিয়া ভূতুড়ে সূত্রের বরাত দিয়ে ক্রমাগত প্রচার চালাতে থাকে যে, মোদীর সংগে সাক্ষাতের সুযোগ পাচ্ছেন না বেগম জিয়া। তিনি চাইলেও দিল্লী তা নাকচ করে দিয়েছে। প্রবীণ কংগ্রেস নেতা ও ভারতের রাষ্ট্রপতি শ্রী প্রণব মুখার্জির সঙ্গে তার সর্বশেষ বাংলাদেশ সফরের সময় বেগম জিয়ার বৈঠক বাতিল হওয়াতেই নাকি ভারত ভীষণ ক্রুদ্ধ। তাই এর শোধ নিতেই নাকি ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপার্সনের সংগে বসতে রাজি নন।

এমন কথা প্রণব বাবু নিজে, তার পক্ষে অন্য কেউ, ভারতীয় কোনো পার্টি, তাদের বিদেশ মন্ত্রক বা অন্য কোনো মন্ত্রী অথবা কর্মকর্তা কিংবা ঢাকার দূতাবাস প্রকাশ্যে বলেনি। আওয়ামী মিডিয়া বা তাদের নেতাদের কানে কানে বলেছে কিনা তা আমার জানা নেই। না হলে তারা এ নিয়ে এত অবিরাম প্রচারণা কেন চালাবেন? ভারতের বিদেশ মন্ত্রী সুষমা স্বরাজ ঢাকায় আসার সময়েও শুরু হয়েছিল একই রকম প্রচারণা। পরে মিসেস স্বরাজ বিএনপি চেয়ারপারসনের সময় বৈঠক এবং সেই সংগে একান্ত বৈঠক করায় তারা চুপসে যায়। শুধু মিডিয়া নয়, আওয়ামী নেতারাও রোজ তারস্বরে চিৎকার করে ভারতকে বুদ্ধি দিচ্ছে, শ্রী মোদী যেন কোনোক্রমেই বেগম খালেদা জিয়ার সংগে বৈঠক না করেন। সব শেষে আওয়ামী সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রীও যোগ দিলেন সেই কোরাসে।

বাংলাদেশ সফরকালে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী কার কার সংগে দেখা করবেন সেটা ভারত সরকার, বিজেপি ও শ্রী মোদীর সিদ্ধান্তের ব্যাপার। এই বৈঠক হওয়া কিংবা না হবার ওপরে বেগম জিয়া বা বিএনপির রাজনীতি নির্ভর করে না। প্রতিবেশী হলেও ভারত একটি আলাদা রাষ্ট্র। তার স্বার্থ ও নীতি আলাদা। বিএনপি সরকারেও নেই। কাজেই বৈঠক না হলেই মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে না। তবে অভিন্ন স্বার্থের যে ব্যাপারগুলো আছে সেগুলো নিরসনের ক্ষেত্রে বেগম জিয়ার সংগে মোদীর বৈঠক তৈরী করতে পারে একটি সুবাতাবরণ।

ভারত জানে, বাংলাদেশে বিএনপি ব্যাপক গণভিত্তিসম্পন্ন দল। এই দলকে বাইরে রেখে নির্বাচনী প্রহসনে কংগ্রেস সরকারের প্রত্যক্ষ ভূমিকায় বাংলাদেশের মানুষ খুবই অসন্তুষ্ট । বাংলাদেশ সংক্রান্ত নীতি-কৌশলের ক্ষেত্রে মোদী সরকার যদি এ বিষয়গুলো ভাবে, তাহলে তারা কারো মানাই শুনবে না, বৈঠক করবেই। আর যদি সে বৈঠকটা হয়েই যায় তাতেই যে বিএনপি রাজ্যজয় করে ফেলবে তাও নয়।

কিন্তু "হবে না, হবে না" বলে যারা দেশ মাথায় তুলছে তাদের মুখে কী পড়বে? চুনকালি? ছাই? জুতার বাড়ি? এ রকম অনেক খারাপ খারাপ শব্দ বাংলা ভাষায় আছে। আমি এসব অশোভন শব্দের একটাও বলবো না। সময় বদলে গেছে। বদলেছে পরিস্থিতি। এর আলোকে রাজনীতি-কূটনীতির নীতি-কৌশল বিন্যস্ত হচ্ছে নতুন করে। শত বৈরিতার মধ্যেও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক নির্ণয়ে নতুন এপ্রোচ নিয়ে এগুচ্ছেন। গুজরাট-কলঙ্কের তিলক মুছে নরেন্দ্র মোদী তার ইমেজেকে ভেঙে গ্রহনযোগ্য নতুন ইমেজ গড়ার সযত্ন প্রয়াসে লিপ্ত। বিশ্বের এই প্রান্তে যুক্তরাষ্ট্র-চীনের নীরব প্রতিযোগিতার মধ্যে ভারসাম্য রেখে ভারত আরো সামনে পা রাখার প্রয়াসী।

এ অবস্থায় আত্মকলহকামী আওয়ামী ভাবনা বাংলাদেশের জন্য আত্মঘাতী। তাই নরেন্দ্র মোদীকে স্বাগত: জানাবার সঙ্গে যুগপৎভাবে একটি প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খায়: এই আওয়ামী লীগ কি কখনো বদলাবে না? কোনোদিন শোধরাবে না? বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার প্রেস সচিব মারুফ কামাল খানের ফেসবুক থেকে।

বিষয়: বিবিধ

৯০৩ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

324932
০৬ জুন ২০১৫ রাত ১২:৩৯

A PHP Error was encountered

Severity: Notice

Message: Undefined variable: count_total_count

Filename: views/blogdetailpage.php

Line Number: 764

"> ফুয়াদ পাশা লিখেছেন : মসজিদে আজানের বদলে উলু ধ্বনি হবে, মানুষ লুঙ্গি ছেড়ে ধুতি পরতে বাধ্য হবে.....

এরপরও মোদির জন্য বিএনপির এত টান?

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File