মাজলুমের প্রেম
লিখেছেন লিখেছেন রাজাকারের কন্ঠস্বর ৩১ আগস্ট, ২০১৬, ০৭:৩৮:৩৮ সন্ধ্যা
আজ মানুষটির আসার কথা। তাই সেজেগুজে বসে আছে নিহা। ওদের বিয়ে হয়েছিল তিন মাস আগে। কোন অনুষ্ঠান করে নয়, যদিও বিয়েটা পারিবারিক ভাবেই হয়েছিল।কিন্তু ওরা আর দশটা বিয়ের মত এলাহী কান্ড করে বিয়ে করতে পারেনি। কারন মাহমুদ একজন ফেরারী আসামী(!)।
বাসরটাও যেন অসম্পূর্ন রয়ে গিয়েছিল। মাত্র একঘন্টা কথা বলে ওকে সান্তনা দিয়ে চোখের পানি মুছিয়ে যে চলে গেলো তারপর এই প্রথম আসা।নিহা জানে মাহমুদের মত মানুষ কখনো আসামী হতে পারেনা, কোন খারাপ কাজ করতে পারেনা। তাই প্রানপ্রিয় মানুষটির জন্য ত্যাগ স্বীকার করতে নিজেকে প্রস্তুত করেছে।
কলিংবেলটা বেজে উঠল। নিহার সমগ্র সত্ত্বা যেন এ শব্দটাই শুনতে চাইছিল। দৌড়ে গিয়ে খুলে দিল দরজাটা। করুণ হাসি ফুটে উঠল মাহমুদকে দেখে। সেই চিরচেনা হাসিটা নিহাকে উপহার দিয়ে প্রবেশ করল মাহমুদও।
কথা বলা যেন ভুলে গেছে তারা। হাসিমাখা মুখে চোখদুটোই যেন ভাবপ্রকাশের মাধ্যম।
নিহাই নিরবতা ভাঙল প্রথম।
মাহমুদ, বলতো এই নির্যাতন আর কতদিন চলবে? কোথায় সে প্রত্যাশিত বিজয়।
এবার একটু জোরে হেসে উঠল মাহমুদ। বললো হয়তো বেশী দুরে নয়, যদি তোমার মত প্রত্যেকটা নিহাই তার মানুষটাকে এভাবে প্রেরনা যোগাতে পারে। কিছু বললোনা নিহা। কেবল মাহমুদের কোটের বোতাম খুলতে খুলতে বললো,
যাও ফ্রেশ হয়ে এসো। টেবিলে খাবার দেই।
মাহমুদ চলে গেলো বাথরুমে।
খাবার খেলো ওরা দুজনে। তারপর শুরু হলো হৃদয়ের কোণে জমিয়ে রাখা কথা বলা।
হটাৎ কেউ কলিংবেলটা বাজালো।
এতো রাতে কে আসতে পারে?
ভাবলো দুজনেই। কিন্তু কোন কিনারা করতে না পেরে মাহমুদ এগিয়ে গেলো গেটের দিকে। ঘর থেকে নিহা শুনতে পেলো মাহমুদের সাথে কে যেন কর্কশ গলায় কথা বলছে।
বেরিয়ে এলো ও। কিন্তু বেরিয়ে যা দেখলো তার জন্য ও মোটেই প্রস্তুত ছিলোনা। মাহমুদকে ১২-১৫ জন লোক প্রায় টেনে হেঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছে।
কিছুই করার ছিলনা ওর কিংবা মাহমুদের।মাহমুদ কেবল ওকে ধৈর্য্যধারনের উপদেশটুকুই দিতে পারল। তরপর ওদের সাথে চলে গেলো। নিহা জানে মানুষটি এখন অনিশ্চিয়তায় হাবুডুবু খাচ্ছে। কিন্তু ওরই বা কি করার আছে আল্লাহর উপর ভরসা করা ছাড়া। যেখানে আইন নেই সেখানে বিচার চাওয়াটাও বোকামী একপ্রকার।
কিন্তু হয়তো ওদের ভাগ্য ভালো ছিল। গুম করেনি ওকে। ৪ দিন পর আদালতে তোলা হলো মাহমুদকে। ওকে জেল হাজতে পাঠালো আদালত।
সময় কিন্তু থেমে নেই। ৭ মাস হয়ে গেল মাহমুদের কারাবাসের।
আজ ওদের বিবাহবার্ষিকী। কিন্তু ও জেলের প্রকোষ্ঠে। ভাবছিলো নিহার কথা। বেচারির জীবনটাকে আমি কি করলাম। ফুলের মত সৌরভ ছড়ানো মেয়েটা আজ বিষন্ন হয়ে বসে থাকে একাকী। ভাবতেই দু ফোঁটা অশ্রু গড়ে পড়লো চোখের কোন বেয়ে।
চোখ মুছতে যাবে ঠিক তখনই চোখ গেলো পাশের দিকে। ওর দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে নিহা। মাহমুদ বুঝল অনেক্ষন এসেছে ও।
এগিয়ে গেলো ও।
নিহা প্রশ্ন করলো,
--কাঁদছিলে কেন?
-- তোমার জন্য।
-- আমি আবার কি করলাম?
-- তুমি করনি। আমি করেছি। তোমার জীবনকে নষ্ট করেছি হয়ত।
-- আচ্ছা মাহমুদ তোমার পথটা কি মিথ্যার?
-- কখনোই না!
-- তাহলে আমাকেও এ আলোকিত পথের একজন হিসেবে মনে কর। তুমি পারলে আমি কেন পারবনা?
এগিয়ে গেলো মাহমুদ। নিহার একটি হাত শিকের ভেতরে নিয়ে চুমু দিয়ে বলল,
--তুমি আমার প্রেরনা। এভাবে সবাই ভাবলে বিজয়টা আমাদের হবেই নিহা!
-- ভাবতে শুরু করেছে মাহমুদ! কেবল আমরা নই। আমাদের মত হাজারো দম্পতি জেলের প্রকোষ্ঠে এভাবেই কথা বলছে। সুতরাং, আমাদের বিজয়টা হয়তো নিকটবর্তী। কেননা, জুলুমের মাত্রাটা বেশী তীব্র আজ। সোনালী সকালের আর বেশী অপেক্ষা করতে হবেনা।
-- ঠিক বলেছো। الا ان نصر اللّٰه قريب. শেষ হাসিটা আমরাই হাসব।
বলেই হেসে উঠলো ওরা দুজন। পবিত্র হাসিতে যেন কেঁপে উঠল পুরো নির্যাতনশালাটি।
বিষয়: বিবিধ
১১৮৩ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এতদিন তাদের নেতারা অন্যায় করেও পাড় পেয়ে যাচ্ছিল । এখন তাদের বিচারের কোলেটেরাল ড্যামেজের শিকার মাহমুদেরা।
৭১ এর কৃত অপরাধের জন্য ক্ষমা চাইলেই পাশার দান কিন্তু উল্টে যেত ।
আচ্ছা হতভাগা ভাইয়া তাদের নেতারা তাদের চুরি,ডাকাতি,সন্ত্রাসি বা চাঁদাবাজি করতে শিখিয়েছে , নাকি মদ,গাঁজা বা ড্রাগ নিতে শিখিয়েছে অথবা মেয়েদের পিছনে লাগতে শিখিয়েছে ?
আমি বাংলাদেশের রাজনীতি সম্পর্কে তেমন ধারনা রাখি না । কিন্তু আমার মামনি দেশে থাকতে মহিলা জামায়াতের সাথে জড়িত ছিল আমার বাবা ও ছিল আমার ভাইয়া ও শিবিরের সাথে ছিল এখনো আছে ।
আমার মামনির একটা ল্যাইবেরী আছে । সেখানে জামাতের গঠনতন্ত্র থেকে শুরু করে সব বই ই আছে যে বই গুলো জামায়াতের লোকজন বা শিবিরের লোকেরা পড়ে । আমি সব বই না পড়লে কিছু কিছু বই পড়েছি কিন্তু আজ ও পর্যন্ত একটা বই এ একটা লাইন ও পাইনি যা পড়ে মানুষ খারাপ কাজে উৎসাহিত হতে পারে ।
আপনার লিখা পড়ে বা আপনার কমেন্ট পড়ে আমার মনে হয়নি আপনি আওয়ামীলীগকে পছন্দ বা তাদের সাপোর্ট করেন ।কিন্তু আপনার অনেক কমেন্ট এ "৭১ এর কৃত অপরাধের জন্য ক্ষমা চাইলেই পাশার দান কিন্তু উল্টে যেত "।এ কথা টুকু পেয়েছি অনেক কমেন্ট এ হয়ত একটু এদিক -সেদিক করে ।
আপনার কি তাই মনে হয় !! কখনো নয় হাজার বার ক্ষমা চাইলে ও না হ্যা তবে এরা যদি আওয়ামীলীগে যোগদিত তাহলে হয়ত এরাই মুক্তিযোদ্ধা হয়ে যেত ।
আর এরা তো কোন অপরাধ করে নাই ক্ষমা চাওয়ার প্রশ্ন আসবে কেন ?
খেলায় যেমন দুই পক্ষ থাকে একদল হাড়ে একদল জিতে । তো যারা হারে তারা কি আরেক পক্ষের কাছে ক্ষমা চায় ?
সে রকম যুদ্ধে ও দুই পক্ষছিল পূর্ব পাকিস্থান ও পশ্চিম পাকিস্থান । জামায়াত পশ্চিম পাকিস্থানকে সাপোর্ট করেছিল ।
খেলায় যেমন নিজের সাপোর্টের দল যেন জয়ী হয় তার জন্য সাপোর্টার অনেক কিছু করে শুনেছি বেনামাজী ও নামাজ পড়ে । সেই রকম তেমনি জামায়াত পশ্চিম পাকিস্থানের পক্ষে কাজ করেছে তবে আমি কখনো বিস্বাস করি না তারা কোন খারাপ কাজ করেছে ।
দূর্ভাগ্য বাংলাদেশের প্রতিটা নাগরিকের বাংলাদেশ ভারতের সাহায্যে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে ।
যাই হোক জামায়াত সেটা মেনে নিয়েছে । যদি তারা স্বাধীনতার পর স্বাধীনতা বিরুধী বা দেশদ্রোহী কোন কাজ করে এমন কোন প্রমান পাওয়া গেলে অবশ্যই তার বিচার হবে আর আমি ও তার বিচার চাইব ।
আমার ধারনা আমি আওয়ামীলিগ তো নয়ই বি এন পি কেও সাপোর্ট করেন না । আপনি একজন সৎ ও ধর্মভীরু ,ন্যায়বান ও স্পষ্টবাদী মানুষ । আমার বিস্বাস আপনি জামায়াতকেই সাপোর্ট করেন কারন সমাজের ভাল লোক গুলো ই জামায়াত ।
আপনার সম্পর্কে আমার ধারনা ভুল ও হতে পারে ।
আর বাংলাদেশের রাজনীতি ও স্বাধীনতা যুদ্ধ সম্পর্কে আমার জানা খুব কম ।
নিরীহ মানুষকে মারা মানে পুরো মানবজাতিকে হত্যা করা , যেটা জামায়াত ৭১ এ করেছে । এর জন্য কি তারা ক্ষমা চেয়েছে ? বরং উল্টো দম্ভ করেছে (সেটা আপনার কমেন্টেও বের হয়ে এসেছে)।
বান্দার হক বান্দা মাফ না করলে সেটা আল্লাহও মাফ করবে না - সেটা কি মানেন ? আল্লাহ কোন দাম্ভিক অহংকারীকে ভালেবাসেন না - এটা কি জানেন ?
জামায়াতের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে ইগো সমস্যা । ক্ষমা চাইলে কি খুব ছোট হয়ে যেত ? বাংলাদেশের মানুষ কিন্তু ক্ষমা করতে জানে । বাংলাদেশের মানুষ ইসলাম মনষ্কও । তাই জামায়াতের ভাল একটা ফিল্ড ছিল । তাছাড়া ৭১ এ তাদের কাজের পরও মানুষ জামায়াতকে ১৭/১৮ টি পর্যন্ত আসন দিয়েছে । জামায়াতের শুধু দরকার ছিল একটা ফাইন টিউনিংয়ের ।
জামায়াতকে নিয়ে যারা চেতনাবাজির খেলা খেলে তাদের রেকর্ড ঘেটে দেখবেন যে মুক্তিযুদ্ধের সময় তারা সন্মুখ সমরে তো ছিলেনই না , দেশেও ছিলেন না । কিন্তু তারা বেশ চতুরতার সাথে আজ চেতনার ফেরিওয়ালা সেজে বসে আছেন ।
জামায়াত যদি ক্ষমা চাইতো তাহলে জামায়াতের উপর থেকে রোশ চলে যেত এবং এটা উল্টো চেতনাবাজদের উপরে পড়তো - ৭১ পরবর্তী প্রজন্ম তাদের কাছে এবার জানতে চাইতো ৭১ এ তারাই বা কি করেছে ? কোথায় থেকেছে ?
মাফ , ক্ষমা চাইলে জামায়াতের যে ভালই হত এটা জামায়াত শিবিরকে বোঝানোর মত সাধারণ মস্তিষ্কের কেউ কি আদৈ আছে ?
যুদ্ধে পরাজিত দল থাকবে । জামায়াতের আরেকটি সমস্যা হল যে জামায়াত পরাজিত দলের হয়েও সেই দলের সাথে নেই ।
ামাদের বীরশ্রেষ্ঠ মতিয়ুর রহমানের লাশ কোথায় জানেন ? তার কবরের এপিটাফে কি লিখা আছে জানেন ?
দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা মতিয়ুর গাদ্দার হিসেবে বিবেচিত পাকিস্তানে । তাহলে নিজামিরা পাকিস্তানে কিভাবে ট্রিট হতে পারে ? বাংলাদেশের কাছ থেকে জামায়াত কি ট্রিট পাবার আশা করে ?
মন্তব্য করতে লগইন করুন